আকাশ ভেঙ্গে জল ঝরছে। আনন্দ জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখছিল। লাবন্য আর আমেনা এসেছে আজ চার মাস হয়ে গেলো। কি ধুমধাম করেই না ওরা গিয়েছিল এয়ারপোর্টে ওদেরকে আনতে। সু, দীপ, রেজ, বৌমা গল্পে মেতে গিয়েছিল লাবন্যর সাথে। লাবন্যকে বুঝতে দিলোনা সে নতুন কোন জাগায় এসেছে। লাবন্যও মিশে গিয়েছিল ওদের সাথে। আমেনার চোখে জল। আমেনা বলেছিল,” দাদা এতো সুন্দর করে ওদেরকে মানুষ করেছিলে কি ভাবে?”। প্রতি উত্তরে আনন্দ বলেছিল,”কৃতিত্ব তার, আমার নয়”।
সানন্দা বাসাতে ছিল ওদেরকে অভ্যর্থনা করার জন্য। খাওয়া শেষে বলেছিল আমেনাকে “ এবার তুমি বুঝে নাও। আমার শেষ, তোমার শুরু”।
“তাতো হবার নয়। আমি তার বোন, তুমি তার বন্ধু। তুমি যা দিতে পারবে আমি তা দিতে পারবো না। তোমার সাথে কথা বলে তার যে আনন্দ, আমার সাথে তা সে পাবেনা। কাজেই তোমার ছুটি নেই, বোন”।
আজ হঠাৎ করে কেন এসব মনে পড়ছে আনন্দ জানেনা।
“কি ভাবছ কাকুমনি?”
লাবন্য দাড়িয়ে। আনন্দ তাকাল ওর দিকে। খুব সুন্দর করে সেজেছে। বৌমা,সু মিলে শিখিয়েছে কোন রং এর সাথে কোন রং যাবে।
“কোথায় যাবে?”
“দীপ ভাইয়া, সু আর ভাবী আসবে নিতে। আটলানটিক সিটি তে যাবো। তুমি কি ভাবছ”?
সে কথার উত্তর না দিয়ে আস্তে করে ওর কপালের চুল টা সরিয়ে দিলো আদর করে।
ওর মুখটার দিকে তাকিয়ে মনে পড়ল মহীউদ্দীনের কথা। মেয়েটাকে সে দিয়ে গেছে তার হাতে। এ যে কত বড় দায়ীত্ব আনন্দ ছাড়া আর কেউ জানেনা। মানুষ করে দিয়ে যেতে হবে ওকে। তুলে দিতে হবে ভাল পাত্রের হাতে। আনন্দের কতটুকু সময় আছে সে নিজেও জানেনা। ওর জন্য একটা ফান্ড খুলেছে বাঙ্কে। আনন্দের অবর্তমানে দীপ আর সু র উপর দায়ীত্ব দিয়েছে দেখাশুনা করার।
দীপ আর সু বলেছিল,” তোমার এই হার্ট ব্রেকীং কথা বার্তা একটু থামাবে?”। সানন্দাও তাতে যোগ দিয়েছিল। আমেনা অন্য দিকে তাকিয়ে শাড়ীর আঁচল দিয়ে চোখ দুটো মুছেছিল।
সু র চীৎকার শুনে আনন্দ ফিরে তাকাল। চীৎকার লাবন্যর সাঁজ দেখে। “ অপূর্ব লাগছে দেখতে। খুব সুন্দর হয়েছে”,
বলে আনন্দের কাছে এসে বলল,” কেমন আছো আব্বু?”।
“ ভাল, কখন ফিরবে?”।
“রাত হবে, লাবন্য আমাদের বাসায় থেকে যাবে”। বলে আমেনার কাছে চলে গেলো।
কথা শেষে ওরা উঠে গেলো গাড়ীতে। আনন্দ তাকিয়ে থাকলো। গাড়ীটা মোড় নিতেই আনন্দ ফিরে তাকিয়ে দেখল আমেনা পাশে দাড়িয়ে।
“বলবি কিছু?”
“তুমি বেশি আস্কারা দিচ্ছ মেয়েটা কে’?
“ ভাবিস না। এদেশে থাকলে এদেশের মতো করে মানুষ করতে হবে। কিছুটা ছাড়তে হবে আবার কিছুটা টানতে হবে”।
“ তুমি যা ভাল বোঝ তাই কর”।
“ সানন্দা আসবে না আজ?” জিজ্ঞাসা করল আনন্দ
“আসবে, একটু দেরী হবে বলেছে”। বলে আমেনা চলে গেলো রান্না ঘরের দিকে।
বাহিরে বৃষ্টি। তবুও জানালাটা একটু খুলে দেবে ভাবল। ঘরটা গুমট হয়ে রয়েছে। তাপমাত্রা আজকে নব্বই এর উপরে যাবে। জানালাটা খুলতে যাবে ফোন টা বেজে উঠল। ফ্লরেন্তার ফোন। অনেকদিন ওর সাথে কথা হয়নি আনন্দের।
হ্যালো বলতেই ফ্লরেন্তা কল কল করে উঠল। মনে হোল তার মন আজ আনন্দে ভরপুর।
“কি ব্যাপার? খুব মুডে আছো মনে হচ্ছে?”
“ সত্যি তাই। একজনের সাথে ডেটিং করছিলাম অনেকদিন ধরে। মনের মত। গতকাল সে প্রপজ করেছে”।
“কনগ্রাচুলেশন! তা সে ভাগ্যবানটা কে?”
“দেখা হয়েছিল আমার এক বান্ধবীর পার্টিতে”।
“ আমি সত্যিই খুব খুশি হয়েছি। শুভদিনটা জানিও। অবশ্যই যাবো”। বলল আনন্দ।
কথা শেষে জানালাটা খুলে দিলো। বৃষ্টিটা কমে এসেছে।
কখন যে আমেনা এসে পাশে দাঁড়িয়েছে খেয়াল করেনি আনন্দ। “ কিছু বলবি?”
“ কে ফোন করেছিল?”
“ ফ্লরেন্তা, মনে আছে তোকে বলেছিলাম, লন্ডনে থাকে। ওকে প্রপজ করেছে ওর ফীয়ান্সে”।
“একটা কথা বলি দাদা” “বল”
“ কয়েক দিন থেকে দেখছি তুমি বুকের বা পাশটা হাত দিয়ে চেপে ধরে রাখো। কেন”?
“ ওসব নিয়ে তোর চিন্তা করতে হবেনা।“ বলল আনন্দ
“ আমি সানন্দা দি আর সু কে বলব ভাবছি। যদি কিছু করতে পারে তবে তারাই পারবে”।
আর একটা কথা আছে।
কি?
“একটু চিন্তা করে দেখবে কি? অনেক দিন তো হোল”।
আনন্দ তাকাল আমেনার দিকে। কিছু বলল না।
ডি অ্যান্ড জে আবার ভরে উঠেছে কোলাহলে। রাশেদ ছাড়াও আরও দুজন যোগ দিয়েছে এই ফার্মে। ডেভিড একদিন আনন্দকে ডেকে নিয়ে বলেছিল ,” এবার আমার গুছানোর পালা। রিটায়ার করব ভাবছি। জেনীফারও চাচ্ছে অবসর নিয়ে বাকি দিন গুলি একসাথে ঘুরে বেরিয়ে কাটিয়ে দিতে”।
না, উত্তর দিয়ে ছিল আনন্দ। “ জানি বয়স অনেক হোল। সব ছেড়ে দিলে বুড়ীয়ে যাবো তাড়াতাড়ি। আজকাল বাহিরে একেলা যেতে ভরসা পাইনা। দুটো স্টেনট লাগানো। যদি কিছু হয় তবে এখানেই হোক। বাহিরে কিছু হলে টানা হেঁচড়া করবে কে?”
কথা ওখানেই শেষ হয়েছিল।
তিন টা বছর চলে গেলো জীবনের খাতা থেকে। কত কিছুই ঘটে গেলো। লাবন্য চলে গেছে হোস্টেলে। ডেভিড অবসর নিয়ে বাস করছে ফ্লোরিডায়। দীপ আর সু র পরিবারে যোগ হয়েছে দুটো কীউটি পাই।
ডেভিডের ফেয়ারওয়েল পার্টি হয়েছিল খুব ধুমধাম করে। সবাই এসেছিল। এসেছিল বেলাল-কল্যানী, এমিলির বাবা,মা, এসেছিল জনের মা। আনন্দ বলেছিল সবাইকে। ওদের মধ্যে দেখেনি কোন হিংসাত্মক ভাব। ডেভিড সবাই কে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেছিল সে যা পেয়েছে এর চেয়ে বড় পাওয়া আর কিছু নয়।
এক অলস বেলায় আনন্দ বসেছিল Drawing রুমে। নতুন একটা বই দিয়েছে তার বন্ধু ফেরদৌস। সেই বই এর মধ্যে ডুবে ছিল। অন্ধের কাহিনী। জন্মান্ধ। পৃথিবীর সৌন্দর্য সে দেখেনি। নিজে তৈরী করে নিয়েছে। সে দেখেনি সুন্দরের পাশে অসুন্দর। অপূর্ব লেখা।
কলিং বেলটা বেজে উঠল। একটু বিরক্তই হয়েছিল আনন্দ। এই ভঁর দুপরে কে এলো?।
আমেনা দরজাটা খুলে বলল,” এসেছ, এসো”। মনে হোল যে এসেছে তাকে সে আসা করছিল।
আনন্দ তাকাল। Drawing রুম থেকে দেখা গেলনা। জিজ্ঞাসা করল,” কে এসেছে আমেনা?”
