ভয়ার্ত চিৎকার ২

     থর থর করে কাঁপছে শম্ভু। কি সে জিনিস যা কিনা রাখতে হবে দরজার সামনে। শম্ভু কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না। একবার ভাবল পুলিশের কাছে যাবে কিনা। না, তাতে আরও জড়িয়ে যাবে। পুলিশে ছুলে আঠারো ঘা।

তাহলে?

গাড়ীটা স্টার্ট দিলো। হাত কাঁপছে। হৃদপিণ্ডের কাঁপনি বেড়েই চলেছে। ভাবল ঐ নাম্বারে কল করে বলবে, সে কিছুই জানেনা। কি তারা চাইছে।

তারাই বা কারা। কাঁপা হাতে ফোনটা উঠালো। না, বলছে এই নাম্বার ঠিক নাম্বার নয়।

মনে পড়লো লম্বা ঐ লোকটার কথা। সে কি ঐ দলের লোক?  ওর চেহারাটা দেখে গেলো লাইটার নেওয়ার ভান করে?

অনেক ভয়ার্ত ভাবনা মাথার মধ্যে ঘুরছে।

কি চাইছে তাঁরা? ওরা কি দেখেছে ছেলেটা ওর বাসায় ঢুকেছিল। তা নাহলে ওকেই বা টার্গেট করবে কেনও?

গাড়ীটা পার্ক করল শম্ভু। এবারও বেশ কয়েকটা বাড়ি পরে। স্ট্রীট লাইটের আলো। খুব উজ্জ্বল তাও নয়। এতদিন সে এসব নিয়ে চিন্তা করেনি। আজ মনে হোল আলোর চেয়ে অন্ধকার টাই বেশি। চারিদিকে তাকিয়ে দ্রুত হাটতে থাকলো।

ঘেউ ঘেউ করে পাশের বাসা থেকে একটা বিরাট কুকুর দৌড়ে এলো।

গেটে পা দিয়ে আঁচড়াতে থাকলো।

শম্ভুর মনে হোলও কুকুর টা এখনি লাফ দিয়ে ওর ঘাড়ে কামড় দেবে। কোন দিকে না তাকিয়ে দৌড় দিল শম্ভু।

হাপাতে হাপাতে এসে পৌছাল ওর বাসার দরজায়।

দরজা খুলতে যেয়ে মনে হোলও কে যেন দাড়িয়ে ওর পিছনে।

পিছন ফিরে তাকাতে পারছে না সে, আজ তার শেষ দিন, শম্পাকে কিছুই বলে যেতে পারবে না। লোকটা বোধহয় পিস্তল টা বের করেছে। এইবার গুলিটা বিঁধবে, বেড়িয়ে যাবে হৃদপিণ্ড কে ঝাঁজরা করে।

না, এখনো গুলিটা বেঁধে নি। একটু সাহস সঞ্চয় করে পিছনে তাকাল শম্ভু।

আলো আধার থেকে বেড়িয়ে এলো লোকটা। সুট পরা।

এই রাতে কে এই লোকটা? শম্ভু চিন্তা করে পেলো না। লোকটার চোখে মুখে হিংস্রতা নেই।

এগিয়ে এলো, হাত বাড়ীয়ে দিয়ে বললও, আমি ডেভিড ফক্স, ডিটেকটিভ। কিছু প্রশ্ন আছে।

ডিটেকটিভ শুনে শম্ভু মনে মনে ভাবল, ওকে শান্ত থাকতে হবে। ডিটেকটিভরা চোখ মুখ দেখেই বুঝে ফেলতে পারে ওর মনের কথা। মনে মনে ঠিক করল বলা যাবে না ছেলে টা এসেছিল ওর বাসাতে।

– এইখানে একটা খুন হয়েছে জানেন নিশ্চয়? 

-হ্যাঁ, জানি। বলল শম্ভু।যত টুকু শান্ত থেকে বলা যায়।

-কোন গুলীর শব্দ বা গাড়ীর আওয়াজ শুনেছেন কি?

