২৭ শে এপ্রিল

                               

 -কি ব্যাপার মুড টা ভালো নেই মনে হচ্ছে?

-না নেই। বড় ঝঞ্ঝাট।

-কি হোলও?

-কি হয়নি বলও। করোনাভাইরাস বাসায় বন্দী করে রেখেছে, সেই সাথে দেখা দিয়েছে মাজায়, হিপে ব্যাথা।

-ডাক্তার দেখিয়েছ?

-দেখিয়েছি, কাজ হয়নি। যাক ভালই হয়েছে। তুমি এসেছ, চারিপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছ, মন্দ কি?

-এইদিন টাতে না এসে পারিনা। তোমাকে একলা, একলা বলব না, তোমার ছেলে মেয়েদের কাছে রেখে গিয়েছিলাম। ওরা তো তোমাকে ভালোই যত্ন নিচ্ছে।

-তা নিচ্ছে। তোমার হাতে গড়া, বৃথা যেতে পারে না।

-চুলে অনেকদিন ছাঁট পড়েনি মনে হচ্ছে?

-না, পড়েনি, নাপিতের দোকান বন্ধ। এখন বাসায় এঁকে অন্যের টা করে দিচ্ছে।

– তোমার তো সে সুযোগও নেই।

না নেই, তাতে যে কোন অসুবিধা হচ্ছে তাও নয়। তবে তোমার হাতের ছোঁয়া পাচ্ছিনা বলে মনটা খারাপ হচ্ছে। থাকলে এপাশে দুই আনা ওইপাশে চার আনা করে একটা ছাঁট দিতে। হিপ্পি হিপ্পি ভাব টা দুর হতো।

-পাঁচটা বছর। মনে হয় এই তো সেদিন তোমাকে পাঁচ পদে খাইয়েছি।

-থাক সে কথা। চোখে আর জল নাই বা আনালে। তবে জানো, কি ভেবে ভালো লাগে?

-কি?

-তুমি আছো সেইখানে যেখানে বইছে নদী পায়ের নিচে, ঝিরঝিরে বাতাস, নাই ক্রন্দন, নাই মহামারি। নাই করোনাভাইরাস।

-বুঝলে কি ভাবে আমি সেখানে আছি?

-তুমিই যদি ওখানে না যাবে তবে যাবে কে? তাহলে তো আমি বলব, সবই মিছে।

সত্যি কথা বলতে কি তোমাকে প্রতিদিনই স্মরণ করি, স্মরণ করা খুবই সহজ, সহজ নয় তোমাকে হারানোর ব্যাথা।

-বাহ, তুমি তো সাহিত্যিক হয়ে গেছো দেখছি।

-সময় মনটাকে সহিয়ে দেয়, কিন্তু খত টা কি সারে?  

-কি বলব বলও। চল্লিশ টা বছর তো খুবই কম সময়, এতটা  কম সময় তোমার সাথে কাটাব তা তো ভাবিনি কখন। আমার  তো মন ভরল না।

-মন কি আমার ও ভরেছে। ভরেনি। গোঁজামিল দিয়ে জীবন টাকে চালিয়ে নেবার চেষ্টা করছি।

-মনে রেখো আমি আছি সব সময় তোমার পাশে, তোমার কাছে। ভেঙ্গে পড়োনা। আছে তোমার দুই কৃতি সন্তান, আছে টুকটুকে নাতি, ওদের মাঝে পাবে তুমি আমাকে।  বিদায়—-।

     “ অমন আড়াল দিয়ে লুকিয়ে গেলে

               চলবে না।

      এবার হৃদয়-মাঝে লুকিয়ে বোসো, কেউ      

           জানবে না, কেউ বলবে না”

Continue Reading

হাহাকার

    ক্রীং ক্রীং করে ফোন টা বাজছে।  বিপাশা উপরে। ঘর গোছাচ্ছিল। আনাচে কানাচে ধুলো পড়েছে। যে মেয়ে টা পরিষ্কার করতে আসতো প্রতি দুই সপ্তাহে সে ইদানীং আসছে না। গেছে দেশের বাড়ীতে ।  

মাহাবুব সকালে উঠে কোন রকমে নাস্তাটা খেয়েই চলে গেছে হাসপাতালে। মিটিং আছে।

 সেই সাথে কয়েকটা সিরিয়াস রোগীকে দেখতে হবে।

ফোনটা এখনো বাজছে।

বিরক্ত হয়ে বিপাশা ডাক দিল সোমা কে।

-কি করছ সোমা? ফোনটা ধরো।

সোমা ফোনে তার বান্ধবীদের  সাথে গ্রুপ চ্যাট করছিল।

-ধরছি বাবা, বিরক্ত সহকারে উঠাল ফোনটা ।

-কে ফুফু? কেমন আছো?

