রাশিয়ার পথে ৫

       হাই স্পীড ট্রেনে St.Petersburg পৌছাতে চার ঘণ্টা লেগে গেলো। বিকেল হয়ে এলো। গেলীনা বলেছে কারো লাগেজ নিয়ে চিন্তা করতে হবে না, পোর্টার রা বাসে উঠিয়ে দেবে। সূর্যের এলো নিয়ে বাড়িয়ে ছিলাম মস্কো থেকে, এখানে বৃষ্টি। সেই সাথে বাতাস।

এখানে একটু বলে রাখি St.Petersburg এক সময় ছিল রাশান এম্পায়ার এর রাজধানী। এটা তৈরী হয়েছিল ১৭০৩ সালে। অনেক ঝড় ঝাপটা গেছে এই শহরের উপর দিয়ে। St.Petersburg রাশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। নেভা নদীর পাশে অবস্তীত।

*হোটেলে যাওয়ার আগে এলাম রেস্টুরেন্টে নৈশ ভোজের জন্য। Marlinsky Theater কাছে। আসার পথে দেখলাম এই শহরেরে  চোখ জুড়ানো  দৃশ্য। আলোয় আলোকিত শহর। বৃষ্টির ছিটায় এক অপূর্ব রুপ ধারণ করেছে।

*ডিনার শেষে রাত নয়টায় এলাম Ambassador Hotel.

পরদিন ভোরে আমাদের St.Petersburg দেখার যাত্রা শুরু। সকালে আমরা ছয় জন এসে মিলিত হলাম বিরাট ডাইনিং *রুমে সকালের নাস্তার জন্য। সাত তালার উপরে ডাইনিং রুম। জানালার ধারে আমাদের টেবিল। রৌদে ঝলমল দিন।

বিভিন্ন ধরনের খাদ্যের সমারহ। কোণটা থেকে কোণটা নেবো।

গেলীনা বলে দেয়েছে নয়টার মধ্যে নিচে থাকতে হবে।

সেই মত আমরা খাওয়া শেষে নেমে এলাম। দুই একজন করে আমাদের গ্রুপ এসে জড়ো হোল।

গেলীনা তার স্বভাব মত বলতে থাকলো, পিটার দ্যা গ্রেট ইউরোপের সবচেয়ে বিখ্যাত architects, craftsmen, এবং artists দিয়ে এই সিটি তৈরী করেছিল। প্রায় ১০০ Island আছে, একটার সাথে একটার সংযোগ প্রায় ৬০০ ব্রিজ দিয়ে। এই সিটি কে বলা হয় Venice of the North.

*আমাদের সারা দিনের ট্যুর শুরু হোল St.Issac’s Square  থেকে। ঠিক Square মাঝে এক বিরাট মনুমেন্ট ঘোড়ায় চড়ে দাঁড়ানো Nicolas I  এর মূর্তি, তৈরী হয়ে ছিল ১৮৫৬ থকে ১৮৫৯ এর মধ্যে।

বাস ঘুরিয়ে নিয়ে এলো St Peter and paul Cathedral এ। * 18th century তে তৈরী এই Cathedral বলা হতো সেই সময়কার উচ্চ বিল্ডিং।

এই Cathedral এর ভিতরে আছে Peter the Great এর টম্ব। আরও আছে শেষ Russian Emperor Nicholas II এর কবর যাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল ১৯১৮ সালে Ekaterinburg এ।

ইতিহাস ঘেঁটে জানা শব্দ গুলো আজ চোখের সামনে দেখছি, সত্যিই বিস্ময়। কোন দিন ভাবিনি, এখানে আসবো। দেখবো।

এরপর আমরা এলাম The mariinsky Palace এ। এটা St.Petersburg এর এক Historic Centre. ঠিক Isaac’s Square উল্টো দিকে। বিশাল কারুকার্য খচিত রুম । রেড রুম, Stair Case না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না কি অপূর্ব ভাবে তৈরী।

** এরপর আমাদের কে নেয়ে এলো Palace Square এ। এই Square ১৯০৫ সালে Tsarist troops বন্দুক চালিয়ে ছিল অস্ত্রহীন strikers দের বিরুদ্ধে। এটাকে বলা হয় ‘Bloody Sunday’,

ঠিক বিশাল চত্তরের মাঝে বিরাট কলাম, গ্রানাইটের তৈরী। নাম Alexander Column

**

আজ এই বিশাল চত্তরে শান্তিতে বিরাজমান। টুরিস্ট আসে, এই বিশাল চত্বর দেখে ইতিহাস ঘাটে। স্মরণ করে সেই ফ্বেলে আসা ঘটনার কথা।