– না, ঘুমিয়ে ছিলাম।

– ও! ঠিক আছে, এই আমার কার্ড। কোন কিছু মনে পড়লে ফোন করতে ভুলবেন না। বলে কার্ড টা এগিয়ে দিল।

-সিওর। বলে কার্ড টা হাতে নিয়ে পকেটে রেখে দিল শম্ভু।

গুড নাইট বলে মিস্টার ফক্স যেতে যেয়ে আবার পিছন ফিরে তাকালও। কিছু বলতে যেয়ে, না বলে এগিয়ে গেলো গেটের দিকে।

দরজা খুলে ভিতরে ঢুকতেই দেখতে পেলো একটা কাগজ। কেউ দরজার ফাঁক দিয়ে ভিতরে ফেলেছে।

কোন কিছু লেখা নাই। শুধু একটা পাখির ছবি। মড়া। বেলী আপ। 

সকালে হয়ে এলো। ঘুম আসেনি। উঠে পড়ল শম্ভু। কফিটা বানাতে দিয়ে, সাওয়ার নিতে গেলো। কি করবে কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না। ওরা বলেছে বাসার সামনে জিনিস টা রাখতে। জিনিসই নাই, কি রাখবে সে। 

শম্ভু কাজ করে একটা অ্যাডভারটাইজমেনট কোম্পানিতে। আজ একটা বড় ক্লায়েন্টর সাথে অ্যাপএন্টমেন্ট আছে।

এই অস্থির মন নিয়ে কতটুকু কি করতে পারবে বুঝতে পারছে না। অথচ এই কাজ টা যে করে হোক ধরতেই হবে।

ম্যানেজার তার উপর অনেক আশা করে আছে।

কফিটা নিয়ে জানালার কাছে বসল। বাহিরে তাকালও। আগন্তুক কাউকে দেখতে পেলো না।

সকাল নয় টা।

দরজাটা বন্ধ করে সিঁড়ি দিয়ে নেমে এলো। গেটটা খুলে রাস্তায় নামলো। হেটে এলো গাড়ীটার কাছে। গাড়ীতে ঢুকে স্টার্ট দিতে যেয়ে চিৎকার করে উঠল। গাড়ীর কাঁচে উপর দুটো মরা পাখি।

মাথাটা ঝিমঝিম করছে। অফিসে ঢুকতেই ম্যানেজার অ্যান্ডারসন ঢেকে পাঠালও শম্ভুকে।

-Everything alright? You look like a — anyway. Hope you are going to get this son of a bitch. We need his advertisement.

-I will get it.

যদিও অনেক সাহস নিয়ে বলল, কিন্তু মনের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে অন্য কিছু।

মরা পাখি, লম্বা লোক, কালো গাড়ী।

SoonHo কোম্পানি ওকে আশ্বাস দিয়েছে। অ্যাডভারটাইজমেনটা দেবে মনে হয়। এই কাজ টা নিতে পারলে ওর একটা প্রোমোশন হওয়ার সম্ভবনা আছে। এই ভাবনাতে মাঝে মাঝে মন টা উৎফুল্ল হচ্ছে আবার মনে পড়ছে ঐ লোকটার কথা। আজ একটু আগেই বেড়িয়ে পড়ল অফিস থেকে। সোজা বাসা।

বাসার কাছেই আজ গাড়ীর পারকীং টা পেয়েছে শম্ভু।

 গেটটা খুলে সিঁড়িতে পা দিয়ে মনে হোলও দরজাটা ঠিক মতো লাগানো না। একটু খোলা। মনে করার চেষ্টা করলো সে অফিসে যাওয়ার আগে বন্ধও করে ছিল কি না।

ভয়ে ভয়ে ধাক্কা দিলো। খুলে গেলো দরজাটা।

ঢুকতে যাওয়ার আগে চিন্তা করল, কেউ ভিতরে আছে কিনা। কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থাকলো। ভয়ে সারা শরীর হীম হয়ে যাচ্ছে। সাহস সঞ্চয় করে এক পা ভিতরে দিলো শম্ভু। লিভিং রুমের চেয়ার পত্র চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে। একটা চেয়ারের হাতল ভাঙ্গা। যেনও ঝড় বয়ে গেছে।

