প্রেম

“ যেই মুহূর্তে আমি ওর চোখে চোখ রাখলাম, আমার সমস্ত শরীর ঠাণ্ডায় হীম হয়ে এলো। ওর নীল রঙ এর চোখ থেকে আমি আমার চোখ সরিয়ে নিতে পারলাম না। ওর হাসির মধ্যে যে উষ্ণতা তা ছড়িয়ে গেলো আমার শরীরের প্রতিটি অংগে।  আমার শরীরের প্রতি টি লোমকূপ বলতে থাকলো এই সেই যার মাঝে তুমি খুজে পাবে তোমার ভালবাসা”।  আচ্ছা শমিত কাকা এরই নাম কি প্রথম দর্শনেই প্রেম। বলে শ্যামলী তাকালও আমার দিকে।

হাঁ হাঁ করে হেসে উঠলাম।

“হতে পারে”।

শ্যামলী আমার কাজিনের মেয়ে। থাকে কানসাসে। কলেজ বন্ধ। এসেছে বেড়াতে। ভালই লাগছিলো ওর সঙ্গ। কোলাহল হীন  বাসাতে একটু প্রান সঞ্চার হয়েছে।

“কিরে থেমে গেলি কেনও। খুলে বল”।

কোনদিন প্রেম করেছ?

কেন? তোর গল্প শুনতে গেলে আগে প্রেমের পরীক্ষায় পাশ করতে হবে কি?

তা না হলে তুমি ঠিক উপলদ্ধী করতে পারবে না।

“ওই মুহূর্তটা। মনে হয় অনেক গুলো প্রজাপতি পাকস্থলী তে সুড়সুড়ি দিচ্ছে। একি গভীর ভালবাসার প্রথম নিদর্শন”।

পাকামো রাখ।

তবে শোন,

গিয়ে ছিলাম আমার বান্ধবী সোনিয়ার বাসায়। থাকে শিকাগো তে। শহর নয়, শহর ছাড়িয়ে বেশ দূরে। ছোট পল্লী।

ঐখানে এক বড় খেলার মাঠে বসেছে মেলা।  সোনিয়া নিয়ে এলো সেখানে। বেশ জমেছে। ছোট বড় সবাই এসেছে। বিভিন্ন ধরণের স্টল চারিদিকে।

সোনিয়া কে বললাম, কফি না খেলেই নয়। এই সময় সোনিয়াকে ডাক দিলো ওর এক বান্ধবী।

বললাম তুই দেখা করে আয়। আমি কফির লাইনে দাঁড়াই।

সোনিয়া চলে গেল,

আমি কফি কিনে সোনিয়া কে কোথাও দেখলাম না। অগত্যা দাড়িয়ে কফিতে চুমুক দিতেই মনে হোল কে যেন আমাকে ডাক দিল। আমি দ্রুত পাশ ফিরতেই ধাক্কা খেলাম একজনের সাথে।

একে অপরের চোখের দিকে তাকালাম।

ওর নীল রঙ এর চোখ আটকিয়ে গেলো আমার চোখে। সে তার চোখ সরিয়ে নিলো না। তার চোখের চাহনি মনে হোল সমুদ্রের মতো গভীর, রাতের মতো অন্ধকার। চোখের বিদ্যুৎ শিখা আমাকে গ্রাস করলো। ওর সোনালী চুল বাতাসে চোখের উপরে আসে খেলা করছিল। আমি প্রথম দেখাতেই হারিয়ে গেলাম ওর মাঝে। কে যেন জাদুর কাঠি নেড়ে আমাকে অবশ করে দিলো। আমি মাথা থেকে সব কিছু ঝেড়ে ফেলে দিতে চাইলাম, কিন্তু পারলাম না,  আমার হৃদয় বলতে থাকলো, এ তোমার প্রথম ভালবাসা। প্রথম প্রেম।

বাহ! এতো রীতিমত নাটকীয়তা। তারপর?

মনে হোল কে যেন হ্যালো বলছে।

তাই তো, ও হাত বাড়ীয়ে দিয়েছে। আমি ওর হাত ধরলাম। বললাম, দুঃখিত।

ও বলল, আমার নাম ডেভিড।

ডেভিড, অতি প্রচলিত নাম। কিন্তু আমার কাছে মনে হোল, এই নামে আর কেউ নেই শুধু ও ছাড়া।

আমি বললাম, আমার নাম শ্যামলী।

ও হাসি দিয়ে উচ্চারণ করতে চাইল আমার নাম টা ,পারলো না।

 আমি ওর হাসি টা দেখলাম। যেন মুক্তা ঝরে পড়ছে ওর হাসিতে। হাসি টা আমার হৃদয়ের কণে গেঁথে রইল।

ওর গলার স্বর বাদ্য যন্ত্রের মতো বাজতে থাকলো আমার শিরার মাঝে। সা রে গা মা —

এখানে নতুন বুঝি?