“সানন্দা দি”।
সানন্দা, এই সময়?
“কেমন আছো?” বলে এসে দাঁড়াল সে।
“ এই ভঁর দুপুরে?”
“কেন? আসতে নেই? এসেছি আমেনার সাথে গল্প করতে”।
আনন্দ হাসল। সানন্দা চলে গেলো আমেনার ঘরে।
আনন্দ বইটা উঠিয়ে নিলো চোখের সামনে।
“দাদা”।
ডাক শুনে তাকাল আনন্দ। আমেনা আর সানন্দা সামনে দাড়িয়ে। মনে হোল কি যেন হয়েছে। হাসি হাসি মুখ নয়। আনন্দের বুকটা ধক করে উঠল।
“ কি কিছু বলবি?”
“হা। লাবন্যর ব্যাপারে”।
“ কি হয়েছে ওর?”
“একজন কে তার পছন্দ। তবে–”।
“ কে সে?”
“এদেশি” ভয়ে ভয়ে বলল আমেনা। “ আমেরিকান”।
“তা অসুবিধাটা কোথায়? যদি উদার মন হয়। আমার মেয়েকে ভালবেসে সুখী রাখতে পারে সারা জীবন, তাহলে আমার কোন আপত্তি নেই”।
ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ল আমেনার। ভেবেছিল আনন্দ রাজি হবেনা। যদিও সানন্দা বলেছিল,” দেখো, তোমার দাদা আপত্তি করবেনা যদি ছেলে ভালো হয়”। সানন্দা আজ এসেছিল শুধু আমেনাকে সাহস দেওয়ার জন্য। কথার জের টেনে সে আমেনার দিকে তাকিয়ে বলল,” তোমার দাদাকে বলেছ যে ছেলে মুসলমান হতে রাজি আছে”। আমেনা মাথা নেড়ে সাই দিলো। আনন্দ দুজনের দিকে তাকিয়ে হেসে বলল,” তোমার মেয়েকে বলো, ওকে একদিন ডিনারে নিয়ে আসতে। সু,দীপ,রেজ বৌমা কেও ডেকো। যদিও জানি ওরা সবই জানে”। একটু থেমে বলল,” এক কাপ কফি নিয়ে আয় আমার জন্য”। আমেনা যাওয়ার আগেই সানন্দা বলল,” তুমি বিশ্রাম নাও আমি বানিয়ে আনছি”।
“ কার্ডিওলজীস্টের সাথে এপয়েন্টমেন্ট করেছি আগামীপরশু সকাল দশটায়। আমি নিয়ে যাবো”।
আনন্দ জানে এখানে দর কষাকষি করে লাভ নেই। অগত্যা মাথা নেড়ে সাই দিল। বলল,” এই ভাবে আর কতদিন ঠেকা দেবে।“
“আল্লাহ যতদিন আমাকে দিয়ে করতে দেয় ততদিন করে যাবো”। বলে খালি কফির কাপটা হাতে নিয়ে উঠে গেল রান্না ঘরের দিকে।
আরও একটা বছর কোথা দিয়ে চলে গেলো। লাবন্যর বিয়ের কথা বার্তা চলছে। মাঝে মাঝে সু, দীপ বিচ্ছু দুটোকে রেখে যায় আনন্দের কাছে। ওরা আনন্দকে ঘোড়া বানিয়ে পিঠে চড়ে খেলা করে। আমেনা হাসে। আনন্দ ভুলে যায় সব কিছু।
সেদিন আমেনাকে ডেকে আনন্দ বলেছিল,” তুই কি জানিস সানন্দা কোথায়? বেশ কিছুদিন হোল সে কলও করে না আসেও না। আমি কল করেছিলাম, উত্তর নাই”।
“ না জানিনে তো,” বলে তাড়াতাড়ি অন্য ঘরে চলে গিয়েছিল।
বেলা পড়ে এসেছে। পশ্চিমের আকাশ টা লাল রংএ ছেয়ে গেছে। আনন্দ বাহিরে Deckএ বসে চোখ বূজে রবীন্দ্র সংগীত শুনছিল আর ভাবছিল, কত কিছুই না দেখল সে। এমিলি, জন চলে গেলো। ফ্লরেন্তা পেলো নুতন জীবন। ছোট্ট বোবা মেয়েটাও কোথায় হারিয়ে গেলো। মহীউদ্দীনের সেই হাসিতে উদ্ভাসিত উজ্জ্বল মুখ। আর সবশেষে সানন্দা। হাঁ, সানন্দা, ভাবনাটা শেষ হলনা। ডাক শুনতে পেলো।
“কেমন আছো?”
আনন্দ তাকাল। সানন্দা। “ এতদিন কোথায় ছিলে?”
সানন্দা সে কথার উত্তর না দিয়ে তাকিয়ে রইল আনন্দের মুখের দিকে। কি যেন বলতে চাইছে।
“কিছু বলবে?”
“ভাবছি কথাটা কীভাবে বলব। সহজ ভাবে বলার নয়”।
“ তা নাইবা বললে”। বলল আনন্দ।
“ বলতে আমার হবেই। আর সেই জন্যই এই কদিন তোমার সামনে আসেনি। সাহস সঞ্চয় করছিলাম। আজ তোমার সামনে এসে সেই সাহস আমি হারিয়ে ফেলেছি , আনন্দ দা”।
“নির্ভয়ে বলো”।
“আমি চলে যাচ্ছি, আনন্দ দা, আমি চলে যাচ্ছি নিউইয়র্ক ছেড়ে”।
স্ল্যাইডিঙ্গ ডোরের ওপাশ থেকে ভেসে এলো আমেনার কান্নার ফুঁপানো শব্দ।
আনন্দ চেয়ে রইল সানন্দার দিকে। বুকের মাঝটা খালি হয়ে এলো। মনে হোল অনেক কিছু সে হারিয়েছে জীবনে, আজ আবারও কি যেন সে হারাতে চলেছে।
অবিশ্বাসের সুরে জিজ্ঞাসা করলো, “ কোথায়”?
“ডালাসে, আমার বোনদের কাছে”। বলে চোখ মুছলো ওড়নার আঁচল দিয়ে।
কিচ্ছুক্ষণ চুপ করে থেকে আনন্দ বলল,” তুমি তো জানো, আমার জীবনটা ছিল আনন্দে ভরপুর, সে তার সব কিছু উজাড় করে দিয়েছিল আমায়। মাঝ পথে এসে একদিন দেখলাম সে নেই। খুঁজেছি তাকে পর্বতের শিখর চুড়ায়। আবার ফিরে এসেছি চার দেয়ালের মাঝে। খুঁজেছি ঘরে ঘরে। খুঁজেছি ধু ধু মাঠের প্রান্তে যেখানে সবাই ঘূমায়ে। অস্থিরতা আমাকে পেয়ে বসেছিল। সেই সময় তুমি কোথা থেকে এসে সেই ভেসে যাওয়া নৌকাকে পাড়ে নিয়ে এলে। তোমার সাথে গড়ে উঠল এক অমঘ বন্ধুত্ব। যা ভাঙ্গার নয়। আমি চেয়েছিলাম এক কথা বলার সাথী। তুমি এলে সেই কথা বলার সাথী হয়ে। তুমি বলেছিলে,” সে হারিয়ে যায়নি আনন্দ দা। তোমার পাশে পাশেই আছে। আমাকে দেখো, আমিতো বেচে আছি সন্তানদের আঁকড়ে ধরে। তোমাকেও বাঁচতে হবে”। সেই থেকে তুমি ছিলে আমার পাঁশে।
মনে পড়ে? তোমার বাসায় ডিনার শেষে তুমি বলেছিলে, “এক টুকরো মাছ আছে, দিয়ে দেবো”? সে দেওয়া তো আজও থামেনি, শুধু দিয়েই গেলে, নিলেনা কিছু”। বলে আনন্দ থামল।
“ না,তুমি আমাকে দিয়েছ অনেক, তুমি আমাকে শিখিয়েছ, কি ভাবে কথা বলতে হয়। যে আমি দু মিনিটের বেশি কারো সাথে কথা বলতে পারতাম না, সেই আমি তোমার সাথে ঘণ্টা ধরে কথা বলি, সে তো তোমারই দান, আনন্দ দা। তুমি বলতে, আমি জেনো কখনো নিজেকে ছোট না ভাবি, বলতে, কখনো বলবে না তোমার কোন গুন নেই। এযে কত বড় প্রেরনা তুমি আমাকে দিয়েছিলে তা তুমি বুঝবে না আনন্দ দা, তা তুমি বুঝবে না। দূরে গেলেও আমি তোমারই পাশে আছি জেনো। আমি যত দূরেই থাকি না কেন তোমার আমার বন্ধুত্ব চিরদিন অটুট থাকবে আনন্দ দা”।
আনন্দ সানন্দার চোখের দিকে তাকিয়ের রইল, কি জেনো খুজছে সে, বলল,”জানি তোমাকেও কোথাও যেয়ে আজ ঠাই নিতে হবে। তোমারও তো চুলে পাক ধরল। অনেক তো করলে। এবার পাখা গুটিয়ে বসার সময়। আমার জন্য ভেবো না। আমি বাঁচবো, আমি বাঁচবো ওই কিউটি পাঁই দুটোকে বুকে আগলে ধরে, ওদের নানা দাদা ডাক শুনে। ওদের মাঝেই আমাকে বাঁচতে হবে সানন্দা, ওদের মাঝেই আমাকে বাঁচতে হবে। ওর রক্ত রয়েছে ঐ দুটো নিষ্পাপ শিশুর মাঝে। ওরাই আমাকে পথ দেখাবে, ওদের মাঝেই আমি খুজে পাবো তাকে, ওদের মাঝেই আমি খূজে পাবো”। আনন্দের গলার স্বর ভাঙ্গা।
সানন্দা আনন্দের হাতটা চেপে ধরল। কান্না ভরা গলায় বলল,” কথা দাও, নিজের দিকে খেয়াল রাখবে? ঔষধ গুলি খেতে ভুলবে না? আমার মাথার দিব্যি রইল”। টপ টপ করে চোখের জল পড়লো ওর হাতের পরে।
“কথা দিলাম”।
সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো। আকাশে তারার ঝিলিমিলি। দূরে ঝিল্লির ডাক। জোনাকি পোকারা তাদের আলো জ্বালিয়ে ঘুরছে চারিদিকে। নিস্তব্ধ অন্ধকার। তার মাঝে চাপা কান্নার শব্দ। সানন্দা কাদছে। আনন্দ জল ভরা চোখে তাকিয়ে আছে দূরে বহু দূরে।
“কোথায় যাবো শুনবে? মালয়েশিয়া”। সানন্দা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইল। বিশ্বাস হচ্ছেনা।
“ আকরাম আর আমি এক সাথে লেখা পড়া করতাম। থাকে কুয়ালা লামপুর। ডাক্তার, কাজ করে এক নাম করা হাসপাতালে। ওর ঐখানে উঠবো। তোমাকে সারপ্রাইজ দেবো বলে কিছু বলিনি”। বলল আনন্দ।
টিকিট কেটেছ? প্রশ্ন সানন্দার
সব ঠিক। দুদিন পরে রওনা দেবো। সব কিছু গুছিয়ে নিও।
গোছান শেষ। এবার যাত্রা কুয়ালা লামপুর এর পথে। সানন্দা বসে ছিল জানালার পাশে। ওটা ওর প্রিয় জায়গা। বলল,” কোনদিন ভাবিনি এই দেশটা দেখতে পাবো”।
“তোমার ভাষায় উপরওয়ালার ইচ্ছা। তা না হলে কি দেখতে পেতে?”
