-আমি বাইরে যাচ্ছি। বলে উত্তরের অপেক্ষা না করে দরজা খুলে বেরিয়ে গেলো শিপলা।
ইমন জানে কোথায় যাচ্ছে শিপলা, কার সাথে। কাজেই জিজ্ঞাসা করে লাভ নেই, তাতে কথাই বাড়বে, তিক্ততার সৃষ্টি হবে।
ইমন তাকালও না, বই টার থেকে মাথা তুললও না।
দরজা বন্ধের শব্দ হোলও।
শিপলা ফিরবে অনেক রাতে। সোজা চলে যাবে তার ঘরে। কাপড় ছেড়ে যাবে মুখের প্রসাধন ওঠাতে।
তারপর বিছানা। ইমন জেগে থাকে তার ঘরে।
এমন তো ছিলনা।
সদ্য পাশ করা ইঞ্জিনিয়ার সে। মহসীন স্যারের জন্যই চাকরিটা পেয়েছিল হারুন বিল্ডার্স লিমিটেডে।
রশিদ হারুন।
সাদাসিধা যে কিশোর বড় হয়েছে পাঁচগুলিয়া গ্রামে, আজ তিনি দেশের অন্যতম উদ্যোক্তা ও শিল্পপতি। জাপানের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথভাবে বাস, ট্রাক, মিনিবাস প্রভৃতি মোটরগাড়ির যন্ত্রাংশ সংযোজনের সাথে জড়িত।
পাশাপাশি তিনি পরিবেশবান্ধব ব্যাটারি উৎপাদনের কারখানা নির্মাণের কাজও শুরু করতে যাচ্ছেন। এ মুহূর্তে প্রায় দুই হাজার কর্মচারী-কর্মকর্তা রয়েছেন তার প্রতিষ্ঠানগুলোয়। বর্তমানে কয়েক হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি।
সব শুনেছে ইমন মহসীন স্যারের কাছ থেকে।
হারুন বিল্ডার্স নাম এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। হাই রাইজ বিল্ডিং উঠছে এই শহরের চারিদিকে। কোম্পানির হাতে নতুন অনেক গুলো প্রোজেক্ট। কোম্পানিতে কাজ করে রাজীব, সাদি, রোকেয়া,শিপলা। পরিচয় হয়েছিল।
শিপলা কাজ করে ফ্রন্ট অফিসে। আসতে যেতে শিপলার সাথে দেখা হলে হাই, হ্যালো, কেমন আছেন এই পর্যন্ত।
কাজ নিয়েই ব্যাস্ত থাকতো ইমন।
নতুন শহর গড়ে উঠছে আসল শহর থেকে বিশ মাইল দুরে। নাম প্রগতি। সেখানে হারুন বিল্ডার্স গড়ে তুলবে এক বিশাল মল। সেই প্রোজেক্টের দায়িত্ব পড়েছে ইমনের উপর। কেন হারুন সাহেব অনেক সিনিয়র ইঞ্জিনিয়ার থাকতে ইমনের উপর দায়িত্ব দিয়েছিল তা সে আজও জানে না।
একদিন সন্ধ্যা গড়িয়ে যাওয়ার পরও অফিসে কতগুলো দরকারি কাগজ পত্র দেখছিল। আগামীকাল ইনেস্পেকশনে আসবে সরকারি কর্মকর্তারা।
-কি ব্যাপার এখনো অফিসে?