পা দিয়ে সরিয়ে আস্তে আস্তে শোয়ার ঘরে এলো সে। বিছানা টা ছুরি দিয়ে কেটে তছনছ করে গেছে।

শম্ভু বুঝতে পারলো না কি তাঁরা চায়। কি খুজছে।

একটা চেয়ার উঠিয়ে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লো।

এমন সময় ফোনটা বেজে উঠল। অচেনা নাম্বার।

হ্যালো, বলতেই ভারী গলায় একজন বলল, খেলা করার জায়গা পাচ্ছনা। তোমার দিন ঘনিয়ে এসেছে। তোমাকে তিন  ঘণ্টা সময় দিলাম। জিনিস টা কেন্ট আর লকাস্ট রোডের কর্নারে যে বাক্সটা আছে তার পাশে কালো ব্যাগের মধ্যে করে রেখে দেবে। নচেৎ তুমি শেষ। বিশ মিনিট পড়ে আমি আবার কল করবো।

লাইন কেটে গেলো।

শম্ভু কি করবে বুঝতে পারছে না। পেটের ভিতর কামড় দিচ্ছে। মনে হচ্ছে বমি করতে পারলে ভালো হতো। তিন ঘণ্টা মানে বিকেল ছয় টা।

মনে পড়লো ডিটেকটিভ ফক্সের কথা। ওকে না বললেই নয়। ও জড়িয়ে গেছে এক ভীষণ ফাদে।

কল করলো শম্ভু।

হ্যালো, মিস্টার ফক্সের গলা।

-আমি শম্ভু ঐ খুনের ব্যাপারে। কথা শেষ হওয়ার আগেই মিস্টার ফক্স বলল, আমি এখনি আসছি।

দশ মিনিটের মধ্যে মিস্টার ফক্স এলো। ঘরে ঢুকেই তাকালও চারিদিকে।

-তাহলে সেদিন তুমি আমাকে সব কথা বলোনি। কথা টা বলে এগিয়ে যেয়ে ফ্লোর থেকে পড়ে থাকা পেন্সিল টা উঠিয়ে নিলো।

শম্ভু বললও সেই রাতের কথা। বলল, এর বেশি সে কিছুঁই জানিনা। ছেলে টা এসেছিল, আবার দৌড়ে চলে গিয়েছিল, বলল, মরা পাখির কথা, বলল সেদিনের গাড়ী ফলো করার কথা।

তারপর আজকের এই ফোন কল।

-বিশ মিনিট পড়ে কল করবে বলেছে? জিজ্ঞাসা করল মিস্টার ফক্স

-হ্যাঁ

-ঠিক আছে, আমি ব্যবস্থা করছি। এখনো হাতে দুই ঘণ্টা সময় আছে।

দেখতে দেখতে কয়েকটা পুলিশের গাড়ী ওর বাসার সামনে এসে হাজির।

ঠিক বিশ মিনিট। ফোনটা বেজে উঠলো। মিস্টার ফক্স ইশারা করে বলল স্পীকারে দিতে।

-হ্যালো, কাঁপা কাঁপা স্বর শম্ভুর।  

-পুলিশের সাহায্য নিলে দেখছ ছবিটা,এক একটা অঙ্গ কেটে পাঠাবো তোমার কাছে।

শম্ভু দেখল ম্যসেজে পাঠানো ছবি টা।

এতো শম্পার ছবি।

আঁতকে উঠলো শম্ভু।

মিস্টার ফক্স কাগজে লিখে ধরলও শম্ভুর সামনে। লেখা আছে ঠিক সময় মত আমি ওই টা রেখে আসবো।

আর কেউ থাকবে না।

-ঠিক পাঁচ টা তিরিশ মিনিট। ব্যাগ টা রেখে সোজা হেটে যাবে। পিছনে তাকাবে না। আমার লোক চারিদিকে। বলে ফোন টা কেটে দিলো।

