মরণ নেশা হেরোইন

“ তপু ভাই বল টা দেবা, একটা লাথি মারবো”। কানের কাছে এখনো বাজে কথা গুলো। ছোট্ট ছেলে, পাঁচ বছরের, কোঁকড়া চুল, সামনের দুটো দাঁত নেই।

সুন্দর লাগে হাসলে। আমার বন্ধুর ভাই। দাঁড়িয়ে থাকতো মাঠের পাশে। হারিয়ে গেছে। আর ডাকবে না তপু ভাই বলে।

প্রায় পঞ্চাশ বছর পর ফিরে এসেছিলাম আমার জন্মস্থানে। এখানে কাটিয়ে ছিলাম ১৬ টা বছর। ভালই হতো যদি না আসতাম আমার সেই ছোটবেলার আনন্দ মুখর শহরে। আমার স্মৃতিতে ভেসে থাকতো সেই কণ্ঠস্বর যা আমি রেখে গিয়েছিলাম ৫০শ বছর আগে।

বিদেশ বিভুয়ে অনেক দিন কাটিয়ে এসেছিলাম বাংলার মাটিতে। ভাবলাম ঘুরে আসি আমার জন্ম স্থান থেকে। একটা গাড়ী ভাড়া করে এলাম এই শহরে।

গাড়ীর ড্রাইভার কে বললাম, তুমি এখানে, এই মোড়ে নামিয়ে দাও। কিছুক্ষণ হাঁটলাম। পরিচিত জাগা অপরিচিতর মত মনে হোল। সব বদলে গেছে। যে মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকতাম আমরা তিন বন্ধু, দীলীপ, ওয়াহেদ আর আমি সেটা আজ বিলুপ্ত। চেনা মুখ চোখে পড়ছেনা। একজন কে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘ বলতে পারেন ওয়াহেদ নামে একজন এ শহরে ছিল কোথায় পাবো তাকে।” ভদ্রলোক কিছুক্ষণ আমরা দিকে তাকিয়ে থাকল বললেন, “ কোন ওয়াহেদ, ওই মাঠ পাড়ার”। বললাম।”হা”। সেতো মারা গেছে আজ দশ বছর হোল। ধাক্কা খেলাম। বলল, “ ওই যে দেখছেন ছোটো গলিটা ওখানে ওর ছোটো ভাই এর দোকান, সে খবর দিতে পারবে।” ধীর পায়ে এগিয়ে গেলাম। ছোট্ট লোহা লক্কড়ের দোকান। উচ্চতায় বেশী নয় এমন একজন বসে আছে দোকানে। মুখ টা চেনা মনে হোল। সামনে যেয়ে দাঁড়ালাম। কতক্ষণ দুজনে দুজনের চোখের দিকে তাকিয়ে ছিলাম বলতে পারব না। শুধু শুনলাম,” তপুভাই না?” “ চিনতে পারলে কি ভাবে?” আপনি একটুও পাল্টাননি তপুভাই।” তাই কি? হা তাই। তোমার ভাই হারিয়ে গেলো কি ভাবে? সে অনেক কথা। দিলিপ দার সাথে দেখা হয়েছে? “ না, দেখা করতেই তো এলাম আজ এত বছর পর।” বসুন আমি ফোন করছি। ওরই আগ্রহ বেশী। মনে হোল সে জেনো খুঁজে পেয়েছে ওর ভাই কে আমার মধ্যে। “ দিলিপ দা তুমি বিশ্বাস করবে না, তাড়াতাড়ি

এসো, ফোনে আমি কিছু বলবো না।” “ কি হোল, এতো উত্তেজিত কেন?” “ উত্তেজিতো হবো না? সেই যে SSC পরীক্ষা দিয়ে চলে গেলে, আর ফিরলেনা। তোমরা তিন জন ছিলে হরিহর আত্মা।”

“ ওই যে দিলিপ দা এসে গেছে।” দিলিপ ও কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকল আমার দিকে, জড়িয়ে ধরে বললও, এলি তাহলে। হা– এলাম। চল একটা রিক্সা নিয়ে ঘুরে দেখতে চাই শহর টা আর একবার। বেড়িয়ে পড়লাম। অলি গলি দিয়ে পাড় হচ্ছে রিক্সা। কিছু চেনা কিছু অচেনা। এই সেই সিনেমা হল যেখানে দাঁড়িয়ে থাকতাম আমরা তিন জন।

জিজ্ঞাসা করলাম, মোহিতের খবর কি? বললও, আছে তবে ভাল না। ওর ছোটো ভাই সানু মারা গেছে আজ ১৫ বছর হোল। “ কি ভাবে?” ড্রাগ ওভার ডোজে। ভেসে উঠল সেই কোঁকড়া চুল, সুন্দর হাসি ভরা মুখের ছেলেটার চেহারা। বললাম, নিয়ে যাবি আমাকে মোহিতের কাছে। ‘ চল” ।