বললাম, হাঁ, এসেছি বাড়াতে। আছি সপ্তাহ দুই। মনে মনে ভাবলাম, ও যেন বলে এই দুই সপ্তাহ প্রতিদিন আমার সাথে বেড়াবে কি?

না সে তা বলল না, শুধু বলল হাতের এক্সট্রা কফি টা চাইলে পাবো কি?

ভুলে গেলাম ওটা সোনিয়ার জন্য কিনেছিলাম। এগিয়ে দিলাম। হাতে হাত স্পর্শ করলো। বিদ্যুৎ খেলে গেলো আমার সর্ব অংগে। আগে যে কোন ছেলের হাতে হাত লাগেনি তা নয়। কিন্তু এই স্পর্শ ভিন্ন। এর মাঝে ছিল মাদকতা।

 কি বললি? কোথায়? কি খেলে গেলো?

দিলে তো। দিলে তো সব পণ্ড করে।

আই এম সরি। তারপর?

তারপর ও কফির কাপে চুমুক দিলো। ঠোটের পাশে লেগে থাকা পানির কণাটা হাত দিয়ে মুছে এগিয়ে দিলো হাত টা। আমি ধরার আগেই  কোথা থেকে এক শ্বেতাঙ্গ কালো চুলের মেয়ে এসে ওর  হাত টা ধরলও।

“ কোথায় ছিলে এতক্ষণ? আমি খুঁজছি তোমাকে”। বলে তাকাল আমার দিকে।

ওর কটাক্ষ দৃষ্টি আমার ভাল লাগল না।

আমার ভাবতে অসুবিধা হোল অন্য কেউ ওর হাত ধরতে পারে।

ও পরিচয় করিয়ে দিলো। নাম লরা।

লরা ভুরু কুচকে তাকাল আমার দিকে। পরক্ষনে ডেভিডের হাত টান দিয়ে বলল, চলো, ওরা সবাই অপেক্ষা করছে।

ডেভিড এক পা এগিয়ে এলো আমার কাছে।  বলল, ছোট্ট শহর, দেখা আবার হবে বৈকি। খুজে বের করবো তোমাকে।

 তারপর ওরা দুজন হাটতে হাটতে চলে গেলো।

আমি তাকিয়ে থাকলাম ওদের চলার পথে।

সোনিয়া আসে কাঁধে হাত দিলো। “ ও রকম ভাবে তাকিয়ে কি দেখছিস”?

“ দেখছি আমার প্রথম প্রেম”।

চলতে যেয়ে সোনালী চুলের ছেলেটা কি একবার পিছন ফেরে তাকিয়ে ছিল? জিজ্ঞাসা করলাম।

না, কেনও?

তা হলে ওখানেই ইতি। তাই না?

বুঝলে কি ভাবে?

 

Continue Reading

ডায়রির পাতা থেকে ১৩

১৪ ই এপ্রিল

ছয় মাস হয়ে গেলো, বশীর বলেছিল তার জীবন বৃত্তান্ত।

 পাঁচ বছরের শোভন।  ডাগর ডাগর চোখে তাকিয়ে থাকতো বাবার দিকে। ভুলে গিয়েছিলাম ওদের কথা।

একদিন  টিভির পর্দায়  দেখলাম বোমার আঘাতে বাম হাত হারানো সৈনিক বলছিল তার কাহিনী।  তখনি মনে পড়লো হাতকাঁটা বশীরের কথা।

না সে সৈনিক নয়। লোকে তাকে বলে হাতকাটা ভিখারি। ভিক্ষা করে।

শান্তিনগরে টুইন টায়ারের সামনে প্রতিদিন সকালে আমি তাকে দেখতাম। দারোয়ান গেট খুলে দিতো। গাড়ীটা বের হতেই জানালার কাছে এসে দাড়াত সে। আমি যৎসামান্য টাকা ওর হাতে দিতেই হাসি দিয়ে সরে যেতো।

হাত পাততো  অন্যের কাছে যেয়ে। এমনি ভাবে চলছিল দিন গুলো।

হঠাৎ একদিন ও এলো না, ওকে দেখলাম না গেটের পাশে। বুকের ভিতরে খচ করে উঠল। ওর সাথে হয়ত নিজের  অজান্তেই একটা যোগসূত্র হয়ে গিয়েছিল। তা নাহলে মন খারাপ লাগবে কেন?

গাড়ী থেকে নেমে দারোয়ান কে জিজ্ঞাসা করলাম সে ওকে আজ দেখেছে কিনা।

বলল, দেখেনি।

পরদিন সকালে এলিভেটর দিয়ে নিচে নামার আগে বোন ডাক দিল। “ ছোট দা, কোথায় যাচ্ছিস নাস্তা না করে?”