সারে তিন ঘণ্টা পরে উড়োজাহাজ এসে পৌছাল কুয়ালা লামপুর এর ইনটারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে। কাস্টমস ক্লীয়ারেন্স এর লাইনে দাড়িয়ে দেখতে পেলো আকরামকে। ওর পাস থাকাতে চলে এসেছিলো একেবারে কাছে।
বেরিয়ে এসে পরিচয় করিয়ে দিলো সানন্দার সাথে।
“তুই শেষ পর্যন্ত এলি তাহলে। কতদিন পরে দেখা”।বলল আকরাম।
সুন্দর ছিমছাম বাসা। বড় বড় ঘর। সানন্দা এসেই আকরামের বৌ দীপার সাথে গল্প জুরে দিলো। মনেহোল অনেক দিনের চেনা। এ গুনটা সানন্দার সব সময়। যে পাত্রে রাখো সেই আকার ধারন করে।
আনন্দের সাথে দীপার এই প্রথম দেখা। দীপা এগিয়ে এসে আনন্দকে বলল,” আনন্দ দা তোমার কথা খুব যে একটা শুনেছি তা নয়। তবে দেখে মনে হচ্ছে, কোথায় যেন দেখেছি তোমাকে”।
“ একথা কস্মীন কালেও তোমার স্বামীকে বলবে না। তা হলে —“। কথা শেষ হওয়ার আগেই আকরাম হাসতে হাসতে বলল, “ তোর ইয়ার্কি ঠাট্টা রাখবি? খেতে বস”।
খাওয়া শেষে আনন্দ সোফাতে হেলান দিলো। সানন্দা গেলো তার রুমে।
বিকেলে আনন্দ সানন্দাকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ল। আনন্দ আসার আগে পড়াশুনা করে এসেছে এই জাগার উপর। কি কি দেখবে, কি কি কিনবে। আনন্দ সনন্দাকে বলল, “ আজতো সময় হাতে বেশি নেই চলো দেখে আসি বড় মল টা ”।
খেতে খেতে কথা হোল, দীপা আকরাম এক সাথে পড়া কালীন পরিচয়। সেই সুবাদে বিয়ে। তাও অনেক বছর হয়ে গেলো। বাসা খালি। কাল আমরা বের হব পেট্রোনাস টাওয়ার দেখতে, বলল আকরাম।
সকাল সকাল বেরিয়ে পরেছিল ওরা। সাথে পানির বোতল, চিপস নিয়ে নিলো দীপা। সানন্দা সাদা কালো কামীজের সাথে ম্যাচ করে প্যান্ট পরে নিলো। চোখে প্রাদা সান গ্লাস।
পেট্রোনাস টাওয়ার, পৃথিবীর সব চেয়ে টলেসস্ট বিল্ডিং। আনন্দ সানন্দাকে বলল,” জানো এই টাওয়ারে Mission Impossible মুভির শুটিং হয়েছিল”। অবজারভেসন টাওয়ার থেকে দেখেছিল কুয়ালা লামপুর শহর। সব কিছু দেখা শেষে আনন্দ সানন্দাকে জিজ্ঞাসা করল কেমন লাগছে।
অপূর্ব। অতুলনীয়।
নিউইয়র্ক থেকে একটা ফোন এলো। তারপরই সানন্দা বলল তার শরীরটা ভাল লাগছে না।
” আমাদের তাড়াতাড়ি নিউইয়র্কে ফিরে যেতে হবে আনন্দ দা। তোমার কোন অসুবিধা হবে না তো।“
সানন্দা উত্তর দেয়নি। শুধু বলেছিল,” দোয়া করো ওখানে যেয়ে যেন সব কিছু ভালো দেখতে পাই”।
আনন্দ দুদিনের মধ্যে ঠিক করে ফেলল সব কিছু। যাওয়ার আগে আমেনা ভাবী কে বলে গেলো ভিসার বাপারে। দিয়ে গেলো সব কাগজ পত্র।
এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়ে আনন্দ দেখল অঞ্জলী দাড়িয়ে। সানন্দা কে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকল। গাড়ীতে করে এলো হাসপাতালে। আনন্দ কিছুই বুঝতে পারলনা। জিজ্ঞাসা করতে মন চাইছে কিন্তু পারছেনা। অবশেষে না জিজ্ঞাসা করে পারলনা।
“ বলোতো, কি হয়েছে?”
অঞ্জলী বলল,” খালুর হার্ট অ্যাটাক হয়েছে”।
আনন্দ বাচ্চু কে চেনে। ওই বাসাতেই সানন্দা আনন্দকে প্রথম দেখে ছিল।
ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের সামনে সবায় দাঁড়ান। সানন্দা এসে ওর বোনকে জড়িয়ে ধরল। দুজনে কাঁদল অনেকক্ষণ। আনন্দ এসে বাহিরে দাঁড়াল।
জমের সাথে যুদ্ধ করে হার মানতে হোল বাচ্চু কে। চলে যেতে হোল এই পৃথিবী থেকে। আনন্দ সানন্দার পাশে এসে দাড়িয়েছিল এই দুঃসময়ে। যতটুকু করার সে করেছিল।
দিন শেষে মাস এলো। আস্তে আস্তে সানন্দা দুঃখের ভার কাটিয়ে উঠল।
“তুমি বলেছিলে দেখতে চাও সেই বাসাটা যেখানে আমি প্রথম সূর্যের আলো দেখেছিলাম। সেই তেঁতুল গাছটা যার নীচে এক্কা দোক্কা খেলতাম আমারই মতো ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের সাথে। সেই বকুল গাছটা। ভোরের আলো ফোটার আগে কুড়িয়ে নিতাম বকুল ফুলগুলো। আম গাছটা। দাদির ঘরের জানালা দিয়ে দেখা যেতো। দাদি দুপুর বেলা তাকিয়ে তাকিয়ে পাহারা দিতো। যেনও বিচ্ছু ছেলে গুলো ঝাঁপিয়ে না পড়ে গাছটিতে। বলেছিলে দেখতে চাও সেই মাঠটা যেখানে সরু সরু দুটো পা দিয়ে জাম্বুরাকে লাথি মেরে গোল দিতাম। দেখতে চাও সেই চোঁরাস্তার মোড়, যেখানে তিন বন্ধু সাইকেল নিয়ে দাড়িয়ে দৃশ উপভোগ করতাম। হয়ত দেখবে হারিয়ে গেছে সেই মাঠ অট্টালিকার মাঝে। তেতুলের গাছ খড়ি হয়ে জ্বলছে কারোর উননে। বকুল ফুল আর ফোটে না। তবুও তোমাকে দেখাব সেই জায়গা গুলো”। এত গুলো কথা বলে আনন্দ থামল। তাকাল সানন্দার দিকে।
সানন্দা বলল, “আমি আরও দেখতে চাই সেই পথ যে পথ দিয়ে তোমরা দুজন পায়ে পায়ে হেটে গিয়েছিলে। সেই গাছ, সেই মাঠ, সেই ফুল বাগান যারা তোমাদের সান্নিধ্য পেয়েছিল। সেই গেট, যেখান থেকে সে বেরিয়ে এলে তুমি বলেছিলে কাঠবেড়ালিরা থমকে দাড়িয়ে যেতো। সেই বাসা যেখানে সে তোমার বাহুর বন্ধনে নিজেকে উজাড় করে দিয়েছিল”।
আনন্দ সানন্দাকে উলেন কোটাটা পড়ে জীপার টা লাগিয়ে নিতে বলল। “অনেক দিন পরে এসেছ , আবহাওয়ার সাথে এডজাস্ট করতে সময় লাগবে”, বলল আনন্দ।
সানন্দা তাকাল আনন্দর দিকে, একটু হেসে জীপারটা টেণে উপরে উঠিয়ে দিলো। গেট থেকে দেখতে পেলো ঝুম্পা দাড়িয়ে। হাত নেড়ে জানালো তার অবস্থান। বের হয়তেই ঝুম্পা জড়িয়ে ধরল সানন্দাকে।
যান জট পেরিয়ে বাসাতে এলো দুঘণ্টা পর। আনন্দ ক্লান্ত। ওরা তিনজন হাসির ফোয়ারা ছড়াল। আনন্দের চোখ জড়িয়ে এলো ঘূমে। কাল যেতে হবে শাশুড়ি মার বাসায়
আনন্দের এপথ চেনা। কতবারই না সে এসেছে এই পথ দিয়ে। দুধারে ফসলের ক্ষেত। পীচ ঢালা রাস্তার দুপাশে বড় বড় গাছ। মাঝে মাঝে গরু ছাগল আস্তে আস্তে হেটে পাড় হচ্ছে। কোন কোন কৃষক টানা গাড়ীতে উঠিয়েছে তার মাঠের ফসল। বেচতে চলেছে দূর বাজারে।
আনন্দ সানন্দাকে বলে,”কেমন লাগছে?”
