এক অসমাপ্ত গল্প ( ১৩ পর্ব)

                                                ১৩ পর্ব

     বারে এসে বসলো আনন্দ। বারটেনডার ক্লাব সোডার গ্লাস টা এগিয়ে দিতেই আয়নায় দেখতে পেলো মাথায় টুপি ওয়ালা লোকটা তার পিছনে দাঁড়িয়ে। হাতে ধরা গ্লাসটা কেঁপে উঠে কিছুটা সোডা পরে গেল গ্লাস বেয়ে। লোকটার হাতের সেই বস্তুটা দেখতে পেলনা আনন্দ।

“ বসতে পারি?” বলে উত্তরের অপেক্ষা না করে পাশের চেয়ার টাতে বসলো। বয়স চল্লিশের কাছা কাছি। কপালের উপড়ে কাটা দাগ। বেশী দিনের নয়। হাতটা বাড়িয়ে দিয়ে বললও, “আমার নাম জন টেলর।” আনন্দ তার নাম বলতেই বললও ,” তোমার নাম আমি শুনেছি এমিলির কাছে। সরি, এই দুর্ঘটনার জন্য।”

“ এমিলিকে চেনো কি ভাবে?” জিজ্ঞাসা করতেই মিস্টার টেলর বলল,” যে কাজের খবরা খবর জানতে এমিলি কে পাঠানো হয়েছিল আমি সেই কোম্পানির একাউনটেন্ট। এমিলি, সত্যি খুব স্মার্ট লেডি। Again sorry for your loss.” বলে আনন্দ কোন কিছু বলার আগেই দ্রুত বের হয়ে যেতে যেয়ে বললও,” সাবধানের মার নেই”।

আনন্দ তখনো হুড ওঠানো লোকটার চেহারা টা মনে করার চেষ্টা করছে। একে অন্ধকার, তারপর চোখে বড় ফ্রেমের কালো চশমা, ঠোটের পাশে ক্ষীণ হাসি। সব মিলিয়ে এক রহস্যময় ব্যক্তিত্ব। রহস্যময় ব্যক্তির হাটার ছন্দটা আনন্দের পরিচিত মনে হয়ে ছিল। কোথায় যেন দেখেছে, মনে করতে পারলনা।

সকাল দশটায় কড়া নাড়িয়ে আনন্দকে ঘুম থেকে উঠালো মিস্টার থম্পসন। রাতে বিভিন্ন চিন্তায় ঘুম এসেছিল ভোর পাঁচটায়। দরজা খুলে থম্পসন কে বসতে বলে আনন্দ গেল মুখ হাত ধুতে। রুমের ফোনটা বেজে উঠতেই আনন্দ থম্পসনকে ফোনটা ধরতে বলে শাওয়ারের কলটা ছেড়ে দিলো। অপর প্রান্তে এমিলির বাবার গলা। গলার স্বর ভারী। থম্পসন আসতে বলল আনন্দের রুমে। কথা আছে।

আনন্দ ড্রেস আপ করে আসতেই এমিলির বাবা ও উপস্থিত। থম্পসন কোন ভূমিকা না করে বলল, “ মাথায় ভারী বসতুর আঘাতে এমিলি মারা গেছে। যার সাথে এমিলি কে দেখা গিয়েছিল তাকে পাওয়া গেছে। জবান বন্দি নাওয়া হয়েছে।”

এমিলির মা ফুফিয়ে কেঁদে উঠল

“সে কি সন্দেহর মধ্যে পড়ে?” জিজ্ঞাসা করলো এমেলির বাবা।

“ সবায়ই সন্দেহর মধ্যে পড়ে যতক্ষণ পর্যন্ত আসল খুনি কে না পাওয়া যায়।” বলল থম্পসন “ আপনারা মৃত দেহ নিয়ে যেতে পারেন।” কথা শেষে বাই বলে উঠার আগেই দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ। খুলতেই হন্তদন্ত হয়ে জন ঢুকল। আলুথালু বেশ। “এমিলিকে কোথায় দেখতে পাবো” বলে চারিদিকে তাকাল। আনন্দ পরিচয় করিয়ে দিলো থম্পসনের সাথে।

“ মর্গে গেলে দেখতে পাবে, সনাক্ত ও করতে পারবে। আমি ঐ দিকে যাচ্ছি, তুমি আমার সাথে এসো। কথা আছে।” বলল থম্পসন। আনন্দ গত রাতের কোন কথাই থম্পসনকে জানাল না। এমনকি হুড ওঠানো লোকটার কথাও না।

ওরা বেড়িয়ে পরতেই আনন্দ গেল লরেন্সের রুমে। দুজনে মিলে গেল সেই সাইট টা তে। সবাই মর্মাহত। বিভিন্ন জনের বিভিন্ন প্রশ্ন। দরকারি কথা শেষে বেড়িয়ে পড়ল । রাস্তায় ভিড় বাড়ছে। সূর্যের তাপ প্রখর। ট্যাক্সির অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে ছিল ল্যাম্প পোষ্টের নীচে। এই মুহূর্তে ট্যাক্সি পাওয়া দুরহ ব্যাপার। ভ্যাপসা গরমে দুজনের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘামের রেখা। লরেন্স কি জেনো বলতে চাইছিল তার আগেই একটা কালো রং এর মারসেডিজ-বেঞ্জ জানালা গুলি কালো টিনটেড গ্লাসে ঢাকা পাশে এসে দাঁড়ালো। জানালা খুলতেই আনন্দ দেখতে পেলো মিস্টার টেলার, ইশারায় ডাকল, দরজা খুলে ভিতরে আসতে বলল।

“ কোথায় যাবে?”

“ পুলিশ স্টেশন।”

“ কাছা কাছি নামিয়ে দিতে পারি। কোন সুরাহা হোল ?” জিজ্ঞাসা করলো মিস্টার টেলর

“ না, এই মুহূর্তে নয়।” বলল আনন্দ

“ আমাদের সার্ভেলেন্স ক্যামেরায় তোলা কিছু ছবি। দেখো, কাজে লাগলেও লাগতে পারে। “ বলে একটা এনভেলপ এগিয়ে দিলো আনন্দের দিকে। আনন্দ খুলল এনভেলপটা। নিজে দেখল। লরেন্স কে দেখালো। এমিলির ছবি। কন্সট্রাকশন সাইটের বিভিন্ন জাগায় তোলা। সাথে একজন যার ছবি থম্পসন দেখিয়ে ছিল। হোটেলে দেখা গেছে তাকে। দুরে কে জেনো দাড়িয়ে, আবছা। চেনা যায়না। মাথায় বেজবল ক্যাপের মত কিছু একটা পড়া। মুখটা ঢেকে আছে। লরেন্স তাকাল আনন্দের দিকে।

টেলর আনন্দ আর লরেন্স কে পুলিশ স্টেশনের কাছে নামিয়ে দিয়ে গুড লাক জানিয়ে চলে গেল। ওরা থম্পসনের ঘরে ঢুকে দেখল জন আর এমিলির বাবা মা বসা। জন লরেন্স কে দেখে জড়িয়ে ধরল। চোখে জল। লরেন্স ওকে বাহিরে নিয়ে গেল সান্ত্বনা দিতে।

চেয়ার টা টেনে বসতেই এমিলির বাবা বলল,” এমিলির বডি নিয়ে কাল আমরা রওনা হচ্ছি, তুমি যাবে সাথে?”

