ডায়রির পাতা থেকে ১১


ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো। আসলে স্বপ্নটাই  আমার ঘুমটা কে ভেঙ্গে দিলো। এতকাল পরে লুতু ভাই কেনও আমার স্বপ্নের মাঝে দেখা দিলো তা জানিনা। সে বলে গেলো, তুই নাকি ইদানীং ছাই ভস্ম কি সব লিখছিস। তা আমাকে নিয়ে লেখ না।

ঐ পর্যন্ত।

তারপর সে হারিয়ে গেলো। আমি উঠে বসলাম। সকাল হয়ে এলো। আমি কফির পানিটা বসিয়ে ব্যালকনিতে এসে দাঁড়ালাম। ঝিরঝিরে বাতাস বইছে। সামনে লাল গোলাপের ঝারে দুই তিনটে চড়ুই পাখি কিচিরমিচির করে দৌড়িয়ে বেড়াচ্ছে। রাস্তায় লোকেদের আনাগোনা এখনও নেই। আজ বন্ধের দিন।

কফিটা হয়ে গেছে। সকালে বাসি মুখে কফির সাধই আলাদা। উঠে গেলাম। কফিটা এনে হেলান দেওয়া চেয়ারে বসতেই দেখতে পেলাম চড়ুই পাখি গুলো কোথায় যেন চলে গেছে।  কিচিরমিচির শব্দ আর নেই।

আমি একেলা। না একেলা নই। সঙ্গী আছে একটা ঘুঘু পাখি। আমার সামনের লনে ভয়ার্ত নেত্রে তাকাচ্ছে চারিদিকে। হঠাৎ তার দৃষ্টি পড়ল আমার দিকে। তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ। তারপর মাথা নেড়ে মাটিতে ঠোকর দিতে থাকলো।

ঘড়ির কাঁটা ছটা ছুঁইছুঁই করছে। মন চাইছে সতীকে কল করতে। এতো ভোরে সে উঠেনি। ফোন করাটা ভদ্রতা নয় জানি। তবুও।

লুতু ভাই। লুতু ভাই দেখা দিয়ে চলে গেলো। লুতু ভাইয়ের কথা আমি বলতে চাই সতীকে। দেরী করে নয়। তাহলে সব হারিয়ে যাবে আমার মন থেকে। বলতে চাই তার  রিক্সা চালানোর কাহিনী, তার হারিয়ে যাওয়া হাতটার কথা। আয়েশা ভাবীর কথা। ছোট্ট এক চিমটে ঘরে সুখের আলো ছড়িয়ে পড়ার কথা। সেই ডাক, “ ও ছোট বাবু—-“।

“এতো ভোরে কেনও কল করেছ? সব ঠিক তো”? সতীর ঘুম থেকে জাগা কণ্ঠস্বর।

আমি তোমাকে লুতু ভাই এর কথা বলব। তুমি এসো।

কে লুতু ভাই, কোন লুতু ভাই? ওর কণ্ঠে অবিশ্বাসের সুর। উৎকণ্ঠার সুর।

মাঝে মাঝে সে বিরক্ত হয় আমার উপর, আমার উদভট সব আবদারের জন্য। কিছু বলে না সে। মেনে নেয়।

আজ ও তাঁই হোল।

বললাম নাস্তা করবে এখানে এসে।

যদিও তার নাস্তা তাকেই বানিয়ে নিতে হবে তা সে জানে। আমি শুধু চা র পানিটা বসিয়ে দেবো।

চোখে মুখে পানি ছিটিয়ে চলে এসেছে সে। মেকাপের কোন বালাই নেই। এসেই সোজা রান্না ঘরে। কোথায় কি থাকে সে জানে।

বললাম, তোমার একটু অসুবিধা হোল, তাঁই না? হাজার হলেও বন্ধের দিন।

অমলেট টা বানাতে বানাতে বলল, আমার অসুবিধা হলে আমি কি আসতাম? থাক সে কথা, বাহিরে বসে  আমি শুনতে চাই তোমার লুতু ভাই এর কথা। তুমি যেয়ে বস। আমি নাস্তা নিয়ে আসছি ওখানে।

শুধু তার নাস্তা নয়, আমার জন্য এক কাপ কফি এনে বসলো সে তার পরিচিত চেয়ার টায়।

তাকাল সে।

এবার আমার পালা।

শোন।

ও ওর হাতের থালাটা নামিয়ে রাখল কফি টেবিলের উপর।

বলও।

জানো, জন্ম থেকে আমি দেখছি লুতু ভাইকে আমাদের বাসাতে।

সে কি তোমাদের বাসাতে কাজ করতো ? জিজ্ঞাসা করলো সতী।

না, কাজ করতো বাবার অফিসে। কেউ ছিল না তার। শুনেছি, একদিন বাবার অফিসের সামনে এসে বসে ছিল। বাবা অফিস থেকে বের হবার পথে ওকে দেখে জিজ্ঞাসা করেছিল এখানে সে বসে আছে কেন।

উত্তরে বলেছিল তার একটা কাজ দরকার।

বাবার কি মনে হয়েছিল জানিনা, দুদিন পরে আসতে বলেছিল। এই দুদিন বাবা তার বসের সাথে কথা বলে চাকরির একটা ব্যবস্থা করে রেখেছিল। সেই তার শুরু। কাজের শেষে আমাদের বাসাতে আসতো। মা কে ডাকতো মা বলে।

থাকতো দুরেরে এক গ্রামে। নাম তার পরানপুর। বাবার ভিটেতে এক ছোট্ট ঘর। সেটাই তার মাথা গোঁজার জাগা।

মা বলতো, লুতু তুই আমাকে পান এনে দিতে পারবি বাজার থেকে।

না করে নি।

আমাকে কাঁধে করে নিয়ে বেড়িয়ে পড়তো।

মা বলত, দেখিস ও যেন পড়ে না যায়।

তোমার তখন বয়স কত? সতীর কৌতূহল।

তিন কি চার।

আর ওর বয়স।

হয়তো বিশ। রাতের খাওয়া শেষে সে তার সাইকেল নিয়ে চলে যেতো পরানপুরে। মা সকালের খাওয়ার জন্য কিছু বেঁধে দিতো।

আমাকে ডাকতো সে ছোট বাবু বলে। বলতে পারো  লুতু ভাই এর কোলে চড়ে চড়েই আমি একদিন বড় হয়ে গেলাম।

মা একদিন লুতু ভাই কে ডেকে বলল, ওরে লুতু তোর তো এবার বিয়ে করা দরকার। মেয়ে খুঁজবো?

লুতু ভাই সলজ নয়নে মার দিকে তাকিয়ে মাথা নিচু করে রাখল। মৌনতা সম্মতির লক্ষণ।

তুমি বিয়ে করবে লুতু ভাই? বলতেই সে বলে উঠল,

ধ্যাত। চল বাজারে যাই, মার জন্য পান আনতে হবে।

একদিন সত্যি সত্যি মা লুতু ভাইয়ের বিয়ের ব্যবস্তা করল। দুরের এক গ্রামে। আমরা সবাই মিলে গেলাম মেয়ে দেখতে। বাবা গেলো না। বলল, তোমরা যাও, সাথে করে মিষ্টি নিয়ে যেও।

লুতু ভাইয়ের পরনে মার দেওয়া সাদা পাঞ্জাবি। ঘোড়ার গাড়ীতে করে আমরা যাচ্ছি।

কেন? আর কোন যান বাহন ছিলনা? প্রশ্ন করে সতী তাকাল আমার দিকে।

জানো, কোন সালের কথা আমি বলছি? পঞ্চাশ দশকের। সেই সময়ে গ্রামে যেতে হলে হয় গরু গাড়ী নয়ত ঘোড়া গাড়ী।

এবার শোন।

তোমাকে কি আর এক কাপ কফি এনে দেবো।

না, এখন নয়।

বল, তারপর?