আগে আমাদের বাসার কাছেই থাকতো আজ চলে গেছে একটু দুরে। দুই বোন আর এই ছোটো ভাই ছিল। এলাম ওর বাসার কাছে। শেওলায় ভরা বাসার প্রাচীর, কিছুটা অংশ ভেঙ্গে পড়েছে। দারিদ্রতার ছাপ চারিদিকে। মোহিত বলে ডাক দিতে বেড়িয়ে এলো হ্যাংলা পাতলা একজন, চিনতে আমার অসুবিধা হলনা। ও কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো আমার দিকে। “ এতদিন পরে কি মনে করে?” প্রশ্ন তার। বললাম” ফেলে আসা দিনগুলি খুঁজতে এসেছি”। দিলিপ বললও তোরা গল্প কর আমি আমার হাতের কাজ সেরে মিলবো তোদের সাথে।

“ চল বসি ওই চা র দোকানে।” বললও, “ জানিস তপু যে শহর তুই ছেড়ে গিয়েছিলি, এ আর সে শহর নেই। এর আনাচে কানাচে হচ্ছে অশথ কার্জ কলাপ। আমদের সানু হারিয়ে গেলো ওই মাদকের মরণ নেশায়। তুই ওকে বড় ভালোবাসতিস।”এই বলে থামল। চোখে জল। বললাম, এ শুধু এদেশে নয়, সব দেশে ছড়ীয়ে পড়েছে এই মাদকের নেশা।

জানিস, সানু লেখা পড়ায়ে খারাপ ছিলোনা। স্কুলে ভালই করছিল। বুঝতে পারিনি কখন সে হেরোইনের নেশায় জড়িয়ে পরেছে। একদিন মা ডেকে বললও, “ মোহিত এই বাক্সে কিছু টাকা ছিল, দেখেছিস?” না আমি দেখিনি। ঘরে আমরা দুজন মাত্র। একটু সন্দেহ হোল। সানুর ঘরে তল্লাশি করতেই একটা সিরিনজ পেলাম বই গুলোর পিছনে। ধক করে উঠল বুক টা।

বসে রইলাম ওর আসার অপেক্ষায়। ইদানীং সে ক্রমেই রাত করে ফেরত। বাসায় আসতেই ডেকে আনলাম আমার ঘরে। সিরিনজ টা দেখাতেই অনেক কিছু বলল। বুঝলাম সবই মিথ্যা। বললাম এ বড় ভয়ঙ্কর নেশা সানু, ওই দিকে যাসনে। মার হারানো টাকার কথা এর বললাম না। ঘরে ডুকে সে দরজা বন্ধ করে দিলো। আমার মনের অবস্থা বুঝতেই পারছিস।

ক্লাসের রেজাল্ট খারাপ হতে থাকল। হেঢ মাস্টার একদিন ডেকে পাঠালো আমাকে, বলল সানু ঠিক মত ক্লাসে আসেনা, প্রায় অনুপস্থিত থাকে। মাকে কিছুই বলিনি। বুঝলাম সে বেপথে চলেছে। সেই শান্ত শিষ্ট সানু হারিয়ে গেলো। চোখের কোনে কালি, উগ্র মেজাজ,। তুই সেই সানু কে চিনবি না।

মার হাতের দুটো বালা একদিন হারিয়ে গেলো। এবার এর মাকে না বলে পাড়লাম না। মা শুনলো, কোন উত্তর দিলোনা। বাবা কে হারিয়ে মা এমনিই ভেঙ্গে পড়েছিল। এই সংবাদে তাকে আর এক ধাপ এগিয়ে দিলো মরণের পথে।

আমার চোখের সামনে ভাসছিল কি ভাবে একটা সংসার ধংসের পথে এগিয়ে যায়। হঠাৎ একদিন মোহিতের এক বন্ধু এসে খবর দিলো, পুলিশ রেড করেছিল হেরোইনের আস্তানায় । সানু সহ তিনজন কে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে গেছে।

মোহিত ছুটে গিয়েছিল থানায়। সানু ছলছল চোখে বলল, আমাকে বাচাও ভাইয়া, আমাকে বাচাও। মোহিত কিছু করতে পারেনি। শুধু দারোগা কে বলেছিল,” আসল মাস্তানকে আপনারা কিছু করতে পারলেন না, যার জন্য আজ আমার ভাইয়ের এই দশা।”

তিন বছরের জেল হয়ে ছিল সানুর। মোহিতের মা এ খবর সহ্য করতে পারেনি, এক রাতে হার্ট এটাঁকে মারা গেলেন অনেক কষ্ঠ বুকে নিয়ে। সানু বেড়িয়ে এসেছিল তিন বছর পরে। মোহিত নিয়ে গিয়েছিল রিহেব সেন্টারে। ওরা চিকিৎসার কোন ত্রুটি করেনি। সানু ফিরে এলো নূতন মানুষ হয়ে। মোহিতের আনন্দ ধরেনা। ছোট ভাইকে বুকে টেনে নিয়েছিল। একটা কাজ যোগাড় করে দিয়েছিল। সানু তাতেই খুশি।

