কয়েকটা দিন খুব আনন্দে কেটে গেলো।
তাই না?
তুমি আসার আগে বলে ছিলে, আমাকে নিয়ে কিন্তু অনেক ঘুরতে হবে।
আমি তার কার্পণ্য করিনি।
কি বলো?
কুয়াশা ঘেরা সকালে তুমি এসে নামলে। তখন ও শিশির কনা ঝরে যায়নি ঘাসের পাতা থেকে।
দুর থেকে দেখতে পেলাম তোমার সেই হাস্যময় মুখটা।
কাছে এসে হেসে বললাম,দাও তোমার সুটকেস টা|
উঠাতে যেয়ে মনে হলো ওজন অনেক বেশি।
বললাম. এর ভিতর কি লোহা লক্কর না আর কিছু?
ও তুমি বুঝবে না? মেয়েদের অনেক জিনিস পত্র লাগে।
তা আমি জানি।
কোন এক সময় আমার সাথেও একজন ছিল। কত জোড়া জুতো এনেছো।
তা তোমাকে বলতে যাবো কেন?
বাহ! আমি টানছি সুটকেস আর আমি জানতে পারবো না।
বড় বেশি বকবক করছ তুমি। চলো তো। বলে তুমি উঠে পড়লে গাড়ী তে।
এই ভোরে এয়ার পোর্টে আসতে তোমার খুব কষ্ট হয়েছে। তাই না? বলে ক্লান্ত দৃষ্টি দিয়ে তাকালে আমার দিকে।
তা একটু হয়েছে বৈকি। বলে একটু হাসলাম।
শামির বাসায় আসতে ঘন্টা খানেক লেগে গেলো।
নাস্তা তৈরি করে রেখেছিল তাননার মা।
তুমি নাস্তা শেষে উপরে উঠে গেলে। ঘুমে তোমার চোখ ঢুলো, ঢুলো।
আমি বসে রইলাম। গল্প করলাম তাননার মার সাথে।
সেই রাতে তোমাকে নিয়ে এসেছিলাম ঝলমলে আলোয় সাজানো রাতের Time Squareএ ।
শিশুদের মত চোখ বড় বড় দেখতে থাকলে।
বিভিন্ন ভঙ্গিতে তোমার অসংখ্য ছবি রইল আমার ক্যামেরাতে।
আমাদের দুজনের সেলফি গুলো, দারুন! তাই না?
পোস্ট করবো কি ফেস বুকে? বলতেই বললে,
সমস্যা কি?
না মানে —-
রাখো তোমার মানে মানে।
সত্যি বলতে কি তোমার আমার বন্ধুত্বের মাপ কাঠি অনেক উপরে।
অনেকেই তা বুঝবে না।
আজ নির্জন ঘরে বসে মনে পড়ছে পরের দিন তোমাকে নিয়ে গিয়েছিলাম গ্রিন পোর্টে।
আঁকা বাকা রাস্তা ।
দুদিকে ফলের বাগান। চারিদিক সবুজে ভরা।
আমি আবৃত্তি করছিলাম, জীবনানন্দ দাশের, বনলতা সেন।
তুমি বললে, বাহ তুমি তো সুন্দর আবৃত্তি করতে পারো। তোমার যে এই গুন ছিল তা তো জানতাম না।
এই আবৃত্তি শুনেই তো কত মেয়ে পাগল হয়ে গিয়েছিল।
আমি তো জানি তুমি একজন কেই পাগল করে ছিলে।
তাই?
