সকাল দশটা। নাস্তা শেষে গরম কফিটা উপভোগ করছিলাম। সেই সাথে সকালের খবর গুলো দেখছিলাম CNN এ। দরজা খোলার শব্দে তাকালাম। আমার ঘরের চাবি আছে কয়েক জনের কাছে। ওরা সবাই আসা যাওয়া করে শুধু একজন ছাড়া। কাজেই ধরে নিয়ে ছিলাম কে হতে পারে। তবে এতো সকালে কেনও সেটাই আমার প্রশ্ন।
না, আমার ভুল। দরজা খুলে ঢুকল সতী। আমার দিকে তাকিয়ে চাবিটা রেখে দিলো হাতে ঝুলানো ব্যাগ টার মাঝে।
কি ব্যাপার এতো সকালে?
“সকালে মানে? তুমিই না কাল রাতে কল করে বললে যত তাড়াতাড়ি পারো এসো। কথা আছে। ইদানীং তুমি অনেক কিছুই ভুলে যাচ্ছ, শমিত”। কথা গুলো বলে এগিয়ে গেলো আমার ছোট্ট রান্না ঘরের দিকে।
“চা র পাতা এনে রেখেছিলে”?
রেখেছি, তবে তুমি যে ব্রান্ড বলেছিলে সেটা পাইনি। অন্য টা এনেছি।
চা র পানি বসিয়ে সে এসে বসলো সোফাতে।
কোন ভূমিকা না করেই বললাম, ইয়াসমিন আসবে সামনের সপ্তাহে।
কোন ইয়াসমিন?
ঐ যে— , কথা শেষ না করে তাকালাম ওর দিকে। সে মিটমিট করে হাসছে।
বলল, সেই ইয়াসমিন যে তোমার যৌবন কালে, মানে ইয়ে, —
ফাজলামি রাখো, এখন বলও কি করব? সে আমার এখানে থাকবে।
তোমার এখানে থাকবে, মানে? তুমি কি হা বলেছ?
সতীর সেই মিটিমিটি হাসি নেই। রীতিমত সিরিয়াস। ওকে একটু রাগাতে ইচ্ছা করলো।
তা কোথায় সে থাকবে বলো। আমি নাহয় মেঝেতে থাকবো, ওকে দিয়ে দেবো আমার ঘর টা।
ইয়ার্কি করছ? ওর এখানে থাকা হবে না। উচিৎ ও নয়। আমি যাবো তোমার সাথে এয়ারপোর্টে। বলে চা টা আনতে উঠে গেলো।
তাহলে কি করা যাবে? গত বার নিউইয়র্কের বাহিরে যাচ্ছি বলে পাড় পেয়ে ছিলাম, এবার তা হচ্ছে না।
দেখা যাক কি করা যায়। তোমার চিন্তা করতে হবে না, আমি একটা ব্যবস্থা করবো। শেষ কথা হচ্ছে ওর এখানে থাকা হবে না।
সতীর চোখ মুখ দেখে মনে হচ্ছে সে রীতি মতো উদ্বিগ্ন । আমিও চাইছি না সে এখানে থাকুক। তবে করণীয় কি আছে সেটাও জানিনা। তবে এটা ভেবে নিশ্চিত আমার চেয়ে সতীরই গরজ বেশি।
সতী আর কথা বাড়াল না। চা টা শেষ করে বলল, আমি উঠি। দিনের দিন আমাকে নিয়ে যাবে এয়ারপোর্টে। আর তোমার চাল বাড়ন্ত। সময় করে কিনে রেখো।
বললাম, ঠিক আছে।
সতী চলে গেলো। আমি টেলিভিশন টা চালিয়ে দিলাম। সেই এক গেয়েমী খবর। নর্থ কোরিয়ার মিসাইল টেস্ট। আমেরিকা হুমকী দিচ্ছে কিছু একটা করবে এই বলে। অথবা কোথাও পুলিশ আর জনগনের মধ্যে সংঘর্ষ। পৃথিবীর কোথাও শান্তি আছে বলে মনে হচ্ছে না। এই সব চিন্তা ভাবনার সময় ফোন টা বেজে উঠল।
অনেকদিন পর শুভঙ্কর কল করেছে।
বললাম, কি মনে করে? বৌদি ভালো তো?