লুতু ভাইয়ের পাশে আমি বসা। মা পিছনে। সাথে মার বান্ধবী, পশু ডাক্তারের বৌ, আমেনা খালা।

লুতু ভাই আমার কানে কানে বলল, ছোট বাবু, তুই কিন্তু সব সময় আমার পাশে থাকবি।

আমরা পৌছালাম। মাটির তৈরী ঘর। মুরগী, ছাগল ঘুরে বেড়াচ্ছে উঠানে। একটু দূরে হাত চাপা পানির কল, তারি পাশে একটা কুয়া। একটা ছোট মেয়ে কুয়া থেকে পানি উঠিয়ে গোসল করছে।

আমরা এসেছি ভর দুপুরে। ছোট্ট ঘরে একটা খাট পাতা। সেই খাটে আমরা সবাই বসলাম। মা আর লুতু ভাই সামনে, আমি আর খালা পিছনে।  মেঝেতে মাদুর পাতা।

মেয়ের খালা মেয়ে কে নিয়ে এলো। হলুদ শাড়ী পড়া। পায়ে আলতা। মুখে পাউডারের ছোপ টা একটু বেশি। মাটির দিকে মাথা নুইয়ে বসলো সে মেঝেতে।

তুমি মেয়েদের এই আলতা, পাউডার এতো সব জানলে কি ভাবে। ইঁচড়ে পাকা ছিলে তুমি। তাই না?

বড় ব্যাগরা দাও কথার মাঝে। তখন আমার বয়স কত জানো? তেরো কি চোদ্দ। কাজেই—

সতী হাসতে হাসতে বলল, ঠিক আছে। এবার বলও। আমি খুব টেনশনে আছি।

মাথা নুইয়ে বসলো সে মেঝেতে। মা নেমে এলো। থুতনিতে হাত দিয়ে মুখটা উচু করে ধরল।

কিরে লুতু পছন্দ হয়? অল্প হাসি দিয়ে জিজ্ঞাসা করলো লুতু ভাই কে।

লুতু ভাই মাথা নাড়াল।

দুমাস পরে লুতু ভাই বিয়ে করে নিয়ে এলো আয়েশা ভাবী কে সেই ছোট্ট ঘরে। আমি এলাম দেখতে। লুতু ভাই ভাবীকে ডেকে বলল, উনি আমাদের ছোট বাবু, তোমার এক মাত্র দেবর। খুব আদর যত্ন করবে। কোন ত্রুটি যেন না হয়।

ভাবী এসে আমার মুখ টা উচু করে ধরে বলল, বাহ, বেশ মিষ্টি চেহার। কি বলে ডাকব, ছোট বাবু?

আমি লজ্জা পেলাম, মা ছাড়া এই প্রথম কোন মেয়ের হাতের স্পর্শ আমার মুখে লেগেছে।

কি ব্যাপার ছোট বাবু, তোমার গাল টা তো লাল হয়ে গেছে। বলে হাসতে হাসতে আমার মাথার চুলে হাত বুলিয়ে দিলো।

আমি চলে এলাম। ওরা দরজায় ছিটকেনি উঠিয়ে দিলো।

আমি ব্যস্ত হয়ে পড়লাম বোর্ড পরীক্ষা নিয়ে। মাঝে মাঝে লুতু ভাই আর ভাবী আসতো আমাদের বাসায়। ভাবী মার সাথে কথা শেষে আমার ঘরে এসে বসতো আমার পাশে। চুলে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলতো, কেমন আছো ছোট বাবু। অনেক দিন তুমি আসো না আমাদের বাসায়।

ওদের ওই ছোট্ট বাসাতে আমি গেছি। মনে হতো একটা সুখের নীড়। কিছুই নেই ঘরে। অথচ ওদের দেখে  মনে হতো সব কিছুই আছে ওদের। নেই কোন অভাব নেই কোন অনটন।

একদিন বাবা বাসায় এসে মা কে বলল, জানো, লুতু কাজ ছেড়ে দেবে।

কেন? মা আকাশ থেকে পড়ল।

ও রিক্সা কিনবে।

মা বলল, তাতো ভালো কথা। নিজের পায়ে নিজে দাঁড়াবে। ওকে বলবেন আমার সাথে যেন দেখা করে।

পরদিন এসে মা কে সালাম করে বলল, মা আপনে হবেন আমার রিক্সার প্রথম যাত্রী।

সতী জিজ্ঞাসা করলো, তারপর?

জানো সতী সুখ বড় ক্ষণস্থায়ী।

কেন বলছ? ওদের কি কিছু হয়েছিল?

তবে শোন—

আমি তখন স্কুল শেষে দূরের কলেজে চলে গেছি পড়তে। একদিন একটা চিঠি এলো মার।

 লেখা, পারলে বাসাতে এসো, কথা আছে।

এই টুকুই লেখা।

পরদিন ট্রেনে চেপে চলে এলাম। মা বাবার মুখ গম্ভীর। জিজ্ঞাসা করলাম, কি হয়েছে? কিছু বলছ না কেন?

বাবা বলল, একটা রিক্সা করে মা কে নিয়ে লুতুর বাসায় যাও। তাহলে সব জানতে পারবে।

সারা পথ মা চুপ, আমিও ভয়ে কিছু জিজ্ঞাসা করছি না।

রিক্সা এসে থামল। মা কে নামিয়ে এসে দাঁড়ালাম উঠানে। সেখানে ভাবী আলুথালু বেসে বসা। মা এগিয়ে গেলো।

মার বুকে মাথা রেখে কাঁদতে থাকলো ভাবী।

আমি কিছুই বুঝলাম না। ঘরের দরজা খোলা। পা দিলাম। মেঝে তে লুতু ভাই শোয়া। একপাশ ফিরে। গায়ে চাদর উঠানো।

আমাকে দেখে বলল, এসেছিস ছোট বাবু, বস।

বললাম, তোমার রিক্সা তো বাঁধা দেখলাম, কি হয়েছে বলত? জ্বর?

কোন কথা না বলে চাদর টা সরিয়ে দিলো শরীরের থেকে।

আমি তাকিয়ে রইলাম। কনুই থেকে শুধু একটা কাপড় ঝুলছে।

আমার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ল। আমি চেপে ধরলাম কনুই টাকে। ঝুলে পড়া কাপড় টাকে মুচড়িয়ে হাতের মধ্যে নিয়ে এলাম। মনে হোল ওটাকে টেনে ছিড়ে খণ্ড খণ্ড করে ফেলি।

তুই কাঁদিসনে ছোট বাবু। আমি আবার দাঁড়াব। এক হাতে রিক্সা চালাবো। শালা, ঐ ডাক্তার, ছোট্ট একটা ফোড়া কাটতে যেয়ে হাত টাকে বিষাক্ত করে ফেলে ছিল। গেংগীরীন হয়ে গেল। কোন উপায় ছিল না। কেটে ফেলতে হলও।

কান্না চেপে বললাম, তুমি  আবারো দাঁড়াবে লুতুভাই, আমি তোমার এক হাতে চালানো রিক্সায় উঠব।

উঠেছিলাম। সেই শেষ উঠা। আমাকে  নিয়ে ঘুরে ছিল সারা শহর। শুধু দুর পাল্লায় যেতে পারত না। মনের বল। শুধু তারই জোড়ে চলতো সে।

বাবা মা একদিন সেই শহরের মায়া ছেড়ে চলে এলো রাজধানী তে। আমি সাত সমুদ্র পাড়ি দিয়ে চলে এলাম এদেশে।

তারপর?