কথার উত্তর দেওয়ার আগে আনন্দ ছবি গুলো থম্পসনের দিকে এগিয়ে দিলো। বলল কোথা থেকে পেয়েছে সে।

বেশ কিছুক্ষণ দেখার পর, “হু” শব্দ করে রেখে দিলো ড্রয়ারে।

লরেন্স আর জন ঘরে ঢুকতেই থম্পসন আনন্দের দিকে তাকিয়ে বলল,” তুমি আর জন আর কয়েকটা দিন এখানে থাকবে। আমার দরকার পরবে তোমাদেরকে।”

আনন্দ লরেন্সকে বলল, আগামীকাল এমিলির বাবা মার সাথে বডি নিয়ে নিউইয়র্কে চলে যেতে। সবায়ই বেড়িয়ে এলো। দুই পা এগিয়ে আনন্দ ওদেরকে যেতে বলে ফিরে এলো থম্পসনের রুমে। থম্পসন আনন্দর দিকে তাকিয়ে রহস্যময় হাসি দিয়ে জিজ্ঞাসা করল,” ফিরে এলে যে।”

“ আমার মনে হচ্ছে তুমি কিছুটা ক্লু পেয়েছ। তবে এখনো সন্দেহ। হত্যাকারী কে? তাই না?”

সে কথার উত্তর না দিয়ে সে বলল,” আমার স্টাফ অনেক দুর এগিয়েছে, বাকি আছে কয়েকটা ল্যাব টেস্ট, ডিএনএ টেস্ট”।

“ আমাকে একবার এমিলির রুম টাতে নিয়ে যেতে পারবে?” বললও আনন্দ। “ অনেক দিনের চেনা, অনেক কাছের মানুষটা, কত কাটাছেড়া করেছি ড্রয়াইং এর উপর, বসেছি কফির পেয়ালা নিয়ে পাশের রেস্টুরেন্টে। হারিয়ে গেল। একবার দেখতে চাই সেই জাগাটা যেখানে সে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছিল।”

“ নিয়ে যাবো, তবে একটা কথা তুমি অ্যাড করলেনা।”

“ কি?”

“ She had a crush on you. Is it right?”

“ অনেক রিসার্চ করেছ দেখছি এই ক’দিনের মধ্যে? আমিও কি তোমার সন্দেহের মধ্যে পড়ি?”

“ কে জানে, বলাতো যায়না। এটাই তো আমাদের কাজ সবায়কে সন্দেহ করা। তাই না?” বলে থম্পসন আনন্দকে নিয়ে বেড়িয়ে এলো। বাহিরে ওরা চার জন দাড়িয়ে। আনন্দ বলল সে এমিলির রুমে যাচ্ছে। জন যেতে চাইলে থম্পসন বলল,” না, তুমি গেলে তোমার মানসিক অশান্তি বাড়বে ছাড়া কমবেনা।”

আনন্দের হাতে গ্লভোস। কোন কিছু স্পর্শ করা নিষেধ। থম্পসন দরজা খুলল। নর্মাল সাইজের এক বেডরুম এপার্টমেন্ট। কাঠের মেঝে। ডান পাশে ক্লোজেট। কপাট খোলা। এমিলির কাপড় হাঙ্গারে ঝুলছে। এক পা এগোতেই বসার জায়গা। দুটো চেয়ার। একটা উল্টিয়ে পড়ে আছে। দুরে একটা রিক্লায়নার। সামনের কফি টেবিলটার উপরে রক্ত ছিটানো। কিছু কাগজ ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। বিল্ডিংএর নকসা আকা কাগজটা মেঝেতে পরা। বা দিকে একটা টেবিল ল্যাম্প মেঝেতে ভেঙ্গে পরে আছে। তার পাশে প্রচুর শুকনো রক্ত। এমিলির দেহটা এখানে পরেছিল। সাদা চক দিয়ে আকা। রক্তের ছিটা দেয়ালে।

শোয়ার ঘরের বিছানা এলোমেলো। চাদর কুঁচকানো। একটা বালিশ আর কম্বল মেঝেতে। সাদা চাদরের মাঝে দুটো কালচে দাগ। হয়তো—,

থম্পসন ডাকল, “ দেখা শেষ হোল?”

বেড়িয়ে এলো ঘর থেকে দুজনে।

“ দুই তিন দিনের মধ্যে ইনভেশটিগেসন শেষ করতে পারবো বলে আসা করছি।” বলল থম্পসন। “ সেই সাথে হত্যাকারীও হাতের মধ্যে এসে যাবে।”

আনন্দ জানে কথা বাড়িয়ে লাভ নেই। এর বাহিরে থম্পসন আর কিছু বলবেনা।

সন্ধ্যা আটটা। সবাই মিলে ডিনার করবে। লরেন্স বলল, “ তোমাদের কারো আপত্তি না থাকলে ডিনার হবে আমার তরফ থেকে।” সবাই রাজি। জন বলল তার একটু কাজ আছে পরে এসে মিলিত হবে। তাড়াহুড়া করে চলে গেল। মনে হোল কি জেনো খুঁজছে সে। এমিলির মা কিছুক্ষণ পর পর ফুফিয়ে ফুফিয়ে কেঁদে উঠছে। বাবার চোখ ছলছল। ডিনার শেষে এমিলির বাবা আনন্দ কে বলল,” তুমি তো কিছুদিন থাকবে। নিশ্চয় এর মধ্যে হত্যাকারীকে খুঁজে পাওয়া যাবে। জন ডিনারে এলোনা কেন বুঝলাম না।”

“মানসিক দিক দিয়ে সে ও তো আঘাত কম পায়নি? হয়তো একাকী থাকতে চায়।” বললও আনন্দ।

পরদিন সকাল। ওরা ফিরে গেল নিউইয়র্কে এমিলির লাশ নিয়ে। জন আসে নি এয়ারপোর্টে। আনন্দ ফিরে আসে জনের খোজ করলো। ফোন করলো তার সেলে। ফোন বন্ধ। ভয়েস মেল ভরাট। আনন্দ হোটেলের লবিতে খোজ নিলো। কেউ জনকে দেখেছে কিনা, কোন মেসেজ আছে কি না। না, কিছুই নেই। ওর রুমে যেয়ে কয়েক বার ধাক্কা দিলো । কোন শব্দ নেই। আনন্দের মাথায় খারাপ চিন্তা ঘুরে ফিরে আসতে লাগল। ম্যানেজার কে বলল রুমটা খুলতে।

কেউ নেই ঘরে। বিছানা পরিপাটি করে সাজানো। জন রাতে ফেরেনি। আনন্দের হার্ট বিট বাড়তে শুরু করলো। ক্লজেট টা খুলল। কয়েকটা জামা ঝুলছে। একটা ডাফেল ব্যাগ পরে আছে। আনন্দ উঠাল ব্যাগটা। ভিতরে হাত দিতেই আঠালো পদার্থের মত কি যেন হাতে লাগলো। রেখে দিলো । ক্লজেট টা বন্ধ করে দরজার দিকে ফিরতে যেয়ে আবারো ঘুরে দাড়ালো। বিছানার দু পাশের বালিশ সমতল ভাবে অবস্থিত নয়। একটা উচু অন্যটার চেয়ে। এগিয়ে গেল আনন্দ। বালিশটা সরাতেই দেখতে পেলো হুডেড সোয়েট সার্ট। মনে পড়ল সেই রাতে ধাক্কা দেওয়া লোকটার কথা। হুড দিয়ে ঢাকা মুখ, ওর চলার ছন্দ ছিল পরিচিত। ফটোতে দেখা সেই লোকটা। একই রং এর সোয়েট সার্ট। মাথাটা ঘুরে উঠল আনন্দের। তাড়াতাড়ি বেড়িয়ে এলো। বন্ধ করে দিলো দরজাটা।

নিচের বারে এসে বসলো আনন্দ। হাত কাপছে। চিন্তা শক্তি লোপ পাচ্ছে মনে হোল। ক্লাব সোডার পরিবর্তে হুইস্কি দিতে বলল। গ্লাসটা ঠোটের কাছে আনল আনন্দ। চুমুক দেবার আগেই ফোনটা বেজে উঠল।