“ নিচের থেকে আসছি। আজ বের হবো না”। বলে বেড়িয়ে এলাম।

গেটের বাহিরে আসতেই দেখি সে দাড়িয়ে।  আমাকে দেখে এগিয়ে এলো।

“ সালাম স্যার”। বা হাতটা কপালে ঠেকাল। ডান হাত টা কনুই থেকে নেই। কথা বলার ভঙ্গি আর সালাম শব্দের উচ্চারণে মনে হোল পেটে তার বিদ্যা আছে। ভিখারি বৃত্তি এখন তার পেশা, কিন্তু এটাই তার পরিচয় নয়। কৌতুহল জাগলো।

টাকা টা দিতে দিতে বললাম, গতকাল তো তোমাকে দেখলাম না।

গতকাল ছিল আমার জীবনের মহা আনন্দের দিন।

তাই? তা সেই আনন্দটা কি নিয়ে।

উত্তর দিতে যেয়ে থেমে গেলো। সামনে এগিয়ে যেয়ে একজনের কাছে হাত পাতলো। যা পেলো পকেটে রেখে তাকালও সামনে, দৃষ্টি তার রাস্তার ওপারে।

আমি তার রুজীর ক্ষতি করছি ভেবে জিজ্ঞাসা করলাম, দিনে কি রকম পাও।

পরিমাণ শূনে মনে হোল আমি ঐ পরিমাণ তাকে দিতে পারবো।

বললাম, আমি তোমার জীবন বৃত্তান্ত শুনতে চাই। কেনও জানি আমার মনে হয়, এই পথ তুমি ইচ্ছে করে বেছে নেওনি। কি হয়েছিল? বলবে কি?

বলব।

রাজি হতেই বললাম, তোমার  আজকের দিনের ক্ষতিপূরণ টা আমি পুরন করে দেবো।

পাশের চা র দোকানে এসে বসলাম।

সেই মুহূর্তে দারোয়ান এসে বলল, স্যার আপা আপনাকে ডাকছে।

ঠিক আছে। বলে ফোন করলাম। বললাম, আমার আসতে দেরী হবে। তোরা নাস্তা করে নে।

দোকানে ঢুকতেই সে বলল, স্যার, জানলার কাছে বসতে চাই।

বা হাত দিয়ে কপাল টা মুছে বলল, আমার নাম বশীর। বি কম পাশ করে ব্যাংকে চাকরি নিয়েছিলাম। আট বছর আগে। থাকতাম টিকাটুলি তে।  বৌ কাজ করতো স্কুলে। প্রতিদিন রিক্সা করে ওকে স্কুলে নামিয়ে দিয়ে আমি চলে আসতাম কাজে।

আমাদের এক ছেলে। এখন বয়স ছয়। বড় দুষ্টু স্যার। নাম শোভন। ওর মা নামটা রেখে ছিল। তার নাম ছিল শান্তি।

বললাম, ছোট বেলায় সবাই দুষ্টু থাকে।

বলল, ও আমাকে একেবারে চোখের আড়াল হতে দেয় না।

কথা টা আমার বোধগম্য হলনা। ওর আসে পাশে আমি কোন ছেলে দেখিনি। তাহলে।

ঐ যে দেখছেন রাস্তার ওপারে, লাম্প পোস্টের নিচে বসা। ঐ আমার ছেলে। সাধারণত মাথা নিচু করে রাখে। দেখতে চায়না বাবা হাত পেতে বেড়াচ্ছে। অথবা ভাবে আমি লজ্জা পাবো ও তাকিয়ে দেখছে আমি হাত পাতছি কারো কাছে।

কোথাও রেখে আসলে পারো। বললাম বশীর কে।

ও থাকতে চায়না। পাছে আমিও হারিয়ে যাই।

ওর মা? প্রশ্ন করে তাকালাম বাহিরে । শোভন তাকিয়ে আছে জানালার দিকে। ওকে দেখা যাবে সেইজন্যই সে জানালা টা বেছে নিয়ে ছিল।

বললাম, ওকে নিয়ে আসি, এখানে বসবে।

বলল, না, ও সামনে থাকলে আমি কথা বলতে পারব না। ওখান থেকেই আমাদের কে দেখতে পারবে।

আপনি শান্তির কথা জিজ্ঞাসা করছিলেন।  শান্তির সাথে আমার পরিচয় হয়েছিল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষে।  সে তখন প্রথম বর্ষের ছাত্রী। ক্লাস শেষে দাড়িয়ে ছিলাম বাসের আশায়। দেখলাম সেও দাড়িয়ে। একিই বাসে উঠে নামলামও একি স্টপেজে।

পরদিন ও একি পুনরাবৃত্তি।

তৃতীয় দিন সাহস সঞ্চয় করে কাছে আসে বললাম, যদি কিছু মনে না করেন, আমরা বোধ হয় একি দিকের যাত্রী। একটা রিক্সা শেয়ার করলে একটু পয়সা বেশি পড়বে, তবে এই ঠেলাঠেলির হাত থেকে বাচা যাবে। কি বলেন?

