কলগার্ল

ভেলেন্টাইনস ডে।
বসুন্ধরা মলের সামনে দাড়িয়ে একটা সি এন জি র অপেক্ষায় অনন্ত এদিক ওদিক তাকাচ্ছিল। হঠাৎই মনে হোল কে যেন ডাকছে তাকে। দুদিকে তাকিয়ে অনন্ত কাউকে দেখতে পেলনা। ভাবল হয়ত শুনতে ভুল করেছে।
না আবারও সেই ডাক। এবার নাম নয়, অন্য নামে ডাকছে কে যেন।
“ এই উজবক, ডানদিকে তাকা। দুটা গাড়ীর পরে আমার গাড়ী”।
ডানে তাকাতেই অনন্ত দেখতে পেলো গাড়ীর জানালা খুলে মাথা বের করে ডাকছে নজীব।
অনন্ত এগিয়ে কাছে যেতেই, নজীব বলে উঠল, এই উজবক, ডাকতে ডাকতে গলা বসে গেলো আর তুই এদিক ওদিক চেয়ে মস্করা করছিলি”।
খিলখিল করে হাসির শব্দ শুনতে পেলো অনন্ত। ভিতরের দিকে তাকাতেই দেখতে পেলো এক ভদ্রমহিলা। তখনো তার সারা মুখে হাসির ছোঁয়া। বলল, ভিতরে চলে আসুন, তা নাহলে আরও বিভিন্ন নামে বকুনি শুনতে হবে।
ড্রাইভারের পাশে বসে পিছন ফিরে তাকালও অনন্ত। নজীবের বৌ কে আগে সে দেখেনি। শ্যামলা রঙ। মাথার পিছনে খোঁপার পরে লাল ফুল গোজা। মুখের উপর অতিমাত্রায় প্রসাধনীর প্রলেপ দেওয়া। সাঁজ টা একটু উগ্র মনে হোল অনন্তর কাছে।
“ ওর এই ধরনের ডাক শুনে আমি অভ্যস্ত ভাবী। যদিও অনেক দিন পরে দেখা”। চোখে চোখ রেখে কথা শেষ করল অনন্ত।
“ কাকে ভাবী বলছিস?”
কেন? বলে অনন্ত তাকালও ওদের দিকে।
“ আমি ওর বৌ নই, বান্ধবী”।
“ বান্ধবী?” একটু থেমে অনন্ত বলল, “ আজ তো ভেলেন্টাঈন্স ডে”।
“ So? নজীবের প্রশ্ন।
“ না, মানে –“
“ এই শালা সারা জীবন সেকেলে রয়ে গেলো। বিদেশ থেকে ঘুরে এলি, আর এই সব বুঝলি না। ওইযে কোথায় যেন পড়েছিলাম, কে যেন লিখে ছিল, বৌ হচ্ছে ডোবা, ওখানে ডুব দেবো, আর এ হচ্ছে নদী, শুধু সাঁতার কাটবো।“
“ থাক তোর ভুল কোটেশন দিতে হবে না, আমাকে শান্তিনগরের মোড়ে নামিয়ে দে”। বলে অনন্ত তাকাল নজীবের দিকে।
“পৌছে দেবো তবে এখন নয়। We are going to have a dinner toghether. “
অনন্ত জানে ওর সাথে জোরাজুরি করে লাভ নেই। তবুও বলল,আজকের সন্ধ্যা তোদের জন্য, আমার জন্য নয়”
সুশীলাই বলল, থাকেন না আমাদের সাথে, আমাদের যখন কোন অসুবিধা হচ্ছে না তখন আপনার অসুবিধা কোথায়?
আন্তরিকতা ভরা গলা সব সময় অনন্তকে দোলা দেয়, আজও তার ব্যাতীক্রম হলনা।