থম্পসনের ফোন। “আনন্দ, বিশ্বাস হয়? We got the killer. He is in our custody. You will be surprised.”। হাসতে হাসতে বলল থম্পসন।

আনন্দের সারা শরীর কেঁপে উঠল। ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞাসা করলো “কে সে?”।

“ আজ নয়, কাল বলব। এদেশ থেকে চলে যেতে চেয়েছিল। ঠিক সময়ে এয়ারপোর্ট থেকে ধরে আনা হয়েছে।” বললও থম্পসন ।

আনন্দ গ্লাসের তরল পানীয়টা গলার মধ্যে ঢেলে দিলো।

“ আগামীকাল দেখা হবে” বলে থম্পসন ফোন টা রেখে দিলো।

আনন্দ বুকের ভিতর একটা জ্বালা অনুভব করল। সে চায় এমিলির হত্যাকারী ধরা পরুক। কিন্তু ও যা ভাবছে সেভাবে নয়। উঠে পরতেই পা টা একটু টলকিয়ে উঠল। আবারো বসে পড়ল টুল টাতে। কাধে একটা হাতের স্পর্শ অনুভব করলো। ফিরে তাকাল সে। চোখটা কচলিয়ে নিয়ে  তাকাল। অবিশ্বাস্য। ভুলে গেল পারিপার্শ্বিকতা। চিৎকার করে বলে উঠল,

” জন? ইজ ইট ইউ? কোথায় ছিলে ?” বলে জড়িয়ে ধরল জন কে।

ক্রমশ

Continue Reading

এক অসমাপ্ত গল্প ( ১২ পর্ব)

                                                                       ১২ পর্ব

        মাস খানেক হয়ে গেল শুভ্র মারা গেছে। বেলাল, কল্যাণী ফিরে গেছে তাদের নিজেস্ব জাগায়। আনন্দ তার চেম্বারে। কয়েকটা প্লান তাকে অ্যাপপ্রুভ করতে হবে। এমীলী গেছে ডালাসে। একটা কাজের তদারকিতে। জন ছুটিতে। ডেভিড ইদানিং অফিসে খুব কম আসে। আনন্দ থাকলে সে এদিকে পা মারায়না। ফোনে খবরা খবর নেয়। কাজের শেষে লরেন্স আর মাইক বাস্কেটবল খেলা দেখতে যাবে ম্যাডিশন স্কয়ার গার্ডেনে। আনন্দকে জিজ্ঞাসা করেছিল সে যাবে কিনা। এক্সট্রা একটা টিকেট আছে। আনন্দ বলেছিল, না, তার স্টিভের সাথে যাওয়ার কথা।

ওরা চলে গেল। আনন্দ স্টিভ এর সাথে যেয়ে বসলো বারে। স্টিভ বললও,” মহিউদ্দীনের বউ এর একমাসের মধ্যেই ডাক পরবে ভিসার জন্য। তুমি তো দেশে যাবে বলছিলে, তখনি সব ব্যবস্থা করে আসতে পারবে।”

আনন্দ কোন উত্তর না দিয়ে ক্লাব সোডা তে চুমুক দিলো।

“কি ব্যাপার? কথা বলছো না যে?”

“ ভাবছি, তোমাকে বলতে বাধা নেই। সকালে কাশি দিতেই কিছুটা লাল রং এর কফ বেড়িয়ে এলো। হয়ত কিছুই

নয়। অনেক সময় ড্রাই কফ থেকে হয়।”

ডাক্তারের কাছে কবে যাবে?

দেখি, যেদিন সময় হবে।

স্টিভ আনন্দের দিকে তাকিয়ে বলল, দোহাই তোমার। গাফিলতি করোনা।

তাছাড়া আরও একটা কারণেও আনন্দ মানসিক দ্বন্দ্বে ভুগছে। সানন্দার সাথে উইকএন্ডে যাওয়ার কথাছিল ওর ছোট মেয়ের বাসায়। তিন ঘণ্টার পথ। থাকে সে আলবেনীতে। কথা ছিল দুজনে যাবে। সকালে যেয়ে রাতে ফিরবে। শেষ সময়ে সানন্দা আরও একজনকে এই যাত্রায় সঙ্গী করাতে আনন্দ আর যেতে চাইনি। বলেছিল, তোমরা যাও আমার যাওয়া হবেনা। ভেবেছিল এটা সানন্দার একলা ওর সাথে না যাওয়ার অভিপ্রায়।

আনন্দর আত্মসম্মানে লেগেছিল। তার জের এখনও রয়ে গেছে আনন্দের মনে।

মেয়ে টার গানটা আজকে বেসুরো মনে হচ্ছে আনন্দের কাছে। তাল ঠিক নেই। দোষ গায়িকার নয়। আনন্দের মাথায় অজস্র চিন্তারই পরিণতি। অন্যদিন এই গায়িকারই গানের সাথে সাথে আনন্দ তাল দেয়। আজ মন, চোখ আর কান সমতল রেখায় অবস্থিত নয়। তাই সুরটা তার ভাল লাগছে না ।

স্টিভ কে গুডবাই বলে সে উঠে পড়ল। যাবার সময় কিছু খাবার নিয়ে নিলো তার পরিচিত রেস্টুরেন্ট থেকে। বাসায় আজ খাবার বাড়ন্ত। যেখান থেকে মাঝে মধ্যে খাবার আসতো সেখানের হাড়ী খালি।

সানন্দা বলেছিল, কটা দিন কোনমতে চালিয়ে নেও। পারবে নিশ্চয়?

আনন্দ বলেছিল, যা পাচ্ছি তাতো পরে পাওয়া পাঁচআনা। আমার জন্য ভেবোনা, এক পেট, কোন রকমে চালিয়ে নিতে পারব।

খাওয়া শেষে অলস ভাবে কিছুক্ষণ বসে ছিল ডাইনিং টেবিলে আনন্দ। আমেনা ভাবীর সাথে বেশ কিছুদিন হলো কথা হয়নি। ফোনটা উঠিয়ে ডায়েল করলো। ভোর আটটা ওখানে।

কেমন আছো আনন্দ দা? জিজ্ঞাসা করলো ভাবী।

ভালো, স্টিভের সাথে কথা হয়েছিল, খুব শীঘ্রই তোমাদেরকে ডাকবে ভিসার জন্য। সানন্দা কে বলেছি তোমাদের থাকার ব্যবস্থা করতে, যদিও আমিই সব দেখাশোনা করব। তোমাদের কোন অসুবিধা হবেনা।

কিছুক্ষণ চুপ করে রইল আমেনা ভাবি। বললও,” ভাই থাকতে আমি অন্যের বাসায় থাকতে যাবো কেন আনন্দ দা। তোমার ভাগ্নি না তোমাকে বলেছিল তোমার কাছে আমাদেরকে রাখতে পারবে কি না। আজ তুমি নিজে হাতে আমাদেরকে সরিয়ে দিচ্ছো”।

না তা নয়। আমি থাকি একলা।

সেই জন্যই আমাকে থাকতে হবে তোমার কাছে। ভাইকে বোন ছাড়া কে দেখবে বলো।

ঠিক আছে। তাই হবে। সব কিছু বুঝে নিও। অনেক দিন তো হোল এ বাসায় উনন জ্বলেনা। তুমি এসে জ্বালিও।

জানো আনন্দ দা আমার শুধু মনে হয় কবে সানন্দা দি কে দেখব। খুব দেখতে ইচ্ছে করে উনাকে। নিঃস্বার্থ ভাবে তোমাকে দেখে রাখছে।

সত্যিই এমন বান্ধবী পাওয়া দুর্লভ। ও ছিল বলেই কথা বলে আমার সময়টা কেটে যায়। নচেৎ জীবন টা কোন দিকে মোড় নিতো আমি নিজেও জানিনা।

আজ রাখি। এই বলে কথার সমাপ্তি টেনে ছিল আনন্দ।

রাত দশটা। উপরে উঠে এলো। কখন যে চোখের পাতা টা বুঝে এসেছিল সে নিজেও মনে করতে পারেনা। ফোনের শব্দে ধড়মড় করে উঠে পড়ল। ঘড়িটার দিকে তাকাল। রাত চার টা। ডালাস থেকে ফোন। এমীলীর কথা মনে হোল। হ্যালো বলতেই, পুরুষের গলা।

আনন্দ আছে ?