আমার কপাল আর হাতের তালু ভিজে ভিজে মনে হোল।

সাহসের পরিচয় দিয়েছিলে বলব।

তা বলতে।

সে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, যদি রিক্সা যোগাড় করতে পারেন বাস আসার আগে, আর শোনেন, এই টাকার বেশি আমি দিতে পারবো না, তাতে যদি রাজি থাকেন। টাকার পরিমাণ দেখে বুজলাম আমার গাঁটির থকে বেশ কিছু খসবে। জানেন তো

তখন টাকাটা মুখ্য নয়।

জানি, অভিজ্ঞতা আছে। তারপর।

রিক্সা পেলাম। উঠে পড়লাম। সেই শুরু।

পাশ করে চাকরি পেলাম। বিয়ে শাদীর পর্ব শেষ। ছোট্ট একটা বাসা ভাড়া নিলাম। সেও পাশ করে স্কুলে চাকরি নিলো।

শোভন এলো। ভালই যাচ্ছিল দিল গুলো।

শুধু আমার বাবা মা দুজনেই গত হলেন।

শাশুড়ি চলে গেলেন গ্রামের বাড়ীতে শ্বশুরের অবর্তমানে।

আমাদের যাওয়ার পথে শোভন কে নামিয়ে দিতাম ওর এক বান্ধবীর বাসায়। সেদিন দেরী হয়ে যাওয়াতে পাশের বাসার মহিলার কাছে শোভন কে রেখে গেলাম।

নিয়তির খেলা, কেউ জানেনা।

ঢাকা শহরে গাড়ী ঘোড়া কি ভাবে চলে তা তো আপনার অজানা নয়। হঠাৎই ফুট ফাট গুলীর শব্দ। লোকের দৌড়া দৌড়ি। যে যেদিক পারছে দৌড়াচ্ছে। কেউ কেউ রাস্তায় মাথা নিচু করে বসে পড়েছে। সেই মুহূর্তে পিছন থেকে একটা বাস ধাক্কা দিলো আমাদের রিক্সা কে। উল্টে গেলো রিক্সা। আমি শান্তি কে ধরতে যাওয়ার আগেই সে  ছিটকে পড়লো রাস্তায়। সেই মুহূর্তে একটা জীপ ধাক্কা দিল ওকে। আমি পড়ে যেয়ে ওর দিকে হাত বাড়াতেই জীপ টা আমার ডান হাতের উপর দিয়ে চলে গেলো। আমি চিৎকার করে জ্ঞান হারিয়ে ফেললাম। এই টুকুই আমি জানি।

যখন জ্ঞান ফিরল দেখলাম আমি হাসপাতালে। চাদর দিয়ে ঢাকা শরীর। জিজ্ঞাসা করলাম নার্স কে, আমি কোথায়?

বলল, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের হাসপাতালে।

আমার স্ত্রী?

বলল, উনি হাসপাতাল পর্যন্ত আসতে পারেনি তার আগেই মারা গেছেন। আপনার মানিব্যাগ থেকে ঠিকানা পেয়ে বাসায় খবর দেওয়া হয়েছিল। আপনার ছেলে আর প্রতিবেশী বাহিরে বসে আছে।

আমি উঠতে যেয়ে অনুভব করলাম আমার ডান হাত নড়ছে না। নার্সকে বললাম আমার গায়ের চাদর টা সরিয়ে দিতে।

দেখলাম, আমার ডানহাত টা কনুই থেকে কেটে ফেলা হয়েছে। আমি কাঁদতে থাকলাম। শোভন আর বাবুলের মা, বাবা এলো আমার পাশে। কি আর সান্ত্বনা দেবে। জিজ্ঞাসা করলাম, শান্তি কে কি দাফন করা হয়েছে।

বলল, না, আপনি একটু সুস্থ হয়ে মৃত দেহ সনাক্ত করলে ওরা রিলিজ করবে। তখন দাফন দেওয়া যাবে।

বাসায় এলাম দুই সপ্তাহ পরে। শোভন শুধু কেঁদে বেড়ায়। ডান হাতটার অভাবে আমি কিছুই করতে পারিনা। মানসিক দিক দিয়ে ভেঙ্গে পড়লাম। নিজের চেহারা আয়নায় দেখলে ভয় পাই।

তুমি কাজে ফিরে গেলে না? জিজ্ঞাসা করলাম।

ওরা বলল আরও কিছুদিন বিশ্রাম নাও। টাকা পয়সার টানা টানি দেখা দিল। ফিরে গেলাম কাজে মাস খানেক পর।

ম্যানেজার ডেকে পাঠাল তার অফিস রুমে। তখনি মনে হয়েছে দিন আমার ফুরিয়ে এসেছে এখানে। কিন্তু এতো তাড়াতাড়ি তা বুঝিনি।

চাকরি টা চলে গেলো। ভদ্র ভাবে জানালো আমার কাজ টা আর আমার পক্ষে করা সম্ভব হবে না। তাই টাকা পয়সা  সব বুঝিয়ে দিলো।

 তারপর? কোথাও কিছু হোল না?

