ভবিতব্য

অস্তগামী সূর্যের লাল রশ্মি টা এসে পড়েছে তৌফিকের ড্রয়াইং রুমে। মনে হচ্ছে যেন আলো আধারের খেলা চলছে। একটু পড়ে সন্ধ্যা নামবে। দুরের আকাশ টা লালচে রঙে ছেয়ে যাবে। প্রতিদিন এই সময়টা তৌফিক বড় জানালাটার কাছে দাড়িয়ে দুর পানে চেয়ে থাকে। আস্তে আস্তে অন্ধকারে ছেয়ে যায় চারিদিক।
অন্যদিন তৌফিক টিভি টা চালিয়ে এক কাপ কফি নিয়ে বসতো। আজ আর তা করলো না।
গতকালের ঘটনা গুলো মনে করার চেষ্টা করলো।
শোভা আপার বাসায় ঝড় বৃষ্টি মাথায় নিয়ে যেতে হয়েছিল লাঞ্চ খেতে। সাথে ছিল সাধনা আর প্রতিমা।
তৌফিকের বান্ধবী। অনেকদিনের পরিচয়। অনেকে অনেক কথা বলে সাধনা আর তৌফিককে ঘিরে। তৌফিক পাত্তা দেয় না। ব্যচেলার থাকার এই একটা উটকো ঝামেলা, মনে করে তৌফিক।

এক গানের অনুষ্ঠানে সাধনা পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল তৌফিক কে।
“ এই তৌফিক, এদিকে এসো”।
প্রথমে ডাক টা শুনতে পায়নি তৌফিক। গান চলছে। একটু হট্টগোল।
দ্বিতীয় বারের ডাকে তাকাতেই হাত দিয়ে ইশারা করলো সাধনা। একজন কে ঘিরে দুই তিন জন।
কাছে আসতেই সাধনা বলল, চেন উনাকে? সামনে দাঁড়ানো মহিলা কে হাত দিয়ে দেখালও।
না চিনলাম না।
শোভা আপা। দেশে আমাদের বাসা আর উনাদের বাসা পাশাপাশি ছিল। সেই থেকে পরিচয়। আজ অনেকদিন পরে দেখা।
অনেকেই চেনে উনাকে। খুব পপুলার।
তুমিতো আমাকে লজ্জায় ফেলে দিলে উনাকে চিনতে না পারাতে। বলে তৌফিক মৃদু হাসল।
মাফ করবেন, হয়তো দেখেছি কোথাও এইক্ষণে মনে করতে পারছি না।
না না তা কেন। একদিন আসেন আমার বাসায়। সাধনা কে নিয়ে। আমিই কল করে জানাবো।
অবশ্যই।
শোভা আপা কল করেছিল। আসতে বলেছিল। বয়সে দুই এক বছরের ছোট হতে পারে বলে মনে হোলও তৌফিকের।
নতুন পরিচয়ে নাম ধরে ডাকাটা শোভনীয় নয় বলে আপা শব্দ টা যোগ থাকলো।