গাড়ী অনেক ঘুরে এয়ারপোর্টের রাস্তা ধরল। কিছুক্ষণ সবাই চুপ। নিঃশব্দতা ভেঙ্ঘে সুশীলাই জিজ্ঞাসা করল,
“আপনি কি একাই নাকি কেউ আছে?”
নজীব ধমকের সুরে বলল, আচ্ছা তোমাদের উন্টীপুন্টী না জানলেই নয়। ওটা ওর ব্যাক্তীগত ব্যাপার।
অনন্ত সাচ্ছন্দে বলল, বলব, ডিনার খেতে খেতে।

গাড়ী এসে দাঁড়াল রেস্টুরেন্টের সামনে। বাহিরে দারোয়ান । দরজা খুলে দাঁড়াল। ভিতরে এলো ওরা তিনজন।
অনন্ত এই এলাকার সাথে খুব একটা পরিচিত নয়। দুই একবার এসেছিল। তাও এক বন্ধুর সাথে। কাজেই সবই তার কাছে নতুন
ভেলেন্টাইনস ডে বলেই হয়ত ভিড় টা একটু বেশি। নজীবের এখানে আসা যাওয়া আছে মনে হোল অনন্তের কাছে। দুই একজন এসে সালাম দিলো, কেউ বা হ্যালো, হাই, বললও। টেবিল পেতে দেরী হলনা, যোগ সুত্র আছে বলেই হয়ত, অনন্তের কাছে তাই মনে হোল।
“Hard drink, চলে?” নজীব প্রশ্ন করলো অনন্তকে
“এক সময় চলত, ছেড়ে দিয়েছি”।
“সবকিছুতেই বৈরাগ্য কেন?”
উত্তর দেওয়ার আগেই সুশীলা বলল অনন্ত দা আপনার কথা বলেন, ডিনার খেতে খেতে বলবেন বলেছিলেন।

ওয়েটার এসে পাশে দাড়াতেই অনন্ত কিছু বলতে যেয়ে থেমে গেলো। আশে পাশে তাকিয়ে পরিবেশ টাকে অনুভব করার চেষ্টা করল অনন্ত। ইয়াং ছেলে মেয়েদেরই সংখ্যা বেশি মনে হোল অনন্তর কাছে।
পাশের টেবিলে দুইজন। তিরিশের কোঠা পেরিয়েছে। ঘোলাটে চোখের চাহুনী দেখে বোঝা যায় নতুন প্রেমে মত্ত।

কি ব্যাপার, কি ভাবছেন?
না ভাবছি না, দেখছি। বলে সংক্ষেপে সুশীলার উত্তর টা শেষ করল অনন্ত। সফট ড্রিঙ্কস এসে যাওয়াতে, দুই সিপ দিয়ে গলাটা ভিজিয়ে নিলো অনন্ত। তারপর গ্লাস টা পাশে সরিয়ে রেখে সুশীলার দিকে তাকিয়ে বলল, এবার শোনেন আমার কথা।