বলছি।

আমি ডিডেকটিভ জো থম্পসন। ডালাস থেকে বলছি।

আনন্দের ঘুমের ঘোর তখনও কাটেনি। “হোয়াট?”

পুনর্বার বললও “আমি ডিডেকটিভ জো থম্পসন। ডালাস থেকে বলছি। এমীলী স্মিথ কে চেনেন?”

আনন্দের বুকটা খালি হয়ে এলো। অশুভ কোন খবর। “আমার কলীগ। হোয়াটস রং?”

“ মারা গেছে, কেউ হত্যা করেছে মনে হচ্ছে। তোমার নাম ঠিকানা ফোন নাম্বার ওর ব্যাগে ছিল। “

আনন্দ চুপ করে রইল, সব কিছু গুলিয়ে যাচ্ছে। এমেলী খুন হয়েছে। ও স্বপ্ন দেখেছে না তো? চামড়ায় চিমটি কেটে দেখল, না সে জেগে আছে।

“ এমীলীর মা বাবা কে খবর দেওয়া হয়ছে?” প্রশ্ন করলো আনন্দ।

“ না, ওদের ফোন নাম্বার টা থাকলে দাও।” বললও ডিডেকটিভ থম্পসন

ফোন নাম্বার টা দিয়ে আনন্দ বললও,” আই উইল বি ফার্স্ট ফ্লাইট আউট।”

রাত অনেক, ফোন করলো ডেভিড কে। বিস্তারিত সব কিছু জানিয়ে বললও,” আমি প্রথম ফ্লাইটে ডালাস যাচ্ছি সঙ্গে লরেন্সকে নেবো ভাবছি।”

ডেভিড ইতি বাচক উত্তর দিয়ে বললও,”আমাকে টাইম টু টাইম খবর দেবে।”

আনন্দ তাঁকে আশ্বাস দিলো, বললও “চিন্তা করোনা তোমার হার্টের প্রবলেম।” আনন্দ জানে ডেভিডের হার্টের পেলপিটিসন বেড়ে গেছে। নিজের কোম্পানির এমপ্লোই, খুন হয়েছে অন্য স্টেটএ। সব খবর না পাওয়া পর্যন্ত তার স্বস্তি নেই।

লরেন্স কে কল করে এয়ারপোর্টে আসতে বললও। ভোর সাতটায় ফ্লাইট।

যথা সময়ে পৌছে, আনন্দ আর লরেন্স এলো হোটেলের চত্বরে। চারিদিকে ব্যারিকেড দেওয়া। লেখা আছে “ Do not cross the line.” আনন্দ নিজের পরিচয় দিয়ে ডিডেকটিভ থম্পসন কে চাইল। পরিচয় হতেই আনন্দ জিজ্ঞাসা করলো মৃতদেহের কাছে সে যেতে পারে কিনা।

না, বললও মিস্টার থম্পসন, “This is a crime secne. You will see the body in the morgue to indentify.”

“ তোমাকে আমার সাথে পুলিশ স্টেশনে যেতে হবে, এমীলী সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য।” বলল মিস্টার থম্পসন।

দুর থেকে আনন্দ দেখল এমীলীর বাবা মা আসছে। ক্রন্দন রত। আনন্দ, লরেন্স, মিস্টার থম্পসন এগিয়ে গেল। আনন্দ জড়িয়ে ধরল এমীলীর বাবা কে। শেষ দেখা হয়েছিল ফার্মের বর্ষপূর্তি উৎসবে। সান্ত্বনা দেবার কিছু নেই। মিস্টার থম্পসন বলল, আমরা আমাদের সাধ্যমত চেষ্টা করবো হত্যাকারী কে বের করতে।

আনন্দ লরেন্সকে বললও জনকে জানানোর জন্য, সে এমীলীর ফিআন্সে।

লরেন্স কে হোটেলে চলে যেতে বলে আনন্দ পুলিশ স্টেশনে এসে পৌছাল বিকেল তিন টায়। এমীলীর বাবা মার সাথে। জিজ্ঞাসা বাদ শেষে মিস্টার থম্পসন দুটো ফটো দেখাল আনন্দকে। প্রথমটা এমীলীর সাথে এক কেতাদুরস্ত ভদ্রলোক এলিভেটরের কাছে দাঁড়ান। বয়স ত্রিশ পঁয়ত্রিশ। আনন্দ চেনে কিনা জানতে চাইলে বলল কোনদিন দেখেনি। অন্যটা হুড দিয়ে ঢাকা মুখ। চেনা যায় না।

তাহলে কি — , আনন্দের কথা শেষ না হতেই মিস্টার থম্পসন বলল, “Don’t come to the conclusion”.

“তুমি এখানে কিছুদিন থাকলে ভালহয়। “

আনন্দ আপত্তি করেনি। মিস্টার থম্পসন আনন্দকে জিজ্ঞাসা করল,” তুমি বলেছিলে এমিলীর ফীয়ান্সে আছে। কাজ করে একি ফার্মে। নাম জন। তাই না?”

হাঁ

ওর ফোন নাম্বার আছে? জিজ্ঞাসা করলো মিস্টার থম্পসন

ওর সাথে যোগাযোগ করেছি, আগামীকাল আসবে।

আনন্দ ফিরে এলো হোটেলে এমিলীর বাবা মার সাথে। এমিলীর বডী পোষ্টমরটমে পাঠানো হয়েছে। মিস্টার থম্পসন বলেছে, যে লোকটার সাথে এমিলীকে দেখা গেছে তাকে তল্লাশ করা হচ্ছে। বিভিন্ন নিউজ মিডিয়া তে তার ফটো দেখানো হচ্ছে। অতি তাড়াতাড়ি তার খোজ পাওয়া যাবে আসা করছে।

আনন্দ ফোন করলো ফার্মে। ডেভিড কে বিশ্লেষণ করলো সব কিছু। বিষাদের কালো ছায়া সেখানে।

সন্ধ্যা হয়ে এলো। লরেন্স কে জিজ্ঞাসা করলো বারে যাবে কিনা। অস্থির লাগছে। না, সে এই মুহূর্তে কোথাও যেতে রাজি নয়। বিয়ারের বোতল হাতে নিয়ে লবিতে এসে বসলো লরেন্স।

আনন্দ বেড়িয়ে গেল। পাঁচ মিনিটের হাঁটা পথ। লোকের চলাচল ততোটা নয়। রাস্তার পাশের গাছগুলো কিছুটা অন্ধকারাচ্ছন্ন করে তুলেছে পথ টাকে। এমিলীর হোটেলের দুই ব্লক দুরে আনন্দের হোটেল। সেখানে পুলিশের আনাগোনা এখন। একটা মাতাল পথ আগলিয়ে ধরে পয়সা চাইল। পুলিশের গাড়ী হর্ন বাজাতে বাজাতে আনন্দের থেকে কিছুদূরে যেয়ে দাঁড়াল। আনন্দ তার চলার গতি কমিয়ে দিলো। এই মুহূর্তে সে পুলিশের সাথে কথোপকথন করতে রাজি নয়। কিছুক্ষণ থেমে আবারো হর্ন বাজাতে বাজাতে চলে গেল। রাস্তা নির্জন। এখনো চার ব্লক যেতে হবে। হঠাৎ করে গা টা শিরশির করে উঠল। আনন্দের মনে হোল কে জেনো ওকে ফলো করছে।