ছোটো শহরে সবাই জানে সানু ড্রাগ এডিকট। ভালো বন্ধুরা তাকে সরিয়ে দিয়েছে। খারাপ বন্ধুর দল হাত ছানি দিয়ে ডেকেছে। এই সমাজ তাকে ভালো হতে দেইনি। মানুষ সমাজের দাস। সমাজ ছাড়া চলতে পারেনা। একাকীত্ব শানুকে পাগল করে তুলেছিল। যেতে সে চায়নি, তাকে যেতে বাধ্য করেছিল। প্রলোভন থেকে দুরে থাকতে চেয়েছিল কিন্তু পারেনি। ভাইয়ের ছায়া তলে থেকে সে বাঁচতে চেয়ে ছিল কিন্তু তাও হয়ে উঠলনা।

ফিরে গিয়েছিল সেই আস্তানায়। হেরোইন আসক্তিদের সাথে মিশে গিয়েছিল আবার। হাতের ভেনে ঢেলে দিয়ে ছিল হেরোইনের বিষ। সেই শেষ।

দরজা ধাক্কার শব্দে মোহিত উঠে পরেছিল। রাত তখন চারটা। দরজা খুলতেই দেখল পুলিশ দাড়িয়ে। বলল এখনি হাসপাতালে যেতে হবে মৃতদেহ সনাক্ত করতে। সারা শরীর হিম হয়ে গিয়েছিল মোহিতের। লাশের পাশে দাঁড়িয়ে সনাক্ত করলো। মোহিতের মনে হোল কি শান্তিতেই না সানু ঘুমিয়ে আছে। আর উঠবে না। ভাইয়া বলে আর ডাকবে না।

মোহিত তাকিয়ে রইল আমার দিকে, দুচোখে জল, বলল আমি ওকে বাচাতে পারলাম নারে তপু, বাঁচাতে পারলাম না। আমার কানের কাছে বাজতে থাকল সেই কণ্ঠ, “ তপু ভাই বল টা দেবা একটা লাথি মারব”.

Continue Reading

বেণী পাগলী

বেণী পাগলী, বেণী পাগলী চলে গেছে, আর আসবে না কোনদিন। কিন্তু সে তো আমার মন থেকে চলে যেতে পারিনি। এখনো আমার চোখে ভাসে বেণী পাগলীর চেহারা। পরনে ছেড়া শাড়ি গায়ের সাথে পেঁচানো। হাতে একটা ঝোলা। এলোমেলো চুল, কত দিন ওটার উপর চিরুনির আঁচড় পরেনি কে জানে। চোখের চাহুনীতে মনে হয় কি জেনো খুঁজছে। পাচ্ছেনা।

যশোরের বাগমারা পাড়ায় আমাদের বাসা। আমার বয়স পাঁচ। গোপাল, শিবু, দীলিপ, খোকন আমরা সবায় এক বয়সী। মারবেল খেলার সঙ্গী। দীলিপ চীৎকার করে উঠলো, “ বেণী পাগলী, বেণী পাগলী”। দোর, ছুট। কেন বেণী পাগলী কে দেখে ভয় পেতাম তা আজও জানিনা। দুর থেকে ডাকতো আমাদের কে। দেখাতো হাতে আম গাছ থেকে পারা লাঠি টা। আমরা ভেংচি কাটতাম দুর থেকে।

মাঝে মাঝে গাছের ছায়ায় বসে মাথার উকুন মারতো। ঝোলাটা পাশে। একটু কাছে যেয়ে বলতাম,” এই বেণী, তোর ওই ঝোলাতে কি রে?” বলতো,” সাপ, গোখরো সাপ, আয়, কাছে আয়”। ভয়ে চোখ বড় বড় হয়ে যেতো আমাদের। একটা মারবেল ছুড়ে মারতাম ওই ঝোলাটার দিকে, সাপ টা ফোঁস করে ওঠে কিনা দেখার জন্য। বেণী পাগলী লাঠি নিয়ে তাড়া করতো। দে ছুট।

একদিন খেলা শেষে বাসাতে এসে দেখি বেণী মার সাথে উঠোনে বসে। ওমা, দেখে আমার চক্ষু ছানা বড়া। ভয়ে আমি জড়সড়। বেণী আমার দিকে চেয়ে ফিক করে ফোকলা দাঁত বেড় করে হাসলো। পাশের ঝোলা তে হাত দিতেই আমি চীৎকার করে উঠলাম। মা- গোখরো সাপ। কোথায় সাপ, মা ধমক দিলো আমাকে। “ ওই তো, ওই ঝোলার মধ্যে। বেণী পাগলী আবারো ফিক করে হাসল। মা ঝোলা টা টেনে এনে ভেতর থেকে একটা বড় কোঁটা বেড় করলো। তার মধ্যে চাল। মা আরেক বাটী চাল ওর মধ্যে দিয়ে দিলো। বেণী উঠে পড়ল। আমার দিকে তাকাল। এ দৃষ্টি টা সেই আগের দৃষ্টি নয়, মমতায় ভরা। ও চলে গেলো। আমি মাকে বললাম’ মা আমি ওকে ভয় পাই। কেন? জানিনা। মা আর কথা বাড়াল না।