ভিডিও কল হলে ফুফু দেখতে পেতো সোমার কুঁচকানো কপালটা।

-মা, ফুফু কল করেছে। তুমি ধরবে নাকি বলব পরে কল ব্যাক করবে।

অস্থির হয়ে নিজের ফোন টা কাছে নিয়ে এলো সোমা। এর মাঝে কত কথাই না বান্ধবীরা বলে ফেলেছে।

-বল আমি আধা ঘণ্টা পরে কল করব। বলে বিপাশা পরে থাকা কাপড় গুলো উঠিয়ে রাখল।

স্প্রিং ব্রেক। স্কুল নেই। টিন এজ মেয়ে। বন্ধু বান্ধবীর অভাব নাই। সব সময় মেজাজ তিরিক্ষি হয়ে আছে।

মাহাবুব বলেছিল,যাও। ফুফুর ওখান থেকে ঘুরে এসো।

না তাতে সে রাজি না। কয়েক জন বান্ধবী যাচ্ছে কেঙ্কুনে। সেখানে যাবে বলে বাবার কাছে কয়েক বার ধন্না দিয়েছে। জানে মা কে বললে, এক ধমক দেবে।

বাবা রাজি না।

ফলে মেয়ের মুখে হাসি নেই।  

উপর থেকে নেমে এসে রুমাকে কল করতে যাবে তখনি মনে পড়ল মাহাবুব বলেছিল আজকে রাতে সেলিম আর দিলারা আসবে আড্ডা দিতে। রেফ্রিজারেটর খুলে দেখল মাংসের পরিমাণ অতটা নেই। কাজেই বাহিরে যেতে হবে।

ভাবল আসার পথে প্রিমিয়াম থেকে মিষ্টি নিয়ে নেবে। সেলিম ভাই মিষ্টির পোকা। কত বার দিলারা মানা করেছে মিষ্টি না খেতে, কিন্তু কে কার কথা শোনে।

জানে দিলারা রাগ করবে কিন্তু দাওয়াতে মিষ্টি না থাকলে যেন দাওয়াত দাওয়াত মনে হয় না।

মাহাবুব আর সেলিম একই কলেজ থেকে ডাক্তারি পাশ করেছিল। অনেক দিনের বন্ধুত্ত।

এখানে কাজ করে একই হাসপাতালে। 

বিয়ের আগে দুজনে একটা এপার্টমেন্ট নিয়ে থাকতো। ঐ এপার্টমেন্টেই এসে উঠেছিল বিপাশা। সেলিম অবশ্য চলে যেতে চেয়েছিল, মাহাবুব যেতে দেইনি।

 বলেছিল, তোর যদি কোন অসুবিধা নাহয় আমাদের কিন্তু কোন অসুবিধা নেই।

 না করে নি সেলিম।

দিন যেতে যেতে সেলিম আর বিপাশার মাঝে ভাই বোনের সম্পর্ক গড়ে উঠল।

সেলিম বিপাশা কে দেখিয়েছিল মৌসুমির ফটো। অনেক দিনের পরিচয়।

এবার যাও বিয়ে করে ঘর বাঁধও। বলেছিল বিপাশা ।

 রেসিডেনসি টা পাড় করে দেই, তারপর যাবো উত্তর দিয়েছিল সেলিম। 

সেই দিন টাও এসেছিল, এসেছিল অন্যভাবে। 

কেনাকাটা শেষ।

ওপাশ থেকে খবর এলো, এসো না এখন। দেশে এক নতুন উপসর্গ দেখা দিয়েছে। ভীষণ ছোঁয়াচে ব্যাধি।