ভালো, সন্ধায় আসতে পারবি রংমহল রেস্টুরেন্টে?
কি ব্যাপার?
মুকুল এসেছে। আড্ডা দেওয়া যাবে। বড় এক ঘেয়েমী হয়ে গেছে জীবন টা।
দেখা হবে, বলে ফোনটা রেখে দিলাম।
মুকুল, বন্ধুদের মাঝে সেই ছিল সবচেয়ে কাছের।
মুকুলের শেষ কথা টা আজও মনে বাজে,
” চললাম শমিত’।
কোথায়?
উত্তর না দিয়ে সে চলে গেলো।
সেই শেষ দেখা। তাও তো আজ বিশ বছর হয়ে গেলো।
শুভঙ্কর মাধ্যমেই পরিচয় হয়েছিল ওর সাথে। বন্ধুত্ব টা গড়ে উঠেছিল খুব তাড়াতাড়ি। হয়ত ওর সুন্দর খোলা মনের জন্য। হাসতে জানে আবার হাসাতেও জানে। সেই হাসি একদিন মুছে গেলো। হয়তো ওর হাসির কোটা ফুরিয়ে গিয়েছিল।
ভুলি নি আমি সেই রাতের কথা।
নিউ ইয়ার্স ইভ। আমরা সবাই এসেছি শুভঙ্কর এর বাসায়। সারা রাতের প্রোগ্রাম। থেকে যাবো রাতে।
টাইম স্কয়ারে লোকে লোকারণ্য।
পাঁচ, চার, তিন, দুই, এতা। রাত ১২ টা। নতুন বছরের সূচনা।
আমি আমার হাতের কার্ড টা অন্য একজন কে দিয়ে উঠে এলাম।
কি হয়েছে?
আমার সাথে আয়। বলে নিয়ে এলো সেইখানে যে খানে সব ভাবী, বৌদিরা বসে দেখছে লীমীনার (মুকুলের বৌ) নাচ। নাচ বললে ভুল হবে, এ শুধু আনন্দে আত্মহারা হয়ে ঘুরছে, ঘুরছে গানের সাথে, “ তোমাকে চাই, তোমাকে চাই—“ ।
মুকুল শুধু বলল, এই রুপ আমি কখন দেখিনি।
কঙ্কনা তাকালও আমার দিকে। ইশারায় ডাকল আমাকে। কাছে যেতেই কানে কানে যা বলল আমি তা শুনতে প্রস্তুত ছিলাম না। যদিও বললাম, তোমার সাথে আমি একমত নই।
ফিরে আসতই মুকুল বলল, আমার আজ বাসায় চলে যাওয়াই উচিৎ। ভাল লাগছে না।
যাই করিস ঠাণ্ডা মাথায় করিস। বললাম, তুই যা ভাবছিস তা হয়ত না।
ও ডাক দিলো লীমীনা কে। লীমীনা শুনতে পেলো বলে মনে হোল না। কাছে যেয়ে মুকুল ওর ঘারে হাত রাখতেই মনে হোল লীমীনা ফিরে এলো বাস্তবে।
কি হয়েছে?