অনেক বছর পরে আমি গিয়ে ছিলাম ঐ পরানপুরে। সেই বাসা আর নেই। চারিদিকে জঙ্গলে ভরা। দেখা হোল আমার বন্ধু মতলেবের সাথে। জিজ্ঞাসা করলাম লুতুভাই এর কথা। চিনতে পারলো না।

বললাম, এক হাতের রিক্সা চালক।

বলল সে নেই। একদিন রিক্সা নিয়ে চলেছিল দূরপাল্লায়। ক্লান্ত সে। দ্রুত ছুটে আসা দৈত্যের মতো ট্রাক ধাক্কা দিয়ে চুরমার করে দিলো ওকে ওর রিক্সাকে।

আর ভাবী মানে লুতু ভাইয়ের বৌ কোথায় জানিস।

না। এখান থেকে চলে গেছে। কোথায় কেউ জানেনা।

আমি ফিরে এলাম।

জানো সতী, দেখা হলে বলতাম, “ ভাবী, যাবে তুমি ছোট বাবুর সাথে, যাবে কি”?

Continue Reading

ডায়রির পাতা থেকে ১০

২৯শে মে

“আচ্ছা ,আপনি আমাকে ফলো করছেন কেন? বলবেন কি?”। প্রশ্ন টা আমার দিকে ছুড়ে দিয়ে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ। আমি রাস্তার চারিদিকে একবার তাকিয়ে নিলাম। কারন ভদ্রমহিলার গলার স্বর একটু উচুতে। দুই একজন তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে। রাস্তার দুপাশের অধিকাংশ পথচারীরা আমাদের ভাষায় কথা বলে। কথাটা যে তাদের কানে যায়নি তা নয়। এবং অনেকেই ভদ্রমহিলার সাহায্যার্থে এগিয়ে আসবে না তা বলা কঠিন। আর হঠাৎ করে উনি যে ঘুরে দাড়িয়ে প্রশ্ন করবেন তাও আবার উচ্চস্বরে ভাবতে পারিনি। আমিই একটু পা চালিয়ে উনার কাছে যেয়ে একটা কথা জিজ্ঞাসা করবো, এমনি ভেবে ছিলাম। তার আগেই—
যাক সামনা সামনি যখন হয়েই পরেছি আর আশে পাশে কেউ যখন এগিয়ে আসছে না তখন মনে বল নিয়ে বললাম, আপনাকে আমার খুব পরিচিত মনে হচ্ছিল এবং এখন ও হচ্ছে, তাছাড়া আপনার কাধের ব্যাগ টাও আমার খুব পরিচিত। বলবেন কি কোথা থেকে কিনেছেন?
ভদ্রমহিলা আমার মাথা থেকে পা পর্যন্ত একবার চোখ বুলিয়ে নিলেন।
বললেন, এই ধরনের কথা আর কতজন কে বলেছেন?
বললাম, আমাকে দেখে কি আপনার তাঁই মনে হয়। আসলে ঠিক এই সাপের চামড়া দিয়ে বানান ব্যাগ, একই ডিজাইন এমন টি অনেক অনেক আগে আমি কিনেছিলাম।
তারপর?
দিয়েছিলাম একজন কে।
বাহ, আপনি তো রীতিমত নাটক তৈরী করে ফেললেন এই রাস্তায় দাড়িয়ে। লেখা টেখার অভ্যাস আছে নাকি?
লিখি, লোকে পড়ে না। যদি কিছু মনে না করেন কোন এক জাগায় বসে এক কাপ চা খেতে খেতে কথা হবে, অবশ্য আপনার যদি আপত্তি না থাকে।
আপত্তি নেই, বেশ ইন্টারেস্টীং লাগছে।
ভদ্রমহিলা হাত ঘড়ির দিকে তাকালেন।
ঘড়িটাও আমার চেনা। কিনে ছিলাম শিল্পভাণ্ডার থেকে। বলে থামলাম।
তার মানে এটা আপনি আমাকে দিয়েছেন, এই —
কথা শেষ হতে না দিয়ে বললাম, না তা নয়, ওটা কি সিটিজেন ঘড়ি?
কি ভাবে জানলেন।
চলুন চা খেতে খেতে কথা হবে।
লোকেরা আর আমাদের দিকে তাকাচ্ছে না। আমরা স্বাভাবিক ভাবে কথা বলছি। কিছু একটা ঘটতে যেয়েও ঘটলনা দেখে ওদের মনক্ষুব্ধ।
বসলাম এসে পাশের রেস্টুরেন্টে।
ভদ্রমহিলার ঠিক কপালের কাছে দুই তিন টা পাকা চুল। কানের লতী দুটো একটু ঝুলে গেছে দুল পড়তে পড়তে।
এখন কানে দুটো পার্লের টপস পড়া। ওটাও আমার পরিচিত।
বললাম, ওই কানের টপস দুটা কি ফরচুনঅফ থেকে কিনেছেন?
কোথা থেকে বললেন?
ফরচুনঅফ।
নাম শূনেনি। এটাও কি আপনার পরিচিত?
সত্যি কোথা বলতে কি ঠিক ধরেছেন।
দুই কাপ চা আর সাথে দুটো সমুচা রেখে গেলো অল্প বয়স্ক মেয়ে টা।
জিজ্ঞাসা করলাম, আরও কিছু অর্ডার দেবো কি?
বলল, না ডিপ ফ্রাইড জিনিস খুব একটা খেতে চাই না। মুখরোচক, কিন্তু সইতে পারিনা। হার্ট বার্ন হয়।
তারও হতো।
কি বললেন।
না কিছু না
ভদ্রমহিলা চা র পেয়ালায় চুমুক দিয়ে, হু,আহ্‌ হু,আহ্‌ করে উঠল।
গরম চা খাওয়ার অভ্যাস নেই? তাই কি?
ঠিক ধরেছেন। তা আপনার আর কি কি জিজ্ঞাসা করার আছে?
রাগ করলেন।
রাগ করলে তো আপনার সাথে এসে বসতাম না। কৌতুহল।
ঐ যে বললাম, আপনার ব্যাগ টা আমাকে আকর্ষণ করেছিল। একটু হাত দিয়ে দেখব কি?
ভদ্রমহিলা ব্যাগ টা এগিয়ে দিলেন। চোখের দৃষ্টি আমার মুখের দিকে।
আমি সাপের চামড়া দিয়ে বাধানো ব্যাগ টার উপর হাত বুলাতে বুলাতে একটু অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছিলাম।
ভদ্রমহিলার ডাকে ফিরে এলাম। কি হোল? ঘোর কাটল?
জানেন এই ব্যাগ টাতে আমার অনেক স্মৃতি মেশানো।
এই ব্যাগ টা নয়, আপনার সেই ব্যাগটা। বেশ জমে উঠেছে। আপনি বলেন, আমি শুনি।
আর এক কাপ চা র অর্ডার দেই, কি বলেন?
মন্দ না।
হাত উচু করে ইশারায় জানালাম আরও দু কাপ চা দিতে।