মুখ তুলে চাইল ইমন। হারুন সাহেব দাঁড়ানো।
দুই একটা কথা বার্তার পর হারুন সাহেবই বললেন,
-হাতীর বাগানে আমাদের যে বিল্ডিং আছে তার ছয় তালায় একটা এপার্টমেন্ট খালি। আপনি চাইলে নিতে পারেন। বলে হারুন সাহেব উত্তরের অপেক্ষায় তাকাল ইমনের দিকে।
-অত দাম দিয়ে আমার পক্ষে সম্ভব হবে বলে মনে হয় না। বলল ইমন।
– দামদর পরে, আগে পছন্দ হয় কিনা দেখেন। এই কথা বলে চলে গিয়েছিলন।
ইমন দেখেছিল। পছন্দ হয়েছিল। আর হারুন সাহেব পানির দরে ওকে দিয়েছিল। কেন? আজও জানে না।
সেদিন শনিবার, রাজীব কল করে বলেছিল ওর বাসাতে কয়েকজন কে বলেছে, ইমন যদি আসে তবে সে খুব আনন্দিত হবে।
সবে মিলে সাতজন। ইমন ফুলের তোঁড়া টা রাজীবের স্ত্রী সাহানার হাতে দিয়ে চারিদিকে তাকাল। দুজন কে চিনতে পারলো না। রাজীব এগিয়ে এসে পরিচয় করিয়ে দিল না চেনা দুইজনের সাথে।
শিপলার পাশের জায়গা টা খালি। ইমন বসতে বসতে বলল, কেমন আছেন?
-ভালো। আপনি?
-টায়ার্ড। বলল ইমন।
-আপনার উপর তো বিরাট প্রোজেক্টের –
শিপলার কথা শেষের আগেই ইমনের হাতের কোকের গ্লাসটা এই হাত থেকে ওই হাতে নিতে যেয়ে ছোঁয়া লাগলো শিপলার হাতে।
-সরি বলে ইমন একটু সরে বসার চেষ্টা করল। যদিও খুব একটা জায়গা নেই।
শিপলা একটু হাসল।
-মামা, টেবিলে খাবার দেবো? জিজ্ঞাসা করলো আমেনা।
ইমন ফিরে এলো পিছনে ফেলে আসা দিন গুলো থাকে।
-হ্যাঁ, দে, তোকে তো ফিরে যেতে হবে।
আমেনা আসে সকালে, সেই রান্না করে। সকালের নাস্তা টা সেই দেয় ইমনকে। তখনো শিপলা ঘুমায়।
আমেনাই ঔষধ গুলো এনে রাখে ইমনের সামনে। কোনটা ফুরিয়ে গেলে সেই মনে করিয়ে দেয়।
খাওয়া শেষে আমেনা কে বিদায় দিয়ে দরজা টা বন্ধ করে দিল ইমন।
বাহিরে আকাশ গুরুগুরু করে ডাকছে। বৃষ্টি নামবে। গুমোট গরম। বৃষ্টি নামলে হয়তো কিছুটা ঠাণ্ডা হবে।
ব্যালকনিতে এসে বসলো ইমন। বিদ্যুৎ চমকানো দেখতে ভালই লাগছে।
বৃষ্টি নামলো। গুমোট গরম শেষে স্বস্তির বৃষ্টি।
আমেনা কি ভিজতে ভিজতে গেলো? ভাবল ইমন।
সেদিনও বৃষ্টি ছিল। গা ছমছমে দুপুর। ইমন আর অনু, দুজনে হাটতে হাটতে গিয়েছিল ধোপা পাড়ায়।
ইমন ষোল, অনু চোদ্দ।
হঠাৎ বলা নেই কওয়া নেই ঝুমঝুমিয়ে বৃষ্টি নামলো। বৃষ্টি নামলো তো নামলোই, আর থামাথামির কোনো নামগন্ধ নেই। এমন বৃষ্টিকে বলে মুষলধারে বৃষ্টি।
দৌড়ে এসে ওরা দাঁড়ালো বিরাট বট গাছটার নিচে।
ছোট্ট কালে দুজনে এক্কা দক্কা খেলেছে। পাড়ার পর পাড়া ঘুরে বাড়িয়েছে।
কখন যে বড় হয়েছে। বুজতে পারেনি।
বুজতে পেরেছিল সেদিন, যেদিন ইমন ডাকতে গিয়েছিল অনুকে। বড় মাঠে ফুটবল খেলা আছে। ওদের স্কুলের সাথে ভবানীপুর স্কুলের।
-না বাবা ও তো যেতে পারবে না। বলেছিল অনুর মা।
-কেন? কি হয়েছে? অসুখ করেছে?