বাসায় যেতে হবে, আমার শরীর টা ভালো লাগছে না।
লীমীনা যেতে প্রস্তুত আছে বলে মনে হোল না।
“ কেবল না পার্টি টা জমে উঠেছে এখনি যাই যাই করছ কেন? উপরে যেয়ে রেস্ট নেও তাহলেই সব ঠিক হয়ে যাবে”। বলে গান টা বাজানোর জন্য হাত বাড়াল। হাত ঐ পর্যন্ত যাওয়ার আগেই মুকুল ওর হাত টা চেপে ধরল।
আমি তাকালাম কঙ্কনার দিকে। কঙ্কনা এসে দাঁড়ালো ওদের মাঝে।
“ চলেন ভাবী, আমরা অন্য কিছু করি, আজ আর নাচ নয়। অনেক দেখলাম”। বলে নিয়ে গেলো অন্য ঘরে।
মুকুল কে নিয়ে আমি চলে এলাম। অন্যরা কেউ কিছু দেখল না, জানলো না, ওরা তাসের খেলায় মত্ত।
ভোর হওয়ার আগেই মুকুল চলে গিয়েছিল। বিদায় না জানিয়ে।
তারপর?
তারপর সব কিছু এতো তাড়াতাড়ি ঘটে গেলো, যে আমি কোন কিছু বোঝার আগেই দেখলাম সব শেষ।
মুকুল বলেছিল, লীমীনা আর একজনের সাথে কয়েক মাস ধরে যাওয়া আসা করছে। তাদের মধ্যে কার সম্পর্ক এতো গভীর যে ওরা নতুন করে নতুন বন্ধনে আবদ্ধ হতে চায়।
লীমীনা আরও বলে ছিল, মুকুল বন্ধু হিসাবে ভালো, স্বামী হিসাবে নয়।
আজ এতো বছর পর ওকে দেখব। মাঝের সময় টুকু তে কত কিছু ঘটে গেলো সবার জীবনে। তবুও মনের মাঝে একটু শিহরন।
আমি এসে দাঁড়ালাম রংমহল রেস্টুরেন্টে। দরজা খুলে ভিতরে এলাম। চশমা টা ভালো করে মুছে তাকালাম সামনে।
মুখে খোঁচা খোঁচা সাদা দাড়ি। ও উঠে দাঁড়াল। সেই মন ভুলানো হাসি। শুধু সামনের দুটো দাঁত কোথায় যেন হারিয়ে গেছে।
আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। মাঝে মাঝে টিপটিপ করে বৃষ্টি পড়ছে। তাপ মাত্রা ষাটের কোঠায়। যেতে হবে অনেক দূরে। পেন্সালভেনীয়ার এক ছোট্ট শহরে। আড্ডা মারতে। তিন ঘণ্টার পথ। ইউসুফ-সেলিমার বাসা। এক সাথে পড়তাম, ঘুরতাম, চা খেতাম, সিগারেট টানতাম। টানতাম বলছি এইজন্য যে আমার দুই আঙ্গুলের মাঝে ওটা আর আসেনা। কিন্তু ইউসুফ ছাড়তে পারেনি। আসবে ফাতেমা-সাইদ, এহসান-সেলিনা, আমিন-শেলি। রাতে ওদের বাসায় থেকে যাবো সেই ভাবে কাপড় জামা গুছিয়ে নিলাম। কফি মাগে কফি, সাথে কিছু ভাজা পোড়া বেঁধে গাড়ী টা স্টার্ট দিলাম।
ইউসুফ যে পথ দিয়ে যেতে বলেছিল সে পথে সার্ভিস ষ্টেশন নেই রাস্তার পাশে। এই বয়সে শরীরের অনেক গ্ল্যান্ড গুলোর কার্জ ক্ষমতা কমে গিয়েছে। ফলে থামতে হয় বেশ কয়েক বার। তা না হলে কিডনির উপর চাপ পড়ে।
আমি অন্য পথ বেছে নিলাম। রাস্তায় যতটা ভিড় হবে মনে করেছিলাম ততটা নয়। পুলিশের আনাগোনাও কম। একেলা এতো ঘণ্টা গাড়ী চালায়নি অনেকদিন হোল। কেউ না কেউ সাথে থাকতো।
দীর্ঘও পথে কথা বলার একজন সাথি থাকলে ভালো লাগে। আজ সেটা অনুভব করলাম। I-Pod এ অনেক গান ধরে রাখা আছে। গান গুলো অনেক অনেক বার করে শোনা। মিউজিকের শুরুতেই বলে দিতে পারি কোণ গান টা শুরু হচ্ছে। তাঁই হয়তো আকর্ষণ টা কমে এসেছে।
অপূর্ব সুন্দর গলার গায়ক গায়িকা দের অনেকেই চলে গেছে আমাদের ছেড়ে। ফলে তাদের মিষ্ট গলার নতুন কোন গান শুনতে পারছি না। অগত্যা বন্ধ করে দিলাম।
একটু অন্য মনস্ক হয়ে গিয়েছিলাম। হঠাৎ Speedometer রের দিকে তাকিয়ে দেখি গাড়ী চলছে প্রায় ৯০ মাইল বেগে।
যেখানে ৬৫ মাইলের বেশি বেগে যাওয়ার কথা নয়। আগে হলে পাশে যে থাকতো সে বলতো, এতো জোরে চালাচ্ছ কেন?