না, কে দেবে চাকরি এই অক্ষম কে। টাকা যা ছিল আস্তে আস্তে শেষে হয়ে এলো। বাসা ছেড়ে দিয়ে বস্তীর এক ঘরে এসে ঠাই নিলাম। ছেলে টার দিকে চাইতে পারতাম না। মাঝে মাঝে ওকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতাম।

একদিন এই বস্তীর একজন বলল, কি করবে ভায়া। ভিক্ষাবৃত্তি তে নেমে পড়ো। তোমাকে দেখলে লোকের সহানুভূতি হবে।

রেগে ওকে অনেক গালাগালি করেছিলাম।  কিন্তু পেটের জ্বালা বড় নিষ্ঠুর। ঐ জ্বালা মেটাতে এই পথে আসতে হোল।

যা পাই তাতে কোন রকমে চলে যায়।

দুই বছর হয়ে গেলো এই পথে। ছেলেটা কে কিছুঁই কিনে দিতে পারিনা।

ও দোকানের বাহিরে সুন্দর করে সাজানো জামা কাপড়, জুতো গুলো তাকিয়ে তাকিয়ে দেখে।  কিছু বলে না। শুধু বলে, বাবা তুমি আমাকে ছেড়ে যেওনা।

আমি তাকালাম রাস্তার ওপারে বসা শোভনের দিকে। অজান্তেই চোখ টা জলে ভরে এলো।

জানেন স্যার।

ফিরে তাকালাম ওর দিকে। কি বলছিলে?

প্রতিদিন অল্প কিছু টাকা দিনের শেষে সরিয়ে রাখতাম এই ভেবে যদি কোনদিন সময় আসে ছেলেটাকে আমি ঐ সাদা জুতো টা কিনে দেবো। দুই বছর পরে ঐ দিন এলো।

রাতে ছেলেটা আমার অঘোরে ঘুমোচ্ছে। তাকালাম ওর নিষ্পাপ মুখের দিকে।

লুকিয়ে রাখা গর্তের ভিতর থেকে টাকার ব্যাগ টা বের করে হিসেব করলাম।

সকালে উঠে শোভন কে বললাম, বাবা আজ আর রাস্তায় দাড়াবো না।

ও আমার দিকে তাকিয়ে বলল, কেনও বাবা, তোমার শরীর খারাপ।

না, আজ একটা নতুন জিনিস তোমাকে দেখাবো।

হাটতে হাটতে আমরা আসে দাঁড়ালাম ঐ দোকানের সামনে । ছেলে আমার দৌড়িয়ে যেয়ে বাহিরের কাঁচে মাথা রেখে তাকিয়ে রইল ঐ সাদা  জুতো টার দিকে। পাশে এসে দাঁড়ালাম।

আমার দিকে চেয়ে বলল, চলো বাবা, তুমি না আমাকে কি দেখাবে বলেছিলে।

“হাঁ, ঐ  জুতো টা আজ  তোমাকে কিনে দেবো বাবা”। মনে হোল সে কিছুই বুঝতে পারলো না।

ভিতরে এলাম। দোকানের কর্মচারী জুতো জোড়া শোভনের পায়ে লাগিয়ে দিয়ে বলল, একটু হাটোতো খোকা।

শোভন হাটলও না, দৌড়াল।

পায়ে ব্যাথা পাচ্ছও?  জিজ্ঞাসা করল কর্মচারীটা

একটুও না। বড় বড় চোখ করে বলল সে। মুখে হাসি।

সেই মুহূর্তটা আমি আপনাকে বুঝাতে পারব না স্যার। শুধু মনে হোল, আমার জীবন সার্থক। ছেলের মুখে আমি হাসি দিতে পেরেছি।

 গত কাল শোভন ঐ জুতো পরে আমার সাথে গিয়েছিল শিশু পার্কে।

দৌড়ে দৌড়ে কখনও মেরী গো রাউন্ড কখনও দোলনা তে উঠছে। আর আমার দিকে তাকাচ্ছে। ঐ দিনটা ছিল আমার জীবনের বড় আনন্দের । ওর হাসি আমাকে ভুলিয়ে দিয়ে ছিল সবকিছু।

 রোজগারের খাতা শূন্য বলে মনে কোন আপসোস ছিল না।  এই দিনটা তো আর একবার আমার জীবনে ফিরে আসবে না। একটা দিনতো আমরা বাপ, ছেলে মিলে হাসতে পেরেছিলাম। এযে কত বড় পাওয়া তা শুধু আমি জানি।

বলে সে থামল। তাকাল লাম্প পোস্টের দিকে।

আমিও তাকালাম। দেখলাম, শোভন তার হাতদিয়ে জুতো টা মুচছে।

 

Continue Reading

ডায়রির পাতা থেকে ১২

 ৭ই এপ্রিল

Iceland থেকে গতকাল ফিরে এলাম। পাঁচ দিন চর্কির মত ঘুরেছি। দেখেছি প্রান ভরে। তাই ভাবলাম সব কাজ ফেলে আজ বিশ্রাম নেবো। কিন্তু বিঁধি বাম। ফোনটা বেজে উঠল। ওটা বন্ধ করে রাখব ভেবেছিলাম। তা করলেই ভালো হতো।

অন্যমনস্ক ভাবে হ্যালো বলতেই বুজতে পারলাম এখন আর রেখে দেবার কোন উপায় নেই।

আমি ইয়াসমিন। বলে চুপ করে রইল।

বললাম, কোথায় তুমি। সেই যে মাস খানেক আগে কল দিয়েছিলে, আসবে বলে, তা কবে আসবে?