আমি তখন বিশ্ববিদ্যালয়য়ের ছাত্র। হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এক বন্ধুর সাথে গিয়েছিলাম। কেন? আজ তা মনে করতে পারছিনা। বন্ধু উপরে চলে গেলো। আর আমি নিচের তালায় দোকান গুলো ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম। হঠাৎ ই চোখে পড়লো ব্যাগ টা। এতো বড় হোটেলের চকচকে পলিস করা দোকানে ঢুকতে সাহস হচ্ছিল না। আবার ব্যাগটার মোহ কাটিয়ে উঠতে পারছিলাম না। বার কয়েক দোকানের সামনে পায়চারি করে একসময় সাহস সঞ্চয় করলাম।
ভিতরে ঢুকলাম। দোকানের কর্মচারী কে বললাম, ব্যাগ টা একটু দেখাবেন কি?
অনীচ্ছুক ভাবে ভদ্রলোক আমার সামনে রাখল। আমি ব্যাগটার উপর দু এক বার হাত বুলালাম।
ব্যাগ টা নেওয়ার মতো কেউ ছিল কি?
ছিল।
তারপর?
তারপর, আমি জানি ওটা আমার ধরা ছোঁয়ার বাহিরে তবুও দাম টা জানলাম। এটাও জানি ব্যাগ টা কিনতে হলে আমাকে একটু অভাবের মধ্যে পড়তে হবে।
সামনের মাসের খাওয়ার জন্য বরাদ্দ যে স্কলারশিপের টাকা আছে ওটাই আমার সম্বল। ব্যাগ টা কিনলেও মাত্র চার পাঁচ দিনের মতো খাওয়ার টাকা আমার হাতে থেকে যাবে। ভাবলাম পরের টা পরে। ব্যাগ টা আমার চাই।
ভদ্রলোক কে বললাম, কাল এসে নিয়ে যাব।
ভদ্রলোক গম্ভীর মুখে উঠিয়ে রাখল ব্যাগটা।
পরদিন এসেছিলেন?
এসেছিলাম, ভদ্রলোক হাসিমুখে কাগজ দিয়ে মুড়িয়ে আমার হাতে দিলো।
ওকে বলে এসেছিলাম আজ তোমাকে একটা সারপ্রাইজ দেবো।
সারপ্রাইজ হয়েছিল কি?
ভীষণ।
আর আপনার খাওয়া? মাত্র তো তিন চারদিনের টাকা ছিল।
সে আরেক কাহিনী। খাওয়ার পরিমাণ কমিয়ে দিলাম। তাতে করে কিছু টাকা এক্সট্রা থাকল। এমন সময় দেশের রাজনৌতীক রাজনৈতিক পরিস্থিতি খারাপের দিকে মোড় নিলো। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দাওয়া হোল। আমি বাসায় চলে এলাম। খাওয়ার কথা চিন্তা করতে হলনা।
এতো দেখছি রীতিমত সিনেমার গল্প।
বলতে পারেন। জানেন, ব্যাগ টা ঠিক আপনারই মতো এই ভাবে কখনও ঝুলিয়ে কখন কাঁধে নিয়ে হাঁটত সে।
আমার কথা শেষ হতেই ভদ্রমহিলা পিছনের দিকে তাকাল কয়েক সেকেন্ডের জন্য।
তারপর তাকাল আমার চোখের দিকে।
কিছুক্ষণের জন্য নিস্তব্ধতা নেমে এলো। দুজনের কারো মুখে কোন কথা নেই।

সেই কিছুক্ষণের নিস্তব্ধতা ভেঙ্গে আমিই তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, এবার বলুন আপনার কথা। কোথায় থাকেন?
সাফক কাউন্টী তে।
আর কেউ আছে কি?
ওর সাথে সেপারেসনে আছি।
কেন ?
কোন উপায় ছিলনা। পরিস্থিতি বাধ্য করেছিল। চলে এলাম । সেই সময় কম দামে ছোট্ট একটা জায়গা পেয়ে গেলাম ,কিনে নিলাম। ওখানেই একটা রুম ওরা আমাকে বানিয়ে দিয়েছে আমি দিব্যি আছি।
একেবারে একেলা।
না তা নয়। আসে পাশে দুই একজন বন্ধু বান্ধবী আছে। ওদের সাথে কথা বলে সময় কাটে।
আপনাকে বলতে অসুবিধা নেই, ও প্রতি সপ্তাহে এক গোছা লাল গোলাপ নিয়ে দেখা করতে আসে।
এই যে বললেন সেপারেসনে আছেন।
ভদ্রমহিলা হাসল, “ সে তো বাহিরে, মনের দিক থেকে তো নয়”।
বাহ্‌, বড় রোম্যান্টিক মনে হচ্ছে?
আসলে তাঁই।
ওয়েট্রেস এসে জিজ্ঞাসা করল, আরও কিছু লাগবে কি?
ভদ্রমহিলা তাকাল আমার দিকে, বলল, সরপুঁটি দিয়ে ভাত খেতে ইচ্ছা করছে, কিন্তু হাতে সময় নেই। আমার শেষ ট্রেন তিনটা একচল্লিশে।
তাহলে উঠতে হয়।
দীর্ঘও একটা নিশ্বাস ফেলল ভদ্রমহিলা। চোখের কোণটা কালচে মনে হোল। কাজলের দাগ নাকি ঘুমের অভাব, জানিনা।
রাস্তায় এসে দাঁড়ালাম দুজন।
ও এগিয়ে গেলো।
আমি জিজ্ঞাসা করলাম আবার দেখা হবে কি?
ঘাড় ফিরে তাকাল সে, মুখে হাসি, আমি থমকে গেলাম হাসি দেখে, বলল সে, দেখা হবে রোববারে।

রোববারে?
অসহ্য শব্দ কান ঝালাপালা করে দিলো। চোখ মেলে চাইলাম। অ্যালার্ম টা বাজছে। রাত তিনটা বিশ। সেহেরী খেতে হবে।
তিনটা একচল্লিশ, খাওয়ার শেষ সময়।
ওর কথাটা বারবার প্রতিধ্বনি হয়ে ফিরতে থাকলো,
দেখা হবে রোববারে।

Continue Reading

ডায়রির পাতা থাকে ৯

২৩ ই মে

 বছর পেড়িয়ে গেছে। নয়ন ভাই(আমার মেয়ের শ্বশুরের ভাই) বলেছিল, আমার ছেলের বিয়েতে আসতে হবে। এবছর নয়। পরের বছর।

সেই পরের বছর এসে গেলো। আটলান্টা শহরে বিয়ে।  আমি, জীবন বেয়ান আর চয়ন ভাবী, যাবো একই দিনে, একই প্লেনে, একই সময়ে। সকাল দশ টায় প্লেন ছাড়বে। লাগুয়ারদীয়া এয়ারপোর্ট থেকে। জীবন আমার ছেলের শাশুড়ি। চয়ন তার বোন। কাজেই আমাদের মধ্যে আত্মীয়তা আছে।