বেণী থাকতো রেল স্টেশনের কাছে। ওদিকে গেলেই ওকে দেখতাম ছেড়া কাপড় পরে বসে আছে গাছের নিচে। কাঁঠি দিয়ে পিঁপড়ে গুলোকে বের করছে আর মারছে। আমি হাঁটতাম রাস্তার উলটো দিক দিয়ে। সে আমার দিকে তাকাত আর ফিক করে হাসতো।

আরও অনেক বার দেখেছি তাকে মার সাথে বসে গল্প করতে। কিন্তু ভয় আমার কাটেনি। সময় পেড়িয়ে গেলো। বাবা বদলি হয়ে আমাদের কে নিয়ে চলে গেলেন অন্য শহরে।

তারপর অনেকদিন কেটে গেছে। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। একদিন যশোরের উপর দিয়ে খুলনা যাবো বোনের বাসায়। মনে পড়ল ছোটো বেলার কথা। nostalgia আমাকে পেয়ে বসলো। নেমে পড়লাম বাস থেকে। একটা রিকশা নিয়ে গেলাম সেই বাগমারা পাড়ায়। চিনতে অসুবিধা হোল। আমরা যে বাসাতে থাকতাম সেখানে উঠেছে বিরাট প্রাসাদ। শিবু দের বাসার সামনের আমগাছ টা নেই। মারবেল খেলার জাগাটা পাকা করে মুদির দোকান বসেছে। একটু এগিয়ে পুকুর, যেখানে সাঁতার শিখেছিলাম, সেখানে উঠেছে বিশাল অট্টালিকা। আমার ছোট বেলার স্রীতি হারিয়ে গেলো। মনে পড়ল বেণী পাগলীর কথা। রিকশা ওলা কে বললাম,” চলো রেল স্টেশনের দিকে”। পোঁছালাম। যে গাছটার নীচে বেণী বসে থাকতো তার কোন চিহ্ন পেলাম না। নেমে পড়লাম। ভাড়া মিটিয়ে এগিয়ে গেলাম সামনের দোকানের দিকে। না এরা জানবেনা, এরা অতি অল্পবয়সী।

দুরে একটা চা স্টলের সামনে দুজন বয়স্ক লোক চা পান করছে। আমার পরিচয় দিয়ে বললাম অনেকদিন আগে এই শহরে আমি বাস করতাম। বেণী নামে এক পাগলী এখানে ছিল। চেনেন কি? বলল, “ না, তবে ওই যে দেখছেন ছোট দোকান টা ওটার মালিক এখানকার আদিবাসী। উনি আপনাকে হয়ত সন্ধান দিতে পারে।”

দোকানে পা দিতেই ভদ্রলোক তাকালেন। বেশ বয়স্ক। নাম হরিহর ঘোষাল। জিজ্ঞাসা করলাম বেণীর কথা। হরিহর বাবু কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থাকলেন। বললেন,” একটু দেরী হয়ে গেলো। আজ বছর সাতেক হোল মারা গেছে। যে গাছটার কথা বলছেন ওর নিচেই সে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছিল। দাফন দেওয়ার কেউ ছিলোনা। আমরা সবাই মিলে ব্যবস্তা করে ছিলাম। ওর জীবন ইতিহাস আপনি কি জানেন।” বললাম,” না, আমি তখন অনেক ছোটো, শুধু ভয়ই পেতাম ওকে দেখে।” তবে শুনুন,” ও ছিল এক গেরস্ত ঘরের মেয়ে। এখান থেকে দুই মাইল পুবে গেলে ওদের গ্রাম। বাবার ছিল চালের ব্যবসা। একই মেয়ে। নাম ছিল বনানী। বাবার চোখের মনি। আদর দিয়ে মেয়ে কে মানুষ করেছিল। প্রায় বলত, “ জানো হরি, মেয়ে আমার একদিন বড় ডাক্তার হবে। দেখে নিও।”একদিন দুজনে মিলে বনানী কে নিয়ে গিয়ে ছিলাম মেলায়। ওর চুলের ফিতে লাগবে। লাল রং এর। ও তখন তিন বছর মাত্র। আমরা কথায় বাস্ত। হঠাৎ করে তাকিয়ে দেখি বনানী নেই পাশে। আমাদের বুক টা ধড়াস করে উঠলো। চীৎকার করে নাম ধরে ডাকতে থাকলাম। ওর বাবার চোখে জল। কি হবে হরি। বললাম ধরজো হারিও না, তুমি যাও এদিকে, আমি ওই দিক টা দেখছি। মেলাতে লোকের সংখ্যা অনেক। চীৎকার শুনে একজন বলল,” কাঁকে খুঁজছেন? “ একটা ছোট্ট মেয়ে। বলল,” ছোট্ট একটা মেয়েকে দেখেছি পুতুল নাচের ওখানে বসে থাকতে।” দড়িয়ে গেলাম। দেখলাম মা আমাদের বসে পুতুল নাচ দেখছে। সে যে কি শান্তি তোমাকে বোঝাতে পারবো না। ওর বাবা ওকে জড়িয়ে ধরে চুমুতে চুমুতে ভরিয়ে দিলো। তুমি যদি দেখতে সেই দৃশ্য। যত আবদার ছিল তার বাবার কাছে।