-না, অসুখ করেনি। তোমরা এখন বড় হয়েছ। একসাথে ঘোরা ফেরা টা ভালো দেখায় না। বলেছিল অনুর মা।
তারপরও ওরা পালিয়ে পালিয়ে একসাথে মিলেছে। হাটতে হাটতে গেছে অনেক দুর।
সেই হারং ব্রিজে।
আঁখের ক্ষেত থেকে আঁখ ভেঙ্গে খেয়েছে ব্রিজের নিচে বসে।
বটের পাতাতে আটকালও না বৃষ্টির জল। আস্তে আস্তে দুজনেরই কাপড় ভিজিয়ে দিলো।
বৃষ্টির ঝাপটা এসে পড়ল অনুর গায়ে। অনু জড়িয়ে ধরল ইমন কে।
কেন জানি সেদিন হঠাৎ করে অনু কে অন্য অনু মনে হোলও ইমনের কাছে।
ইমনের মাথাটা নুয়ে এলো, ওর ঠোঁট টা ছুলো অনুর ঠোঁটে।
সেই ছোট্ট শহর ছেড়ে বড় শহরে আসার দিন অনু বলেছিল,
-আবার কবে আসবে ইমন ভাই?
-খুব তাড়াতাড়ি। দেখিস, ভুলে যাসনে যেন আমাকে।
না, অনু ভোলে নি। পথ চেয়ে থাকতো।
ইমনও ভুলে যায়নি অনুকে। তবে ফিরে আর যাওয়া হয়নি।
জীবন যুদ্ধে অনেক উপরে উঠে গেছে ইমন। অনেক লোকের জীবিকা আজ নির্ভর করছে তার নিজস্ব ফার্মের উপর।
ষোল তালার উপরে তার এপার্টমেন্ট। ব্যালকনি তে দাঁড়ালে দেখা যায় লেক।
গাছ দিয়ে সাজানো চারিদিক। অনেকে এসে বসে থাকে লেকের পাড়ে।
সবই ছিল তার। তবে পেলো না শুধু মনের মত সঙ্গিনী।
প্রথম দিকে যে ছিল না তা নয়।
তখনও সে চাকুরীজীবী। ইনকাম মন্দনয়।একটা রিকন্ডিশন গাড়ীও কিনেছিল।
একদিন অফিস থেকে বের হতে যেয়ে দেখে বাহিরে ভীষণ বৃষ্টি। শিপলা দাড়িয়ে। রিক্সার জন্য অপেক্ষা করছে।
কোন রিক্সাই যেতে রাজি নয়।
-যদি কিছু মনে না করেন আমি পৌছে দিতে পাড়ি।
শিপলা কিছু মনে করেনি।
তারপর আস্তে আস্তে দুজনে কাছে এসেছে। বসেছে নির্জনে। হাতে হাত। ঠোঁটে ঠোঁট।
একদিন মা,বাবা, বন্ধু বান্ধব আর হারুন সাহেব কে নিয়ে ধুমধাম করে বিবাহ পর্ব টা শেষ হোলও।
শিপলা সংসার টা সুন্দর করে গুছিয়ে নিলো।
কোলে এলো নবনী।
ইমনের মনে হোলও ও তার ছোট্ট ছোট্ট হাত পা ছুড়ে যেন বলছে, আমি তোমার মা, আমি এসেছি তোমার ভাগ্য খুলতে।
সেই থেকে ইমনের উন্নতি।
হারুন সাহেবের সাহায্যে গড়ে তুলল নিজস্ব ফার্ম। নাম দিল নবনী- শিপলা ইন্ডাস্ট্রি।
নবনী বড় হোলও। দেশের বাহিরে চলে গেলো উচ্চশিক্ষার্থে।
টাকা এলো, সুখ চলে গেলো।
শিপলা মেতে উঠলো পার্টি নিয়ে। মাঝে মাঝে ইমন যেতো। কোনদিন সে পার্টির পাগল ছিল না। তবুও যেতে হতো।
ইমন একদিন বলেছিল শিপলা কে, প্রতিদিন পার্টিতে কি না গেলেই নয়।
উত্তরে শিপলা বলেছিল, তোমার মত বেরসিকের সাথে বাসায় বসে থাকলে আমি পাগল হয়ে যাব।
উত্তর দিয়ে কোন লাভ নেই ভেবে, সেদিন কোন উত্তর দেই নি।
মাঝে মাঝে ফেসটাইম করে মেয়ের সাথে কথা বলে। ওটাই তার মনের খোরাক।
বৃষ্টি টা থেমে এলো। ইমন ভাবছিল, আজ যদি শিপলার পরিবর্তে অনু হতো ওর জীবন সঙ্গিনী তাহলে কি অন্য রকম হতো ওর জীবন টা। কেন জানি মনে হয় সব আছে তবুও কি যেন নেই।
ঘড়িটা দেখল ইমন। রাত দেড়টা।
দরজা খোলার শব্দ পেলো। ব্যালকনির দরজাটা বন্ধ করে এগিয়ে এলো।
শিপলা জিজ্ঞাসা করল, কিছু বলবে?