পিছন ফিরে থাকাল। কিছুদূরে একটা লোক আস্তে আস্তে হেঁটে আসছে। মাথায় টুপি। হাতে ধরা একটা লম্বা আকারের জিনিস। কি সেটা এতো দুর থেকে বোঝা গেলনা। আনন্দ তাকাতেই লোকটা হাটার গতি বাড়িয়ে দিলো। আনন্দের হার্টের দপদপানি বেড়ে গেল, হাতের তালু ভিজে। চারিদিকে তাকিয়ে কাওকে দেখতে পেলনা।

পিছনে ফিরে এবার তাকাতেই ধাক্কা দিলো সামনে হেঁটে আসা লোকটা।

মাথায় হুড। এক ঝলক ফিরে তাকাল সে । অন্ধকারে আনন্দ দেখেতে পেলোনা মুখটা।

ক্রমশ

***স্থান কাল চরিত্র সব কাল্পনিক***

Continue Reading

এক অসমাপ্ত গল্প ( ১১ পর্ব)

                                                                     ১১ পর্ব

        ফোঁটা ফোঁটা রক্ত গড়িয়ে পড়ছিল মাথা থেকে গালের পাশ বেয়ে। রক্তের স্রোত ততোটা নয়। মাথাটা ঝিম ঝিম করছে। পকেটের রুমাল টা দিয়ে মাথা টা চেপে ধরে পাশের গাছে হেলান দিয়ে বসলো আনন্দ। আকাশে তখনো জ্যোৎস্না। ভোর হতে কিছু বাকি। লোক টা রেগে গিয়েছিল। রেগে গিয়েছিল কারণ আনন্দের পকেটে কিছুই ছিলনা। মানিব্যাগ টা রেখে এসেছিল গাড়ীতে, ফোন টা কোথায় মনে করতে পারেনা। গালাগালি দিয়েছিল লোকটা। “ হারামজাদা, কিছু নেই পকেট ? আজকের প্রথম বউনী আমার মাঠে মারা গেল ?” বিড়বিড় করে আরও কি জেনো বললও। তারপর পিস্তলটা আনন্দের বুকের কাছে ধরল। আনন্দ দেখতে পেলো হুডের নীচে ওর চোখের হিংস্রতা। দ্রুত তার মাথার মধ্যে খেলে গেল, “দিনের শুরুতে তার জীবন প্রদীপ নিভে যাবে আজ। দীপ, সু তাদের মা কে হারিয়েছে আজ তারা বাবা কেউও হারাতে চলেছে। পিস্তল টা যেখানে ধরা সেখানেই হৃদপিণ্ড। গুলিটা হৃদপিণ্ড কে ছিন্নভিন্ন করে বেরিয়ে যাবে। ও লুটিয়ে পরবে মাটিতে। পুলিশ আসবে। কোন আইডেনটিটিকার্ড নেই ওর কাছে। ও হয়ে যাবে জন ডো।”

না, লোক টা গুলি না করে এক পা পিছিয়ে গেল। তারপর পিস্তলের বাঁট দিয়ে জোড়ে মেরেছিল আনন্দের মাথায়। লুটিয়ে পড়েছিল আনন্দ। কতক্ষণ জানেনা। চোখ খুলতেই মনে হল গালের পাশটা ভিজে ভিজে। রক্ত।

গাছে হেলান দিয়ে বসে আনন্দ ভাবল এবার উঠতে হবে। রক্ত গুলো জমাট বেঁধে গেছে। ফিরে যেতে হবে পুলিশ আসার আগেই। পুলিশে ছুলে আঠারো ঘা। ওরা বিভিন্ন জিজ্ঞাসা বাদ করবে। কাজের কাজ কিছুই হবেনা। সময় নষ্ট। হাসপাতালে সে যেতে রাজি নয়। বিভীষিকা ময় ER সে দেখেছে। বাসায় ফিরে এলো আনন্দ। রুমাল টা রক্তে ভেজা। গালের পাশের জমাট বাধা রক্ত গুলো গরম জল দিয়ে পরিষ্কার করলো। আঠা আঠা চুলগুলো সরিয়ে আয়না দিয়ে দেখতে চাইলো ডেমেজ টা কতটুকু। ততোটা নয়। ইস্টিচ লাগবে বলে মনে হোল না। আশেপাশের চুল গুলো কেটে জাগাটা পরিষ্কার করলো আনন্দ। এলকোহল প্যাড টা চেপে ধরল কাটা জাগায়। ঠোট দুটো কামড়িয়ে জ্বালাটা কমাতে চাইল । এনটিবাওটিক ওয়েনটমেনট লাগিয়ে সোফাতে এসে বসলো আনন্দ।

   সকাল হয়ে এলো। বন্ধের দিন আজ। এতো ভোরে কাউকে বিরক্ত করতে চাইলনা। একবার ফোনটা উঠিয়ে ছিল সানন্দাকে ঘটনাটা জানানোর জন্য। পরে রেখে দিয়েছিল। ইদানিং সবকিছুতে না সুচক উত্তরের জন্যই হয়তবা।

সকাল দশটা। আনন্দ টেক্সট মেসেজ পাঠাল ওদের চার জন কে। বিস্তারিত না জানিয়ে। শুধু লিখেছিল, মাথাটা কেটে গেছে, রক্ত এসেছিল, এখন বন্ধ। আনন্দ জানে এটাই যথেষ্ট। এখনি ফোন আসা আরম্ভ হবে। ঠিক তাই। সু র ফোন।

কি বললে তুমি? রক্ত এসেছিল ? কিভাবে? কখন?

আনন্দ কিছু বলার আগেই সে বললও,” তুমি ফোন রাখো, আমি দীপ কে কল করে থ্রি ওয়ে কথা বলব।”

সব কিছু বিশ্লেষণ করতেই দীপ বললও,” আমরা এখনি আসছি।

ঘণ্টা খানেকের মধ্যে চার জন এসে হাজির। বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন। কেন এতো রাতে বের হয়েছিল। বের যদি হবেই তবে পার্কে যাওয়ার কি দরকার। অবশেষে ওদের প্রস্তাব আনন্দকে দুজনের যেকোনো এক বাসাতে থাকতে হবে। একা আর নয়।

     আনন্দ একটু হাসল। ওদের ছেলে মানুষি দেখে। আসলে বাবাকে ভালবাসে তাই। সহজ সরল সমাধান।

   তা হয়না, বললও আনন্দ। আমার নিজস্ব একটা স্বত্বা আছে। তাছাড়া আমিতো পঙ্গু হয়ে যাইনি। তোমাদের উৎকণ্ঠা আমি বুঝি। শোন, কথার  মোড় ঘুরিয়ে বললও, “ বউমা, তোমার ডাক্তার ফারুক আঙ্কেল কে কল করে বল যদি পারে তবে একবার জেনো আসে এখানে”।

সু, দীপ, রাজ বউমা এদের নিয়েই আনন্দের সংসার। প্রতিদিন দুই তিন বার করে ফোন করবে। বাবার কি অবস্থা। ওরা ভাবে আনন্দের নিজেকে টেক কেয়ার করার ক্ষমতা ফুরিয়ে এসেছে। খুব বেশি ভালবাসার এটাই হয়ত নিদর্শন।