ভাবলাম যাক গল্প করতে করতে যাওয়া যাবে। সে গুড়ে বালি।

সাউথওয়েস্ট  এয়ারলাইন। আগের থেকে সীট রিজার্ভেশন করা যায়না। ভিতরে ঢুকে খালি সীটে বসতে হবে। ভিতরে এসে  দেখলাম দুটো সীট এক জায়গায় অপর টি অন্যখানে। অগত্যা ওদের দুজনকে বসতে দিয়ে আমি এসে বসলাম অন্য সীটে।

দুই ঘণ্টা গল্প করে কাটানোর স্বপ্ন আমার বেহেশতে গেলো।

ভাগ্যভালো আহমেদ রফিকের লেখা নির্বাচিত রবীন্দ্রনাথ বইটা সাথে নিয়ে এসেছিলাম। খুলে বসলাম।

আটলান্টা এয়ারপোর্ট। এসে পৌছালাম  দুপুর বারোটার কিছু পরে। রেজ (আমার মেয়ের জামাই)  আসবে নিতে। সুষমা, রেজ ওরা আগেই চলে এসেছিল। আমরা উঠব নয়ন ভাইয়ের বাসায়। ওখানে থাকবে সজল ভাই(সুষমার শ্বশুর) আর ভাবী। রেজ ফোন করে জানাল সে পথে, তবে রাস্তায় ভীষণ ভিড়। সময় লাগবে।

একটু দেরী। তাতে আমাদের কোন অসুবিধা নেই। এখানে তো ঘোড়ায় লাগাম দিয়ে আসিনি যে ছুটতে হবে। জীবন, চয়নের চোখ ঢুলু ঢুলু। অনেক ভোরে উঠতে হয়েছে। তাঁই।

 দেড় ঘণ্টার পথ নয়ন ভাইয়ের বাসা। জিজ্ঞাসা করলাম সাথে আসা দুজনকে,” চা, পানি খাবে কিছু?” প্রতি উত্তরে বলল,

“না, ওখানে যেয়েই ব্রাঞ্চ করবো”।

রেজ ভাড়া করা SUV টা নিয়ে এসে দাঁড়ালো সামনে। আমরা সুটকেস গুলো উঠিয়ে দিলাম। জীবনের সুটকেসের ওজন একটু বেশি। বললাম,” কি ব্যাপার? ভিতরে লোহালক্কড় পুড়ে এনেছ নাকি”।

বলল,” ও আপনি বুঝবেন না। মেয়েলি জিনিস পত্র”।

শহরের ভিতর দিয়ে  আস্তে ধীরে চলেছি আমরা। চারিদিকে তাকিয়ে মন ভরছে না। হয়তো আমরা এসেছি নিউইয়র্ক থেকে, তাঁই। এ আমার গর্বিত মন নয়। যা দেখছি তার উপলব্ধীতা।

 শহর পেড়িয়ে আমরা এলাম চারিদিকে সবুজ গাছে ঢাকা রাস্তার মাঝে। উচু নিচু রাস্তা। আঁকা বাকা।

জীবন আমাকে বলল,” এবার আপনার মন ভরেছে তো”?

ভরেছে?

আমরা বাঁক নিলাম নয়ন ভাইয়ের কমিউনিটিতে। বিরাট বিরাট বাড়ী ঘর চারিদিকে। সুন্দর করে ছাটা লন।  এসে দাঁড়ালাম বাসার সামনে। বিয়ে বাড়ী।

রানা ভাবী, ঘরের গৃহিনী, আর নার্গিস ভাবী (রেজের মা)  নেমে এলো বাকা সিঁড়ি বেয়ে। বিশাল বাড়ী।

“ সবাই কোথায়”। জিজ্ঞাসা করতেই,

“ জুম্মাতে”। বলল রানা ভাবী। “ আসেন, আপনারা কিছু মুখে দেন। আসতে অনেক দেরী হয়ে গেলো”।

উনার আন্তরিকতা সুলভ কণ্ঠের ডাকশুনে মনে হলনা এই প্রথম দেখলাম।

জীবন, চয়ন মিশে গেলো উনার সাথে। হাতে হাতে সাজানো হোল খাবার টেবিল। আমি তাকিয়ে তাকিয়ে দেখলাম।

মনে হোল এই বাড়ীতে যেন আমি আগেও এসেছি। সজল ভাই, নয়ন ভাই ঢুকল দরজা খুলে।

গোসল শেষে নেমে এলো সুষমা। ডাক দিলো সেই মধুর স্বরে,” আব্বু”।

খাওয়া শেষে নয়ন ভাইয়ের প্রস্তাব, চলেন ঘুরে দেখাই আমাদের জাগাটা।

আমরা তিন আর সজল ভাই আর নার্গিস ভাবী । গাড়ীর চালক নয়ন ভাই।

সবুজের সমারোহ চারিদিকে। রাস্তার দুপাশে খাদ নেমে গেছে। মিশেছে Lake Lanier এর সাথে।

 Lake Lanier একটা Reservoir, Chattahoochee River এর উপরে Buford Dam তৈরীর সময় এটার সৃষ্টি।   আমাদের গাড়ী নেমে এলো উচু রাস্তা থেকে Lake Lanier এর পাড়ে। আমরা নেমে এলাম। ছায়া ঘেরা চিকন রাস্তা বেয়ে এসে দাড়ালাম লেকের পাশে। বড় বড় পাথর বিছানো পাড়।

জীবন, চয়ন ছবি তুলবে। অতি সাবধানে এক পাথর ডিঙ্গিয়ে অপর পাথরে পা দিয়ে এসে দাড়াল।

বললাম, বেশি নড়াচড়া করোনা তাহলেই পড়বে ঐ জলে। দেখছ তো ঐ টারবাইন, ওটা হাইড্রলিক পাম্প। ইলিকট্রিসিটি  তৈরী হয় এখানে।

শুটিং শেষ। ওরা উঠে এলো।

এই সুন্দর মনোরম পরিবেশ ছেড়ে যেতে মন চাইছিল না। তা বললে তো হবে না। যেতে হবে গায়ে হলুদে।

অবশেষে ফিরে এলাম।

আজ রাতে সামি আর সাজিয়ার গায়ে হলুদ। ডালাতে সাজানো বিভিন্ন উপহার। রানা ভাবীর হাতে গড়া চুমকী দিয়ে গাঁথা ছোট্ট পালীকী তে যাবে বৌ এর শাড়ী। সামি সেজেছে ওদের দেওয়া হলুদের পাঞ্জাবি, সাথে ওড়না। মানিয়েছে ।

জীবন, চয়ন পড়ে এলো হলুদের  জন্য আনা শাড়ী। আমি চাপিয়ে নিলাম অনেক আগের সেই ছেলের হলুদে পড়া পাঞ্জাবি টা। নস্টালজিয়া বলতে পারো।

সুন্দর করে সাজানো  পার্টি ঘর। বিভিন্ন রঙ এর কাপড়ে সেজেছে মেয়ের বয়সী মেয়েরা। ওরা হাসছে। ওদের উচ্ছল ভাব আমার ভালো লাগছে।  ভাবী বোনদের গায়ে হলুদের সাঁজ।  সামি বসে আছে ফুল দিয়ে সাজানো মঞ্চে ।

 সাজিয়া আসবে।

ওর বন্ধুরা নিয়ে এলো ওকে। মাথার উপর লাল ওড়না দিয়ে। বসিয়ে দিল সামির পাশে। ওর ব্যচেলারত্ত আজ শেষের পথে।

ও কি জানে তা?