 এসেছি, আমি JFK এয়ারপোর্টে। অপেক্ষা করছি তোমার জন্য। আগের থেকে বললে কোন একটা অজুহাত হয়তো দিতে। তাই নিউইয়র্কের মাটিতে পা দিয়েই তোমাকে কল করলাম। আসছ তো নিতে?

 আমার মাথায় বজ্রাঘাত। এই মুহূর্তে ইয়াসমিনের সান্নিধ্য আমার কামনা নয়। আমি চেয়েছিলাম বিশ্রাম তার পরিবর্তে-  যাক তা যখন হবার নয়,  বললাম, তুমি অপেক্ষা কর আমি আধা ঘণ্টার মধ্যে ডেল্টা টার্মিনালে আসছি।

 ভাবনা আমাকে পেয়ে বসল। সেই কম বয়সে দেখা ইয়াসমিনের সাথে আজকের ইয়াসমিনের কতটুক পার্থক্য আমার জানা নেই। সতী এই মুহূর্তে গেছে মেয়ের কাছে। সে থাকলে কিছু একটা ব্যবস্থা করতে পারতো।

অগত্যা উঠতে হোলও। আধা ঘণ্টার পথ। মাঝ পথে আসতেই সতীর কল পেলাম।

কোথায় তুমি?

এয়ারপোর্টের দিকে যাচ্ছি?

এয়ারপোর্টে কেন? কাকে ড্রপ করবে?

ড্রপ নয়, আনতে যাচ্ছি।

কাকে?

ইয়াসমিন কে।

What?

নামটা শূনে একটু চমকিয়ে উঠলে মনে হোলও? মুখ টিপে হেসে বললাম কথা টা।

এই কথা শোনার পরে ওর চেহারার পরিবর্তনটা আমি কল্পনা করতে চেষ্টা করলাম।

ইয়ার্কি মারছ?

মোটেও না। সত্যি বলছি। তুমিও এখানে নাই, কাজেই আমার এপার্টমেন্টেই নিয়ে আসতে হবে।  বেশ ভালোই কাটবে দিনগুলো।  কি বলও?

রাগাতে চাইলাম ওকে।

সতী ঐ পথ দিয়ে গেলনা। বলল, শুভঙ্কর দা কে কল করো। ওখানে থাকার ব্যবস্থা করো।

বললাম, তা হবার নয়। সে দু চার দিনের জন্য রোডআইল্যান্ড এ গেছে। তুমি আসবে কবে?

ভেবেছিলাম আরও কিছুদিন থাকব। তা বোধ হয় হবেনা।

তা হলে আজ রাত আমার এখানেই থাকবে, গল্প করে কাটিয়ে দেবো? কি বলও?

ফাজলামি রাখো।

হাসতে হাসতে বললাম, এখনও চিনলে না আমাকে।

এই পর্যন্তই তার সাথে আমার কথা হোলও।

পৌছালাম এয়ারপোর্টে। চোখে কালো চশমা, শালওয়ার কামিজের রঙের সাথে মেলানো স্যান্ডেল, হাত ব্যাগ। একটু মুটিয়েছে মনে হোলও।  হয়তো বয়সের জন্য।

এই মুহূর্তে ভিড় অতটা নয়। ওর খুব কাছে এসে দাড় করালাম গাড়ীটা। কাছে আসতেই হাসি দিয়ে বলল, এলে তাহলে।

মুখে হাসি এনে বললাম, আমি তো  ভদ্র ঘরের সন্তান, তোমাকে তো এয়ারপোর্টে ফেলে রাখতে পারিনা।

আসলে আমি তাই চেয়েছিলাম সে কথা সে জানতে পারলো না।

গাড়ীতে উঠতে উঠতে বলল, তুমি একটুও পাল্টাওনি দেখছি। শুধু চোখের চশমাটা ছাড়া।

চলার পথে কথা সেই বলতে থাকলো। তার নিজের কথা।  আমি শ্রোতা।

অনেক পিছনে চলে গেলো সে, প্রথম স্বামী ছিল মাতাল। সরকারের কোন এক ডিপার্টমেন্টে উঁচু পদে কাজ করত।

কাজের শেষে ক্লাবে যাওয়া ছিল নিত্য দিনের ব্যাপার। অনেক রাতে ফিরে আসতো মাতাল হয়ে। চেষ্টা করেছিল পথে আনার।

পারেনি। ফলে ইতি টানতে হয়েছিল তিন বছরের শেষে।

বললাম। আবারো ঐ পথে পা দিয়েছিলে ?