অপূর্ব।
সানন্দাকে নিয়ে যখন এসে পৌছাল তখন দুপুর গড়িয়ে গেছে। ওকে নিয়ে উপরে উঠে এলো। বলল, “এসো তোমাকে পরিচয় করিয়ে দেই আমার শাশুড়ি মার সাথে”।
দুজনে জড়িয়ে ধরে কাঁদলও অনেক। সানন্দা উঠিয়ে নিয়ে এলো শাশুড়ি মাকে। বসিয়ে দিল বাহিরের চেয়ারে। খাইয়ে দিল নিজে হাতে। শাশুড়ি মা তাকিয়ে রইল সানন্দার দিকে। কি যেনও খুজছে সে।
“এই যে দেখছ স্কুলটা এখান থেকে সে পাশ করে বেরিয়ে ছিল । প্রথম বিভাগে ভাল রেজাল্ট করে। এর আগে এত ভাল রেজাল্ট এই স্কুল থেকে কেউ করেনি। এদিকে এসো, পাশ দিয়ে হাঁটো, রিক্সায় ধাক্কা লাগতে পারে”।
“কনার নাম কেন স্কুলের দেয়ালে”?
“বলবো, দেখবে চলো”।
দুজনে এলো ভিতরে। দোতালায় কণার একটা বিরাট ছবি টাইলস দিয়ে নিখুঁত ভাবে আঁকা। অপূর্ব দেখাচ্ছে ওকে।
“তুমি তো আমাকে এসব কিছু বলোনি আনন্দ দা? কি সুন্দরই না দেখাচ্ছে? তুমি তার স্মৃতি আজীবন ধরে রাখলে এই নিখুঁত আঁকা ছবিটার মাঝে। এই স্কুলের সবেই দেখবে ছবিটা। জানবে তাকে। তাদের মাঝে সে বেচে থাকবে। সে হারিয়ে যায়নি আনন্দ দা। সে হারিয়ে যায়নি”।
“এই তো আমি চেয়েছিলাম। দোতালাটা ওর নামে উৎসর্গিত। জানো, এখান থেকে মাত্র আধা ঘণ্টার পথ যেখানে আমার জন্ম। অথচ দেখা হয়েছিল সেই সুদুর প্রান্তে”।
চলো, বাসায় ফেরা যাক। ওরা অপেক্ষা করছে।
আনন্দ, সানন্দা এসে দাঁড়াল বারান্দায়। সন্ধ্যা হয়ে এলো। একটা টিকটিকি টিকটিক করে ডেকে বেড়াচ্ছিল আলোটার পাশে। সানন্দা গায়ের চাদরটা টেনে দিলো মাথায়। দূরে আজানের ধ্বনি। রাস্তায় সাইকেলের টুং টুং শব্দ। পথিক ফিরে চলেছে তার ডেরায়। নিস্তব্ধতা খান খান হয়ে ভেঙে গেলো একটা পাখির আত্ম চিৎকারে। পাখা ঝাপটিয়ে উড়ে গেলো সে।
“খাবেনা আপা?” ডাক দিলো শোভনের মা।
খাওয়া শেষে সানন্দা শুয়ে পড়লো শাশুড়ি মার পাশে। শোভনের মা ঠাই নিলো নিচে।
মাঝ রাতে আনন্দ শুনতে পেলো শেয়ালের ডাক। মনে হোল অতি কাছে। জানালাটা খুলে তাকাল আনন্দ। জোছনা রাত। আলোর রশ্মি ছড়িয়ে পরেছে আম বাগানে। ঝলমল করছে চারিদিক। আনন্দ কতক্ষণ দাড়িয়ে ছিল জানালার পাশে মনে করতে পারেনা। ডং শব্দ করে বাহিরের ঘড়িটা জানালো রাত দুটা।
সকালে পাখির কিচিরমিচির শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেলো আনন্দের। হাত ঘড়িটাতে দেখল সকাল আটটা। বাহিরে সানন্দার কথা শুনতে পেলো। সুন্দর ভাবে মিশে গেছে সবার সাথে। কারোর মনে কোন দ্বিধা নেই। দ্বিধা নেই সম্পর্ক নিয়ে।
নাস্তা শেষে ট্যাক্সি ডেকে বেরিয়ে পড়লো দুজন। আধা ঘণ্টার পথ। সানন্দা বলল,”জানো আনন্দ দা আমি খুব একটা থ্রীল অনুভব করছি। মনে মনে তোমার ছোট বেলার চেহারাটা একে নিয়েছি”।
ট্যাক্সিটাকে রাস্তার পাশে দাড়াতে বলে আনন্দ সানন্দাকে নেমে আসতে বলল। “রিক্সা করে ঘুরব, তা নাহলে সব কিছু দেখতে পাবেনা”। বলল আনন্দ।
“এইযে দেখছ দালান বাড়ীটা, এখানে আমার জন্ম।“
“মিল পাচ্ছিনা?”
“পাবে, আগে তোমাকে ভিতরটা দেখিয়ে নিয়ে আসি, এইযে দেখছ ভাঙা কুয়াটা, এই জানালা, ওই দেখো আম গাছটা, পুব পাশে ছিল তেঁতুল গাছটা, আজ আর নেই। এবার তুমি চোখ বন্ধ করে ফিরে যাও পঞ্চাশ দশকে।
খড়ের ছাউনী দেওয়া বাসা। বছরে বছরে লোকেরা এসে পুরানো খড় ফেলে নতুন খড় লাগিয়ে দিয়ে যেতো। পরে টিনের ছাদ লাগানো হয়েছিল। এরেই একটা ছোট্ট ঘরে আমার জন্ম। ওই যে কুয়াটা দেখলে ওটা ছিল পানিতে ভরা আর গভীর। ওখান থেকে পানি উঠিয়ে গোসল করতাম। বেড়া দিয়ে ঢাকা ছিল চারপাশ, মধ্যে একটা গেট। গেট খুলে যেতাম অনুদের বাসায়। ওখানে ছিল তেঁতুল গাছ টা। তারি নীচে ওর সাথে এক্কা দক্কা খেলতাম। এইযে বড় ঘরটা দেখলে ওটা অত বড় ছিলনা। ওখানে দাদি আমাদেরকে (মানে আমি আমার ভাই এর এক বোন) নিয়ে শুতেন।
তোমাকে একটা মজার গল্প না বলে পারছিনা। সেই আমলে দাদি ছিল স্বাস্থ্য সচেতন। প্রতিদিন ভোর বেলা আমাদের সবাই কে নিয়ে প্রাতঃ ভ্রমনে বের হতেন। একদিন ভোরে দাদি ডাক দিলো আমাদের সবাইকে। আমরা সবাই গভীর ঘুমে। উঠতে হবে। চোখ কচলাতে কচলাতে বেরিয়ে এলাম রাস্তায়। কাক পক্ষী কেও নাই । শুধু আমরা চার জন। রাস্তা আলোয় আলোকিত। এমন সময় হুইসেল শুনলাম। কে জেনো পিছন থেকে ডাকছে। আমরা দাঁড়ালাম। লোকটা আগিয়ে এলো। পাহারাদার। আমাদের পরিচিত। দাদিকে চেনে। জিজ্ঞাসা করল এত রাতে রাস্তায় কেন?