লন্ডনে গিয়েছিলাম পি এইচ ডি করতে। প্রথম প্রথম খুব একেলা লাগতো। একটা দোতালা বাড়ীর উপর তালাতে ছিল আমার বাস। বন্ধু বান্ধব জোগাড় করা আমার কাছে ছিল এক দুরহ ব্যাপার। আমি ছিলাম একটু লাজুক প্রকৃতির । হয়তো সেইজন্য কোন মেয়ের সাথে আমার বন্ধুত্ত গড়ে উঠেনি। আমিও তাতে কোন অভাব অনুভব করতাম না।
এমনি একদিন ইউনিভারসিটি থেকে বেড়িয়ে হাঁটছিলাম। সন্ধ্যা হয় হয়। ছিটে ছিটে বৃষ্টি আসাতে রাস্তার পাশে একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকে পড়লাম। খেতে আসিনি,এসেছি সময় কাটাতে। অগত্যা বারে বসলাম। একটা বীয়ার অর্ডার দিয়ে পাশে তাকাতেই চোখাচোখি হোল মেয়েটার সাথে। চোখ ফিরিয়ে বীয়ারের গ্লাসে চুমুক দিতেই মনে হোল পাশের থেকে কে যেন বলছে, আমার নাম এলিয়েট। হাতটা বাড়িয়ে দিয়েছে আমার দিকে, আমিও আমার হাত দিয়ে ওর হাত টা ধরে বললাম, আমার নাম অনন্ত।
বাহ, গল্পটা তো জমে উঠেছে, অনন্ত দা।
এতো সবে শুরু। এলিয়েট বলল সে কাজ করে একটা ফাঈন্যন্সীয়াল কোম্পানিতে। আমি আমার পরিচয় দিলাম। যেহেতু কথা বলাতে আমি ততটা পারদর্শী নই কাজেই সেই বলল বেশি। কিন্তু সে যে আমাকে খুব একটা আকৃষ্ট করতে পারলো তা নয়।
দেখতে কি মোটেই ভাল ছিল না? সুশীলা চোখ বড় বড় করে জিজ্ঞাসা করল।
দেখতে মন্দ নয়। তবে আহা মরি কিছু নয়। আমি বীয়ারের গ্লাসটাতে শেষ চুমুক দিয়ে, বললাম এবার আমি উঠব।
এলিয়েট তার পার্স থেকে বিজনেস কার্ড বের করে দিয়ে বলল, এখানে আমার ফোন নাম্বার আছে, কল করলে আনন্দিত হবো। যদি কিছু মনে না করো তবে বলি, কাল আমি এখানে থাকব।
পরের দিন এসেছিলেন?
এসেছিলাম। তবে বইয়ে পড়ার মতো নতুন প্রেমের সেই যে আকর্ষণ তা আমার মাঝে ছিলনা। এযেনো আসতে হয় তাই আসা।
তারপরের ঘটনা সংক্ষিপ্ত। প্রতিদিন দেখা হয় প্রতিদিন কথা হয়। অনেক সময় কেটে যায় কথা বলে।
একদিন সেই বলল, চলো আমার এপার্টমেন্টে। তোমাকে আমার আঁকা কতগুলো ছবি দেখাবো।
ও যে ছবি আঁকতে পারে এতদিন সে তা বলে নি।
বললাম, তোমার যে এতো গুন তাতো আগে বলোনি।
ও শুধু হাসলও।

এপার্টমেন্ট টা বেশ ছিমছাম। একটা শোয়ার, আর একটা বসার ঘর। আমি সোফাতে বসে সামনে রাখা একটা ম্যাগাজিনের পাতা উল্টাচ্ছীলাম। এলিয়েট বেড়িয়ে এলো ঘর থেকে। পরনে ঘরে পড়ার পোশাক। বসলো আমার পাশে। আমি কোন কিছু বলার আগেই সে তার ঠোট দিয়ে চেপে ধরলও আমার ঠোট টা। আমার মধ্যে কোন সাড়া জাগলনা। কোন স্পন্ধন এলো না আমার শরীরে। বরং একটা বিতৃষ্ণা এলো। ওকে ঠেলা দিয়ে সরিয়ে দিলাম। বললাম, আমার মনে হয় না আমি কোন মেয়ে তে আকৃস্ট হবো। সে দুরে সরে বসে বলল, তাহলে কি তুমি—।
বললাম, আমারও তো তাই মনে হচ্ছে।
এটা আমার নিজেকে নিজের প্রথম আবিষ্কার।
তার মানে? বলে তাকাল সুশীলা।
এতক্ষণে নজীব কথা বলল, মানে বুঝতে পারছ না, ওকে আমি তোমার বডিগার্ড হিসাবে রাখলেও আমার কোন চিন্তা নেই, ও হচ্ছে তাই।
সেই জন্যই আপনি একলা। বলে সুশীলা তাকাল অনন্তর দিকে।

এই সময়ে একটা ফোন এলো নজীবের। নাম্বার টা দেখে বলল, আমার এই কল টা ধরতে হবে। বলে উঠে গেলো।
ফিরে এলে কয়েক সেকেন্ড পরে। বলল, আমাকে এখুনি একটু যেতে হবে, কিচ্ছুক্ষণের মধ্যে চলে আসবো। তোমরা ডিনার করতে থাকো আমি এসে জয়েন করব। বলে সে বেড়িয়ে গেলো।