ঘরে ঢুকতেই, তৌফিক দেখল বেশ কিছু পরিচিত লোকজন। যাক, তাহলে সে একা নয়। একটু স্বস্তি পেলো তৌফিক।
ফুলের তোড়া টা এগিয়ে দিতেই শোভা আপা বলল, কি ব্যাপার, একলা না সাথে কেউ আছে?
আছে, একজন নয়, দুজন। হাসতে হাসতে বলল তৌফিক।
আপনার সাথে আমার কথা আছে।
আমার সাথে? আপনি তো আমাকে চিন্তায় ফেলে দিলেন।
আমি আসছি, বলে রান্না ঘরের দিকে চলে গেলো শোভা আপা।
তৌফিক টেবিলের উপর থেকে কয়েকটা বাদাম উঠিয়ে নিয়ে আসতেই আসমা ভাবী ডাক দিল।
লেখা টা পড়লাম। খুব ভালো লাগলো।
আপনিই আমার একমাত্র পাঠক। তৌফিক হেসে বলল।
দেশের বাহিরে কি যাওয়া হবে।
এই মুহূর্তে না। নেক্সট ইয়ারে।
শোভা আপা ফিরে এলো। হাতে একটা ছবি।
তৌফিকের হাতে দিয়ে বললও, দেখেন তো চিনতে পারেন কিনা?
অনেক পুরানো ছবি। রং ফেড হয়ে গেছে। তবুও চেনা যায়। ছয় জন দাড়িয়ে। একপাশে তৌফিক। তারপর শোভা আপার স্বামী তার পাশে শোভা আপা।
তাহলে আপনি আমাকে চিনতেন? তাই না?
অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। জলজ্যান্ত প্রমান।
আপনাকে দেখেই মনে হয়েছিল কোথায় যেন দেখেছি। বাসায় এসে পুরনো এ্যালবাম গুলো খুলে দেখতে লাগলাম। অবশেষে আমি জয়ী।
আপনিতো রীতিমত সারলক হোমস। বলে হাসতে লাগলো তৌফিক।
নিচে ছেলেদের জন্য জায়গা করা হয়েছে।
আড্ডা বেশ ভালোই জমে উঠলো। মহিই কথা বলছে বেশি।
পলিটিক্স শেষে যার যার ছোট বেলার কৃতি কলাপ। তৌফিক চুপ করে শুনছিল।
এর মাঝে আরম্ভ হোলও ভুত, প্রেত এর জিন এর কথা।
মহি তার জিনের অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিতে যাবে সেই সময় ডাক এলো উপর থেকে।
খাওয়া রেডি।
খাওয়া শেষে এবার ফেরার পালা।

সাধনা, প্রতীমাকে নিয়ে বের হতে হতে সন্ধ্যা সাত টা বেজে গেলো তৌফিকের। বাহিরে তখনো অঝোর ধারায় ঝরছে।
তৌফিক বলল, তোমাদের কে নামিয়ে দিয়ে আমি যাবো রফিকের বাসায়। ওর বৌ আগামীকাল দেশে যাবে। দেখা করতে হবে।
তাহলে তো বাসায় ফিরতে তোমার দেরী হবে। রাতে খাবে কোথায়। বাসায় কিছু আছে? সাধনা জিজ্ঞাসা করতেই তৌফিক বলল রফিকের ওখানেই খেয়ে নেবো।

আচ্ছা তৌফিক ভাই আপনি বিয়ে করলেন না কেন? কেউ কি এসেছিল আপনার জীবনে কোন এক সময়।
অকস্মাৎ প্রতিমার এই প্রশ্নে তৌফিক কিছুটা অপ্রস্তুত হলেও সাথে সাথে সামলে নিয়ে প্রতিমার দিকে তাকাল।
তোকে এতো পার্সোনাল প্রশ্ন করতে কে বলেছে? ধমকের সুরে সাধনা প্রতিমাকে বলল।

গাড়ীতে YouTube ভেসে আসা গান টা বন্ধ করে দিল তৌফিক। কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলো।
নিস্তব্ধ ভিতরে। বাহিরে বৃষ্টির শব্দ।
সাধনা তাকাল প্রতিমার দিকে। প্রতিমা হাত জোড় করে মাফ চাওয়ার ভঙ্গিতে জানাতে চাইল সে দুঃখিত।

এমনি বরষা ছিল সেদিন— নিস্তব্ধটা ভাঙ্গল তৌফিক।

ইউনিভার্সিটিতে প্রথম বর্ষের ছাত্র আমি। প্রথম বর্ষে যা হয়। অত্যন্ত মনোযোগী পড়াশোনার ব্যাপারে। কাজেই লাইব্রেরিতে ঘনঘন যাতায়েত। এমনি একদিন লাইব্রেরির কাজ শেষ করে বাহিরে এসে দাঁড়ালাম। অঝোরে বৃষ্টি ঝরছে। ছাতা টা খুলতে যাবো সেইক্ষণে, শুনতে পেলাম কে যেন বলছে, শুনছেন?
চারিদিকে চেয়ে দেখলাম আর কেউ নেই। আছি শুধু আমি আর সে। তবুও বললাম, আমাকে বলছেন?
জি, কোন রিক্সা তো দেখছিনা, যদি কিছু মনে না করেন আমাকে আপনার ছাতা দিয়ে ঐ গেট পর্যন্ত পৌছে দিলে ওখানে রিক্সা পেয়ে যাবো।
আসুন, তবে ছাতা টা খুব একটা বড় না, কিছুটা ভিজতে হবে।
পাছে শরীর স্পর্শ করে তাই অধিকাংশ ছাতাটা ওর দিকে দিয়ে আমি ভিজতে ভিজতে এগিয়ে চললাম। তবুও হাতে হাত লাগলো। শরীর স্পর্শ করলো। আমার তন্ত্রীতে তন্ত্রীতে খেলে গেলো এক উচ্ছল তোরঙ্গ। কোন মেয়ের সংস্পর্শে আগে কখন আসিনি তো।
বাহ! বড় রোমটিক্টার আভাস পাচ্ছি। প্রতিমা বলে উঠলো।
থামবি তুই? সাধনা ধমক দিলো।