এখন আমিই আমি। বলার কেউ নেই। আশেপাশে তাকিয়ে দেখলাম পুলিশ আছে কিনা। গতি কমিয়ে ৮০ র কাছে আনলাম। প্রায় সবাই ওই বেগে যাচ্ছে। শুধু খেয়াল রাখতে হবে কেউ ব্রেকে চাপ দেয় কিনা। তাহলে বুঝতে হবে সামনে পুলিশ আছে।
দুই মাইল পরে রেস্ট এরিয়া। যদিও আমার এই মুহূর্তে নামার দরকার নেই, তবুও গাড়ীটা ঐ দিকে বাক নিলো। কারন এই রেস্ট এরিয়া তে আমার জীবনের অনেক স্মৃতি জড়িত। কতবার না আমরা থেমেছি এই খানে। ছেলে মেয়ে দুটো দৌড়িয়ে এসে বলত,” আব্বু আইসক্রিম খাবো”।
কোথায় গেলো সেই দিনগুলো।
একলা এক কাপ কফি নিয়ে এসে বসলাম জানালার পাশে। বাহিরে অঝোরে ঝরছে।
মনে হচ্ছিল বাহিরে যেয়ে বৃষ্টিতে ভিজি। শরীরের ভিতরের অসহ্য জ্বালা টা যদি দুর হয়।
শমিত না?
ডাক শুনে তাকালাম,
বাবুল? কোথা থেকে?
এসেছিলাম New Jersey তে, খালাকে দেখতে। অবস্থা ভালো না। ফিরে যাচ্ছি।
তুমি?
যাচ্ছি বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে, পেন্সালভেনীয়ার এক ছোট্ট শহরে। এখনও ঘণ্টা দেরেকের পথ বাকি। বসবে?
দাড়াও, বসার আগে দু কাপ কফি নিয়ে আসি। তোমার আর আমার জন্য। অনেকদিন পর দেখা। তাড়া আছে কি?
তাড়া থাকলেও তোমার সাথে সময় দিতে পারবো।
দু কাপ কফি নিয়ে চেয়ারটা টেনে বসলো সে। বলল, সেই কবে তোমার সাথে দেখা হয়েছিল তোমার বোনের বাসায়। আর কি গিয়েছিলে ওই স্টেটে?
অনেক অনেক দিন যাওয়া হয়নি । ওখানে গেলে তোমার সাথে দেখা করবও না, তাঁই কি হয়?
বলো, তোমার কথা । শেষ যখন দেখা হয়েছিল তখনো তুমি ব্যচেলার। খুজে ফিরছিলে কিন্তু চোখে পড়ছিল না তোমার মনের মতো। পেয়েছ কি?