অনন্ত আর সুশীলা সামনা সামনি বসা, অথচ হঠাৎ করেই কারো মুখে কোন কথা নেই। শুধু টুংটাং কাঁটা চামচের শব্দ। নীরবতা প্রথমে ভঙ্গ করে অনন্ত জিজ্ঞাসা করল, আমি বললাম আমার কথা এবার আপনি বলেন আপনার কথা।

সুশীলা সামনে রাখা সেভেন আপের গ্লাসে চুমুক দিয়ে বলল, জানিনা আপনি আমাকে কি চোখে দেখছেন, খারাপ চোখে দেখা টাই স্বাভাবিক। তবে আজ নজীব না থাকলে আমার পরিস্থিতি কি হতো আমি জানি না।
আমার জীবন কাহিনী শুনতে চাচ্ছেন তবেঁ বলি।
এই বলে সুশীলা বলল তার কাহিনী অনন্তর কাছে।

মফস্বল শহরে ছিল আমাদের বাস। বাবা নিতান্ত একটা ছোট খাটো চাকরি করতেন। আমি বড়, আমার ভাই আমার চেয়ে অনেক বছরের ছোট। বাবার ইচ্ছা আমি কলেজ শেষে ভাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই। সেই সুবাদে এসেছিলাম রাজধানীতে। ভর্তি হয়ে ছিলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। দুটি বছর ভালভাবেই কেটে গেলো। হঠাৎ করেই একদিন বাবা হার্ট অ্যাটাকে মারা গেলেন।
আমি দিশাহারা হয়ে গেলাম। কি করব, কি ভাবে চলবে, কিছুই বুজে উঠতে পারছিলাম না।
আমার এক বান্ধবী কে বললাম, সে বলল, এই মুহূর্তে তোর দরকার টাঁকা। তাই না?
বললাম, হাঁ, তাই। আমার একটা চাকরি নিতে হবে।
“ তোর জন্য চাকরি নিয়ে সবাই বসে আছে। তাই কি?”
তাহলে?
একটা পথ আছে। আজ সন্ধ্যায় তোকে এক জাগায় নিয়ে যাবো, চাকরির সন্ধানে।
কি চাকরি, কি ধরণের চাকরি তা ভাবার সময় নেই। সন্ধ্যায় নিচে নেমে এলাম। শিউলি আমাকে দেখে আঁতকে উঠল।
বলল, এই বেশে, এই ধরণের সাজগোজে ওখানে যাওয়া যাবেনা। চল আমার রুমে।
ওর সবকিছু দিয়ে নতুন করে সাজাল সে আমাকে। বেড়িয়ে এসে রাস্তায় দাঁড়ালাম। একটা সি এন জি পাশ দিয়ে যেতেই ওটাকে ডেকে উঠে পড়লাম আমরা দুজন। এসে পৌছালাম এক ঝলমল করে সাজানো বিরাট হোটেলের সামনে।
একটু ইত্যস্ত করে নেমে জিজ্ঞাসা করলাম, এখানে কেন?
একজনের সাথে পরিচয় করিয়ে দেবো সেই তোকে চাকরির ব্যবস্থা করে দেবে।
লবিতে আসতেই এক ভদ্রমহিলা এগিয়ে এলো।শিউলি পরিচয় করিয়ে দিলো। বলল, আমার বান্ধবীর চাকরি দরকার।
ইতিমধ্যে আমি আঁচ করতে পেরেছি কি ধরণের কাজের জন্য শিউলি আমাকে নিয়ে এসেছে।
ভদ্রমহিলা শিউলির হাতে একটা কাগজ দিতেই সে ওটা দেখে বলল তুই উনার সাথে কথা বল আমি আসছি।
আমরা যেয়ে বসলাম কোণার একটা সোফা তে। কোন ভূমিকা না করেই সে বলল, লোকের আনন্দ দেওয়াই আমাদের কাজ। তুমি ওদের সাথে যাবে, কিছুটা সময় ব্যায় করবে, তার বিনিময়ে তুমি যা পাবে তা তোমার।
লজ্জায়, ক্ষবে, আমি মাটির সাথে মিশে যেতে চাইছিলাম। বললাম, একাজ আমার দাড়া হবে না। আমার বান্ধবী কে বলবেন আমি চলে গেছি। এই বলে বেরিয়ে এলাম। একটা ট্যাক্সি ডেকে চলে এলাম আমার জাগায়।
তারপর! জিজ্ঞাসা করল অনন্ত।
তারপর, ফিরে যেতে হয়েছিল ওই পথে। আমার টাঁকার দরকার। মা কে ভাই কে বাচাতে হবে, বাঁচতে হবে আমাকে। এরপর আর পিছনে ফিরে চাইনি। মাকে বলেছি, চিন্তা করো না একটা বড় চাকরি পেয়েছি। তোমাকে টাকার জন্য ভাবতে হবে না।
নজীবের সাথে দেখা কি ঐখানে হয়েছিল?