আমার নাম তৌফিক, কেমিস্ট্রি মেজর।
আমি মলি, soil science মেজর। আপনার ডিপার্টমেন্ট থেকে খুব একটা দুরে নয়।
সাদা শাড়ী, কালো পাড় পরনে, দুই ভুরুর মাঝে কালো ফোঁটা। প্রথমে ভেবে ছিলাম ওটা তিল, সুন্দর মানিয়েছে। ওর গায়ের মিষ্টি গন্ধ বৃষ্টির সোঁদা গন্ধকে হার মানালো।
দুজনে ছাতাটাকে ধরতে যেয়ে ওর হাত টা এসে পড়লো আমার হাতের উপর।
ও চকিতে চেয়ে সরিয়ে নিলো।
তারপর? প্রতিমার আবার জিজ্ঞাসা।
গেটে এসে পৌছালাম। ভাবছিলাম, না পৌছালে বেশ হতো।
বৃষ্টি টা আরও জোড়ে কেনও এলোনা। কেন রিক্সা গুলো ওখান থেকে চলে গেলো না।
তাহলে আরও কিছুক্ষণ এক সাথে থাকা যেতো। তা আর হোলও না।
ও রিক্সায় উঠে বসলো।
বলল, অনেক ধন্যবাদ। আপনি তো আমাকে বৃষ্টি থেকে বাচাতে যেয়ে নিজে ভিজে একাকার।
বললাম, আমার হল কাছে, অসুবিধা হবে না।
দেখেন, ঠাণ্ডা যেন না লাগে। আপনি প্রতিদিনই কি লাইব্রেরি তে আসেন।
আসি এবং একই সময়।
জানা থাকলো।
ও চলে গেলো, আর আমার মনে হোলও ছাতাটা বন্ধ করে বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে আমি গাইতে থাকি
,”পাগলা হাওয়ার বাদল দিনে, পাগল আমার মন জেগে ওঠে’
সাধনা চুপ করে শুনছে, প্রতিমা উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করলো, আবারও দেখা হয়েছিল।
হয়েছিল। সেই জাগায় সেই সময়ে প্রতিদিন।
কোথা দিয়ে দুটো বছর কেটে গেলো বুজতে পারিনি। তখন আমরা দুজনেই তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছাত্রী।
ইউনিভার্সিটি বন্ধ হোলও বেশ কিছুদিনের জন্য। ও চলে গেলো ওর দেশের বাড়ীতে।
সময় চলে গেলো, ও ফিরে এলো। গম্ভীর।
কি হোলও? জিজ্ঞাসা করতেই বলল,
বাবা বিয়ে ঠিক করছে।
লেখা পড়া শেষ হোলও না, বিয়ে ঠিক করছে মানে?
ভালো পাত্র পেয়েছে, বিদেশে থাকে। ইঞ্জিনিয়ার।
আমার তো এখনো কয়েক বছর বাকি পাশ করার। চল, কোর্ট ম্যরেজ করে ফেলি। কোন কিছু চিন্তা না করেই বলে ফেললাম।
পাগল। বলে সে চুপ করে রইল। দেখি, চিন্তা করো না।
দুই তিন মাস কেটে গেলো। হঠাৎ একদিন দেখি আমার ডিপার্টমেন্টের সামনে সে দাড়িয়ে।
কি ব্যাপার?
ওর হাতে ধরা টেলিগ্রাম টা আমাকে দিলো। লেখা, মা ভীষণ অসুস্থ। যত তাড়াতাড়ি পারো চলে এসো।
বলল, আজ রাতের ট্রেনে চলে যাচ্ছি। ফিরে এসে সব বলব।