Alexander Column symbolize করে নেপলীয়ানের সাথে যুদ্ধে রাশিয়ার জয়। এই স্তম্ভের উপরে এক এঞ্জেলের ছবি যা  দেখতে Emperor Alexander I. এর মতো।

সব কিছু দেখে শেষ করতে বিকেল হয়ে এলো। বাস এগোতে থাকলো  Nevsky Prospect ধরে। এটা মেন Avenue চারিদিকে সুন্দর সুন্দর ডেকরেটেড বিল্ডিং, আর সুন্দর করে সাজানো ব্রিজ।  আজকের মতো বেড়ানো শেষ।

রাতে গেলাম আমরা ছয়জন গেলাম ফোক ড্যান্স দেখতে।

Hermitage Museum। বাহিরের অপূর্বতা আর ভিতরে অনেক অনেক আর্ট, নাম করা আর্টিস্টের আঁকা। যেমন মাইকেল এঞ্জেলো, পিকাসো, দ্য ভেংচি, রাফায়েল, আরও অনেকের আঁকা।

 এটা Catherine the Great এর নিজেস্ব গ্যালারি।

এই খানে ছিল ওদের Winter Palace.

দেখা শেষে বেড়িয়ে এলাম। আবার আমরা আমাদের মতো।

আজ শেষ দিন। গেলাম Peterhof দেখতে। অসম্ভভ সুন্দর Summer Palace of Peter the Great এর। সুন্দর করে ছাটা লন, ঝর্না বহিছে, দেখা যায় Gulf of Finland.

ছবির পর ছবি উঠিয়ে চলেছে দোজা ভাই।

সব বর্ণনা ঠিক মত হোল কিনা জানিনা। এ শুধু চোখে দেখার।

আমাদের দেখা শেষ, সুটকেস বন্ধ। ফিরে যাবার পালা।

Continue Reading

রাশিয়ার পথে ৪

ঠক ঠক ঠক শব্দ শুনে ঘুম টা ভেঙ্গে গেলো। একটু সময় নিলো ভাবতে শব্দ টা কোথা থেকে আসছে। দরজায় কে যেন টোকা দিচ্ছে। পাশের থেকে হাত ঘড়ি তে তাকিয়ে দেখি সাড়ে সাতটা বেজে গেছে। নাস্তা করতে যাওয়ার কোথা।
দরজা খুলে দেখি দোজা ভাই।
“আমরা তো তোমার জন্য চিন্তিত। কি ব্যাপার?”
“ পনের মিনিট সময় দিন, আপনারা টেবিল নিয়ে বসেন, আমি আসছি”। এই বলে বাথরুমে যেয়ে গরম পানিটা ছেড়ে দিলাম।
প্রস্তুত হয়ে আসতেই ওরা ওদের উদ্বিগ্নতার কথা জানালো।
“সত্যিই তুমি আমাদের ভাবিয়ে তুলেছিলে। সবসময় তুমি আসো প্রথমে আর আজ কিনা তুমি নেই”। বললও আন্না আপা।
ব্রেকফাস্ট শেষে আমরা এলাম লবি তে ।

আজ দেখতে যাবো Tretyakovsky State Gallery. পৃথিবীর বিখ্যাত আর্ট মিউজিয়ামের মধ্যে এটা একটা। এই মিউজিয়ামের প্রতিষ্ঠাতা Pavel Tretyakov.

Tretyakovsky State Gallery
Pavel Treteyakov

আমরা সবাই এসে মিলিত হলাম হোটেলের বারান্দায়। গেলীনা এই গ্যালারীর উপর অল্প বিস্তর বক্তব্য রাখল। ওর বক্তব্যে জানতে পারলাম, এই গ্যালারীতে আছে কম পক্ষে এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার পেইন্টিং, দশতম চেঞ্চুরী থেকে আরম্ভ করে উনিশতম সেঞ্চুরি পর্যন্ত আঁকা এই পেইন্টিং গুলো। বিখ্যাত আর্টিস্টরা হচ্ছে, Brullov, Kiprensky, Karavak, Fedotov, Repin আরও অনেকে।
বাস আমাদের নামিয়ে দিলো বেশ দুরে। খুব সুন্দর আবহাওয়া। হাটতে হাটতে আমরা এসে পৌছালাম Tretyakovsky State Galleryর কাছে।
মারিয়া আজও আছে আমাদের সাথে। হাতের লাঠিটা উঁচু করে ধরে বলল, আমাদের ট্যুর আরম্ভ হবে দ্বিতীয় তালা থেকে।
সেখানে আছে ১৮ তম সেঞ্চুরিতে আঁকা ছবি গুলো।