   দরজার বেলটা বেজে উঠল। রাজ দরজাটা খুলে দিতেই সানন্দা ঘরে ঢুকল।

“ আমাকে জানাওনি কেন।”

বিরক্ত করতে চাইনি। বললও আনন্দ।

“সেই রাতে তুমি যে ফোন করেছিলে কথা বলবে বলে, যদি কথা বলতাম তা হলে হয়ত এ ঘটনা নাও ঘটতে পারতো। নিজেকে খুব দোষী মনে হচ্ছে।”

“ তুমি কি করবে বলো, বিধির বিধান তুমি তো খণ্ডাতে পারবেনা।”

সানন্দাকে খবর সু দিয়ে ছিল। জানে সানন্দা আসলে একটু স্বস্তি। সেই সব দেখাশুনা করতে পারবে।

বউমা বললও, “অ্যান্টি তুমি বাবার পাশে বসো আমি তোমার জন্য চা নিয়ে আসি।” বলে সবায় কে ইঙ্গিত করলো অন্য ঘরে যেতে।

ওরা উঠতে যাওয়ার আগেই সানন্দা সু কে বললও এলকোহল প্যাড, ডিসপজেবল গ্লভস, অ্যান্টিবাওটিক অইনটমেন্ট আর ব্যান্ডেট টা আনতে। কাটা জাগা টা পরিষ্কার করে ব্যান্ডেট টা লাগিয়ে দিয়ে বললও,” এসব পাগলামি বন্ধ করো। রাত বেরাতে বেড়িয়ে একটা না একটা অঘটন করবে আর অন্যদেরকে ভোগাবে।”

আনন্দ সানন্দাকে দেখছিল। ভাবছিল, শুধুতো বান্ধবী তার বেশি তো কিছু নয়। সব কিছুই সে করছে অথচ কোথায় জেনো একটা দূরত্ব বজায় রেখে চলে।

মনে পরে একদিন আনন্দ বলেছিল,”যাবে কি আমার সাথে, আমি লন্ডন হয়ে মারাকাশ যাবো। তোমার আপত্তি আছে?”

যেতে চাইলেও যেতে পারবো না বলেছিল সে।

কেন? বিস্ময়ে তাকিয়ে ছিল সানন্দার দিকে।

আমি বিধবা, সমাজ নিয়ে চলতে হয়। তোমার মত উদার মনের মানুষ তো সবায় নয়। অনেকে অনেক কিছু মনে করতে পারে।

মনে করতে পারে ? কি মনে করতে পারে ? ছেলে মেয়ে একসাথে ভেকেসনে যেতে পারবেনা ? তাতে অসুবিধা কোথায় ? আনন্দ কিছুটা উত্তেজিত হয়েই কথা গুলো বলেছিল।

সানন্দা ধীর স্থির। উত্তেজিত হতে আনন্দ তাঁকে দেখিনি কখনো। সেটাকে বজায় রেখে বলেছিল, লোকের মুখতো বন্ধ করতে পারবেনা। তারা দেখবে অন্য চোখে। সে সুযোগ নাই বা দিলে। তোমার সাথে বোস্টনে তোমার বান্ধবীর বাসাতে তো গিয়েছিলাম। সেখানে ছিল তোমার বান্ধবী ও তার স্বামী। অসুবিধা হয়নি কারণ সেখানে তুমি আমি একা নই। এখন বুঝলে?

বুঝেছি? গজগজ করতে করতে আনন্দ বলেছিল, এই ঘুণধরা সমাজটার মানসিক চিন্তা ধারা যদি পাল্টানো যেতো।

সানন্দা হাসতে হাসতে বলেছিল তুমি তো সমাজ কর্মী নও, নিতান্তই ভালো মানুষ। তোমাদের মত মানুষরা শুধু দুঃখই পায় ।

দুমাস পরে আমি দেশে যাবো, কয়েকটা কাজ হাতে নিয়ে তখন যাবেতো। আনন্দ জিজ্ঞাসা করেছিল সানন্দা কে।

যাবো। তোমার বোনের বাসায় উঠবে তো। তাতে আমার আপত্তি নেই।

কি ভাবছ? সানন্দার ডাকে আনন্দ ফিরে এলো বাস্তবে।

উত্তর দেওয়ার আগেই ফোনটা বেজে উঠল। বেলালের ফোন। অনেক দিন পরে। সানন্দা ফোনটা উঠিয়ে হ্যালো বোলতেই , সরি, রং নাম্বার বলে বেলাল রেখে দিচ্ছিল।

“ বেলাল ভাই , আমি সানন্দা।”

“ আমি কি তোমার ফোনে কল করেছি?”

“ না, তুমি আনন্দ দার ফোনে কল করেছ। সে একটু বাস্ত। তুমি ধর।”

হ্যালো বলতেই ,” আনন্দ দা আমি নিউইয়র্কে। শুভ্র মারা গেছে।” বলে একটু থামল বেলাল। “ তুমি আসতে পারবে? একটু এসো, কল্যাণী কে সামলানো মুশকিল হয়ে পড়ছে আমার পক্ষে। পারবে আসতে?”

ওর বেদনা ভরা কণ্ঠস্বর আনন্দ কে ব্যাকুল করে তুলল।

“ঠিক আছে, ঠিকানা টা দাও আমি আসছি”। যদিও মাথাটা ঝিমঝিম করছে। ব্যাথার ঔষধ খেয়েছে কিনতু না গেলেই নয়।

সানন্দকে সব বুঝিয়ে বলতেই সে বলল,” আমি তোমার সাথে যাবো”।

সু,দীপ জানে বাবা কে বলে কোন লাভ নেই। সে যখন মনস্থির করেছে যাবে, তখন সে যাবেই। তবে সান্ত্বনা সানন্দা সাথে যাচ্ছে।

লোকের ভিড় বেশি নয়। কল্যাণী কাঁদছে। সানন্দা এগিয়ে গেল ওর দিকে। বেলাল আনন্দকে জড়িয়ে ধরল।

ড্রাগ ওভারডোজ। বললও বেলাল।

মা মারা গিয়েছিল ছোট বেলায়। কল্যাণী দশ, শুভ্র আট। বাবা বিয়ে করেছিল এক বছরের মাথায়। সৎ মার সাথে বনিবনা হয়নি ওদের দুজনের। বাবা বুঝেও না বুঝের ভান করে থাকতো। মামা একদিন ওদের কে নিয়ে গিয়েছিল তার বাসায়। বাবা না করেনি। সন্তান হীন মামা কোলে পিঠে করে ওদের দুজন কে মানুষ করেছিল। দিয়ে ছিল উচ্চশিক্ষা। কল্যাণী ভালো চাকরি নিয়ে চলে গিয়ে ছিল ডালাসে। শুভ্র নিউইয়র্কে এপার্টমেন্ট ভাড়া করেছিল।

     পিটার লুগারের সাথে শুভ্রর দেখা হয়েছিল এক কন্সার্টে। সম বয়সী। অতি ভদ্র, যুক্তি তর্ক দিয়ে কথা বলে। কথায় মাধুরী মিশানো। বন্ধুত্ব হয়েছিল। পিটার শুভ্রকে নিয়ে গিয়েছিল এক পার্টিতে। পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল লোটাসের সাথে। ড্রাগ ডিলার। শুভ্রকে হুকড আপ করতে বেশি বেগ পেতে হয়নি লোটাসের। সেই শুরু।

ভাইকোডিন। প্রথমে একটা দুটো পিল। তারপর ক্রমেই বাড়তে থাকল পিলের পরিমাণ। সেই সাথে কাজে যাওয়া কমে আসল। শুভ্রর বস কল্যাণী কে বলেছিল ওর কাজের অনিয়মের কথা। অনেক চেষ্টা করেছিল কল্যাণী ওকে এই নেশার থেকে ফেরাতে। পারেনি।