হা। পেয়েছি। সে এক কাহিনী।
বলতে আপত্তি না থাকলে শুনতে আমার আপত্তি নেই।
অর্থনীতিতে খুব ভালো রেজাল্ট করে বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা শুরু করেছিল বাবুল। সদ্য পাশ, দেখতে শুনতেও খারাপ ছিলনা। ফলে অনেক মেয়ের নজরে পড়েছিল। শেষ এসে ঠেকে ছিল মাগফেরের সাথে।
“ স্যার, এই প্যারাগ্রাফ টা বুঝতে পারিনি”, বলে মাগফের তাকিয়ে ছিল বাবুলের দিকে।
তারপর দুজনে অনেক ঘোরাঘুরি করে কাটিয়ে দিয়েছিল একটা বছর।
বাবুল কমনওয়েলথ স্কলারশীপ নিয়ে চলে এলো লন্ডনে। ফিরে এসে সবকিছুর সমাধান করবে এমনি কথা ছিল।
তা আর হয়ে উঠেনি। আস্তে আস্তে মাগফেরের ফোন কল কমে এলো। এমনি একদিন বাবুল তার বোনের কাছ থেকে শুনল,
মাগফেরের বিয়ে হয়ে গেছে এক গারমেন্ট ফ্যাক্টরির মালিকের সাথে। সে আর অপেক্ষা করেনি বাবুলের জন্য।
দেশে ফিরে বেশ কিছুদিন অধ্যাপনা করার পরে পাড়ি দিয়েছিল সে আমেরিকার পথে।
ব্যচেলারত্ত ঘুচে ছিল অনেক পরে। তাও হঠাৎ ই বলতে হবে।
তারপরের ঘটনা ওর মুখে শোনা যাকঃ
জানো শমিত, একদিন আমার এক বন্ধু, পীযুষ, বৌদ্ধ ধর্মে দীক্ষিত, আমাকে নিয়ে গেলো ওর বাসায়।
ড্রাইং রুমে বসিয়ে সে গেলো ভেতরে। আমি বসে বসে সদ্য আসা টাইম ম্যাগাজিন টার পাতা উল্টাছিলাম।
‘আপনার চা”
কণ্ঠস্বরে মাদকতা মিশানো।
মুখ তুলে চাইতেই চোখ টা আটকে গেলো। উজ্জ্বল শ্যামলা। কোঁকরা চুল। মনে হোল ঠিক এমনি তো আমি চেয়ে ছিলাম।
তাকাল সে।
চোখে চোখ পড়তেই চোখ টা সরিয়ে নিলো।
তুমি তো সিনেমার গল্প বলছ মনে হচ্ছে।
অনেকটা তাঁই। এখনও তো ক্লাইম্যাক্স বাকি।
বলে যাও।
পরনে ছিল ডোরা কাঁটা শালওয়ার কামিজ। এই মুহূর্তে যদি সে ওটা পরে আসতো তবে বলতাম, এটাতে মানাচ্ছে না। কিন্তু ঐ মুহূর্তে মনে হয়ে ছিল ঐ রঙ এর শালওয়ার কামিজ শুধু ওর জন্যই বানানো হয়েছিল।
বাহ ! তারপর।
শুধু একবার সে তাকিয়ে ছিল আমার দিকে। চা এর পেয়ালায় চুমুক দিতেই পীযুষ এসে ঢুকল ঘরে।
সরি দোস্ত, তোকে একলা রেখে যাওয়ার জন্য। যাক, চা দিয়ে গেছে। চল, ভিতরে যাই মা র সাথে আলাপ করিয়ে দেবো।
বললাম, কোন অসুবিধা হয়নি, তবে যে চা দিয়ে গেলো সে কে?
ওত আমার বোন, জয়ন্তী। সব পাশ দিয়ে এখন ঘরে বসা। মা র চিন্তার শেষ নেই। বয়স বাড়ছে।
ভিতরে এলাম। পীযুষ আবারও ওর মা সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে কোথায় যেনো চলে গেলো। ওর মা গুরুগম্ভীর প্রকৃতির। দুই একটা কথা বলতেই বুঝলাম, কথা বেশি দুর এগোবে না। চারিদিকে তাকাচ্ছিলাম আবারও জয়ন্তী কে দেখা যায় কিনা।
কিছু খুজছো? জিজ্ঞাসা করল ওর মা।
না কিছু না। বলে বললাম, এখন আসি, দেখি পীযুষ কোথায়।
তোমার অবস্থা আমি বুঝতে পারছি। গা দিয়ে ঘাম ঝরছিল কি?