এখানের মেয়ে দেড় স্কুলে ভর্তি করে দিয়ে ছিল। স্কুল শেষে আমার এখানে এসে বসে থাকতো। বাবা কাজ শেষে যাওয়ার পথে নিয়ে যেতো। সে তো আজকের কথা নয়।

একদিন কি হোল জানেন?   বলেন। ও তখন দশম শ্রেণীর ছাত্রী। স্কুল শেষে আমার এখানে এসে বসে আছে। বাবা আসবে। কিন্তু সে আসছেনা। শম্ভু, এপাড়ার ছেলে, দোড়িয়ে এসে বলল,” হরি কাকা, করীম কাকা কে সাপে কামড়িয়েছে।” দোড়িয়ে গেলাম ওর চালের আরোতে। পড়ে আছে সে মেঝেতে। গুদামের ভিতর চালের বস্তায় হাত ঢুকিয়ে ছিল। কে জানতো সেখানে বসে আছে বিষধর গোখরো। এক ছোবল। ওঝা আসতে আসতে সব শেষ। বনানী তাকিয়ে থাকলো ওর বাবার মৃত দেহের দিকে। চোখে জল নেই। পাষাণ হয়ে গেছে। বললাম,’ কাঁদ মা মনি, কাঁদ”। সেই যে পাষাণ হয়ে গেলো আর কোনদিন ওর মুখে আমি হাসি দেখেনি।

জিজ্ঞাসা করলাম, ওর পড়াশুনা? ওই খানেই ইতি। মা আর এতদূরের স্কুলে পাঠাতে চাইনি। বিয়েয়ে দিয়ে ছিল এখানকার এক মাস্টারের সাথে। ছেলেটা বকা ঝকা করতো ওকে। মাঝে মাঝে আমার এখান থেকে তেল নুন নিতে আসত। হাসি দেখিনি ওর মুখে। পরান টা আমার ফেটে যেতো। একটা ছেলে হয়ে ছিল। বিধির কি খেলা কেউ জানেনে। ছেলের বয়স তখন চার অথবা পাঁচ। এক দুপুরে বনানী ঘুমিয়ে। ছেলে যে কখন দরজা খুলে বেড়িয়ে গেছে সে জানেনা। এই রাস্তাটা সে পাড় হতে চেয়ে ছিল। কিন্তু পারেনি। দোত্তের মত একটা ট্রাক এসে ধাক্কা দিয়ে ছিল। ছিটকে পড়ল ওই গাছটার নীচে। ছোট্ট ছেলেটার দেহ দুমড়ে কুঁচকে আরও ছোটো হয়ে গিয়েছিল। বনানী কিছুই জানেনা। দৌড়ে যেয়ে আমি ওকে নিয়ে এলাম। সেই মাংস পিণ্ডো টাকে বুকে চেপে হাউহাউ করে কাঁদতে থাকল। সান্ত্বনা দেওয়ার কোন ভাষা সেদিন ছিলোনা। অদৃষ্টের পরিহাস আরও কিছু বাকী ছিল। কয়েক মাস পর ওর স্বামী ওকে তালাক দিয়ে এই খান থেকে চলে গেলো। ওর মা চলে গেছে অনেক আগেই। শুধু আমিই ছিলাম। বললাম, “ এই ঘরটাতে এসে থাক”। এলো। নিজে নিজেই হাসত। আর ওই গাছটার নিচে যেয়ে বসে থাকতো। ছোটো ছোটো ছেলে দেখলে ধরতে যেতো। এই বলে হরিবাবু থামলেন।

বললাম, আজ বুঝতে পারছি কেন সে বলত ঝোলাতে গোখরো সাপ আছে, কেন সে ওই গাছটার নীচে বসে থাকতো। আমার দেখা ওর শেষ চাউনীতে এত মমতা কেন ছিল। হয়ত আমার মধ্যে খুঁজতে চেয়ে ছিল ওর হারানো ছেলে কে।

বলতে পারেন ওর কবর কত দুরে।

এই তো কাছেই। যাবেন।

চলেন। সেদিন সে আমাকে ছুতে পারেনি, আজ আমিই না হয় আমার হাত দিয়ে ওর কবর টা ছুঁয়ে আসবো.