হা।
শুনবে আর একটা।
না, বাহিরের দৃশ্য টা উপভোগ করবো। বড় বড় দালান কোঠা দেখতে দেখতে চোখ ক্লান্ত হয়ে এসেছে।
তুমি সুন্দর মনোরম একটা পরিবেশ দেখালে।
আর কতদূর সেই সমুদ্রের পাড় টা। তুমি বলেছ ওর পাড়ে বসে আমরা দুপুরের খাওয়া খাবো।
ধীরে বন্ধু ধীরে। উৎকন্ঠার মধ্যেই তো আনন্দ ।
তোমার হেয়ালি কথা আমি বুজতে পারিনা। বলে তুমি তাকালে বাহিরের দিকে।
Claudio’s রেস্টুরেন্ট। পানির পাশে। ঘাটে বাঁধা অনেক বোট । আমরা বসে ছিলাম পানির কোল ঘেঁষে।
ফিস এন্ড চিপস আর কালামারির অর্ডার দিলে তুমি।
মাঝে মাঝে ঠান্ডা হাওয়া বয়ে যাচ্ছিল। তুমি বললে. খুব সুন্দর একটা জাগায় নিয়ে এসেছ।
চল , খাওয়া শেষে একটু হাঁটব , দোকান পাট গুলো দেখব।
সে আর বলতে। কেনা কাটা তো তোমার নেশা। তাই না?
বাজে বকোনা। ঘুরে দেখতে ভাল লাগে।
চল তবে যাই।
অবশেষে কত কিছু কিনেছিলে মনে আছে?
কানের দুল. নেটের বোনা জামার উপর আলতো করে ফেলে রাখা কারডিগান ।
সন্ধ্যা হওয়া এলো।
তুমি বললে, এবার চলো ফিরে যাই। বোনেরা সবাই উদগ্রীব হওয়া আছে।
সন্ধ্যায় আলো আঁধারের মাঝে গাড়ী চলেছে, দুপাশের মাঠ অন্ধকারে ঢুবে গেছে। দুরে দুই একটা আলোর রেখা। রোমানটিক পরিবেশ।
কি ব্যাপার কথা বলছ না যে? বলে মৃদু ধাক্কা দিলে।
আহা। তুমি আমার স্বপ্ন টা ভেস্তে দিলে তো।
ওসব স্বপ্ন টপন দেখতে হবে না। চারিদিক দেখে গাড়ী চালাও।
আমাকে ফিরতে হবে মেয়েদের কাছে, ফিরতে হবে স্বামীর কাছে।
দিলে তো দিলে তো পরিবেশটা মাটি করে।
কেনও আমি আবার কি মাটি করলাম? বলে অবাক দৃষ্টি তে তাকালে।
পরদিন তোমাকে নিয়ে গিয়েছিলাম আর একটা জাগায়, যেখানে আমিও যাইনি আগে।
Hudson Yards.
নতুন Development.
৭ নম্বর ট্রেনের শেষ স্টেশন ।
পাতাল থেকে যখন উঠে তুমি চারিদিক তাকালে।
বললে, অপূর্ব। না আসলে মিস করতাম।
সত্যিই তোমার ভাল লেগেছিল। নতুন ধরনের নতুন স্টাইল এ বানান বিল্ডিং । সাথে আছে শপিং মল।
কি কি যেন তুমি কিনেও ছিলে সেখান থেকে।
সেই শেষ। বেড়ানোর শেষ দিন।
তোমাকে নিয়ে ঘুরে ঘুরে আমার সময় গুলো ভালই কেটে ছিল।
সময় এসে গেল। তোমাকে ফিরে যেতে হবে তোমার পরিবেশে। ব্যস্ত হয়ে পরবে বিভিন্ন কাজ নিয়ে। আমিও।
যাওয়ার সময় বলেছিলে , কবে আসবে আর একবার আমাদের কাছে?
বলেছিলাম, বন্ধু , সময় যেদিন আসিবে সেদিন যাইবো তোমার কুঞ্জে।
প্লেন ছাড়ার আগে তুমি কল করেছিলে। বললে, চোখে পাঁথর কুঁচি পড়েছে কিনা জানিনা, চোখটা পানিতে ভরে গেলো কেনও?
ভাল থেকো।
তুমিও।
বিদায় বন্ধু, বিদায়।
আমি ফিরে এলাম আমার শুন্য ঘরে।
থাকল শুধু মধুর স্মৃতি গুলো।