সাজিয়ার বন্ধুরা নাচলো ওদের সামনে। বয়স্করা উঠে এলো মঞ্চে। ছুঁইয়ে দিলো হলুদ ওদের দুজনের মুখে। ফ্লাস জ্বলে উঠলো। ধরে রাখল আজকের স্মৃতি।

আমরা উঠে গেলাম খাবার আনতে।

শনিবার। বিয়ের কোন অনুষ্ঠান আজ নেই । বিয়ের অনুষ্ঠান আগামীকাল। রানা ভাবী বেশ কিছু লোক কে বলেছে দুপুরে খাওয়ার জন্য।

আমরা বললাম,” আটলান্টা শহর টা দেখে আসি, সেই সাথে CNN Tower। ফিরে আসবো সময় মতো”।

বেড়িয়ে পড়লাম। আমি জীবন চয়ন সুষমা আর রেজ। বন্ধের দিন। রাস্তা ঘাটে লোকজন কম। বলেছি, নয়ন ভাইয়ের বাসা সিটি থেকে অনেক দুর। ঘণ্টার উপরে লেগে গেলো পৌছাতে।  CNN Tower এ ও ভিড় কম।

ট্যুরের মাধ্যমে আমরা ঘুরে ঘুরে দেখলাম কোথায় কিভাবে অ্যাংকররা বসে আমাদের কে খবর শোনায়। ভিন্ন অভিজ্ঞতা। বাসায় মুখরোচক খাবার আছে জেনেও এই মুহূর্তে আমাদের পাকস্থলীর গুরগুর আওয়াজ বন্ধের জন্য সরানাপন্ন হতে হোল

Taco Bellর। খাওয়া শেষে ফেরত যাত্রা। পৌছাতে পৌছাতে তিনটে বেজে গেলো।

অনেক লোকের সমাগম। বিভিন্ন ধরেনের খাবার দিয়ে পরিবেশন করেছেন রানা ভাবী। উন্মুক্ত বসার ঘর। লোকজন ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে আছে। পরিচয় হোল নয়ন ভাইয়ের মেজ ছেলের শ্বশুরের সাথে। থাকেন ভারজেনীয়া। এসেছেন বিয়ে উপলক্ষে।

এক কণে আমরা কজন। আলাপ এদেশের, বাংলাদেশের রাজনীতি, বিভিন্ন জনের শারীরিক সমস্যা ইত্যাদি ইত্যাদি। অন্য কোনায় ধর্ম নিয়ে আলোচনা।

অন্য ঘরে ভদ্রমহিলাদের আলোচনা। কি নিয়ে জানিনা।

একে একে অনেকে চলে গেলো।  থাকলাম আমরা কজন।

রানা ভাবী ক্লান্ত শরীর নিয়ে বসেছে চেয়ারে। মুখে ক্লান্তি নয়, মনখুন্নতার  প্রকাশ। চলে যাওয়ার আগে কে যেন কি বলে গেছে। তারই প্রকাশ।

বললাম,” মন খারাপ করবেন না। গুরুজনরা বলত, ১০১ টা কথা না হলে বিয়ে হয়না। কাজেই ওসব কথা কানে দেবেন না”।  এতো আমার বলা।

যার মাসের পর মাস বিশ্রামহীন কর্মের ফল আজকের এই অনুষ্ঠান,  সে কেনও শুনতে যাবে অন্যের কটু কথা।

রোববার, বিয়ের দিন। বাহিরে বৃষ্টি। সবার মন খারাপ। এখানে এমন হয়। মাঝে মাঝে এক পশলা বৃষ্টি আবার রৌদ। এই লুকোচুরি চলছে। সামি  পড়েছে মেয়ে পক্ষের দেওয়া গোল্ডেনের উপর লাল কাজ করা শেরওয়ানী। সাথে লাল ওড়না। গলার উপর দিয়ে ঝুলিয়ে দিয়াছে। মাথায় কারুকার্যও খচিত পাগড়ী। হ্যান্ডসাম ছেলে টাকে আরও হ্যান্ডসাম লাগছে।

অনুষ্ঠান দুপুর দুটায়। দুঘণ্টার পথ বাসা থকে। নয়ন ভাই, ভাবী সামি সহ বেড়িয়ে পড়লো। ফটো অপ আছে। আমরা বের হলাম একটু পরে। আস্তে আস্তে মেঘ কেটে গেলো।  কালো মেঘের আড়াল থেকে দেখা দিলো রোদের ঝলকানি।

আমরা এসে পৌছালাম কান্ট্রি ক্লাবে। বাহিরে ফুল গাছের নিচে তৈরী হয়েছে বর কনে বসার মঞ্চ। পাশে ছোট্ট পুকুরে উঠছে নামছে  পানির ফোয়ারা। সামনে পাতা চেয়ারে সবাই এসে বসল। বাহিরে তাপের মাত্রা একটু বেশি। ছোট হাত পাখা সবার হাতে।

 সামি সাজিয়া এলো। সাজিয়াকে খুব সুন্দর মানিয়েছে লালের উপর গরজীয়াস কাজ করা শালওয়ার কামিজে। মাথায় আলতো করে রাখা ম্যাচিং ওড়না। অলঙ্কারের ভাড়ে আমার মনে হচ্ছে ও একটু নুয়ে পড়েছে। না, এ আমার চোখের ভুল। ইমাম সাহেব বুঝিয়ে দিলো আজকের দিনের তাৎপর্যটা। (একটু বেশি কথা বলে)

ওরা এখন একে পরের নির্ভর শীল। ওরা স্বামী স্ত্রী।

আমরা এলাম বড় হল ঘরে। এখানে হবে অন্যান্য অনুষ্ঠান। নিউইয়র্ক থেকে আমরা কয়েক জন এসেছি। দেখা হোল রানু ভাবী, ইসাখ ভাই, সাদেক ভাই ও ভাবীর সাথে। আমাদের টেবিল নাম্বার চার। সবাই নিউইয়র্ক বাসি।

 অনুষ্ঠানের শুরুতে বর পক্ষের আর কন্যা পক্ষের পরিচিতি। শেষে বর আর বৌ এর আগমন বাজনার তালে তালে।

আনন্দের বন্যা বইছে। ওরা সবাই নাচছে। ওদের আনন্দ আমাদের আনন্দ। এমনি তো হবে। এইদিন তো এর একবার আসবে না সামি-সাজিয়ার জীবনে।

আমরা এলাম,দেখলাম, উপভোগ করলাম।

পরদিন বিদায়ের পালা। রানা ভাবী নয়ন ভাইয়ের আতিথেয়তা ভুলবার নয়।

বললাম, ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করবো না। ভালো সময় গুলো চলে যায় তাড়াতাড়ি।

আমরা গাড়ীতে উঠলাম, ওরা বারান্দায় দাড়িয়ে হাত নেড়ে বিদায় জানালো।

আজ ওদের হাতে অনেক কাজ।  জামাই বৌ ফিরবে আজ।

২৩ ই মে

 বছর পেড়িয়ে গেছে। নয়ন ভাই(আমার মেয়ের শ্বশুরের ভাই) বলেছিল, আমার ছেলের বিয়েতে আসতে হবে। এবছর নয়। পরের বছর।