হাঁ। একদিন বসে আছি লবিতে। নজীব সাথে আরও দুইজন। এক মহিলার সাথে কি নিয়ে যেন কথা বলতে বলতে তাকাল আমার দিকে। আবারও তাকাল। তারপর ওর সাথের লোকদের কে কি যেন বলে এলো আমার কর্নারে।
বসতে পারি? বলে উত্তরের অপেক্ষা না করেই বসে পড়ল। কেউ আসবে কি? জিজ্ঞাসা করল।
ইদানীং আমি কথা বলতে শিখেছি। বললাম, কেনও আপনার কোন দরকার আছে কি আমার সাথে।
ছিল। চলেন বাহিরে কোথাও যেয়ে ডিনার করি?
বললাম, আমি রাজি।
সে তার বন্ধুদের ইশারায় কি যেন বলল। আমরা বেড়িয়ে এলাম। বসলাম এসে এক রেস্তোরায়। ঘণ্টা দুয়েক ওর সাথে থাকলাম। শুধু কথা। আর কিছু নয়। যাবার সময় বলল, কাল আমার জন্য অপেক্ষা করো।
এরপর আর কারো সাথে আমাকে মিশতে হয়নি। শুধু ওর সাথেই বিভিন্ন রেস্তোরায় গেছি, দেখেছি কনসার্ট।
একদিন সে বলল, তোমার জন্য একটা এপার্টমেন্ট ভাড়া করেছি। এখন থেকে তুমি ওখানে থাকবে। তোমার যাবতীয় খরচ আমার। এ যেন শাপে বর পাওয়া।
এমনি সময় একদিন মার কাছ থেকে ফোন এলো। বলল, খুকি তুই একবার আয়। জরুরী দরকার আছে।
নজীব কে বললাম।
সে তাড়াতাড়ি সব ব্যাবস্থা করে দিলো। আমি পৌছালাম। মা বিছানায় শুয়ে।
বললাম, কি হয়েছে তোমার?
সে একটা কাগজ এগিয়ে দিলো। ডাক্তারের প্যাডে লেখা। শুধু এইটুকু লেখা, রাজধানী তে নিয়ে বড় ডাক্তার দেখান।
পরের দিনই মা কে নিয়ে চলে এলাম। সাথে ভাই টা এলো।
অলক্ষে নজীব ডাক্তারের সাথে অ্যাপয়েন্টমেন্ট করে দিয়েছিল। এলাম ডাক্তারের চেম্বারে। সব দেখে বলল, কয়েকটা টেস্ট করবো। পরশু আসুন সব বলতে পারবো।
দুদিন পরে সময় মতো এসে হাজির হলাম ডাক্তারের চেম্বারে। উনি কাগজ পত্র গুলো সামনে নিয়ে আমার দিকে তাকালেন। বুঝতে পারলাম কঠিন কোন রোগ মার হয়েছে। কিন্তু কি সেটা?
বললেন, তোমার মার ব্রেস্ট ক্যান্সার। শেষ পর্যায়। ছড়িয়ে গেছে সব দিকে। এই পর্যায়ে এদেশে এর চিকিৎসা আছে বলে মনে হয় না। বিদেশে নিলে কি হবে জানিনা।
বাসায় এসে মনটাকে শক্ত করলাম, মা র কাছে এসে পাশে বসলাম। মা যেন সবই জানতো মনে হোল।
বললাম ডাক্তার খুব একটা ভাল কিছু বলে নি।
মা বলল জানি, আমার হাতে খুব একটা সময় নেই। তুই আমার পাশে বস। তোকে কয়েকটা কথা বলি।
মা তাকালও আমার দিকে। হাত দিয়ে কপালের চুল টা সরিয়ে দিলো। চোখের কোণে জ্বল জ্বল করছে পানি।
বলল, খুকি মানুষের বিচার হয় তার মন দিয়ে, কর্ম দিয়ে নয়। তুই আমার কাছে যে খুকি ছিলি সেই খুকিই আছিস।
মনে হোল মা যেন সবই বুঝতে পেরেছিল।
তারপর? অনন্ত আবারও জিজ্ঞাসা করল।
তারপর মা আর বেশীদিন বাচেনি। বলে সুশীলা অন্যদিকে মুখটা ঘুরিয়ে চোখের পানিটা মুছে নিলো।
কিছুক্ষণ চুপ থেকে সুশীলা তাকালও অনন্তর দিকে।
বলল,আর একটা কথা আপনাকে না বললেই নয়। আপনার বন্ধুর সাথে দৈহিক কোন সম্পর্ক আমার কোনদিন হয়নি। সে আসে আমার কাছে সময় টা ব্যায় করতে। তার দুঃখের ভাঁড়টা সরিয়ে একদিনের জন্য যদি সুখ দিয়ে থাকি সেটাই আমার বড় পাওনা। তার বাসার খবর আমি কোনদিন নেই নি। নেওয়ার প্রয়োজন অনুভব করিনি।
ওর প্রেমে আপনি পড়েছেন। তাই না? জিজ্ঞাসা ছিল অনন্তের।
আমাদের তো প্রেম করতে নেই। এই বলে সুশীলা বলল, খাবার টা শেষ করুন, ঠাণ্ডা হয়ে যাবে।
অনন্ত কাবাব টা মুখে দিয়ে বলল, আপনার কথা আমার মনে থাকবে।