নাম Bird Flu

সেলিম জানে সে খবর। টিভি তে বলছে।

-কি করবো বলও তো ভাবী? জিজ্ঞাসা করেছিল সেলিম। 

-ওরা যখন বাড়ন করছে তখন মনে হয় না যাওয়াই ভালো। নিশ্চয় ওখানকার অবস্থা ভালো না। বলেছিল বিপাশা ।

মৌসুমি কল করে সেই কথাই বলেছিল। আরও বলেছিল আমি তো চলে যাচ্ছিনা। আর কয়েকটা দিন পরেই না হয় এলে।

চলে যাচ্ছিনা, সে কথা রাখতে পারেনি মৌসুমি।  

চলে যেতে হয়েছিল, ছোঁয়াচে রোগ টা ওকে নিয়ে গেলো।

সেই কেনাকাটা গুলো অনেক দিন পড়েছিল বিপাশার বাসায়।  

-আর কতদিন এই রকম সন্ন্যাসীর মতো জীবন কাটাবে বলও। অনেক বছর তো হোলও। চা এর টেবিলে একদিন কথা টা বলেছিল বিপাশা । 

-আবারো ওকে নিয়ে পড়লে? চা র কাপে চুমুক দিতে দিতে বলল মাহাবুব

-ও তুমি বুঝবে না। আমার জানা একজন পাত্রী আছে। দেখতে আপত্তি কি?

 বিপাশার কথা শেষ না হতেই মাহাবুব জিজ্ঞাসা করেছিল, কে সে?

শম্পা ভাবীর বোন। বলে বিপাশা একটা গ্রুপ ফটো নিয়ে এলো।

সেলিমের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলেছিল, রাখো তোমার কাছে, পরে কথা বলব এই নিয়ে।

ঘটকালি টা ভালোই করেছিল বিপাশা । মাস তিনেকের মধ্যে শুভকাজ সম্পন্ন হয়ে গেল। সেলিম আর দিলারা নতুন বাসা নিলো।  

মা, তুমি কিছু ভাবছ?

সোমার ডাকে ফিরে তাকালও বিপাশা ।  

না, কিছু না, একটু বাইরে যেতে হবে মাংস কিনতে। তোমার সেলিম আঙ্কেল আর দিলারা অ্যান্টি আসবে সন্ধ্যায়। 

তা হলে তুমি যাওয়ার পথে আমাকে রুমার বাসায় নামিয়ে দেও। বলে সোমা উপরে গেলো কাপড় পাল্টাতে।

বন্ধু মহলে বিপাশার রান্নার প্রশংসা আছে। শুধু তাই নয় খুব দ্রুত সে কয়েক পদ তৈরী করতে পারে।

পারুল ভাবী একদিন বলেছিল, ভাবী, আপনার ঘাড়ে কি জিন আছে?

আজও তার বেতিক্রম হোলও না।

বীফ থেহেরী, আচারি বেগুন, টুনা কাবাব, মুরগীর রোস্ট প্রথমে করতে চায়নি, কি মনে করে সেটাও করে ফেলল।

মাহাবুবের আসতে বেশি দেরী নেই। হাতের কাজ শেষ।

বিপাশা সাওয়ার  নিতে উপরে গেলো।  

কিছুক্ষণ আগে সোমা কল করেছিল, আসতে  দেরী হবে। রুমার ভাই, স্বপন নামিয়ে দেবে।

বিপাশা বলতে চেয়ে ছিল বেশি দেরী না করতে, কি ভেবে কথা বাড়ালও না।  

সাজান শাড়ী গুলোর মাঝ থেকে মাহাবুবের পছন্দের শাড়ীটা বের করলো।

বড় আয়নার সামনে এসে দাঁড়াল সে, আস্তে আস্তে শাড়ীর আচল টাকে নামিয়ে দিলো। মেঝেতে গড়িয়ে পড়ল শাড়ীটা।  নিজের শরীর টাকে বারবার দেখতে  থাকলো। শরীরের বিভিন্ন ভাজ গুলো সতেজ হয়ে ফুটে উঠেছে আয়নায়।

ঠোটের কোণে হাসি নিয়ে সাওয়ারের কলটা ছেড়ে দিলো।

দিলারা সব সময় স্বাস্থ্য সচেতন। ওর জন্য সাদা ভাত রান্না করে রেখেছিল। ওই কথা বলতেই সে বলে উঠল