দাদিতো আকাশ থেকে পড়ল। “ এত রাত মানে? এখন তো সকাল”।
পাহারাদার তার পুরান হাত ঘড়ি দেখাল। রাত তিনটা। ফুটফুটে জোছনার আলো। দাদির মনে হয়েছিল ভোর হয়ে গেছে।
এইযে ডান দিকে ভাঙ্গা জায়গাটা দেখছ এখানে ছিল রান্না ঘর। মাটির তৈরী। তুমি যেখানে দাড়িয়ে আছো সেখানে আমরা তিন ভাইবোন মাদুর পেতে হারিকেনের আলোয় পড়াশোনা করতাম। রাতের খাওয়া আমরা খেতাম দাদির হাতে। দাদি হুক্কা টানত। হুক্কার আওয়াজ বন্ধ হলে আমরা জানি আমাদের খাওয়ার ডাক পরবে। আমরা উচ্চস্বরে পড়ার মাঝে মাঝে কান পেতে থাকতাম কখন হুক্কার আওয়াজ বন্ধ হয়। সে আজ কতকাল আগের কথা”, এই বলে আনন্দ থামল।
“চোখ খুলব?”
খোলো, কেমন দেখলে?
অপূর্ব, আমার চোখে ভাসছে দাদির চেহারা আর তোমার সেই অনু, আর দেখা হয়েছিল কি?
না, জানিনা কোথায় সে, হয়ত কয়েক ছেলে মেয়ের জননী, অথবা হারিয়ে গেছে এই ধরাধাম থেকে।
এবার চলো, তোমাকে নিয়ে যাই মোড়টাতে। যেখানে আমরা তিন বন্ধু দাড়িয়ে থাকতাম সাইকেল নিয়ে। এখানে আগে ট্রাফিক পুলিশ দাঁড়াত। গাড়ী নিয়ন্ত্রণ করত। এখন সেখানে সাদা কবুতরের ভাস্কর্য।
জানো আমি প্রথম যখন সাইকেল চালানো শিখি, বয়স ছয়, বাবার সাইকেলটা নিয়ে বেড়িয়ে ছিলাম। এই মোড়ে এসে
ঘাবড়ে গেলাম। ডানে যাব না বায়ে। সাইকেল থেকে মেনে ট্রাফিক পুলিশকে জিজ্ঞাসা করলাম কোন দিক দিয়ে ঘুরতে হবে। জানো সে কি বলেছিল?
কি?
বলেছিল তিনবার ঘুরে তারপর সোজা যাবে।
তুমি তাই করেছিলে? সানন্দা মিটমিট করে হাসতে হাসতে জিজ্ঞাসা করেছিল।
তোমার কি মনে হয়?
সানন্দা হো হো করে হাসে উঠল।
চলো এবার দেখবে সেই সিনেমা হল যার সামনে সন্ধ্যা বেলা আমরা দাড়িয়ে দাড়িয়ে গান শুনতাম। দেখবে সেই রাস্তা টা যার উপর দিয়ে টুং টুং ঘণ্টা বাজিয়ে সাইকেল চালাতাম। হয়ত কোন জানালার কপাট খুলে কারো মুখ এক ঝলকের জন্য দেখা দিতেও পারে সেই আশায়।
সানন্দা শাশুড়ি মাকে জড়িয়ে ধরে অনেক কেঁদেছিল। বিদায়ের শেষে শাশুড়ি মা আনন্দকে বলেছিল, আবার এসো বাবা, পারলে আমার এই মেয়েটা কেও নিয়ে এসো।
ওরা ফিরে এলো ঝুম্পার বাসায়। সন্ধ্যা হয় হয়। ঝাল পিয়াজ দিয়ে মুড়ি মাখিয়ে ঝুম্পা ডাক দিলো ওদেরকে। সানন্দা বসলো ঝুম্পার সাথে। আনন্দ চা র পেয়ালা টা হাতে নিয়ে এসে দাঁড়ালো বাহিরের বেল্কনীতে। ভাবে, কবে এর শেষ? জীবনের এই উঁচু নীচু গ্রাফ আর কত দিন চলবে? বেশ কাটে সানন্দার সাথে কথা বলে, আবার হারিয়ে যায় ফেলে আসা দিন গুলোর মাঝে।
“কি ভাবছ?” সানন্দা এসে দাঁড়িয়েছে পাশে।
উত্তর আসেনা। আনন্দ তাকিয়ে ছিল দূরে। সানন্দা জানে আনন্দ ফিরে গেছে অনেক পিছনে।
তাকিয়ে থাকে আনন্দের দিকে।
পরদিন আনন্দ জিজ্ঞাসা করেছিল সানন্দাকে,” কোথা থেকে শুরু করবো, বলো”?
“ সেই বাড়ী যেখানে পাতাবাহার গাছের ফাকে তোমাদের ছবি আমি দেখে ছিলাম তোমার ঘরে। ওর পরনে ছিল বিয়ের সাজ। সাধা কালো ছবি”।
“ যাবো সেখানে, তবে আশা তোমার পূর্ণ হবেনা”।
তিন চাকার স্কুটারটা এসে দাঁড়াল জরাজীর্ণ পাঁচতালা বাড়ীটার সামনে।
“জিজ্ঞাসা করোনা কেন বাড়ীটার আজ মলিন চেহারা। আমি শুধু তোমাকে দেখাতে এসেছে আমার অতীত, আমাদের অতীত।
আটচল্লিশ বছর আগে টিনের ছাদ দেওয়া চার ঘরের একটা বাসা ছিল এইখানে। এই যে দেখছ বা পাশে ভাঙ্গা ঘরটা ওটা ছিল রান্না ঘর। সামনে ছিল অনেক জাগা, ওখানে ছিল পাতাবাহারের গাছ।
ডান দিকে চার ঘরেরে শেষ ঘরটা তে আমরা সময় কাটাতাম, হাসতাম, তাস খেলতাম।
তুমি কি ভাবছ? এটা বিয়ের পরে? না, এসব বিয়ের আগে। হাসতে হাসতে, খেলতে খেলতে একদিন মনে হোল আমরা জড়িয়ে পরেছি কোন এক বন্ধনে। তারই শেষ হয়েছিল এই ঘরটাতে। হয়েছিল আমাদের বাসর রাত।
তারপর?
তারপর আমরা চলে গিয়েছিলাম বাহিরে। এই টিনের বাড়ী ভেঙ্গে উঠেছিলো পাঁচ তালা দালান বাড়ী। আমরা এলে মার সাথে ওই পাঁচতালাতে থাকতাম”। বলে আনন্দ থামল।
একটা লোক বেরিয়ে আসতেই জিজ্ঞাসা করল পাঁচতালায় যাওয়া যাবে কিনা।
লোকটা বলল,”আসুন আমার সাথে”।
“পারবে তো?” আনন্দ জিজ্ঞাসা করল সানন্দাকে।
“ আজ আমি সব দেখব আনন্দ দা”।
উঠে এলো ওরা পাঁচ তালায়। দেওয়ালের রং উঠে গেছে, খসে পরছে কিছু কিছু জাগা, মাকড়সা বেধেছে তাদের বাসা।
“ এই ডান দিকের ঘরটাতে আমরা থাকতাম। মা থাকত আমাদের পাশের ঘরে। ওই যে কর্নারটা দেখছ, ওখানে মা পানের বাটা নিয়ে বসতো। কনা বসে মার সাথে গল্প করতো আর পান খেতো। সব এলোমেলো হয়ে গেলো, তাই না সানন্দা”।
“ এইতো নিয়ম। চলো নিচে যাই।“
“চলো”।
ফিরে এলো সেইখানে, সেই গেটের কাছে। সানন্দা বলল,” এই সেই গেট?”
“হা, তখন এত লোকের আনাগোনা ছিলনা। রাস্তা পেরিয়ে এসে ওই যে গাছটা দেখছ ওর ছায়ায় বসতাম। সময় কোথা দিয়ে পার হয়ে যেতো বুজতে পারতাম না”।
তারপর? তারপর তোমরা বসতে ইউনিভারসিটির মাঠে, হাটতে পীচে ডালা এই পথ দিয়ে। তাই না?
শেষ এসে দাড়িয়ে ছিলে এই মাঠে, বই মেলার দিন। তোমার কাধে মাথা রেখে বলেছিল, আর নয় এবার ফিরে চলো।
তাই, আনন্দ অন্য মনস্ক হয়ে হাঁটতে থাকল। সানন্দা কিছু বলল না। চেয়ে চেয়ে দেখল আনন্দের মুখটা। দেহটা আছে মনটা চলে গেছে অনেক দূরে। এই আনন্দকে সে চেনে। দেখেছে। ভেবেছে, কোন ভাবেই কি ওর মন টাকে ফিরিয়ে আনা যায়না? উত্তর মেলেনি।
সানন্দা যখন আনন্দকে নিয়ে বাসায় এলো তখন রাত দশটা বেজে পঁচিশ মিনিট। খাবার টেবিল সাজিয়ে রেখে গিয়েছিল। বলল,” তুমি কাপড় জামা ছেড়ে গোসল করে এসো আমি খাবার গুলো গরমে দেই।”
“রাত অনেক হয়েছে, তুমি এসো, আমি সব ব্যাবস্থা করে নেবো।” বলল আনন্দ। যদিও জানে সানন্দা যাবেনা। সানন্দা একবার তাকাল আনন্দের দিকে, কিছু বলল না। কথা বলার সাথী বলতে তো সেই।
গোসল সেরে নেমে এলো আনন্দ। শরীর চলছেনা। অথচ এই কদিন চর্কির মত ঘুরেছে। ক্লান্তি আসেনি। মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত দুজনকে হারিয়ে। নিজেকেও হারাতে চলেছিল শুধু ছক্কার চাল ঠিক থাকাতে এই যাত্রা বেচে গেছে।
“কাল অফিসে যেতেই হবে? না গেলেই নয়?” জিজ্ঞাসা করলো সানন্দা।
“ওরা সবাই অপেক্ষা করছে আমার জন্য। সমস্ত ঘটনার ব্যাখ্যা তো আমাকেই করতে হবে।”
সানন্দা আর কথা বাড়াল না।
খাওয়া শেষে সমস্ত কিছু গুছিয়ে রেখে বলল,” আমি আসি, তুমি বিশ্রাম নাও।”
ডেভিড বলল,” This is a tremendous blow for this organization. কিন্তু কিছু করার নেই। আমাদেরকে সামনে চলতে হবে। আমরা লাকি তুমি এখনও আমাদের মধ্যে আছো।”
সবাই এসে বসলো কনফারেন্স রুমে। আনন্দ একে একে জানাল সব ঘটনা। বলল সে স্টিভের সাথে আলাপ করবে আইন গত ভাবে আমাদের করনীয় কি।
জেনীফার উঠে আনন্দের কাছে এলো। বলল,”এবার তুমি কিছুদিনের জন্য বাহির থেকে ঘুরে এসো। মনটা ভাল লাগবে।”
আনন্দ সাই দিলো। বলল,” দেশে যাবো ভাবছি।”
“যাও, তবে যাওয়ার আগে একটা কাজ করতে হবে, আমি একা করতে চাইনা।” বলল ডেভিড।
কি?