অনেক টা তাঁই। জয়ন্তী এসে বাচালো আমায়। বলল, দাদা বাইরে ডাকছে আপনাকে।
বাচলাম। কিন্তু আমি কোন কথাই বলতে পারলাম না জয়ন্তীকে। অথচ প্রেম তো আমি একবার করেছিলাম। মুখ চোরা তো আমি নই। তাহলে?
এমন হয়। অনেকে প্রথম দর্শনে এরকম বোকা হয়ে যায়।
তোমার এমন হয়েছিল কি?
না, আমি ঠিক তোমার উল্টো ছিলাম। তারপর!
তারপর দুই তিন বার গলাটা কাশি দিয়ে পরিষ্কার করে পীযুষ কে জিজ্ঞাসা করলাম, আচ্ছা তোদের সমাজে Mixed marriage হয় কি?
ও তাকাল আমার দিকে। বলল, কিছু বলতে চাস কি?
না, মানে, হাঁ, জয়ন্তী কে এক দেখাতেই খুব পছন্দ হয়ে গেলো। তুই কি বলিস?
বাসায় যেয়ে ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা কর। তারপরে বলিস। কেনও বলছি তোর বুঝতে নিশ্চয় অসুবিধা হচ্ছে না। এই কথা বলে সে অন্য প্রসঙ্গে চলে গেলো।
আমি বাসায় এসে অনেক ভাবলাম, কিছুদিন পর পীযুষ কে ফোন করে বলেছিলাম, যে বাধার কথা তুই বলছিস ওটা আমার কাছে কোন বাঁধা নয়।
সে বলল, আমার আপত্তি নেই, তবে মা রাজি হবে বলে মনে হয় না। তবুও আমি বলে দেখবো। তা ছাড়া জয়ন্তীর তো হা, না বলার আছে।
তারপর, শুধু অপেক্ষা ? তাঁই না?
হাঁ তাঁই। সাত দিন বাদে পীযুষ জানালো জয়ন্তী রাজি। বলেছে, দেখতে শুনতে আমি বলে মন্দ না।
তবে মা রাজি নয়। ওর বড় বোন ঘষামাজা করছে মা কে।
অবশেষে ওর মা রাজি হোল। বলতে পারো নিমরাজি।
মাস দুয়েক পরে আমাদের বিয়ে হয়ে গেল।
কি মতে? মানে কোন প্রথায়।
মুসলিম মতে। জয়ন্তীই আমাকে বলেছিল, আমি তোমার ঘরে যেতে চাই তোমার ধর্ম নিয়ে।
অপূর্ব!
জানো শমিত, ওকে আমি কোন কিছুতে জোড় করিনি। সে দেখত আমি প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ি। একদিন সে পাটি এনে আমার পিছনে দাড়িয়ে পড়ল। সেদিন আমার চোখে জল এসেছিল। সত্যি বলতে কি সে হজও করে এসেছে।
একবার দেখতে চাই জয়ন্তীকে।
এসো একদিন আমার বাসায়। খারাপ লাগবে না। আরও বসতে ইচ্ছে করছিল, কিন্তু অনেক দুরের পথ যেতে হবে। তাঁই আজ উঠি।
হা চলো। আমিও উঠবো।
বাবুল চলে গেলো। ঘুরে ফিরে জয়ন্তীর কথা গুলো কানে ভাসতে থাকলো, “আমি তোমার ঘরে যেতে চাই তোমার ধর্ম নিয়ে”।
আমি অন্য মনস্ক ভাবে হাটতে হাটতে গাড়ীর কাছে এলাম। ফোন টা বেজে উঠল। নম্বর টা পরিচিত নয়। তবু উঠালাম।
হ্যালো বলতেই, ওপাশে থেকে ভেসে এলো অনেকদিন আগের সেই চেনা কণ্ঠস্বর ,