তারপর অনেকদিন কেটে গেছে। অনন্ত তার নিজের কাজ নিয়ে ব্যস্ত।এক সন্ধ্যায় বাসার কাছেই এক রেস্টুরেন্টে আড্ডা সেরে ফেরার পথে ফোন টা বেজে উঠল। নজীবের ফোন। গলার স্বরে কান্নার আভাস।
অনন্ত জিজ্ঞাসা করতেই বলল, সুশীলা চলে গেলো আজ।
কোথায়?
সেই না ফেরার দেশে।
কি বলছিস? অনন্তর গলাটা কান্নায় ভরা।
হাঁ। ক্যান্সারে।আস্তে আস্তে কুড়ে কুড়ে ওকে খেয়েছে। ওর কঙ্কালসার দেহ টা কতবার নিয়ে গেছি ডাক্তারের কাছে, বলেছি, ওকে বাচাও ডাক্তার। ওকে বাচাও।
তোর কথা সে প্রায়ই বলত। দেখতে চেয়েছিল তোকে।
দেখা আর হোল না। আমারই দোষ। তোকে জড়াতে চাইনি এর মাঝে। ভাল থাকিস।
বলে ফোন টা রেখে দিলো।
অনন্ত দাড়িয়ে রইল রাস্তার পাশে। মনে হোল সেই কথা গুলো, মানুষের বিচার হয় তার মন দিয়ে, কর্ম দিয়ে নয়।

Continue Reading