সেই পরের বছর এসে গেলো। আটলান্টা শহরে বিয়ে।  আমি, জীবন বেয়ান আর চয়ন ভাবী, যাবো একই দিনে, একই প্লেনে, একই সময়ে। সকাল দশ টায় প্লেন ছাড়বে। লাগুয়ারদীয়া এয়ারপোর্ট থেকে। জীবন আমার ছেলের শাশুড়ি। চয়ন তার বোন। কাজেই আমাদের মধ্যে আত্মীয়তা আছে।

ভাবলাম যাক গল্প করতে করতে যাওয়া যাবে। সে গুড়ে বালি।

সাউথওয়েস্ট  এয়ারলাইন। আগের থেকে সীট রিজার্ভেশন করা যায়না। ভিতরে ঢুকে খালি সীটে বসতে হবে। ভিতরে এসে  দেখলাম দুটো সীট এক জায়গায় অপর টি অন্যখানে। অগত্যা ওদের দুজনকে বসতে দিয়ে আমি এসে বসলাম অন্য সীটে।

দুই ঘণ্টা গল্প করে কাটানোর স্বপ্ন আমার বেহেশতে গেলো।

ভাগ্যভালো আহমেদ রফিকের লেখা নির্বাচিত রবীন্দ্রনাথ বইটা সাথে নিয়ে এসেছিলাম। খুলে বসলাম।

আটলান্টা এয়ারপোর্ট। এসে পৌছালাম  দুপুর বারোটার কিছু পরে। রেজ (আমার মেয়ের জামাই)  আসবে নিতে। সুষমা, রেজ ওরা আগেই চলে এসেছিল। আমরা উঠব নয়ন ভাইয়ের বাসায়। ওখানে থাকবে সজল ভাই(সুষমার শ্বশুর) আর ভাবী। রেজ ফোন করে জানাল সে পথে, তবে রাস্তায় ভীষণ ভিড়। সময় লাগবে।

একটু দেরী। তাতে আমাদের কোন অসুবিধা নেই। এখানে তো ঘোড়ায় লাগাম দিয়ে আসিনি যে ছুটতে হবে। জীবন, চয়নের চোখ ঢুলু ঢুলু। অনেক ভোরে উঠতে হয়েছে। তাঁই।

 দেড় ঘণ্টার পথ নয়ন ভাইয়ের বাসা। জিজ্ঞাসা করলাম সাথে আসা দুজনকে,” চা, পানি খাবে কিছু?” প্রতি উত্তরে বলল,

“না, ওখানে যেয়েই ব্রাঞ্চ করবো”।

রেজ ভাড়া করা SUV টা নিয়ে এসে দাঁড়ালো সামনে। আমরা সুটকেস গুলো উঠিয়ে দিলাম। জীবনের সুটকেসের ওজন একটু বেশি। বললাম,” কি ব্যাপার? ভিতরে লোহালক্কড় পুড়ে এনেছ নাকি”।

বলল,” ও আপনি বুঝবেন না। মেয়েলি জিনিস পত্র”।

শহরের ভিতর দিয়ে  আস্তে ধীরে চলেছি আমরা। চারিদিকে তাকিয়ে মন ভরছে না। হয়তো আমরা এসেছি নিউইয়র্ক থেকে, তাঁই। এ আমার গর্বিত মন নয়। যা দেখছি তার উপলব্ধীতা।

 শহর পেড়িয়ে আমরা এলাম চারিদিকে সবুজ গাছে ঢাকা রাস্তার মাঝে। উচু নিচু রাস্তা। আঁকা বাকা।

জীবন আমাকে বলল,” এবার আপনার মন ভরেছে তো”?

ভরেছে?

আমরা বাঁক নিলাম নয়ন ভাইয়ের কমিউনিটিতে। বিরাট বিরাট বাড়ী ঘর চারিদিকে। সুন্দর করে ছাটা লন।  এসে দাঁড়ালাম বাসার সামনে। বিয়ে বাড়ী।

রানা ভাবী, ঘরের গৃহিনী, আর নার্গিস ভাবী (রেজের মা)  নেমে এলো বাকা সিঁড়ি বেয়ে। বিশাল বাড়ী।

“ সবাই কোথায়”। জিজ্ঞাসা করতেই,

“ জুম্মাতে”। বলল রানা ভাবী। “ আসেন, আপনারা কিছু মুখে দেন। আসতে অনেক দেরী হয়ে গেলো”।

উনার আন্তরিকতা সুলভ কণ্ঠের ডাকশুনে মনে হলনা এই প্রথম দেখলাম।

জীবন, চয়ন মিশে গেলো উনার সাথে। হাতে হাতে সাজানো হোল খাবার টেবিল। আমি তাকিয়ে তাকিয়ে দেখলাম।

মনে হোল এই বাড়ীতে যেন আমি আগেও এসেছি। সজল ভাই, নয়ন ভাই ঢুকল দরজা খুলে।

গোসল শেষে নেমে এলো সুষমা। ডাক দিলো সেই মধুর স্বরে,” আব্বু”।

খাওয়া শেষে নয়ন ভাইয়ের প্রস্তাব, চলেন ঘুরে দেখাই আমাদের জাগাটা।

আমরা তিন আর সজল ভাই আর নার্গিস ভাবী । গাড়ীর চালক নয়ন ভাই।

সবুজের সমারোহ চারিদিকে। রাস্তার দুপাশে খাদ নেমে গেছে। মিশেছে Lake Lanier এর সাথে।

 Lake Lanier একটা Reservoir, Chattahoochee River এর উপরে Buford Dam তৈরীর সময় এটার সৃষ্টি।   আমাদের গাড়ী নেমে এলো উচু রাস্তা থেকে Lake Lanier এর পাড়ে। আমরা নেমে এলাম। ছায়া ঘেরা চিকন রাস্তা বেয়ে এসে দাড়ালাম লেকের পাশে। বড় বড় পাথর বিছানো পাড়।

জীবন, চয়ন ছবি তুলবে। অতি সাবধানে এক পাথর ডিঙ্গিয়ে অপর পাথরে পা দিয়ে এসে দাড়াল।

বললাম, বেশি নড়াচড়া করোনা তাহলেই পড়বে ঐ জলে। দেখছ তো ঐ টারবাইন, ওটা হাইড্রলিক পাম্প। ইলিকট্রিসিটি  তৈরী হয় এখানে।

শুটিং শেষ। ওরা উঠে এলো।

এই সুন্দর মনোরম পরিবেশ ছেড়ে যেতে মন চাইছিল না। তা বললে তো হবে না। যেতে হবে গায়ে হলুদে।

অবশেষে ফিরে এলাম।

আজ রাতে সামি আর সাজিয়ার গায়ে হলুদ। ডালাতে সাজানো বিভিন্ন উপহার। রানা ভাবীর হাতে গড়া চুমকী দিয়ে গাঁথা ছোট্ট পালীকী তে যাবে বৌ এর শাড়ী। সামি সেজেছে ওদের দেওয়া হলুদের পাঞ্জাবি, সাথে ওড়না। মানিয়েছে ।

জীবন, চয়ন পড়ে এলো হলুদের  জন্য আনা শাড়ী। আমি চাপিয়ে নিলাম অনেক আগের সেই ছেলের হলুদে পড়া পাঞ্জাবি টা। নস্টালজিয়া বলতে পারো।

সুন্দর করে সাজানো  পার্টি ঘর। বিভিন্ন রঙ এর কাপড়ে সেজেছে মেয়ের বয়সী মেয়েরা। ওরা হাসছে। ওদের উচ্ছল ভাব আমার ভালো লাগছে।  ভাবী বোনদের গায়ে হলুদের সাঁজ।  সামি বসে আছে ফুল দিয়ে সাজানো মঞ্চে ।

 সাজিয়া আসবে।

ওর বন্ধুরা নিয়ে এলো ওকে। মাথার উপর লাল ওড়না দিয়ে। বসিয়ে দিল সামির পাশে। ওর ব্যচেলারত্ত আজ শেষের পথে।

ও কি জানে তা?