দিয়েছিলাম।

অনেক দিন একা একা ছিলাম, হঠাৎ আমার এক বান্ধবীর বাসাতে ওর ভাই এর সাথে দেখা। সেই ছিল আমার  জীবনে দ্বিতীয় জন। অতি ভদ্র। এক মেয়ে এলো আমাদের জীবনে। ওকে মানুষ করে দিয়ে যেতে পারলো না, তার আগেই ধরা পড়ল ওর লিভার সিরোসিস। দুবছর কষ্ট করে চলে গেলো।  বলতে বলতে চোখটা মুছে নিলো। আমরাও এসে পৌছালাম আমার এপার্টমেন্টের কাছে।

দরজা খুলে দিলাম। ও ভিতরে ঢুকল।

দেখছ তো, ছোট্ট এক চিমটে কামরা। তোমার হয়তো অসুবিধা হবে। সতী এলে ওর ওখানে থাকতে পারবে।

সতী, সতী কে? কৌতুহল নিয়ে তাকাল সে আমার দিকে।

আমার এক বান্ধবী।

কেন? তোমার এখানে থাকতে দেবেনা? ওর গলার স্বরে  ব্যাকুলতা।

আমার আপত্তি কোথায়, আপত্তি ঐ লোকজনের।

এখনও ওই ঘুনে ধরা সমাজ নিয়ে আছো?

আমিতো ছাড়তে চাই, আমাকে ছাড়তে দেয়না।

কিছুক্ষণ চুপ করে রইল সে। তারপর আমাকে জিজ্ঞাসা করল, “ আচ্ছা, তুমি তো প্রতাপের কথা শুনতে চাইলে না”।

 জিজ্ঞাসা করতাম, সময় আর সুযোগ বুঝে। তা তুমিই যখন ঐ নাম টা উঠালে, বলও কি হয়েছিল।

প্রতাপ কে আমি কোন সময়ই ভালবাসিনি শমিত। ওকে আমি শুধু ব্যবহারই করেছি আমার নিজের স্বার্থে। যখন সে বুঝতে পারলো তখন নিজে থকেই সরে গেলো। শুনেছি দেশের বাহিরে কোথাও আছে। বড় ভালো ছেলে ছিল।

তুমি জানো কি, কোথায় সে?

না জানি না।

দেখে মনে হোলও ক্লান্ত সে। মানসিক না শারীরিক বুজতে পারলাম না।

 ক্লান্ত শরীর টাকে সোফাতে এলিয়ে দিলো , পা দুটো উঠিয়ে দিলো কফি টেবিলের উপর।

বললাম, সাওয়ার নিয়ে এসো, আমি খাবারের অর্ডার দেই।  মেডিটেরানিয়ান খাবার খেতে পারবে তো?

অভ্যাস নেই তবে অসুবিধা হবে বলে মনে হয় না।

খাওয়া শেষে সে গেলো বিশ্রাম নিতে শোবার ঘরে। আমি ড্রয়াইং রুমে বসে টিভি টা অন করলাম। কখন যে চোখ টা বুজে এসেছিল বলতে পারবো না। ঠক ঠকানো শব্দে ঘুম টা ভেঙ্গে গেলো। টিভি টা তখনো চলছে।

দরজা খুললাম। সজীব আর তার বৌ, অনীমা।

কি ব্যাপার?  অসময়ে?  ভিতরে এসো।

এসে বসল। ওরা থাকে আমার দুই ব্লক দূরে। হঠাৎ  পরিচয় হয়েছিল Costco তে বাজার করতে যেয়ে। বয়সে অনেক ছোট ,কিন্তু সম্পর্ক টা বন্ধুত্তের পর্যায়ে।

“শমিত দা তৈরী হয়ে নেন টম ক্রুজের নতুন মুভি এসেছে দেখতে যাবো”। বলেই অনীমা তাকাল আমার শোবার ঘরের দিকে। ওর দৃষ্টিকে অনুসরণ করে আমি তাকালাম পিছনে। ইয়াসমিন এসে দাঁড়িয়েছে।

সরি শমিত দা, আমি জানিনা যে আপনার গেস্ট আছে। অত্যন্ত লজ্জিত স্বরে বলল অনীমা।

সরি হবার কিছু নেই। পরিচয় করিয়ে দেই, আমার কলেজের বান্ধবী। আজি এসেছে সানফ্রান্সীস্ক থেকে। যদি টম ক্রুজের নতুন মুভির পরিবর্তে কফি আর ঝালমুড়ি মুখরোচক  মনে হয় তবে এখানে বসো, আমি কফির পানি চাপিয়ে দেই। কি বলও?