Continue Reading

নিষিদ্ধ গোলাপ

নভেম্বেরের মাঝা মাঝি। ঠাণ্ডা ততটা প্রকোপ নয়। তাপমাত্রা ৫০ এর কোঠায়। তবুও গায়ে, মাথায় গরম বস্ত্র থাকা ভালো। সেই ভাবে প্রস্তুত হয়েই বেড়িয়ে ছিলাম বাহিরে। যেতে হবে বোস্টন। বন্ধু নামিয়ে দেবে Port authority Bus terminal এ। রাতের বাসে যাবো। বন্ধু যথা সময়ে নামিয়ে দিলো আমাকে, আমার সময় অনুসারে নয়, তার সময় অনুসারে। গরজ আমার, তার নয়। কাজেই পোঁছে গেলাম দু ঘণ্টারও বেশী সময় হাতে নিয়ে। এমতো অবস্থ্যায় করনীয় কিছু নাই, শুধু কফি পান করা ছাড়া। ঘড়িতে দেখলাম দুঘণ্টা সময় আছে বাস ছাড়তে। অগত্যা পাশের স্টারবাক্স থেকে কফি নিয়ে একটা খালি বেঞ্চে বসলাম। গরম কফিতে ঠাণ্ডা কিছু টা কাটবে।

কফিতে চুমুক দেবার আগেই Hi শুনে তাকালাম সামনে দাঁড়ানো মেয়েটার দিকে। Hi এর পরিবর্তে Hi বলতে হবে এটাই প্রচলিত নিয়ম। বললাম, Hi. এক ঝলক দেখে মনে হোল বয়স ষোলো থেকে আঠারোর কোঠায়। Blond hair, অরিজিনাল হয়তো হবেনা, রং করা। গাড়ো লাল লিপিস্টিকের প্রলেপ ঠোঁটে, মুখে রং এর ব্যাবহার একটু বেশী বলে মনে হোল, স্কিন টাইট প্যান্ট, বুঝতে বাকী রইল না সে কোন পেশায়ে নিয়োজিত। “ এক কাপ কফি খেতে ইচ্ছা করছে”। বুঝলাম সে পয়সা চায়। লিংকনের ছবি ওলা নোট টা দিয়ে বললাম, “ এটা কফির জন্য, চেঞ্জ ফেরত দিতে হবেনা “। এটা আমার ভদ্রতা নয়, তাড়াতাড়ি ওকে বিদায় করাই আমার উদ্দেশ্য। মাথায় ঘুরছে শতশত চিন্তা। কাছা কাছি নিশ্চয় ওর পীম্প আছে, যে কিনা নজর রাখছে। এই বাস ডেঁপো টা আমার প্রিয় জাগা নয়। তাও এত রাতে।

“ বসতে পারি ?” খুব ভদ্র ভাবে বলল সে। হাতে কফির কাপ। “ তোমার দেওয়া বাদবাকি ডলার দিয়ে কেক টাও কিনে নিলাম। খিদে পেয়েছে”। এই বেঞ্চ আমার সম্পতি নয়, কাজেই বসতে না বলার অধিকার আমার নেই। সে পাশে বসল। কি নাম তোমার? “জুলীয়া”। কতদিন আছো এই বাপ্সায়ে ? “ বছর খানেক হোল”। বয়স কত? উনিশ পেড়োল। চারিদিক তাকিয়ে দেখলাম কেউ এগিয়ে আসছে কিনা। কালেঙ্কারীতে জরা তে রাজী নই। উঠে অন্য খানে যেয়ে বসবো ভাবলাম। কিন্তু কি একটা মোহ আমাকে যেতে দিলোনা। জানতে ইচ্ছা করলো, এই বয়সে কেন এ পথে।

“ এখানে বসে থাকলে তোমার ব্যাবসায়ে ক্ষতি ছাড়া লাভ হবেনা, তাই নয় কি” ?। বলল, “ আজ বাজার মন্দা। তাইতো তোমার কাছ থেকে পয়সা চেয়ে খেতে হোল। আজ আর নয়।” এপথে কেন?

সে অনেক বড় কাহিনী। ঘড়িতে দেখলাম এখনো অনেক দেরী বাস আসতে। বললাম আপত্তি না থাকলে বলতে পারো।

বাসা আমার ক্যানসাস এর এক ছোট্ট শহরে। দুবোন, বোন আমার পাঁচ বছরের বড়। বাবা আর মা। বাবা auto mechanic আর মা এক দোকানে স্বল্প সময়ের জন্য কাজ করে। কোনদিন দুজনের মধ্যে মিল আমি দেখিনি। বাবা বেশীর ভাগ সময় মাতাল হয়ে বাসায় ফিরতো। যাকে বলে আল্কহলিক। সংসারে মানসিক অশান্তির সাথে সাথে টাকা পয়সার টানা টানি লাগেই ছিল। বাবার ইনকাম মদেই উড়ে যেতো।