এক রাতে পেটে প্রচণ্ড ব্যাথা। হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। ডাক্তার বললও Pancreatites. শুভ্র তার এডিকশনের কথা বলেনি। তাঁকে prescribe করা হোল ভাইকোডিন। ব্যাথার জন্য। বাসায় ফিরে এসে কল্যাণীকে ফোন করে বলেছিল, আপা আমি বোধ হয় আর বাচবো নারে। সেই রাতে ব্যাথার যন্ত্রণায় টিকতে না পেরে ভাইকোডিনের পুরো বোতল ঢেলে দিয়েছিল গলার ভিতর। সব ব্যাথার অবসান হয়েছিল। চোখ আর খোলেনি শুভ্র।

আনন্দ ধীর পায়ে এগিয়ে গেল কল্যাণীর কাছে। সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা নেই। কল্যাণী,সানন্দা,বেলাল কাঁদছে। দাঁড়িয়ে আছে ওর বাবা। চোখে জল নেই। তাকিয়ে আছে সাদা কাপড়ে ঢাকা লাশের দিকে। আর নয়। এবার শুভ্রর যাবার পালা হিম শীতল কক্ষে। কান্নার ধনী চারিদিকে। ফুঁপিয়ে উঠল কল্যাণী।

কাল শুভ্রর শেষ যাত্রা।

ক্রমশ

Continue Reading

এক অসমাপ্ত গল্প

                                                                                     ১০ পর্ব

       সাত দিন পর আনন্দ ফিরে এসেছিল। সাতটা সুন্দরতম দিন কাটিয়েছিল ফ্লরেন্তার সাথে। বসে ছিল টেমস নদীর ধারে। সময় ক্ষণ, ঝিরঝির বাতাস, নির্মল সন্ধ্যা, আকাশে চাঁদ এই সব বেস্টিত জগত ফ্লরেন্তাকে করেছিল ব্যকুল। সেই সন্ধ্যায় অনর্গল বলে গিয়েছিল তার জীবনের ডায়রি।

এক ভাই এক বোন। ডেভিড আর ফ্লরেন্তা। ফ্লরেন্তা সাত বছরের ছোট। যখন তার বয়স পঁচিশ. গাড়ী দুর্ঘটনায় বাবা মার মৃতু গভীর দাগ কেটেছিল ওর মনে। কাজের মধ্যে ডুবে থাকতে চেয়েছিল, পারেনি। মা বাবার আদর আর ভাইয়ের ভালবাসায় বড় হয়েছিল। হঠাৎ জীবনের এই একটা অংশ হারিয়ে যাওয়া সে স্বাভাবিক ভাবে নিতে পারেনি। মানসিক ডাক্তারদের মতে এ শুধু সময় সাপেক্ষ।

ইন্টারনেট খুঁজে জেনেছিল, মানসিক শান্তির পথ আছে শুধু মেডিটেশন আর ইয়োগার মাধ্যমে। যেতে হবে আশ্রমে। কোথায় সে আশ্রম ?

ভারতের কেরালা স্টেটে।

ডেভিড কে বলেছিল। ডেভিড না করেনি। শুধু বলেছিল তার এক বন্ধু থাকে দিল্লিতে সেই সব ব্যবস্তা করে দেবে।

দিল্লী বিমান বন্দরে যথাসময়ে জনাথন ফ্লরেন্তাকে রিসিভ করে নিয়ে গিয়েছিল ওর এপার্টমেন্টে। ফ্লরেন্তার থাকার ব্যবস্থার কোন ত্রুটি জনাথন করেনি।

জনাথন বলেছিল,” চলো, আশ্রমে যাওয়ার আগে তোমাকে ঐতিহাসিক জাগা গুলো দেখিয়ে নিয়ে আসি। রাজি তো?”

ফ্লরেন্তা রাজি হয়েছিল। কেন জানি জনাথনের সান্নিধ্য তার ভালোই লাগছিল। স্মার্ট, হ্যান্ডসাম, উচ্চতা সাত ফুটের কাছা কাছি। এক কন্সট্রাকশন কোম্পানির উচ্চপদে অধিসঠিত। জনাথন কিছুদিনের ছুটি নিয়ে ফ্লরেন্তাকে দেখিয়ে ছিল লাল কেল্লা,কুতুব মিনার। গিয়েছিল তাজমহল দেখতে।

তাজমহলের চত্বরে বসে সেই প্রথম জনাথন চুমো দিয়েছিল ফ্লরেন্তা কে। ফ্লরেন্তা বাধা দেইনি। এক নতুন আনন্দের শিহরনে তার সর্ব শরীর শিহরিত হয়ে উঠেছিল। আশ্রমে আর যাওয়া হয়নি। থেকে গিয়েছিল জনাথনের সাথে।  ডেভিড কে জানিয়ে ছিল সব কথা। বলেছিল ওদের বিবাহর দিন ঠিক হয়েছে। ওরা জেনো আসে এই অনুষ্ঠানে।

কিছু মাস পর জনাথন নূতন কাজ নিয়ে চলে এসেছিল লন্ডনে ফ্লরেন্তাকে নিয়ে। ফ্লরেন্তা আরম্ভ করেছিল স্কুলের মাস্টারি। কাজের ফাকে ফাকে দুজনে চলে যায় বিভিন্ন জাগায়। বাবা মা হারিয়ে যাওয়ার বেদনা লাঘব হয়েছে ফ্লরেন্তার। মানসিক ভারসাম্য ফিরে পেয়েছে।

একদিন ফ্লরেন্তার স্কুল ছুটি হয়েছিল নির্ধারিত সময়ের আগে। ঠিক করেছিল জনাথন কে ফোন করে বলবে লাঞ্চ করবে একসাথে। কি মনে করে ফোনটা রেখে দিয়েছিল। ভেবেছিল তার নিজেস্ব কিছু কাজ আজে, সময়ের অভাবে শেষ করা হয়ে ওঠেনি। তাই বাসায় ফিরে যাওয়াটাই মনস্থ করল ।বাসার ড্রাইভওয়েতে অচেনা একটা গাড়ী। জনাথনের গাড়ীও এই মুহূর্তে এখানে থাকার কথা নয়। ভয়ে ভয়ে দরজাটা খুলেছিল ফ্লরেন্তা।

জনাথন সোফাতে গভীরভাবে মিশে গেছে এক অচেনা মেয়ের মাঝে। শুধু শুনতে পেলো ইস,উঃ,আঃ,আঃ শব্দ। হাতের কাছের ফুলদানী টা ছুড়ে ফেলেছিল। ঝনঝন শব্দে ভেঙ্গে পড়েছিল দুরে। জনাথন কে বেড়িয়ে যেতে বলেছিল বাসা থেকে।

সেই শেষ।

তারপরের ঘটনা সংক্ষিপ্ত। স্কুলের এক মিটিং এ দেখা হয়েছিল এনড্রুর সাথে। এনড্রু বলেছিল ওর এনড্রু কমিউনিটি প্রজেক্টের কথা। ফ্লরেন্তার ভালো লেগেছিল। হারিয়ে যাওয়া ছেলে মেয়ে গুলোকে ভালবাসা দিয়ে মানুষ করার দায়িত্ব নিয়ে ছিল। আর পিছনে ফিরে তাকায়নি।

বিমান বন্দরে বিদায় দিতে এসে বলেছিল, আনন্দ তোমার সান্নিধ্য আমার খুব ভালো লেগেছে। পারলে আবার এসো।

   আনন্দের কেন জানি অস্বস্তি লাগছে আজ। দুদিন ঘুম আসেনি। গতকাল আনন্দ জিজ্ঞাসা করেছিল সানন্দাকে ,” যাবে নিউপোর্টে বেড়াতে? খুব একটা দুর নয়। সকালে যেয়ে রাতে ফিরে আসবো। যাবে?”