খুব একটা ভালো মনে হচ্ছে না তৌফিক ভাই।
ঠিক বলেছ,তার আর বলা হয়ে উঠেনি। সেই দেখাই ছিল শেষ দেখা। তার আর খোঁজ আমি পাইনি।
কি বলছেন?
ঠিকই বলছি।
শুনেছিলাম ওর বান্ধবীর কাছ থেকে। সে ক্যানাডায় চলে গিয়েছিল বিয়ে করে। এই পর্যন্তই।
আজ অনেক অনেক বছর হয়ে গেলো। আমিও চলে এলাম এই দেশে। বেশ আছি।

গাড়ী এসে দাঁড়াল সাধনার বাসার সামনে। প্রতিমা কোন কোথা বলল না। কিছুক্ষণ নীস্তব্দ থাকার পর তৌফিকই বলল, আবার এসো তোমরা।

যাবে কি বন্ধুর বাসায়। সাধনা জিজ্ঞাসা করলো।
যাবো।
সাবধানে যেও। বেশি রাত করো না। আর বৃষ্টি তে ভিজো না।

তৌফিক চলে গেলো।
ওখানে দাড়িয়েই প্রতিমা জিজ্ঞাসা করল, তৌফিক ভাই এর কথা একবার ভাববি কি?
না, বন্ধুত্ব টা হারাতে চাই না।

থাঙ্কসগিভীং এসে গেলো। মাত্র কয়েটা দিন বাকি। এমনি এক সকালে ঘুম ভাঙ্গলও সাধনার ফোনের আওয়াজে।
কি ব্যাপার? এতো সকালে ঘুমটা ভাঙলে তো।
সকাল মানে, বাজে দশ টা। শোন, বুবু কল করেছিল মিনিশোটা থেকে। ওখানে থাঙ্কসগিভীং করতে। তোমাকেও যেতে হবে আমার সাথে।
একি অর্ডার না অনুরধ?
দুটোই। আগামী পরশু যাবো। সকালের ফ্লাইট।
অগত্যা তৌফিককে যেতে হোলও। পৌছাল থাঙ্কসগিভীং এর একদিন আগে।
রানু আপা, সাধনার বুবু, অনেক আয়োজন করেছে। জিজ্ঞাসা করতেই বললও, তা প্রায় তিরিশ জনের মতো গেস্ট আসবে।
তৌফিককে কিছু করতে হচ্ছেনা। বসে বসে দেখছে। মাঝে মাঝে এটা ওটা এগিয়ে দেয়।
সময় হয়েছে লোকজন আসার।

টুং করে বেলটা বেজে উঠল। প্রথম অতিথি।
তৌফিক বলল, আমি দেখছি, তোমরা এইদিক টা দেখো।
আবারও টুং করে বাজলো।
তৌফিক খুলে দিলো দরজা টা।
সামনে দাঁড়ান সাদা শাড়ী কালো পাড় পড়া এক ভদ্রমহিলা। শুধু দুই ভুরুর মাঝে কালো ফোঁটাটা নেই।
অবিশ্বাস দৃষ্টিতে দুজনে দুজনের দিকে তাকিয়ে রইল।

