এক অসমাপ্ত গল্প (৩য় পর্ব)

                             ৩য় পর্ব

   হঠাৎ কি হয়েছিল আনন্দের সে নিজেও জানেনা। হয়ত ব্লাড সুগার নিচে

নেমে গিয়েছিল অথবা শরীরের উপর যে অন্যায় অত্যাচার চলছে তার ই প্রতিক্রিয়া।

পড়ে যেতে যেয়ে রেলিং টাকে আঁকড়িয়ে ধরেছিল আনন্দ, বাঁচিয়েছিল মাথা টাকে, নচেৎ আজ আনন্দের ইতিহাস লেখা হতো অন্যভাবে। কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থেকে দরজা টা খুলল আনন্দ। ঘর অন্ধকার। সেঁতসেঁতে, মাকড়সার জাল। জলে ভরে এলো চোখ, এমন তো ছিলনা এ বাড়ি। একজনের অবর্তমানে ভেঙ্গে চোঁচির হয়ে গেল সব। সোফাতে বসলো সে।

কপাল দিয়ে ঘাম ঝরছে। মাথার দুপাশের শিরা দুটোর দপদপানি অস্থির করে তুলল আনন্দকে। দীপ আর সু কে ফোন করলো। ওরা আসবে।

     আনন্দ তাকিয়ে ছিল বড় ছবিটার দিকে। নাকে নথ, কপালে টিকলি, মুখে আধো হাসি, আধো লজ্জা, ফিরে গিয়েছিল আনন্দ অনেক পিছনে। ভাবতে চেয়েছিল সেদিন টার কথা, হোলনা, দরজার বেল টা বেজে উঠল। খুলে দিতেই হূরমুড় করে ঢুকল ওরা চারজন।

সু জড়িয়ে ধরল বাবা কে। মাথায় হাত রেখে দাঁড়ালো বৌমা। “ তুমি অনেক শুকিয়ে গেছো বাবা, চোখের কণে কালি, দেখেছ একবার তাকিয়ে আয়নাতে?” বলে সু মুখ টা গুঁজে দিলো বাবার বুকে।

   বৌমা বললও,” বাবা শেভ করে গরম পানি দিয়ে গোসল টা সেরে নাও। আমি খাবারের অরডার দিচ্ছি, এখনি এসে পড়বে।”

“ দাড়ি আর কাটবো না বৌমা, ভালোই তো দেখাচ্ছে?”

   “ না, মোটাও না, দাড়িতে তোমাকে মানায় না বাবা।” বললও বৌমা।

কপালের দপদপানি টা ম্লান হয়ে এলো ওদের কে দেখ। দীপ আর রাজ এসে বসলো বাবার পাশে। আনন্দ জড়িয়ে ধরল সবাইকে। কেন জানি চোখের জল আটকিয়ে রাখতে পারলো না। বয়ে এলো দুগাল বেয়ে।

   “ পেয়েছ, পেয়েছ শান্তি কোথাও যেয়ে?” দীপের প্রশ্ন।

“ তোমার প্রশ্ন পরে, এখন নয়, বাবা, তুমি গোসল করে এসো।” বলে বৌমা গেল টেবিল গোছাতে।

     আনন্দ উঠে এলো উপরে। আয়নার দিকে তাকিয়ে রইল, ভেসে উঠল সামীতার মুখটা। মেয়ে টা কেঁদে ছিল অনেক। কেন জানি বুঝতে পেরে ছিল আনন্দ হয়ত আর কোনদিন ফিরে আসবেনা। আনন্দ তাকে চেপে ধরে বলে ছিল,” আসবো, আমি আবার আসবো এখানে।”

টেবিলে বসে দীপের আবার এঁকেই প্রশ্ন। আনন্দ বলে,” পেয়েছিলাম,পেয়েছিলাম সাদা পাহাড়ের চুড়ায়, পেয়েছিলাম ছোট্ট মুখটার মাঝে। এ যেনো পেয়েও না পাওয়া।”

আসলে আমার চারিদিকে ছিল শান্তির নীড়, ওটাকে কেড়ে নেওয়া হয়েছিল আমার কাছ থেকে। তাই আমি খুঁজে ফিরি তার সন্ধানে। হয়ত পাবো না সেই রূপে, আসবে অন্য রূপে, অথবা আসবেনা কোনদিন।

   রাজ বলল, “তুমি লেখো, লেখার মাঝে লোকে খুঁজে পায় আত্মার শান্তি।”

   না লেখা আমার আসেনা।  

“ কেন? তুমি না প্রেম করতে? মা কে লিখতে চিঠি। তাতে নিশ্চয় অনেক কিছু লেখা থাকতো।” বললও সু।

“ তা লিখতাম, তোমার মা কি বলেছিল শোনও, বলেছিল,” আচ্ছা, আমি তো তোমার বৌ হয়নি, এখনো প্রেমিকা, ইনিয়ে বিনিয়ে তো কিছু লিখলে পারো, তা নয় , সব দরকারি কথা। সাবধানে থাকবে, বাহিরে গেলে কার্ডিগান গায়ে দেবে, ঠাণ্ডা লাগতে পারে ইত্যাদি ইত্যাদি।” কাজেই বুঝতে পারছ আমার লেখার ধরন। ও আমার দাড়া হবে না। লোকে চায় সাহিত্য, আমি ওটার মানেই বুঝিনা।”

কথা বলতে বলতে আনন্দের চোখ দুটো জড়িয়ে এলো। ভীষণ ক্লান্ত সে।

কিছু ঠিক করলে? সু র প্রশ্ন।

কাজে ফিরে যাবো। দেখি, কাজের মধ্যে ডুবে থাকতে পারি কি না। এই বলে আনন্দ উঠে পড়ল। ওরা বাড়িয়ে পড়ল যার যার পথে। এটাই জীবন।

   মাঝ রাতে ঘুম ভেঙ্গে গিয়েছিল আনন্দের। অস্থির হয়ে পায়চারি করছিল সারা ঘর। বাহিরে তখন অঝরে বৃষটি। যেন কেও কাঁদছে।

ভোর হয়ে এলো। আবছা আলো আবছা অন্ধকারের মধ্যে আনন্দ বেড়িয়ে পড়ল এক গোছা লাল গোলাপ নিয়ে। যখন সে ফিরে এলো সূর্য তখন মাথার পড়ে। অত্যন্ত ক্ষুধার্ত সে। গাড়ী পার্ক করলো মলের নিচের তালায়। দৌড়ে যেয়ে পা দিলো এসকেলেটরে। নতুন ফুড কোর্ট খুলেছে। অনেকদিন আসেনি সে। এসকেলেটরের মাঝ পথে চোখা চোখী হোল কালো সালওয়ার কামিজ পরা, মাথায় কালো ওড়না আলতো ভাবে জড়ানো, শ্যামলা উজ্জ্বল রং এক মহিলার সাথে। হাতে দুটো চিকন সোনার চুড়ি। হাসির রেখা দেখতে পেলো আনন্দ মহিলার ঠোটে। মনে হোল কোথায় যেন দেখেছে সে। সৃতির ভাজে রয়ে গেছে, মনে এলো না তার। আর একবার পিছনে তাকাতেই দেখল মহিলাও তাকিয়ে আছে উপরের দিকে। সেই হাসিটা মিলিয়ে যায়নি। নিচের তালায় পা দিলো সে, আনন্দ হোঁচট খেয়ে দাঁড়ালো দোতালায়।

ক্রমশ

Continue Reading