কি যে বলও ভাবী, তোমার এই মুখরচক খাবার রেখে ঐ সাদা মাটা খাবার, না চলবে না।

বাচালে। বলে বিপাশা ওর পাতে উঠিয়ে দিলো রোস্ট টা।
কথায় কথায় এলো করোনাভাইরাসের কথা।

চায়নার হুয়ান কাউন্টীতে দুই একজন মারা গেছে এই ভাইরাসে। বলল সেলিম।

আমাদের তো দুই মাস পরে ইতালিতে যাওয়ার কথা। বলে দিলারা কোকের গ্লাস টা টেনে নিলো কাছে।

এই ধরণের ভাইরাস কত এসেছে, আর আমাদের সরকার তো খুব একটা গুরুত্ত দিচ্ছে না। ওটা হয়ত ওখানেই সীমাবদ্ধ। এই কথা বলে মাহাবুব বলল আমার খাওয়া শেষ। বসে আছি মিষ্টির জন্য।

যতই দিন যাচ্ছে খবর আসছে করোনাভাইরাসের। এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন দেশে। ইতালির খবর খুবই খারাপ।

সকালেই বিপাশা কল করলো দিলারাকে।

বলল, টিভি তে ইতালির কথা বলছে, তোমরা কি কিছু ঠিক করলে, যাবে কি না।

এইমাত্র সেলিম কল করেছিল, বলল, যাওয়া ক্যান্সেল করতে হবে। অবস্থা ভালনা। শুধু তাই না Seattle এ একজন কে positive পেয়েছে।

তাহলে, তাহলে তো নিউইয়র্কে ও এসে পড়বে? বিপাশা ভয়ার্ত কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করলো।

এখনো তো এখানের কথা কিছু বলছে না।  ভয় করো না ভাবী, বলে দিলারা বিপাশা কে সান্ত্বনা দেবার চেস্টা করল।  

কি ব্যাপার, মুখ টা ফ্যাকাসে কেনও। বলে পড়নের কাপড়টা পাল্টাতে গেলো মাহাবুব।

বিপাশা এসে ওর পাশে দাড়াতেই ওর দিকে চেয়ে মাহাবুব বলল, কি হয়েছে?

খবরে বলছে করোনাভাইরাস অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে পড়ছে, অনেক লোক মারা যাচ্ছে। এখানেও তো তাহলে এলো বলে। বিপাশা চেয়ে রইল মাহাবুবের দিকে উত্তরের আশায়।

যদি না এসে তবে বলব আল্লাহর অনেক কৃপা। কিন্তু তা হবে বলে মনে হয় না। নিউইয়র্ক হচ্ছে এমন একটা শহর যেখানে বিভিন্ন দেশ থেকে লোক এখানে আসে। এই শহর এই ভাইরাস থেকে বাজবে কি ভাবে?

 এই রোগের নাকি কোন চিকিৎসা নেই। আর ভীষণ ছোঁয়াচে, বলল বিপাশা ।

বাহ, তোমার টিভি দেখা সার্থক। টিপুনি কাটল মাহাবুব।  

ইয়ার্কি মেরো না। আমার ভয় হচ্ছে। তোমরা ডাক্তার। তোমাদেরকেই তো সামনে থাকতে হবে। এই সব রোগীদের কে দেখতে হবে।

তা এই মুহূর্তে তো এই পেশা ছাড়তে পারবো বলে মনে হচ্ছে না, সোনা। বলে হাঁ হাঁ করে হেসে বিপাশা কে জড়িয়ে ধরে চুমু দিয়ে  বলল, এবার এক কাপ কফির ব্যাবস্থা কর।

পরিস্থিতি ক্রমে জটিল হচ্ছে। পৃথিবীর অধিকাংশ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে এই ভয়াবহ রোগ। কোন চিকিৎসা নেই।

যে যার ঘরে বন্দি।

দোকান পাঠ, স্কুল কলেজ, অফিস আদালত বন্ধ।

রাস্তায় লোক নেই।

এ এমন রোগ যার হবে তার কাছে কেউ আসতে পারবে না।

হাসপাতালে তাকে দেখা যাবে না।

ভালো হয়ে ফিরে আসলে তবেই দেখা হবে নচেৎ দেখা হবে উন্মুক্ত মাঠে।

সবার মনে ভয়।

রাতে ফোনটা বেজে উঠতেই ধড়মড় করে উঠে বসল মাহাবুব।

হ্যালো বলতেই,

মাহাবুব ভাই আমি সাহানা। কাঁদতে কাঁদতে বলল

কি হয়েছে?