Continue Reading

ওল্ড ইজ গোল্ড

মিসেস পিটারশন আমার প্রতিবেশী। সকাল, সন্ধ্যায় ঘরের সামনে ছোট্ট চত্তরে চেয়ার নিয়ে বসে থাকে।
আসতে যেতে আমি হ্যালো বলি। মাঝে মধ্যে পাশের চেয়ার টা টেনে নিয়ে বসে গল্প করি।
এমনি এক সকালে কথায় কথায়, ওল্ড ইজ গোল্ড কথাটা বলতেই মিসেস পিটারশন ক্ষেপে উঠল।
ওল্ড ইজ গোল্ড কে বলেছিল কথাটা, একবার তাকে দেখতে ইচ্ছে করে। ভালই তো ছিলাম। যেই ষাট পাড় হলাম অমনি রাজ্যের অসুখ এসে হানা দিলো। এখন গিটে গিটে ব্যাথা, সব মিলিয়ে পাঁচ থেকে ছয়টা ঔষধ খেতে হয়।
৬৫ বছর আমার ছেলেমেয়েরা ধুমধাম করে পালন করলো। বললও, আবার তুমি রিটায়ার করো।
করলাম। এখন প্রতিটি ঔষধে কো পেমেন্ট দিতে হয়। এই তোমার ওল্ড ইজ গোল্ড। গজরাতে গজরাতে মিসেস পিটারশন ভিতরে চলে গেলো।
আমিও রওয়ানা দিলাম। কয়েকজন মিলে আড্ডা দেওয়ার কথা।
ইদানীং আড্ডার সুর পাল্টিয়েছে। আগের মতো হৈহৈ নেই। বয়স সবার মিসেস পিটারশনের মত। কাজেই আড্ডা যদিও আরম্ভ হোল হাস্য রসিকতা নিয়ে, কিন্তু একটু জমে উঠতেই একজন বলে উঠল তার প্রেশার আজ তুঙ্গে উঠেছে। অমনি আর একজন সুর ধরল তার আজ দুদিন ধরে হার্টবীট টা বেড়েছে বলে মনে হচ্ছে। আলোচনা সীমাবদ্ধ হোল শারীরিক আর মানসিক অবস্থার মঝে।
Depressing.
বললাম, এইসব আলোচনা থাক।
রফিক বলে উঠল, তা আর কি নিয়ে আলোচনা করবো বলও। স্টক মার্কেট? ওটা একদিন নর্থে গেলে দুইদিন যায় সাউথে। বুক ধড়ফড় করে।
৪০১কে।
ওটাই তো সম্বল। বৌ সেদিন রাগ করেছিল। বলল, সবকিছু বিক্রি করে দিয়ে মানি মার্কেটে রেখে দাও। তাহলেই তো কোন চিন্তা নেই। শোন কথা। বুক ধড়ফড় করলেও ওটাই একমাত্র excitement দেয়। কি বলিস?
হাঁ, অন্য সব excitement তো লাঠে উঠেছে। হাসতে হাসতে বললও শমিত।
আসলেই, বার্ধক্য খুব সুখের নয়। নানা রকম সমস্যা। শুধু তাই নয়, অন্যদেরকে ও বাতিব্যাস্ত করে তোলা।

মানুষ মানতে রাজি নয় যে সে বার্ধক্যে পৌছে গেছে।
এইতো কিছুদিন আগেও তো সে জোড়ে হাটতে পারতো, আজ কেনও তার হাঁটুতে ব্যাথা। সময় যে পেড়িয়ে গেছে তা সে জানতে পারেনি। ব্যস্ত ছিল ছেলে মেয়েদের লেখা পড়া নিয়ে। বাড়ী ঘর নতুন করে সাজান নিয়ে। ধাপে ধাপে উন্নতির পথে এগোন নিয়ে। বলা যায় এ এক কম্পিটিশন। শরীরে রোগ দেখা দেয়নি। শুধু কাশি সর্দি।
খেয়ে নেও দুটো Zartec, চলো এগিয়ে।
সেই চলতে চলতে একদিন আয়নার সামনে দাড়িয়ে দেখল কয়েক টা পাকা চুল। চোখের নিচে পানির থলি।
হাটতে যেয়ে মনে হোলও একটু বিশ্রাম নিলে ভালো হতো।
সাড়া জীবন ব্যায়ামের ধার ধারেনি। কলকব্জা গুলোতে মরিচা পড়ে গেছে।
ডাক্তারের কাছে যাওয়া হয়নি অনেকদিন হোল।

কি ব্যাপার খাওয়া দাওয়াতে কোন কন্ট্রোল নেই আপনার?
ডাক্তারের কথাতে হুঁশ ফিরে আসে।
কেন? কি হয়েছে।
কলেস্ট্রল তো চুঙ্গে উঠেছে। ব্লাড প্রেসার তো আকাশ ছুঁই ছুঁই। ব্লাড সুগার আর নাইবা বললাম।

রোজ চার থেকে পাঁচটা ঔষধ খাওয়া আরম্ভ হোলও।
বাসায় এসে গেলো প্রেসার মাপার যন্ত্র, এসে গেলো সুগার মাপার যন্ত্র।

কি রে কিছু ভাবছিস?
কি আর ভাববো, বড় বোন বাথরুমে যেতে যেয়ে পড়ে গেছে। মাথা তে চোট লেগেছে।
তারপর?
সিটি স্ক্যান করেছে। খুব একটা ভালো না। মাথায় রক্ত জমেছে। কথা জড়িয়ে আসছে।