সজীবের কিছু বলার আগেই অনীমা বলল, আমি রাজি, আর ইয়াসমিন আপার সাথে গল্প করে সময় টা বেশ কাটবে।

বললাম, ঘণ্টা খানেকের মধ্যে সতী ও এসে হাজির হবে, টেক্সট পাঠিয়েছিল।

অনীমা আর ইয়াসমিন কফির পেয়ালা নিয়ে বসলো ব্যাল্কনীতে। কি নিয়ে কথা ওদের মাঝে বুঝলাম না তবে হাসির উচ্ছল বন্যাতে  মনে হোল টপিকস টা তাদের দুজনেরই পছন্দ।

সজীব ফাইনেন্সে পাশ করে একটা বড় হেজ ফাণ্ডে কাজ করে। ফলে আমাদের আলোচনা স্টক নিয়ে। বড় বড় কোম্পানির আরনীং রিপোর্ট কি হতে পারে তাই নিয়ে। সময় কাটানো। সময় অবশ্য কেটেও গেলো। পেড়িয়ে গেছে দুই ঘণ্টা।

অনীমা ব্যাল্কনীর দরজা খুলে এলো লিভিং রুমে।

“ শমিত দা, ইয়াসমিন আপাকে বলছি আমাদের ওখানে যেয়ে থাকতে, কিন্তু রাজি হচ্ছে না”।

আমার মনে হোল ওকে বলি আর একটু পীড়াপীড়ি করো। হয়তো রাজি হতে পারে। কিন্তু হলনা।

ওরা বিদায় নিলো।

আমি আর ইয়াসমিন এসে বসলাম সোফাতে। দূরত্ব বজায় রেখে। ইয়াসমিন তার মোটা ফ্রেমের চশমাটা মুছতে মুছতে বলল,

“আচ্ছা শমিত তুমি আর ও পথে পা বাড়ালে না কেন?”

“ কারন যা পেয়েছিলাম সেটাকে হারাতে চাই না বলে”।

“ যদি বলি এটা তোমার ভুল ধারনা। মানুষ অতীতে কে নিয়ে বাচে না, তা জানো তুমি?”

“ আমি হয়তো বা ভিন্ন ওদের চেয়ে”।

জানো শমিত, আমি— , কথা শেষ হোল না, দরজায় একবার টোকা পড়ল। আমি উঠতে যাওয়ার আগেই দরজা খুলে গেলো। সতী দাড়িয়ে।

সময়ের আগেই চলে এলে। মেয়ে বাধা দিল না? আমার জিজ্ঞাসা।

বাধা যে দেয়নি তা নয়, কেনও জানি ভাবলাম চলেই যাই। অনেকদিন তো হোলও।

সতী তাকাল ইয়াসমিনের দিকে।

আপনিই সতী? বলে ইয়াসমিন উত্তরের অপেক্ষায় রইল।

আমি মনস্তাত্ত্বিক নই। কাজেই দুজনের মনের গভীরতাতে যেয়ে ঘুরপাক খাওয়া আমার  সইবে না।

বললাম, “তোমরা দুজনে কথা বল, পরিচয় করিয়ে দেবার দরকার আছে বলে মনে হয় না। আমি ঐ ঘরে বসে হাতের কাজ গুলো শেষ করে নেই”।  দরজা খোলা রইল।

শমিত বলেছিল আপনার কথা। ওর কথা বলার সাথি। শূনে খুব ভালো লাগলো। আরও বলছিল, আপনার কাছে যেয়ে থাকতে। বলে কিছুক্ষণ চুপ করে রইল ইয়াসমিন।

সতী একটু এগিয়ে এসে বলল, তাই তো আমি তাড়াতাড়ি চলে এলাম। দুজনে মিলে অনেক গল্প করা যাবে। কি বলেন?

কিন্তু আমার তো যাওয়া হবে না বোন।

সতীর চোখে অবিশ্বাসের ছাপ।  কেন? প্রশ্ন করলো সে।

আমি এসেছি শমিতের সাথে কিছুদিন কাটিয়ে যেতে। হয়ত ওর সাথে আমার আর দেখা নাও হতে পারে। এই দেখাই হয়তো শেষ দেখা। বলে সে তাকাল খোলা দরজার দিকে।

যাক, তোমাকে বলি, কেনও জানি মনে হচ্ছে তুমি আমার অনেকদিনের চেনা।  শমিত কে বলও না। মনে থাকবে?

থাকবে। বলেন। সতী উৎসুক ভাবে তাকালও ইয়াসিনের দিকে।

এসে ছিলাম চিকিৎসা করাতে। তা আর হোলও না।

কিসের চিকিৎসা ?

Bone marrow transplant করতে। ডাক্তার বলল, করা যাবে না। কাজেই আমার হাতে আছে মাত্র চব্বিশ থেকে ছত্রিশ মাস। তাই ওকে দেখতে এলাম। ওর সাথে কয়টা দিন কাটিয়ে যাই।

সতী তাকিয়ে রইল ইয়াসমিনের দিকে। কোন কথা নেই মুখে।

তোমার কাছে তাই থাকা আমার হোলও না।

আমি বেড়িয়ে এলাম। দুজনের চোখ ভেজা। কোন কিছু বোধগম্য হলনা।

সতী বলল, ইয়াসমিন আপা তোমার কাছেই থাক যে কয়দিন আছে। আমি প্রতিদিন এসে দেখে যাবো।

আমি তাকালাম সতীর দিকে।

চোখ ফেরাতেই আয়নায় দেখলাম ইয়াসমিনের ঠোটের নিচে রহস্যের হাসি।

 

 

Continue Reading