মুখের গন্ধটা একটু উগ্র।
-হ্যাঁ, কাল আমি একটু বাহিরে যাবো। ফিরতে কয়েকদিন দেরী হবে।
কোনকিছু জিজ্ঞাসা না করেই শিপলা চলে গেলো তার ঘরে।
-আচ্ছা ভাই, এখানে একটা গলি ছিল, এখন তো দেখছি পাকা রাস্তা। ফজলুল হক নামে একজন থাকতেন। অনেকদিন পরে এসেছি, কিছুই চিনতে পারছি না।
-হ্যাঁ, থাকতেন, ওই যে, ওই বাসাটা।
বাসাটা চেনার উপায় নেই। দোতালা বাড়ী।
কড়া নাড়তেই এক ভদ্রমহিলা এসে দরজা খুলে জিজ্ঞাসা করলেন, কাকে খুজছেন?
ইমন নাম টা বলল।
না, সে চেনে না। বলে দরজা টা বন্ধ করে দিলো।
ইমনের মনে পড়লো সাবুর কথা। একই ক্লাসে পড়তো।
একটা রিক্সা ডেকে উঠে পড়ল। চিনে যেতে পারবে কিনা মনে মনে ভাবল সে। সবই অচেনা মনে হচ্ছে।
যাক অবশেষে পাওয়া গেলো বাসাটা। খুব একটা পরিবর্তন হয়নি বাসাটার।
দরজায় টুকটুক করে শব্দ করলো। দরজা খুলে দিলো ছোট্ট একটা মেয়ে।
-সাবু আছে।
নানা তোমার কাছে এসেছে, বলে দৌড়ে চলে গেলো।
লাঠিতে ভর করে যে এসে দাঁড়ালো, সে তার নামটা না বললে চিনতে অসুবিধা হতো ।
-ইমন না? বলে জড়িয়ে ধরলও সাবু। এতদিন পরে কি মনে করে?
-ঘুরতে ঘুরতে, তবে, একটু থেমে ইমন জিজ্ঞাসা করলো, আচ্ছা, তোর মনে আছে, ওই পাড়ায় আমাদের বাসার কাছে ফজলুল হক বলে একজন ছিলেন।
-হ্যাঁ, কেন? তারা তো কবেই চলে গেছে এখান থেকে।
-অনু বলে উনার এক মেয়ে ছিল, তুই কি জানিস, কোথায় সে?
-তার বিয়ে হয়েছিল এক ব্যাবসায়ীর সাথে, থাকে গোপালগঞ্জে।
-ওর স্বামীর নাম কি? জিজ্ঞাসা করল ইমন।
-কি ব্যাপার। মতলব ভালো তো?
-ঠাঠামি ছাড়। নামটা বল।
-মতলেবুর রহমান।
কিছুক্ষণ বসে উঠে পড়ল ইমন। একটা ইস্কুটার ভাড়া করে গেলো সে গোপালগঞ্জে।
ছোটছোট দোকান পাট। রাস্তায় বসে কেউ বা সিগারেট টানছে, কেউ বা গল্প করছে।
জিজ্ঞাসা করতেই দেখিয়ে দিলো কি ভাবে যেতে হবে বাড়ীতে।
মাটির রাস্তা, চওড়া বেশি নয়। দুপাশে খাল। ইটের পাকা বাড়ীটা দেখা যাচ্ছে।
ইমন ভাবল, অনু ওকে দেখে চিনতে পারবে কি? কেমন যেন শিরশির করছে বুকের মাঝে।
– দরজা খুলে কাকে চাই বলে, তাকিয়ে রইল ইমনের দিকে। চোখে পলক পড়ছে না। ইমন ভাই, তুমি?