“আগামীকাল একজনের ইন্টারভীউ আছে। এমিলির পজিশনটার জন্য। তুমি ইন্টারভীউ নেবে। আমি থাকব। তবে সব ভার তোমার উপর। ঠিক আছে?”
হা, বলে আনন্দ বলল সে উপরে স্টিভের সাথে দেখা করতে যাবে। উঠে পড়ল।
জনের মা কল করেছিল আনন্দ কে। বলেছিল একবার আসতে ওদের বাসাতে। ফিলাডেলফীয়ায়। আনন্দ না করেনি। বলেছিল দুই একদিনের মধ্যেই আসবে।
সব কাজ শেষে আনন্দ বাসাতে ফিরবে ভেবে গাড়ীটা স্টার্ট দিলো। সানন্দা বলেছিল কাজ শেষে ওর সাথে চা খেতে। তা আর হলনা। গাড়ীটা ঘোরালো সে এমিলিদের বাসার দিকে।
এমিলির মা বাবা আনন্দকে দেখে চোখের জল বেঁধে রাখতে পারেনি। আনন্দকে দেখিয়ে ছিল এমিলির রুমটা। সুন্দর করে সাজানো ঘর। এক কোণে একটা পেন্টিং। উপুড় করা। আনন্দ উঠিয়ে নিলো। তাকাল। আনন্দের অবয়ব। এমিলির আঁকা। ফিরতে রাত হোল।
আজ আনন্দ হাতে অনেক সময় নিয়ে অফিসে এসেছিল। লরেন্সের সাথে বসে কফিটা শেষ করার আগেই ডেভিড এলো। সামান্তা খবর দিলো যে ছেলেটার ইন্টারভীউ নেওয়া হবে সে বাহিরে বসে আছে।
আনন্দ চশমার কাচটা মুছে নিয়ে ছেলেটার জীবনবৃতান্ত টা আর একবার পড়ল। রাশেদুল ইসলাম। নামটা পরিচিত মনে হোল। সামান্তা কে বলল রাশেদকে ডাকতে। দরজা খুলে ভিতরে এলো রাশেদ। হ্যান্ডসাম, টোন বড
কোঁকড়া চুল, শ্যামলা। আনন্দ তাকিয়ে রইল ওর দিকে। বেড়িয়ে এলো মুখ থেকে একটা শব্দ,” তুমি?”
“চেনও নাকি?” জিজ্ঞাসা করলো ডেভিড।
“চিনি।”
রাশেদ কে বসতে বলল। রাশেদ আনন্দের দিকে চেয়ে রইল।
আনন্দও তাকিয়ে ছিল ওর দিকে। শেষ দেখে ছিল বারো বছর আগে ওর বাবার কবরের পাশে। তারিকুল ইসলাম।
তারেকের সাথে আনন্দের দেখা হয়ে ছিল দেশের রাজধানীর এক এলিট কলেজে। আনন্দ এসেছিল এক মফস্বল শহর থেকে। তারেকের জন্ম রাজধানীতে। দুজনের মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিল। তারেক এসে বাসা বেঁধে ছিল আনন্দের রুমে। ঠোটে হাসি লেগেই আছে। প্রাণবন্ত। বলত,” চল, মুভি দেখে আসি।”
আনন্দের যাওয়ার ইচ্ছা থাকলেও যেতে চাইত না, পকেট শূন্য। মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে। অনেক ভেবে চিন্তে চলতে হয় এই রাজধানীর বুকে।
পাশ করে দুজন চলে গিয়েছিল দু দিকে। আনন্দ আর্কিটেকচার কলেজে ভর্তি হলো। তারেক ইংলিশে মেজর নিয়ে ইউনিভারসিটিতে এলো। দেখা সাক্ষাত কমে গেলো । আর্কিটেক্ট হয়ে আনন্দ চলে এলো আমেরিকাতে স্কলারশিপ নিয়ে। সেতো অনেক দিনের কথা।
এক সন্ধ্যায় আনন্দ কণাকে নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল হল ঘরের লাউঞ্চে। এসেছিল বাংলা শিল্পীদের গান শুনতে। পিঠে হাতের স্পর্শে তাকাল পিছনে। অবাক বিস্ময়ে চেয়ে রইল। তারেক?
“কিরে ,অবাক হয়ে গেলি? অনেক খুঁজেছি। আজ পেলাম।’”
ভেঙে যাওয়া বন্ধন আবারো জোড়া লাগলো। সময় পেলেই চলে আসতো আনন্দের বাসায়। কণা খুব পছন্দ করেছিল ওকে।
“বিয়ে শাদী করবি? মেয়ে আছে।” জিজ্ঞাসা করেছিল আনন্দ
“না, মা বাবার পছন্দ এক মেয়ে আছে, তার সাথে হবে। সামনের বছরে যাবো।”
এক শীতে ঝরা সন্ধ্যায় নিয়ে এলো সাকীলাকে। কণা যেয়ে সাজিয়ে রেখেছিল ওদের ঘর। দিন শেষে মাস, মাস শেষে বছর পেড়িয়ে গেল। এলো ওদের ঘরে এক ছেলে। রাশেদ। দুরন্ত। আনন্দের বাসায় এলে জিনিস পত্র ভেঙ্গে তছনছ করত। কনা কিছু বলত না।
এক রাতে ব্যাথায় টিকতে না পেরে আনন্দকে ফোন করেছিল। আনন্দ নিয়ে গিয়েছিল হাসপাতালে। সারারাত ধরে পরীক্ষা নিরীক্ষা চলল। সকালে আনন্দ কে ডাক্তার ডেকে নিয়ে গেল পাশের রুমে। বলল,” He has Multiple Myeloma. It is form of bone marrow cancer. Stage 3”. আনন্দ কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে ডাক্তারকে জিজ্ঞাসা করলো তাকে ব্যাখ্যা করতে। চিকিৎসা আছে কি না। বাঁচার সম্ভবনা কতটুকু।
খুব একটা সময় হাতে নেই, বলল সে। “ It’s a serious incurable malignancy.”
তাড়াতাড়ী চিকিৎসা শুরু করতে হবে। বলল সে।
ডাক্তার ফিরে এলো তারেকের রুমে। বলল সবকিছু। তারেক আনন্দের দিকে তাকিয়ে থাকল, চোখের কোণে জল। সাকীলার কোন ভাবান্তর নেই।
চিকিৎসা শুরু। Chemoর ভয়াবহতা সহ্য করতে পারলো না তারেক। প্রতিদিন সন্ধ্যায় কাজ শেষে আনন্দ এসে বসে থাকে তারেকের পাশে। গল্প করতো ফেলে আসা দিনগুলোর কথা। ওর হাসিটা ম্লান হয়ে এলো। রক্ত শূন্যতা। মুখটা কুঁচকানো কাগজের মত। বলে,” আর কতদিন আমি বাঁচব রে আনন্দ, সত্যি করে বল।”
“নতুন নতুন অনেক চিকিৎসা বের হয়েছে। চিন্তা করিস না।” বলে বাথরুমে যাবার ছল করে বাহিরে যেয়ে কাঁদত।
দিনে দিনে খাওয়ার রুচি চলে যেতে থাকলো। গায়ের রঙ পুড়ে কালো হয়ে গেছে। ব্যাথায় কাতরাতে থাকে। বলে,” আমি আর পারছি নারে আনন্দ।“
মাঝে মাঝে আনন্দ এসে সাকীলাকে কোথাও না দেখে জিজ্ঞাসা করতো। তারেক বলত “ও বাহিরে গেছে দরকারে”। একদিন তারেক বলল ,” জানিস আনন্দ আমার খুব ইয়োলোস্টোন পার্ক টা দেখেতে ইচ্ছা করে। নিয়ে যেতে পারবি?”