 

 

একের পর এক ছবি গুলো দেখা শেষ করে যখন বাহিরে এলাম তখন মুষল ধারে বৃষ্টি। এসে ছিলাম রোদ মাথায় করে এখন ভিজতে ভিজতে যেতে হবে বাসের কাছে।
অঝোরে ঝরছে। আমি খুরশেদ ভাই, ভাবী আর জীবু। অন্যান্যরা বৃষ্টি মাথায় বেড়িয়ে গেছে । ভাবীর ঠাণ্ডা লেগেছে, কাজেই বৃষ্টি মাথায় বের হওয়া যাবেনা। অগত্যা খুরশেদ ভাই গেলো ছাতার খোজে।
ঠিক যখন উনি ছাতা কিনে ফিরে এলো তখনি বাসের ড্রাইভার ছাতা নিয়ে হাজির।
যেয়ে শুনলাম ওরা আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে।

লাঞ্চের সময়। এটা আমাদের তালিকার মধ্যে। নির্ধারিত সময়ে পৌছাতে হবে। একটু দেরী হয়ে গেলো বৃষ্টির জন্য। তাতে খুব একটা কিছু এলো গেলো না।
ওরা অপেক্ষা করছিল। পুরো রেস্টুরেন্টে শুধু আমাদের দল।

যেখানেই যাচ্ছি আমরা ছয়জন এক সাথে বসি। এবার আমাদের সাথে যোগ দিল অন্য একটা কাপল। থাকে লসএঞ্জেলীস আর হংকং মিলিয়ে। প্রাথমিক আবাস ছিল হংকং। পরে লসএঞ্জেলীসে এসেছিল চাকরি নিয়ে। দুজনেই রিটায়ার।
আমাদের জন্য Sea Foodর ব্যবস্থা। খাবার মন্দ নয়। ভ্রমনে বেড়িয়ে থাকা খাওয়া নিয়ে মাথা ঘামালে চলে না।
খওয়া শেষ।
এবার আমাদের গন্তব্য স্থান মস্কোর পাতাল রেলপথ। প্রথমে ভেবেছেলাম পাতাল রেলপথ, এমন কি আর হবে। অনেক দেশের পাতাল রেলপথ দেখেছি। শেষ দেখেছিলাম চায়নাতে। মুগ্ধ হয়েছিলাম। আরও বেশি মুগ্ধ হওয়া যে বাকি ছিল তা জানা ছিল না।
অনেক জাগায় ভ্রমন করেছি, দেখেছি অনেক পাতাল রেলপথ। কিন্তু এতো অভিভূত হয়নি কখন।
স্টালিনের vision ছিল, মস্কোর মেট্রো কে “People Palaces” করবে, সেই চিন্তা করে ১৯৩৫ শোনে মাত্র ১৩ টা স্টেশন দিয়ে তৈরী হয় এই মেট্রো। আজ ১৮০ টা স্টেশন। আরও হচ্ছে। প্রতিদিন কমপক্ষে নয় মিলিয়ন যাত্রী যাতায়েত করে।
প্রত্যেকটা স্টেশন Unique ভাবে ডিজাইন করা। রাশান ইতিহাসের সাথে জড়িত।

moscow metro

মারবেল দিয়ে তৈরী, স্যান্ডেলিয়ার ঝুলছে। বিভিন্ন জায়গায় Mosaic arts, এক কথায় অপূর্ব।

Mayakovskaya Station যুদ্ধের সময় বম্ব সেলটার হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছিল। শুধু তাই নয়, হাসপাতাল এবং Supreme Command Headquarter ছিল।

moscow metro

Komsomolskay staion দেখলে মনে হবে এটা স্টেশন নয়, এ যেন গ্র্যান্ড বলরুম।
এই ভাবে তৈরী বিভিন্ন স্টেশন গুলো।

 

 

দেখতে দেখতে দুই ঘণ্টা কেটে গেলো। ফিরে এলাম হোটেলে। তখন বাজে পাঁচটা।
আমরা যাবো Othelo অপেরা দেখতে সন্ধ্যা সাত টায়।

মস্কো বেড়ানো শেষ। কাল যাত্রা করবো St. Petarsburg এর দিকে।

Continue Reading