-হ্যাঁ, চিনতে পেরেছিস তাহলে ? তা, দরজায় দাড় করিয়ে রাখবি, না কি ভিতরে যেতে দিবি।
অনুর মনে হোলও সে এই জগতে নেই। সে স্বপ্ন দেখছে। অনুর চোখ বিশ্বাস করতে চাইছে না।
-এসো।
ড্রয়াইং রুমে দুটো চেয়ার পাতা। পাশে একটা পরিপাটি করে সাজানো বিছানা। ছোট্ট একটা টেবিল কর্নারে রাখা।
-ভর দুপুরে এলে, খিদে পেয়েছে নিশ্চয়? যা আছে তাই দিয়ে খাবে। চলো হাত মুখ টা ধুয়ে নেবে। এতগুলো কথা একসাথে বলে গেলো অনু।
-তুই বস, আমি তোকে দেখি।
-কি আর দেখবে আমাকে বলও। যে অনুকে তুমি শেষ দেখে গিয়েছিলে সেই অনু আজ আর নেই। আজ আমি তিন ছেলে মেয়ের মা। বলেছিলে আসবে আবার, এই তোমার আসার সময় হোলও। বলে চোখ টা মুছল শাড়ীর আচল দিয়ে।
দাড়াও আমি আসছি। বলে ভিতরে চলে গেলো। হয়তো কান্না থামাতে।
নিয়ে এলো, প্লেট, ভাত, ভাজি, ডাল।
ইমন বসলো প্লেটটা টেনে। মনে হোলও অনেকদিন সে অভুক্ত। অনু সামনে বসে পাতে উঠিয়ে দিলো ভাত।
কবে শিপলা ওর পাতে ভাত উঠিয়ে দিয়েছিল মনে করতে পারে না।
-ভাজি আর একটু দেই, তুমি কিন্তু অনেক কম খাও ইমন ভাই।
এমন কথা কি এখনো খাবার টেবিলে বলা হয়। ইমন ভাবতে চেষ্টা করল।
-তোর কর্তা কোথায়?
-শহরে গেছে। আসতে একটু দেরী হবে। তুমি কি আজই ফিরে যাবে?
-হ্যাঁ, সন্ধ্যা ছয়টায় আমার প্লেন।
-জানো ইমন ভাই, তোমাকে নিয়ে অনেক ভেবেছি আমি। পরে মনকে সান্ত্বনা দিয়েছি এই বলে, তুমি হয়তো অনেক ব্যাস্ত,সময় পাওনা এইদিকে আসার। কেন এলে ইমন ভাই। আবার তো মনে পরে গেলো ফেলে আসা দিনগুলোর কথা। ইমন ভাই তোমার সেই দিনটার কথা মনে আছে? সেই বট গাছ, মুষল ধারে বৃষ্টি—।
-মনে থাকবে না কেন? তোর যে মনে আছে সেটাই আশ্চর্যের।
-জানো ইমন ভাই, সেদিন, যে তীব্র আনন্দ পেয়েছিলাম, তার কোন তুলনা হয় না।
হঠাৎ কি অনুর গলায় কান্না এসে গেলো? দ্রুত পায়ে চলে গেলো ভিতরে।
সেই বট গাছ, বৃষ্টি, পর পর তিনটা চুমু খেয়েছিল সে। অনু অবাক হয়নি, প্রথমবারের পর, পাখির বাচ্চা যেমন পাখী-মায়ের সামনে ঠোঁট ফাঁক করে থাকে, সেইভাবে অনু এগিয়ে দিয়েছিল ঠোঁট।
তাদের দুজনের সেই প্রথম অভিজ্ঞতা।
তারপর নদী দিয়ে কত জল গড়িয়ে গেছে। অনেক কিছু বদলে গেছে। তবু অনু যে আজ বলল, সেই তীব্রতা আর তার জীবনে আসেনি। সেই কথা বলতে অনুর চোখে জল এলো, এই স্মৃতি নিয়ে ফিরে যাবে ইমন।
–