“পারবো”। বলে সব ব্যাবস্থা করল আনন্দ। শেষ সময়ে সাকীলা বলল সে যেতে পারবেনা। বলল “তোমরা ঘুরে এসো। আমি এদিকটা সামলাব।“
যথা রীতি ওরা বেরিয়ে পরেছিল। আনন্দ দেখেছিল তারেকের হাসৌজ্জল মুখ। হুইল চেয়ারে বসে বসে দেখল তার সাধের ইয়োলোস্টোন পার্ক। মাঝে মাঝে মাথাটা এলিয়ে দিতো । আনন্দ ওকে নিয়ে এসে দাঁড়াত গাছের ছায়ায়।
চার দিন আনন্দ তারেককে বাচ্চার মতো আগলিয়ে রেখেছিল। ফিরে যাওয়ার দিন তারেক একটা এনভেলপ আনন্দকে দিয়ে বলল ,” কথা দে, এটা খুলবি আমি চলে যাওয়ার একমাস পরে। কথা দে? ”
আনন্দ কথা দিয়েছিল।
ফিরে আসার পরে তারেকের শরীর আরও খারাপের দিকে গেলো। নিশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। মরফিনে ব্যাথা যায়না। হাঁসপাতালে নিয়ে যাওয়া হোল। ডাক্তার আনন্দ আর সাকীলাকে পাশে ডেকে নিয়ে বলল,” এবার ওকে যেতে দিতে হবে।“
দুদিন পরে সবকিছুর মায়া কাটিয়ে তারেক চলে গেল।
দিন যেয়ে মাস এলো। এক পরন্ত বিকেলে আনন্দ কড়া নাড়াল সাকীলার বাসায়। দরজা খুলে বেরিয়ে এলো এক আমেরিকান ভদ্রলোক। আনন্দ ভুল বাড়িতে এসেছে ভেবে দুঃখিত বলে চলে যাচ্ছিল। মহিলার ডাক শুনে ফিরে তাকাল। সাকীলা। প্যান্ট সার্ট পড়ে দাঁড়ান।
ভিতরে আসতে বলতেই আনন্দ বলল, আজ নয় আর একদিন আসবো।
ফিরে আসতে আসতে মনে হোল সেই চিঠিটার কথা। বাসায় এসে খুলল চিঠিটা। দুকলম লেখা।
“I was cheated on”.
আনন্দ ? ডাক শুনে বাস্তবে ফিরে এলো।
“প্রশ্ন করো”? বলল ডেভিড
তাকিয়ে রইল আনন্দ রাশেদের দিকে।
“না, আমি না। I have a soft corner for him. ঠিক জাজমেন্ট করতে পারব না। হয়তোবা পক্ষপাতিত্ব করা হবে। তুমিই ওর ইনটা্রভিউ নেও।“ বলে আনন্দ দরজার দিকে পা বাড়াল। রাশেদ তাকিয়ে থাকলো ওর চলার দিকে।
জনের কাঁধে হাত রেখে আস্তে আস্তে হেটে আনন্দ এসে বসলো লাউঞ্জের সোফাতে। তাকিয়ে থাকল জনের দিকে। পরিতৃপ্তির হাসি। হাল্কা মন। কিছুক্ষণ আগেও যা ছিল সমুদ্রের গর্জনে ভরা, এখন তা শিথিল। একজন চলে গেছে। দ্বিতীয়কে হারাতে সে রাজি ছিল না।
ভীষণ ক্লান্ত। জনকে বলল সে ভাবছে দুই তিন দিন পরে ফিরে যাবে নিউইয়র্কে। জনের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে এলো ঘরে।
কতক্ষণ শুয়ে ছিল আনন্দ মনে করতে পারেনা। টেলিফোনর শব্দে চোখটা খুলে ঘড়িটা দেখল। পাঁচটা বাজে। ফোনটা বাজছে। বিরক্তের সাথে ফোন টা উঠালো।
“ এখনি আসতে পারবে?” বলল থম্পসন।
“ ঠিক আছে ।” বলে উঠে বসল। দেখল দরজার কাছে একটা কাগজ পরে আছে। আগে দেখেনি। কাগজটা উঠাল।
অক্ষর গুলো বিভিন্ন জায়গা থেকে কেটে কেটে বসানো হয়েছে। লেখা আছে, “ Your life is in danger. Say nothing to anyone. You must leave the city immediately and never return. Repeat: say nothing—“.
কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকল কাগজটার দিকে। কয়েকবার পড়ল। ভয় যে পেলোনা তা নয়। একটু থ্রীলও অনুভব করলো। জন কে ফোন করলো । বিজি টোন।
ট্যাক্সি ডেকে বেড়িয়ে পড়ল পুলিশ স্টেশনের উদ্দেশ্যে। পিছনে তাকাতেই মনে হোল একটা ট্যাক্সি তাকে ফলো করছে। ড্রাইভার কে একটু জোড়ে যেতে বলে আবারো পিছনে তাকাল আনন্দ। ট্যাক্সিটার গতিও বেড়ে গেল। আনন্দ ড্রাইভারের পাওনা মিটিয়ে দিয়ে বলল, “ ডান দিকে মোড় নিয়ে গলিতে ঢুকে একটু আস্তে যাবে, আমি নেমে পরার সাথে সাথে তুমি জোড়ে চালিয়ে চলে যাবে।”
আনন্দ যথারীতি নেমে পাশের দোকানে ঢুকে পড়ল। ট্যাক্সিটা গলিতে ঢুকে সোজা চলে গেল। কিছুক্ষণ পর আনন্দ বেড়িয়ে এসে আর একটা ট্যাক্সি ডেকে উঠে পড়ল।
থম্পসন অপেক্ষা করছিল। আনন্দ ঢোকার সাথে সাথে থম্পসন বলল দরজাটা বন্ধ করে দিতে। বলল” যাকে ধরা হয়েছে সে হত্যাকারী নয়।”
আনন্দ আকাশ থেকে পড়ল। “ তুমি বলে ছিলে প্রমাণ আছে।”
“ আছে, তবে সেই প্রমাণে কাজ হবেনা। তার alibi আছে। এমিলি যে সময়ে মারা গেছে সেই সময় সে ছিল অন্যখানে। তার প্রমাণ আছে। সেখানের সারভেলেন্স ক্যামেরায় তার ছবি পর্যন্ত আছে। একটা লোক একই সময়ে দু’জাগায় থাকতে পারেনা।”
“ছেড়ে দিয়েছ কি?”
“হা, তবে এই স্টেটের বাহিরে যেতে পারবে না”।
এই বলে থম্পসন দুটা এমিলির ছবি আনন্দকে দেখাল। একটা মারা যাওয়ার আগের। অন্যটা মেঝেতে পরে আছে।
বুঝতে পারো কিছু ?
আনন্দ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখল। অস্বাভাবিক কিছু চোখে পড়লনা।
“প্রথম ছবিটায় এমিলির আঙ্গুলে আংটি। দ্বিতীয়টাতে নেই। Who ever is the killer, took the ring. But why?”