হা, না কিছুই সে বলেনি। যেতে ইচ্ছুক্ক নয় মনে হোল। কোথায় জেনো একটা দ্বিধা। আনন্দ আর কোথা বাড়ায়নি। আনন্দের স্বভাব, একবার চাইলে যদি না পাওয়া যায়, দ্বিতীয় বার সেটা চাইতে সে রাজি নয়। আজ হঠাৎ করে কেন সব কিছুর পরে বিতৃষনা আসছে সে বুঝতে পারছেনা। রাত দশটা। মনে হচ্ছে কারো সাথে যদি একটু কথা বলেতে পারতো হয়ত ভালো লাগত। সানন্দা কে ফোন করেছিল।

বলল,” ভাল লাগছেনা। তাই কথা বলে কিছুটা সময় পার করতে চেয়েছিলাম। তুমি কি বাস্ত?”

একটু, কাল কথা বলবো?

ফোনটা রেখে কিছুক্ষণ পায়চারী করলো আনন্দ। নীচে নেমে টিভি টা অন করলো। ভালো খবর নেই। শুধু মারামারি কাটাকাটি। বন্ধ করে দিলো। মাথার পোকাটা আজ আনন্দকে পেয়ে বসেছে। রাত এগারটা।

গাড়ীর চাবিটা হাতে নিয়ে বেড়িয়ে এলো। রাস্তা নির্জন। ভাবল কিছুক্ষণের জন্য উদ্দেশহীন ভাবে ঘুরবে। একটু ড্রাইভ করতেই পাশে একটা পার্ক দেখে থামালো গাড়ীটা। পার্কের ভিতরে পায়ে চলা পথ। কিছুদুরে একটা ছোট্টও দীঘি। শান বাধানো। আনন্দ এসে বসলো সিঁড়িটার পরে। ফুটফুটে জোছনা। চাঁদের এলো ঝরেঝরে পড়ছে দীঘির জলে। নিস্তব্ধ চারিদিক। নিস্তব্ধটাকে ভাঙতে চাইল আনন্দ। ছোট্টও একটা পাথর ছুড়ে মারল দীঘির জলে। টলমল করে উঠল জল। চাঁদের আলো জলের ঢেউএ মিশে সৃস্টি করলো এক অপূর্ব মায়াময় পরিবেশ। আনন্দের মনে হোল অসংখ্য হীরের টুকরা ঝলমল করছে।

চোখ বুজে এলো। শুয়ে পড়ল দীঘির পাড়ে।

ফিরে গেল অনেক পিছনে।

বসুন্ধরা মার্কেটে ঘুরছিল ওরা দুজন।

কণার ব্যাগে টান পড়তেই হাতটা চেপে ধরেছিল। ছোট্টও বাচ্চার হাত। ফিরে তাকাতেই দেখল চোখ ছলছল করা এক সাত আট বছরের ছেলে।

বললও, “ আমাকে পুলিশে দিয়েন না মেম সাব ওরা আমাকে মেরে ফেলবে।”

একাজ কেন করছিস ? ধমক দিয়েছিল কণা।

ওরা আমাকে করতে বাধ্য করেছে, তা না করলে আমার হাত কেটে ফেলবে।

ওরা কারা? জিজ্ঞাসা করেছিল কণা

যাদের কাছে মা বাবা আমাকে বিক্রি করে দিয়েছিল।

বিক্রি করে দিয়েছিল?

হা, মাত্র পাঁচশ টাকা দিয়ে। আমার অনেক খিদে পেয়েছে মেমসাব।

কণার হাসি পেয়েছিল। সে এসেছিল চুরি করতে, এখন চাচ্ছে ভাত। কণা নিয়ে গিয়েছিল পাশের হোটেলে।

খাওয়া শেষে বলেছিল, আমরা ছিলাম দুই ভাই এক বোন। কোন দিন পেট ভরে খেতে পারিনি। বাবা ছিল অসুস্থ।

মা অন্যের বাসায় ধোয়া মোছার কাজ করত। মার পাশে আমরা দুই ভাই শুয়ে থাকতাম। রাতে দেখতাম মা কাঁদছে। একদিন দেখলাম দুটা লোক এসে মা বাবার সাথে কি জেনো গুজগুজ ফুসফুস করছে। আমি আসতেই ওরা কথা বন্ধ করে দিলো। আরও একদিন দেখলাম ওদেরকে। শুনলাম টাকার কথা বলছে। পাঁচশো, পাঁচশো।

এর পর কথা নয়। শুধু খসখস শব্দ শুনলাম। শুনলাম কান্নার আওয়াজ। মার কান্না মনে হোল।

কিছুই বুঝলাম না। ভাই আমার দু বছরের বড়। ওকে জিজ্ঞাসা করলাম। ও একবার আমার দিকে তাকাল। তারপর আকাশের দিকে তাকিয়ে কি জেনো গুনতে থাকল। সেই শেষ দেখা তার সাথে আমার।

ওরা বেড়িয়ে এলো। বাবা শুয়ে ছিল। ডাকল আমাদেরকে। শুধু দুজনের মাথায় হাত বুলাল। কিছু বলল না।

চোখের কোণ দিয়ে দু ফোটা জল গড়িয়ে পড়ল।

মা পাশের ঘরে ডেকে নিয়ে যেয়ে বলেছিল, ওদের সাথে যেতে, ভালো ভালো খেতে পারবো। নতুন নতুন জামা কাপড় পাবো। এখানে তো একবেলাও খাওয়া জোটেনা। ছেড়া কাপড় পরে থাকি।

ওরা শিখিয়ে ছিল কেমন ভাবে পকেট কাটতে হবে। বলেছিল যদি প্রতিদিন এই পরিমাণ টাকা না আনতে পারি তবে খাওয়া বন্ধ। আর চাবুক দিয়ে পিঠ ছিলে দেবে।

পিঠের কাপড় উঠিয়ে দেখিয়েছিল দাগ গুলো। দু একটা জাগা এখনো শুকিয়ে যায়নি।

কণা উঠে চলে গিয়েছিল। গিয়েছিল রেস্টরুমে। আনন্দ জানে কণা ওখানে যেয়ে কাঁদবে।

ফিরে এসেছিল চোখ লাল করে। কিছু টাকা ওর হাতে দিয়ে বলেছিল, “ তুই যা, এর বেশি আমি তোকে কিছু করতে পারবোনা। ওদের হাত থেকে আমি তোকে বাঁচাতে পারবোনা।”

সে চলে গেল, মিশে গেল ভিড়ের মাঝে।

কোথায় একটা খসখস শব্দ। উঠে বসল আনন্দ। সেল ফোনটা খুঁজল। পেলোনা। হয়ত গাড়ীতে। কিছুই মনে করতে পারলনা। চাঁদটা ঢলে পড়েছে পশ্চিমে। পাখিদের কলকাকলী নাই। ভোর হতে দেরী আছে। আনন্দ চিন্তা করলো কোথায় সে তার গাড়ীটা পার্ক করেছিল। পায়ে চলা পথ দিয়ে এগুতেই দেখতে পেলো কে একজন সামনে এগিয়ে আসছে। ভাবল ওরই মত দুঃখ বেদনা দুর করতে এসেছে এই নির্জনে। কাছে এসে দাঁড়ালো। এই গরমেও মাথা হুডটা দিয়ে ঢাকা। চাঁদের আলোতে ঝলমল করে উঠল ওর হাতের সিলভার রংএর পিস্তল টা।

ক্রমশ

Continue Reading