আমাদের সবাই কে সাবধানে চলতে হবে। বললও গিয়াস।
তা আর বলতে। এইতো সেদিন হাটতে যেয়ে বা দিকটাতে একটু চাপ অনুভব করলাম। পাত্তা দিলাম না।
বৌ এর চাপে পড়ে ডাক্তারের কাছে গেলাম। বলে বাবুল একটু দম নিলো।
কি বলেছে ডাক্তার, জিজ্ঞাসা করলো সানু।
Angiogram করতে হবে। দেখবে কোন ব্লক আছে কিনা।

আমাদের সবাই কে এখন স্ট্রেস টা কমাতে হবে। স্ট্রেস কুড কিল ইয়ু। বললও সানু বিজ্ঞের মত।
স্ট্রেস কমাতে চাইলেই কমাতে পারবো ? মেয়েটার এখনো বিয়ে হয়নি। বয়স তো কম হোল না। বলে উদাস ভাবে তাকালও আকাশের দিকে বাবুল।

শোন, মেঘে মেঘে অনেক বেলা হয়ে গেছে। বাবা যখন রিটায়ার করল পঞ্চান্ন বছর বয়সে, ভেবে ছিলাম অনেক বয়স হয়েছে বাবার। আমাদের কিন্তু অনেক আগেই তা পেড়িয়ে গেছে। কাজ কমিয়ে দে। চল, জিমে যাওয়া আরম্ভ করি। বডি টাকে ফিট রাখতে হবে।
আমার কথা শেষ না হতেই রফিক বলে উঠল, কাজ কমিয়ে দেবো? এখনো মর্টগেজ রয়েছে। রিটায়ার করবো ভেবেছিলাম। হিসাব করে দেখলাম পোষাবে না।
যতটুকু গিলতে পারবে তার চেয়ে বেশি গলার ভিতর দিয়ে বসে আছো। তখন ভাবোনি। আসলে আমরা কেউই ভাবিনি একদিন বার্ধক্য আসবে। বিজ্ঞের মত বলল আমিন।
কিছুদিন আগে একজন আমার মেসেঞ্জারে কিভাবে চির তরুন ও নিরোগ থাকা যায় তার পদ্ধতি লিখে পাঠিয়েছি।
অবশ্য এটা একটা বিশ্বখ্যাত চিকিৎসকের পরামর্শ।
কি বলেছে সে? উদগ্রীব হয়ে শুনতে চাইল সানু।
সকালে ঘুম থেকে উঠে গরম পানি খাওয়া। দুধ ছাড়া চা। সারা দিনে আট থেকে বারো গেলাস পানি খেতে হবে।
ধূমপান নিষিদ্ধ। রেড মিট অর্থাৎ গরু,খাসি, ভেড়ার মাংস খাওয়া ছেড়ে দিতে হবে।
হয়েছে হয়েছে আর বলতে হবে না, ওসব আমার দাড়া হবে না। মাঝ পথে থামিয়ে দিলো আমিন। কবে, কখন কোথায় মরবো তাতো লেখা আছে। এসব তথ্য শুনে লাভ নেই।
খোদা না করে যদি তোর স্ট্রোক হয়। একটা দিক অবশ হয়ে যায়। তোকে দেখবে কে? তুই তো বোঝা হয়ে থাকবি অন্যের।
বলে সানু তাকাল আমিনের দিকে।

শোন আলোচনা এখানেই শেষ কর। যেতে হবে নাতিকে দেখতে। তবে আমার একটা প্রস্তাব।
কি?
প্রতি সপ্তাহে রবিবার সকালে আমরা সবাই মিলিত হবো নাস্তা খেতে। একঘণ্টা দুইঘন্টা কাটাবো গল্প করে। অসুখের কথা নয়। শুধু মন মাতানো কথা। রাজি?
রাজি? আমি আর একটা জিনিস যোগ করতে চাই। বলল আমিন।
কি?
প্রতি মাসে একবার আমরা মুভি দেখতে যাবো। রাতের শো তে। গৃহিণী দের কে বাসায় রেখে?
হাসতে হাসতে সবাই বললও রাজি।
আলবৎ রাজি।

Continue Reading