কথা বলতে বলতে আনন্দ রুমে পাওয়া কাগজটা থম্পসনের দিকে এগিয়ে দিলো। দেখতে পেলো থম্পসন দাঁতে দাঁত কামড়াচ্ছে। চোয়ালের পেশী গুলো ওঠা নামা করছে। ভুরু কুঁচকিয়ে চিঠিটার দিকে তাকিয়ে থাকল।
“ I wish I will be lucky –“
কথা শেষ হবার আগেই আনন্দ জানতে চাইলো সে কি বলতে চাইছে।
থম্পসন একটা মেগনিফাইন গ্লাস নিয়ে এলো। হাতে গ্লোভস পরে খুব সাবধানে danger ওয়ার্ড টাকে ফোকাস করলো।
আনন্দ বুঝে উঠতে পারলনা কেন তাঁকে ফলো করা হচ্ছে। সে কথা বলতেই থম্পসন বলল, “ তুমি খুব বেশি মাথা গলিয়ে ফেলেছ। অনেক কিছু জেনেছ। পিছনে ফেরার পথ নাই। শুধু সাবধানে থাকবে।”
আনন্দ গুডবাই বলে উঠতে যাবে এই সময় হন্তদন্ত হয়ে ঢুকল থম্পসনের অ্যাসিস্ট্যান্ট।
“ খবর আছে। আংটি পাওয়া গেছে।”
“ কোথায়?” জিজ্ঞাসা করলো থম্পসন
“ Pawn Shopএ বিক্রি করতে এসেছিল। ওকে ধরে রাখা হয়েছে।”
থম্পসন আনন্দ কে জিজ্ঞাসা করলো সে যাবে কিনা। আনন্দ রাজি।
সব গোল্ড বেচা কেনার দোকানে আংটিটার ছবি দিয়ে রাখা হয়েছিল। থম্পসনকে দেখেই লোকটা হাউমাউ করে পা চেপে ধরল। “ আমি কিচ্ছু জানিনা। পড়ে পেয়ে ছিলাম,”
থম্পসন উত্তর না দিয়ে বলল, থানায় যেতে হবে। সেখানে সব শুনব।
লোকটা বলল যে হোটেলে খুন হয়েছে সে ওই হোটেলের রান্নাঘরে কাজকরে। সেদিন সেসময়ে সে ছিল একেলা। বাসন পত্র সাজিয়ে রাখছিল। একজন অচেনা লোক মাথায় বেজবল ক্যাপ, চোখে সানগ্লাস রান্নাঘরের ভেতর দিয়ে দ্রুত হেটে যাচ্ছিল। সে ভেবে ছিল নতুন কর্মচারী হয়ত। টুং করে একটা শব্দ হোল। প্রথমে ভ্রুক্ষেপ করেনি। পরে চেয়ে দেখে একটা আংটি পরে আছে। জ্বলজ্বল করছিল। লোভ সামলাতে পারেনি। উঠিয়ে নিয়েছিল।
থম্পসন দেরী না করে লোকটাকে সঙ্গে নিয়ে এলো হোটেলে। ম্যানেজার কে নিয়ে এলো ওই রান্নাঘরে। জিজ্ঞাসা করলো কোন সারভেলেন্স ক্যামেরা আছে কি না।
বলল,” আছে”
“ নিয়ে এসো ওই দিনের টেপ গুলি।” নির্দেশ দিলো থম্পসন।
যথারীতি আনন্দ কে হোটেলে নামিয়ে সে চলে গেল থানায় লোকটাকে নিয়ে।
হোটেল লাউঞ্জে ঢুকতেই জন ডাক দিলো আনন্দকে। বসেছিল কর্নারের সোফাতে।
কোথায় গিয়েছিল জিজ্ঞাসা করাতে আনন্দ সঠিক উত্তর না দিয়ে বলল, “একটু ঘুরতে গিয়েছিলাম।” জনের চোখের চাহুনিতে মনে হল সে বিশ্বাস করলো না কথাটা।
ফোনটা বেজে উঠল। থম্পসনের ফোন। জিজ্ঞাসা করলো কাছে কেউ আছে কিনা।
বলল,” আছে”। কোন উত্তর না দিয়ে শুধু শুনতে বলল।
লাউঞ্জ ছেড়ে কোথাও যেন না যায়, বলল থম্পসন। আনন্দ রহস্যের ঘন্ধ পেলো। ভয়ও হোল।
জন উঠে যাবার সময় আনন্দকে বলল সে মলে যাবে কিনা। আনন্দ না বলে সোফাতে বসে পড়ল।
আবারো থমস্পনের ফোন। একি প্রশ্ন। জানা শোনা কেউ কাছে আছে কিনা।
বলল, না
“ রুমে চলে যাও। আমি আসবো রাত নটায়। দরজা খুলবেনা। আমি তিন টোকা দিয়ে আমার নাম বলব, তখন দরজা খুলবে।”
আনন্দের সারা শরীর ছমছম করছে। কিছু একটা ঘটতে চলেছে।
রাত নটা। যথা রীতি দরজায় টোকা দিয়ে নাম বলতেই আনন্দ দরজা খুলল। থম্পসনের সাথে আর একজন। নাম এডওয়ার্ড। এডওয়ার্ড ঘরে ঢুকতেই থম্পসন আনন্দকে বাহিরে আসতে বলল, দ্রুত উল্টো দিকের রুমটাতে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলো। ঘটনাটা এতো তাড়াতাড়ি ঘটে গেল যে আনন্দ কোনকিছু জিজ্ঞাসা করার সময় পেলোনা।
থম্পসন বলল, “ আজ রাতে কিছু একটা ঘটবে তোমার রুমে আমি আশা করছি এবং সেটাই হবে ঘটনার শেষ অধ্যায়।”
থম্পসনের আদেশে হলওয়ের আলো গুলি নিভিয়ে দেওয়া হয়েছিল। আনন্দের রুমের অপর দিকের রুমে থম্পসন, Peep hole দিয়ে দেখছে কেউ আসে কিনা।
রাত একটা। পা এর আওয়াজ শোনা গেল। এগিয়ে আসছে। কাছা কাছি এসে দাঁড়াল। আবার ফিরে গেল। আর কোন শব্দ নেই। থম্পসন তার নিজের হার্ট বিট শুনতে পাচ্ছে। Peep hole থেকে চোখ সরিয়ে নিতেই পা এর শব্দ ফিরে এলো। এসে থামল দরজার কাছে। হলওয়ের নাইট লাইটে থম্পসন দেখতে পেলো লোকটাকে। এপাশে ওপাশে তাকাল। ছয় ফুট লম্বা। হাতে গোল আকারের একটা বস্তু। পকেট থেকে ইলেকট্রনিক চাবি বের করলো। স্লটের ভিতর দিতেই ক্লিক আওয়াজ করে দরজাটা খুলে গেল। আস্তে করে ঢুকে পড়ল।
থম্পসন বেড়িয়ে এলো। দরজার পাশে এসে দাঁড়াল। আনন্দ ঘরের ভিতরে কাঁপছে। গলা শুকিয়ে গেছে।
দড়াম করে শব্দ হোল। চিৎকার। থম্পসন তাড়াতাড়ি দরজা খুলে পিস্তল টা বের করে আলো জ্বালিয়ে দিলো।
এডওয়ার্ড লোকটাকে মেঝেতে জাপটিয়ে ধরে রেখেছে। আনন্দ দৌড়িয়ে এসে রুমে ঢুকল। লোকটার হাতের সেই গোল বস্তুটা বিছানায় পরা। এডওয়ার্ড বলল এটা দিয়ে সে আঘাত করেছিল বালিশে। ভেবে ছিল আনন্দ ওখানে ঘুমাচ্ছে। কিন্তু ভাবেনি বিছানাতে কেউ নাই। দেখে মনে হচ্ছিল কেউ শুয়ে আছে। এডওয়ার্ড লুকিয়ে ছিল ক্লজেটে। বেড়িয়ে এসে জাপটিয়ে ধরেছিল।
মাথায় হুড উঠানো। এডওয়ার্ড মাথার হুডটা সরিয়ে দিলো। আনন্দ তাকিয়ে থাকল ওর দিকে। চোখে পলক পড়েনা। শুধু জিজ্ঞাসা করলো,” Is that you?”
মুখে কথা নেই আনন্দের। সমস্ত ব্যাপার টা তখনো তার বোধগম্য হচ্ছেনা। কেন জন এপথে গেল। আর তাকেই বা কেন টার্গেট করেছিল। জিজ্ঞাসা করলো থম্পসন কে।
জনের জবানবন্দির মাঝে ফাঁক ছিল অনেক। তখনি থম্পসনের সন্দেহ হয়েছিল। খোজ নিয়ে জেনে ছিল সে ডালাসে এসেছে চার দিন আগে অথচ বলল ফোন পেয়ে এসেছে। গাড়ী সে রেখে ছিল লং টার্ম পারকীং লটে। এসেছিল এমিলিকে সারপ্রাইজ দিতে। সারপ্রাইজ দিতে এসে এমিলিকে দেখেছিল আর এক জনের সাথে, খুব ঘনিষ্ঠ ভাবে। মাথায় রক্ত উঠে গিয়েছিল। ওদেরকে অনুসরণ করে জেনে ছিল কোন রুমে এমিলি থাকে।
একদিন লোকটা এমিলির ঘর থেকে বেড়িয়ে চলে যাবার কিছুক্ষণ পর সে টোকা দিয়েছিল। এমিলি অবাক হয়ে গিয়েছিল জনকে দেখে। ওর পড়নে ছিল ব্রা আর প্যান্টি, তার উপরে নাইট গাউনটা চাপানো। জন জিজ্ঞাসা করেছিল লোক টা কে, কি সম্পর্ক। শোবার ঘরের আগোছাল বিছানা দেখে রাগে বেড়িয়ে চলে গিয়েছিলে রুম থাকে। এই ঘটনা লেখা ছিল এমিলির ডাইরিতে। পরে এমিলি ডাইরির ওই পাতাটা ছিঁড়ে ফেলে দিয়েছিল ডাস্ট বিনে।
পরদিন জন এসেছিল এমিলির রুমে, হাতে ছিল লোহার বল। ওটা দিয়ে আঘাত করেছিল এমিলির মাথায়।
থম্পসন থামল। বলল, “ হুড দিয়ে ঢাকা মুখ, চেনা যায়নি। কিন্তু হাতের ঘড়িটা ঢাকতে পারেনি। জনের হাতে ওই ঘড়ি আমি দেখে ছিলাম। অনেক চুলের মাঝে একটা চুলের ডিএনএ ম্যাচ করেছিল জনের সাথে। তবুও তাকে ছেড়ে দিয়ে ছিলাম। কারণ এই প্রমাণ আদালতে ধোপে টেকবেনা। তবে তোমাকে লেখা চিঠির থেকে যে চুল পাওয়া গিয়েছিল সেটা ম্যাচ করেছিল ওর ডিএনএ র সাথে। রান্না ঘরের সারভেলেন্স ক্যামেরায় ওঠা ছবিতে দেখা গিয়ে ছিল ওর মুখ।
ডাইরির পাতাটা রহস্য উন্মোচন করতে সাহায্য করেছিল। ডাইরিটা খুঁজে পাওয়া যাইনি এমিলির ঘরে। পাওয়া গিয়েছিল জনের গাড়ীতে। এমিলির ডাইরিতে লেখা ছিল তোমার কথা। এমিলি তোমাকে ভুলতে পারেনি। কাল্পনিক ভাবে তোমাকে জড়িয়ে লেখা ছিল অনেক প্রভোকেটিভ কথা। তারই মাসুল তোমাকে দিতে হচ্ছিল সেই রাতে।” বলে থম্পসন থামল। “খুন করতে সে আসেনি। এসেছিল সারপ্রাইজ দিতে। কিন্তু ভাগ্যের লিখনতো খণ্ডাতে পারবেনা।”
থম্পসন শেষ করলো তার বক্তব্য। নীস্তবতা গ্রাস করে রইল কিছুক্ষণের জন্য।