কোনদিন ভালো জামা কাপড় পড়েছি বলে মনে পড়েনা। ফলে বন্ধু বান্ধবী দের সাথে কোথাও যেতে অস্বস্তি বোধ করতাম। বাসাতে আনার মত অবস্তাও ছিল না। বয় ফ্রেন্ড জোগাড় করতে পারিনি হয়তো inferiority complexএ ভুগতাম সেইজন্য। মা বাবার মধ্যে কোলাহল লাগেই ছিল। একদিন তা চরমে উঠল। মদে বুদ হয়ে এসে মার গায়ে হাত তুললো বাবা। অকথ্য ভাসায় গালাগালি করতে থাকলো কোন কারণ ছাড়াই। মা ঘরের দরজা বন্ধ করে দিলো। বাবাকে দিড়রো ভাসায় বললাম বাসা থেকে বেড়িয়ে যেতে। সে চলে গেলো টলতে টলতে। বেশে কিছুদিন তার কোন দেখা পায়নি। এর মধ্যে আমার বড় বোন তার বয় ফ্রেন্ড নিয়ে বাসা ছেড়ে চলে গেলো। লিখে রেখে গেলো,” এই নরকে আমি থাকতে রাজী নই”। সংসারে টানাটানি। ঈস্কুলের শেষ বর্ষের ছাত্রী আমি। পারট টাইম কাজ নিলাম এক Bar এ। কোন রকমে টিকে থাকার জন্য। চার পাঁচ দিন বাদে বাবা এসে হাজির হলো। মা কিছু বলল না। শেষ নিঃস্বাস তার এই বাসাতে ত্যাগ করতে হবে বলেই হয়তো বিধাতা তাকে পাঠিয়ে দিয়ে ছিল। সেই রাতে হার্ট অ্যাটাকে মারা গেলো বাবা। সে চলে যাওয়াতে আমি যে দুঃখিত হয়েছিলাম তা নয়। বরং ভাবেছিলাম এখন আমরা, মা আর আমি মিলে অভাব অনটন কিছু টা কাটিয়ে, সুন্দর পরীচছন্ন জীবন অতি বাহিত করতে পারব। কিন্তু বিধি বাম। এক রাতে নির্ধারিত সময়ের আগেই কাজ থেকে চলে এসেছিলাম। কেলাসের কিছু assignment বাকী ছিল। না আসলেই বোধ হয় ভালো হতো। দরজা খুলতেই পুরুষের গলা শুনলাম মার ঘর থেকে। ইচ্ছা করেই দরজাটা জোড়ে বন্ধ করলাম। মার ঘরের দরজাটা খুলে গেলো। মা বেড়িয়ে এলো আর একজনের সাথে, আলু থালু বেস। পরিচয় করিয়ে দিলো, “কেভীন”।

তার চোখের চাউনী আমার ভালো লাগল না। আমি আমার ঘরের দরজা বন্ধ করে দিলাম। পেড়িয়ে গেলো বেশ কিছুদিন। কোন এক week end এ মা কে কাজে যেতে হয়েছিল। বাসাতে আমি একা। পরীক্ষা সামনে। বাস্ত আমি। ঘরের দরজাতে টোকা পড়ল। ভাবলাম মা এসেছে বোধহয়। খুলতেই দেখি কেভীন মার কাছে এসেছে। বললাম মা নেই। শুনল না। ঘরে ঢুকে পড়ল। হায়েনার দাঁতের মত হলদে দাঁত গুলো বেড়িয়ে এলো। হাসছে। এগিয়ে আসছে। আমার সারা শরীর থর থর করে কাঁপছে। বিধি সেদিন আমার দিকে তাকিয়ে ছিল। মা ঢুকলো ঘরে। কেভীন তার হলদে দাঁত বের করে মা কে জড়িয়ে ধরল। ঘ্রীনায় সারা শরীর আমার রি রি করছে। বাড়ী থেকে বেড়িয়ে গেলাম। জানি মা কে বলে কোন লাভ নেই। ঠিক করলাম পরীক্ষা শেষে বেড়িয়ে পড়বো বাড়ী থেকে।

বেড়িয়ে পরেছিলাম এক রাতে সব স্রীতী পিছনে রেখে নতুন জীবনের আসায়। এই বাস টার্মিনালএ এসে পোঁছেছিলাম রাত একটায়। এক বান্ধবীর টেলিফোন নাম্বার ছিল সাথে। ফোন করলাম। উত্তর নেই। না জানা শহর। ভয় যে হয়নি তা নয়। এই বেঞ্চ টাতেই শুয়ে ছিলাম সেই রাতে। ভোরের আলো উঠতেই ফোন করলাম। হ্যালো বলতেই নাম বললাম। চিনলো। ঠিকানা দিলো। পোঁছিয়ে দেখলাম ছোট্ট একটা রুম। আগোছাল। বলল এখানে থাকো, কোন একটা কিছু হয়ে যাবে। রাতে সে বেড়িয়ে যায়। কি করে জিজ্ঞাসা করিনি। একদিন বলল,” চলো, পরিচয় করিয়ে দেই একজনের সাথে, ভালো ছেলে।”