সাজিয়ার বন্ধুরা নাচলো ওদের সামনে। বয়স্করা উঠে এলো মঞ্চে। ছুঁইয়ে দিলো হলুদ ওদের দুজনের মুখে। ফ্লাস জ্বলে উঠলো। ধরে রাখল আজকের স্মৃতি।

আমরা উঠে গেলাম খাবার আনতে।

শনিবার। বিয়ের কোন অনুষ্ঠান আজ নেই । বিয়ের অনুষ্ঠান আগামীকাল। রানা ভাবী বেশ কিছু লোক কে বলেছে দুপুরে খাওয়ার জন্য।

আমরা বললাম,” আটলান্টা শহর টা দেখে আসি, সেই সাথে CNN Tower। ফিরে আসবো সময় মতো”।

বেড়িয়ে পড়লাম। আমি জীবন চয়ন সুষমা আর রেজ। বন্ধের দিন। রাস্তা ঘাটে লোকজন কম। বলেছি, নয়ন ভাইয়ের বাসা সিটি থেকে অনেক দুর। ঘণ্টার উপরে লেগে গেলো পৌছাতে।  CNN Tower এ ও ভিড় কম।

ট্যুরের মাধ্যমে আমরা ঘুরে ঘুরে দেখলাম কোথায় কিভাবে অ্যাংকররা বসে আমাদের কে খবর শোনায়। ভিন্ন অভিজ্ঞতা। বাসায় মুখরোচক খাবার আছে জেনেও এই মুহূর্তে আমাদের পাকস্থলীর গুরগুর আওয়াজ বন্ধের জন্য সরানাপন্ন হতে হোল

Taco Bellর। খাওয়া শেষে ফেরত যাত্রা। পৌছাতে পৌছাতে তিনটে বেজে গেলো।

অনেক লোকের সমাগম। বিভিন্ন ধরেনের খাবার দিয়ে পরিবেশন করেছেন রানা ভাবী। উন্মুক্ত বসার ঘর। লোকজন ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে আছে। পরিচয় হোল নয়ন ভাইয়ের মেজ ছেলের শ্বশুরের সাথে। থাকেন ভারজেনীয়া। এসেছেন বিয়ে উপলক্ষে।

এক কণে আমরা কজন। আলাপ এদেশের, বাংলাদেশের রাজনীতি, বিভিন্ন জনের শারীরিক সমস্যা ইত্যাদি ইত্যাদি। অন্য কোনায় ধর্ম নিয়ে আলোচনা।

অন্য ঘরে ভদ্রমহিলাদের আলোচনা। কি নিয়ে জানিনা।

একে একে অনেকে চলে গেলো।  থাকলাম আমরা কজন।

রানা ভাবী ক্লান্ত শরীর নিয়ে বসেছে চেয়ারে। মুখে ক্লান্তি নয়, মনখুন্নতার  প্রকাশ। চলে যাওয়ার আগে কে যেন কি বলে গেছে। তারই প্রকাশ।

বললাম,” মন খারাপ করবেন না। গুরুজনরা বলত, ১০১ টা কথা না হলে বিয়ে হয়না। কাজেই ওসব কথা কানে দেবেন না”।  এতো আমার বলা।

যার মাসের পর মাস বিশ্রামহীন কর্মের ফল আজকের এই অনুষ্ঠান,  সে কেনও শুনতে যাবে অন্যের কটু কথা।

রোববার, বিয়ের দিন। বাহিরে বৃষ্টি। সবার মন খারাপ। এখানে এমন হয়। মাঝে মাঝে এক পশলা বৃষ্টি আবার রৌদ। এই লুকোচুরি চলছে। সামি  পড়েছে মেয়ে পক্ষের দেওয়া গোল্ডেনের উপর লাল কাজ করা শেরওয়ানী। সাথে লাল ওড়না। গলার উপর দিয়ে ঝুলিয়ে দিয়াছে। মাথায় কারুকার্যও খচিত পাগড়ী। হ্যান্ডসাম ছেলে টাকে আরও হ্যান্ডসাম লাগছে।

অনুষ্ঠান দুপুর দুটায়। দুঘণ্টার পথ বাসা থকে। নয়ন ভাই, ভাবী সামি সহ বেড়িয়ে পড়লো। ফটো অপ আছে। আমরা বের হলাম একটু পরে। আস্তে আস্তে মেঘ কেটে গেলো।  কালো মেঘের আড়াল থেকে দেখা দিলো রোদের ঝলকানি।

আমরা এসে পৌছালাম কান্ট্রি ক্লাবে। বাহিরে ফুল গাছের নিচে তৈরী হয়েছে বর কনে বসার মঞ্চ। পাশে ছোট্ট পুকুরে উঠছে নামছে  পানির ফোয়ারা। সামনে পাতা চেয়ারে সবাই এসে বসল। বাহিরে তাপের মাত্রা একটু বেশি। ছোট হাত পাখা সবার হাতে।

 সামি সাজিয়া এলো। সাজিয়াকে খুব সুন্দর মানিয়েছে লালের উপর গরজীয়াস কাজ করা শালওয়ার কামিজে। মাথায় আলতো করে রাখা ম্যাচিং ওড়না। অলঙ্কারের ভাড়ে আমার মনে হচ্ছে ও একটু নুয়ে পড়েছে। না, এ আমার চোখের ভুল। ইমাম সাহেব বুঝিয়ে দিলো আজকের দিনের তাৎপর্যটা। (একটু বেশি কথা বলে)

ওরা এখন একে পরের নির্ভর শীল। ওরা স্বামী স্ত্রী।

আমরা এলাম বড় হল ঘরে। এখানে হবে অন্যান্য অনুষ্ঠান। নিউইয়র্ক থেকে আমরা কয়েক জন এসেছি। দেখা হোল রানু ভাবী, ইসাখ ভাই, সাদেক ভাই ও ভাবীর সাথে। আমাদের টেবিল নাম্বার চার। সবাই নিউইয়র্ক বাসি।

 অনুষ্ঠানের শুরুতে বর পক্ষের আর কন্যা পক্ষের পরিচিতি। শেষে বর আর বৌ এর আগমন বাজনার তালে তালে।

আনন্দের বন্যা বইছে। ওরা সবাই নাচছে। ওদের আনন্দ আমাদের আনন্দ। এমনি তো হবে। এইদিন তো এর একবার আসবে না সামি-সাজিয়ার জীবনে।

আমরা এলাম,দেখলাম, উপভোগ করলাম।

পরদিন বিদায়ের পালা। রানা ভাবী নয়ন ভাইয়ের আতিথেয়তা ভুলবার নয়।

বললাম, ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করবো না। ভালো সময় গুলো চলে যায় তাড়াতাড়ি।

আমরা গাড়ীতে উঠলাম, ওরা বারান্দায় দাড়িয়ে হাত নেড়ে বিদায় জানালো।

আজ ওদের হাতে অনেক কাজ।  জামাই বৌ ফিরবে আজ।

 

Continue Reading