এক অসমাপ্ত গল্প

                                                                               প্রথম পর্ব

সবাই ব্যস্ত ।

আনন্দ নয়। আনন্দের হাতে অফুরন্ত সময়। বছর পেরিয়ে গেল সে একেলা। সে ভাবে, কি আশ্চর্য্য  এখনো সে হেসে খেলে দিব্বি ঘুরে বেড়াচ্ছে, যাচ্ছে কারো বাসায়, দেখছে টিভি, শুনছে গান। তর্ক করছে পলিটিকস নিয়ে. বাড়ছে ভাত একলা ঘরে। সব চলছে তার নিজের গন্ডিতে। 

  ওর জানালার পরদাটা কাজ করছে না। ইচ্ছে নেই ওটাকে ঠিক করার। যাক সব ভেঙে টুকরো হয়ে।  সেদিন উনুন জ্বালাতে যেয়ে আংগুলটা পুড়ে গেল, ঔষধ ছিল, সময় চলে গেছে ঔষধের। চা বানানো, ডিম ভাজা ছাড়া আর কোন কিছু করার মুরোদ তার নেই. রান্না ? এই শব্দ টা তার ডিকসনারির বাহিরে । 

  বড় রান্না ঘর আজ কাজের অভাবে কাঁদছে। আদা রসুন পেঁয়াজ আজ আর আসে না ঘরে। রেফরিজারেটর খালি। আছে শুধু কটা ডিম, আর চা র দুধ । মাঝে মাঝে থাকে পুরানো ভাত। আর অন্যর দেওয়া মাছ, ডাল। 

    প্রিসিলা এসেছিল সেদিন। ঘর মুছতে। দরজা খুলে সুপ্রভাত জানাতেই তাকিয়ে রইল আনন্দের দিকে। ” কিছু বলবে?” 

   ভাঙা ভাঙা ইংরাজিতে বলল,” তোমার মুখের চাপা হাসিটা আর নেই।”

   হায়রে পোড়া কপাল. কবে যে সে প্রান খুলে হেসে ছিলো মনে করতে পারে না। 

বেশ কিছুদিন পেরিয়ে গেছে। বাসার সামনে টাতে আর আগের মত জৌলুশ নেই। চিঠির স্তুপ পড়ে আছে । ঘরের আনাচে কানাচে মাকড়সার জাল। টেবিল, চেয়ারে ধুলো। প্রিসিলা আসেনি অনেক দিন। দুটা ডিম এখনো আছে রেফরিজারেটরে. দুধটা খারাপ হয়ে গেছে। ঘর অন্ধকার । আলো আর জ্বলে না।

 

                                                                   দ্বিতীয় পর্ব

রুক্ষ চেহারা, খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি, উস্খখুস্ক চুল, চিরুনি পরেনি চুলে কত দিন জানা নেই, ব্যাগপ্যাক টা কাঁধে নিয়ে আনন্দ দাঁড়িয়ে ছিল বাসার সামনে। ফিরে এলো এক মাস পর। বেড়িয়ে ছিল মনের শান্তির সন্ধানে। পেয়েছে কি? যাওয়ার আগে ডেকে ছিল তার দুই সন্তান কে। দিপ আর সু আনন্দকে জড়িয়ে ধরে বলেছিল,” তোমার কি না গেলেই নয় বাবা ? বাধা তোমাকে দেবনা, এই যদি তোমার শান্তির পথ হয় তবে তাই হোক। আমরা তোমার অপেক্ষায় থাকব”। 

    ব্যাগপ্যাক নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে ছিল আনন্দ। ভুলে গিয়েছিল বয়স তার ষাটের কোঠা পেরিয়ে গেঁছে অনেক আগে। কি এক নেশা তাকে পেঁয়ে বসে ছিল. কোথায় গেলে শান্তি । সেই মোহের টানে এসে পড়েছিল  নেপালের বকতাপুরে। রাত তখন ১১:৩০। ছোট্ট হোটেলের ছোট্ট একটা কামরাঁয় ঘুমিয়ে ছিল আনন্দ । ভোরে দরজায় টুক টুক শব্দে ঘুম  ভেঙে গেল তার। সুর্যের আলো এসে পড়েছে জানালা দিয়ে। দুরে পাহাড়ের চুড়া সাদা বরফে ঢাকা। মুহুর্তে  আনন্দের মনে হলো ঐ সাদা চুড়া তাকে ডাকছে। ওটা তো বরফ নয়, সাদা কাপড় পরা পরিচিত মুখ, ডাকছে তাকে, “এসো, এতদূর যদি এলে, আর একটু পথ এসো ,পাবে আমাকে”। 

টুক টুক শব্দ আবার। ফিরে এলো বাস্তবে , আনন্দ। দরজা খুলতেই সামনে দাঁড়ানো এক মহিলা, হাতে কাপ। ” বাবু আপনার চা.” চা র কাপ হাতে নিয়ে আনন্দ জিজ্ঞেসা করেছিল, ” বলতে পার কিভাবে যাবো চানগু নারায়ন মন্দিরে”?

 “হা বাবু” আগে চলুন আমার বাসাঁয় ওখান থেকে যাব মন্দিরে। ” তৈরি হয়ে বেড়িয়ে পড়েছিল আনন্দ । এসে দাঁড়াল  ছোট ছিম ছাম এক বাসার সামনে। উঁঠানে গাছের ছায়া। মনে করিয়ে দেয় ফেলে আসা সেই বাসা যেখানে সে আংটি পরিয়ে ছিল ওর আংগুলে.

    হাতে টান পড়তেই তাকিয়ে দেখে ছোট্ট একটা মেয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে। কোকরা চুল, কপালের পাশে কালো 

টিপ। আনন্দের কি হলো সে নিজেও জানে না। কোলে তুলে নিলো তাকে, মনে হলো সে জেনো বলছে,”দাদুমনি, তুমি কি আমার মাঝে বাঁচতে পারনা?

 খুজে পাবে দাদিকে আমার মাঝে” 

   নাম কি তোমার?

উত্তর এলো ওর মা র কাছ থেকে। ” ও কথা বলতে পারেনা, বাবু জি” শুনে আনন্দ ওঁকে চেপে ধরেছিল বুকের মাঝে। ওর গরম নিশ্বাস পরেছিল আনন্দের মুখে। চুপটি করে মুখটা গুঁজে দিয়ে ছিল আনন্দের বুকে। 

   হোটেলে আর ফিরে যাওয়া হয়নি, যায় নি মন্দির দেখতে। সামিতাদের বাসাতেই থেকে গিয়েছিল বাকি দিন গুলো। বসে থাকত পাহাড়ের পাদ দেশে

সামিতাকে পাশে নিঁয়ে, তাকিয়ে থাকত চুড়ার দিকে।

 পাশের বাসার টেমীর ডাকে ফিরে এলো আনন্দ তার জগত থেকে।

” এই এলেন বুঝি?”

হা, উত্তর দিয়ে সিঁড়ির দিকে পা বাড়াল আনন্দ । দরজা টা খুলতে যেয়ে খুলতে পারল না, 

মাথা টলকে উঠল, অস্পষ্ট ভাবে শুনতে পেলো টেমীর চিৎকার ,

আ ন ন দ —-

Continue Reading