পরিচয় হোল। নাম রিকি। চোওকশ, অতি ভদ্র। বললাম,” চাকরি চাই।” বলল, “ হবে, ধরজো ধর”।

ভালো লাগলো রিকি কে। পোশাক আসাকে মনে হয় ভালো কাজ করে। একদিন প্রস্তাব দিলো তার সাথে রুমমেট হয়ে থাকার জন্য। অখুশি হলাম না। ওর মাঝে আছে একটা আকর্ষণ যা আমাকে বার বার টেনে নিয়ে গেছে ওর কাছে। রাজী হলাম। চলে এলাম ওর এপার্টমেন্টএ। সুন্দর গোছানো সব কিছু। ভাবলাম বিধাতা এতদিনে মুখ তুলে চেয়েছে। কিন্তু আলোর পিছনে যে অন্ধকার থাকে তা ভুলে গিয়ে ছিলাম।

এক রাতে আমি একা। দরজায় ঠোকা পড়ল। ভাবলাম রিকি এসেছে। খুলতেই দেখি দুজন লোক। কোন কিছু বলার আগেই ডুকে পড়ল। একজন দরজা টা বন্ধ করে দিলো। এর পরের ঘটনা তোমাকে ব্যাখ্যা করার দরকার নেই। সব শেষে যাওয়ার আগে ওরা বলে গেলো, রিকি কে টাকা দিয়েছি, ওখান থেকে তোমার পাওনা নিয়ে নিও”। সেই শুরু। ভদ্র মুখোসের নিচে যে হায়েনার হিংস্রতা থাকে বুঝিনি আগে। রিকিই আমার পিম্প। এর থেকে মুক্তি কবে পাবো জানি না। তোমকে সব কথা বলে বুক টা একটু হাল্কা হোল।

এই পর্যন্ত বলে সে থেমে ছিল। বললাম,” বড়ো বড়ো উপদেশ দিয়ে সময় নষ্ট করবো না। তবে এই বলি রাতের ব্যাবসার সাথে সাথে দিনে কলেজে যেয়ে কোন কোর্স করতে পারো কি না দেখো। হয়তো কাজে লাগবে কোনদিন।

আমার বাস এসে গেছে। বললাম, “ চলি”। তার চোখে কোন জলের আভা আমি দেখিনি। সে চলে গেলো তার গন্তব্য স্থানের দিকে। আমি উঠে পড়লাম বাসে।

সময় পেড়িয়ে গেলো। আমি বাস্ত হয়ে রইলাম আমার কাজ নিয়ে। কখন যে চার বছর পেড়িয়ে গেছে মনে নেই। কোন এক কাঁক ডাকা সকালে ফোন পেলাম আমার এক বন্ধুর। থাকে পার্ক স্লোপে। বলল,” চলে এসো দুপুরে, আড্ডা দেওয়া যাবে, আরও কজন কে বলেছি”। না করলাম না। যথা সময়ে এসে পোঁছালাম। গাড়ী টা পার্ক করে বের হতেই হ্যালো শুনে সামনে তাকালাম। একটা couple এগিয়ে আসছে। আশে পাশে কাউকে দেখলাম না। কাজেই হ্যালো টা আমাকে উদ্দেশ্য করেই। সামনে এসে দাঁড়ালো। কালো চুল কাঁধ পর্যন্ত এলিয়ে পরেছে। ঠোটে হাল্কা করে আঁকা রং এর প্রলাপ মুখের রং এর সাথে মিলিয়ে। গায়ে J-Crewর জামা। কিছু বলার আগেই উচ্ছোসিত হয়ে জড়িয়ে ধরে দুগালে চুমু দিয়ে বলল,” অনেক খুঁজেছি তোমাকে। কত বার যে অয়ী বেঞ্চটাতে বসে কাটিয়েছে আর ভেবেছি হয়তবা একদিন তুমি এই পথ দিয়ে যাবে, সেই আশায়। তোমের দেওয়া টেলিফোনে ফোন করেছি, রং নাম্বার, হয়তো লিখতে ভুল করেছিলাম”। এত গুলো কোথা বলে সে থামল। রং নাম্বার ছিলোনা, আমিই রং নাম্বার দিয়েছিলাম পাঁছে কোন কিছুতে জড়িয়ে পড়ি। সাহসিকতার পরিচয় সেদিন আমি দিতে পারিনি।

বললও “ তোমার দেওয়া উপদেশ আমি পালন করেছিলাম। কমুনিটি কলেজ থেকে কোর্স করে আজ আমি ইলিমেনটারি স্কুলের শিক্ষক। পিছনে ফেলে এসেছি আমার অতীত। Sorry, পরিচয় করিয়ে দেই, আমার ফীয়ান্সে। অ্যালেক্স। আসছে মাসে আমাদের বিয়ে। আসবে তো? তোমার ঠিকানা আর ফোন নাম্বার টা দাও”।

এবার ঠিক মতই সব দিলাম। বললাম আসবো। আবারও দুগালে চুমু দিয়ে বললও,” আসি, তুমি আমার দেবতা।” দুজনে হাত ধরে হাঁটতে হাঁটতে মিলিয়ে গেলো লোকের ভিড়ে। আমি শুধু চেয়ে চেয়ে দেখলাম। চোখের কোণটা মুছে আমিও এগিয়ে গেলাম আমার গন্তব্য স্থানের দিকে।

Continue Reading