“ যেই মুহূর্তে আমি ওর চোখে চোখ রাখলাম, আমার সমস্ত শরীর ঠাণ্ডায় হীম হয়ে এলো। ওর নীল রঙ এর চোখ থেকে আমি আমার চোখ সরিয়ে নিতে পারলাম না। ওর হাসির মধ্যে যে উষ্ণতা তা ছড়িয়ে গেলো আমার শরীরের প্রতিটি অংগে। আমার শরীরের প্রতি টি লোমকূপ বলতে থাকলো এই সেই যার মাঝে তুমি খুজে পাবে তোমার ভালবাসা”। আচ্ছা শমিত কাকা এরই নাম কি প্রথম দর্শনেই প্রেম। বলে শ্যামলী তাকালও আমার দিকে।
হাঁ হাঁ করে হেসে উঠলাম।
“হতে পারে”।
শ্যামলী আমার কাজিনের মেয়ে। থাকে কানসাসে। কলেজ বন্ধ। এসেছে বেড়াতে। ভালই লাগছিলো ওর সঙ্গ। কোলাহল হীন বাসাতে একটু প্রান সঞ্চার হয়েছে।
“কিরে থেমে গেলি কেনও। খুলে বল”।
কোনদিন প্রেম করেছ?
কেন? তোর গল্প শুনতে গেলে আগে প্রেমের পরীক্ষায় পাশ করতে হবে কি?
তা না হলে তুমি ঠিক উপলদ্ধী করতে পারবে না।
“ওই মুহূর্তটা। মনে হয় অনেক গুলো প্রজাপতি পাকস্থলী তে সুড়সুড়ি দিচ্ছে। একি গভীর ভালবাসার প্রথম নিদর্শন”।
পাকামো রাখ।
তবে শোন,
গিয়ে ছিলাম আমার বান্ধবী সোনিয়ার বাসায়। থাকে শিকাগো তে। শহর নয়, শহর ছাড়িয়ে বেশ দূরে। ছোট পল্লী।
ঐখানে এক বড় খেলার মাঠে বসেছে মেলা। সোনিয়া নিয়ে এলো সেখানে। বেশ জমেছে। ছোট বড় সবাই এসেছে। বিভিন্ন ধরণের স্টল চারিদিকে।
সোনিয়া কে বললাম, কফি না খেলেই নয়। এই সময় সোনিয়াকে ডাক দিলো ওর এক বান্ধবী।
বললাম তুই দেখা করে আয়। আমি কফির লাইনে দাঁড়াই।
সোনিয়া চলে গেল,
আমি কফি কিনে সোনিয়া কে কোথাও দেখলাম না। অগত্যা দাড়িয়ে কফিতে চুমুক দিতেই মনে হোল কে যেন আমাকে ডাক দিল। আমি দ্রুত পাশ ফিরতেই ধাক্কা খেলাম একজনের সাথে।
একে অপরের চোখের দিকে তাকালাম।
ওর নীল রঙ এর চোখ আটকিয়ে গেলো আমার চোখে। সে তার চোখ সরিয়ে নিলো না। তার চোখের চাহনি মনে হোল সমুদ্রের মতো গভীর, রাতের মতো অন্ধকার। চোখের বিদ্যুৎ শিখা আমাকে গ্রাস করলো। ওর সোনালী চুল বাতাসে চোখের উপরে আসে খেলা করছিল। আমি প্রথম দেখাতেই হারিয়ে গেলাম ওর মাঝে। কে যেন জাদুর কাঠি নেড়ে আমাকে অবশ করে দিলো। আমি মাথা থেকে সব কিছু ঝেড়ে ফেলে দিতে চাইলাম, কিন্তু পারলাম না, আমার হৃদয় বলতে থাকলো, এ তোমার প্রথম ভালবাসা। প্রথম প্রেম।
বাহ! এতো রীতিমত নাটকীয়তা। তারপর?
মনে হোল কে যেন হ্যালো বলছে।
তাই তো, ও হাত বাড়ীয়ে দিয়েছে। আমি ওর হাত ধরলাম। বললাম, দুঃখিত।
ও বলল, আমার নাম ডেভিড।
ডেভিড, অতি প্রচলিত নাম। কিন্তু আমার কাছে মনে হোল, এই নামে আর কেউ নেই শুধু ও ছাড়া।
আমি বললাম, আমার নাম শ্যামলী।
ও হাসি দিয়ে উচ্চারণ করতে চাইল আমার নাম টা ,পারলো না।
আমি ওর হাসি টা দেখলাম। যেন মুক্তা ঝরে পড়ছে ওর হাসিতে। হাসি টা আমার হৃদয়ের কণে গেঁথে রইল।
ওর গলার স্বর বাদ্য যন্ত্রের মতো বাজতে থাকলো আমার শিরার মাঝে। সা রে গা মা —
এখানে নতুন বুঝি?
বললাম, হাঁ, এসেছি বাড়াতে। আছি সপ্তাহ দুই। মনে মনে ভাবলাম, ও যেন বলে এই দুই সপ্তাহ প্রতিদিন আমার সাথে বেড়াবে কি?
না সে তা বলল না, শুধু বলল হাতের এক্সট্রা কফি টা চাইলে পাবো কি?
ভুলে গেলাম ওটা সোনিয়ার জন্য কিনেছিলাম। এগিয়ে দিলাম। হাতে হাত স্পর্শ করলো। বিদ্যুৎ খেলে গেলো আমার সর্ব অংগে। আগে যে কোন ছেলের হাতে হাত লাগেনি তা নয়। কিন্তু এই স্পর্শ ভিন্ন। এর মাঝে ছিল মাদকতা।
কি বললি? কোথায়? কি খেলে গেলো?
দিলে তো। দিলে তো সব পণ্ড করে।
আই এম সরি। তারপর?
তারপর ও কফির কাপে চুমুক দিলো। ঠোটের পাশে লেগে থাকা পানির কণাটা হাত দিয়ে মুছে এগিয়ে দিলো হাত টা। আমি ধরার আগেই কোথা থেকে এক শ্বেতাঙ্গ কালো চুলের মেয়ে এসে ওর হাত টা ধরলও।
“ কোথায় ছিলে এতক্ষণ? আমি খুঁজছি তোমাকে”। বলে তাকাল আমার দিকে।
ওর কটাক্ষ দৃষ্টি আমার ভাল লাগল না।
আমার ভাবতে অসুবিধা হোল অন্য কেউ ওর হাত ধরতে পারে।
ও পরিচয় করিয়ে দিলো। নাম লরা।
লরা ভুরু কুচকে তাকাল আমার দিকে। পরক্ষনে ডেভিডের হাত টান দিয়ে বলল, চলো, ওরা সবাই অপেক্ষা করছে।
ডেভিড এক পা এগিয়ে এলো আমার কাছে। বলল, ছোট্ট শহর, দেখা আবার হবে বৈকি। খুজে বের করবো তোমাকে।
তারপর ওরা দুজন হাটতে হাটতে চলে গেলো।
আমি তাকিয়ে থাকলাম ওদের চলার পথে।
সোনিয়া আসে কাঁধে হাত দিলো। “ ও রকম ভাবে তাকিয়ে কি দেখছিস”?
“ দেখছি আমার প্রথম প্রেম”।
চলতে যেয়ে সোনালী চুলের ছেলেটা কি একবার পিছন ফেরে তাকিয়ে ছিল? জিজ্ঞাসা করলাম।
না, কেনও?
তা হলে ওখানেই ইতি। তাই না?
বুঝলে কি ভাবে?