তারেক হাসপাতালে। ওর করোনাভাইরাস হয়েছে।

কোন হাসপাতালে? জিজ্ঞাসা করল মাহাবুব

আপনাদের হাসপাতালে। আমি ওর কোন খবর পাচ্ছি না, মাহাবুব ভাই। আমি কি করব। বলে কাঁদতে থাকল সাহানা।

ঠিক আছে, কাল সকালে আমি হাসপাতালে যেয়ে খবর নেবো। চিন্তা করো না।

সাহানা তারেকের আছে গ্রসারী স্টর, সাথে হালাল মাংসের দোকান। সেই খানেই পরিচয়।  কোন কিছু লাগলে বিপাশা কল করে তারেক কে বলে দেয়। মাহাবুব কাজ থেকে ফেরার পথে উঠিয়ে নেয়।

সকালে কাজে এসে খোঁজ নিলো তারেকের। যে ডাক্তার ওর তত্ত্বাবধানে তাকে জিজ্ঞাসা করতেই বলল, অতটা খারাপ নয়। এই যাত্রা বোধহয় কাটিয়ে উঠতে পারবে।

স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে বিপাশা কে কল করে খবর টা দিলো। সাহানা কে যেন জানিয়ে দেয়।  

অনেক রোগী এসেছে আজ। ICU ভর্তি।

সেলিমের সাথে দেখা হতেই বলল, ওর ওয়ার্ডে চার জন মারা গেছে। সাবধানতা অবলম্বন করছে, বাকি আল্লা ভরসা।

কাজে আসার আগে বিপাশা কত রকম দোয়া দরুদ পড়ে ফু দিয়ে দেয়।

ওর চেহারা দেখেই মাহাবুব বুজতে পারে ওর মনের কথা। কিন্তু কি করবে সে, রোগী দেখাই তো তার কাজ।  

ফিরতে ফিরতে সেদিন একটু রাত হয়ে গেল মাহাবুবের। বাসায় এসে  সোজা সাওয়ার নিতে চলে গেলো।

বিপাশা টেবিল সাজালো ডিনারের জন্য। শুনতে পেলো দুই তিন বার কাশির শব্দ।

 টেবিলে বসেই মাহাবুব বলল, কেন জানি খুব ক্লান্ত লাগছে। খেতে ইচ্ছে করছে না।

হাসপাতালে কি কিছু খেয়েছো? জিজ্ঞাসা করল বিপাশা ।

না, থার্মোমিটার টা আনো তো।

বিপাশার বুক টা ধক করে উঠলো।  

তাপমাত্রা একশোর একটু উপরে।

সেই মুহূর্তে নিজে কে quarantine করে ফেলল মাহাবুব।

রেজাল্ট পজেটীভ। তবে বাসায় থাকতে বলল।

বন্ধু বান্ধবীরা ফোনে খোঁজ নিচ্ছে। সেলিম দিলারা প্রতিদিন তিন চার বার ফোন করে। খাবার বানিয়ে দরজার কাছে রেখে যায়।

বিপাশা নামাজের পাটিতে বসে উপরওয়ালার কাছে বলে, কবে আমি এই অন্ধকার থেকে মুক্তি পাবো।

চারিদিকে শুধু হাহাকার।

বিপাশা, বিপাশা!

ডাক শুনে দৌড়িয়ে এলো দরজার কাছে।

এম্বুলেন্স কল করো। আমার শ্বাস নিতে অসুবিধা হচ্ছে। অনেক কষ্টে বলল মাহাবুব।  

এম্বুলেন্স এলো নিয়ে গেলো মাহাবুব কে।

 বিপাশা পাথরের মূর্তির মতো দাড়িয়ে রইল ।  

বাহিরে অঝোরে বৃষ্টি ঝরছে।

এ যেন তার চোখের জল।

Continue Reading