শম্ভু কাঁদো কাঁদো স্বরে বলল, শম্পার কি হবে? আমি কিছুই ভাবতে পারছি না।

-শম্পা কে কল কর।

শম্পা ফোন ধরছে না। ভয়েস মেল।

মাথায় হাত দিয়ে পায়চারি করতে থাকল শম্ভু।

আবারও কল করলো শম্ভু। আবারও ভয়েস মেল।

কোথায় কাজ করে সে? জিজ্ঞাসা করলো মিস্টার ফক্স।

-এম এম জি ব্যাঙ্কে। ফীথ অ্যাভিনিউ এন্ড ২১ স্ট্রীট।

মিস্টার ফক্স কোথায় যেনও কল করলো।

-কালো ব্যাগ আছে? জিজ্ঞাসা করলো মিস্টার ফক্স

-আছে বলে নিয়ে এলো শম্ভু

মিস্টার ফক্স বলল এটা নিয়ে ঠিক ৫;৩০ মিনিটে ওই জায়গায় রাখবে। বাদ বাকি কাজ আমার।

এই সময় ফোন বেজে উঠলো মিস্টার ফক্সের।

-কি বললে সে বেড়িয়ে গেছে এক ঘণ্টা আগে? একজনের সাথে? মিস্টার ফক্স ফোনটা রেখে শম্ভুর দিকে তাকাল। শম্ভুর মুখ ফ্যাঁকাসে।

পাঁচ টা তিরিশ।

শম্ভু গাড়ী থেকে নেমে এলো। এগিয়ে গেলো। দেখল বড় একটা বাক্স পড়ে আছে। রাস্তার উল্টো দিকে একটা ভাঙ্গা বাড়ি।

নির্জন রাস্তা । পাশে একটা পার্ক মনে হোলও। গাছ পালায় ঢাকা।  পারফেক্ট গেটওয়ে। মিস্টার ফক্স কি আরেঞ্জমেন্ট করেছে শম্ভু জানেনা। জানে এই ব্যাগে কিছু নাই, শুধু একটা ছেড়া কাপড়।

শম্পার খবর জানে না। সেকি ওদের হাতে? মাথায় এক বোঝা চিন্তা। এরপর কি হবে সে নিজেও জানেনা।

ব্যাগ টা রাখল।

পিছনে তাকানো নিষেধ। এক পা এগোতেই মনে হোলও কে যেন একটা জিনিষ ওর পিঠে ঠেকালও।

-সামনে এগিয়ে চলো। কে যেন বলল ওর কানের কাছে।

শম্ভুর মনে হোলও আজ এইখানেই শেষ। মিস্টার ফক্স কোথায়?

ঠিক সেই মুহূর্তে পার্কের ভিতর থেকে তিন জন বেড়িয়ে এলো। বুকে বুলেট প্রুফ ভেস্ট। দুজনের হাতে পিস্তল একজনের হাতে রাইফেল।

-স্টপ। ড্রপ দা গান। চিৎকার করে বলল একজন।

লোকটা শম্ভুর গলা আঁকড়িয়ে কুইক ঘুরে দাঁড়ালো। শম্ভুকে সামনে রেখে।

হাতের পিস্তল শম্ভুর মাথায় ধরা। ব্যাগ টা কাঁধে।

আস্তে আস্তে পিছিয়ে যাচ্ছে সে।

পুলিশ তিনজন এগিয়ে আসছে। মাঝ খানে শম্ভু।

লোকটা শম্ভু কে টেনে নিয়ে এলো পার্কের পাশে। বন জঙ্গলে ভরা।

হঠাৎ শম্ভুকে ধাক্কা দিয়ে সামনে ফেলে লোকটা দৌড়ে ঢুকে গেলো জঙ্গলের ভিতরে।

আর সেই মুহূর্তে গর্জে উঠলো পিস্তল আর রাইফেল গুলো।

জঙ্গলের ভিতর থেকে এক আর্তনাদ ভেসে এলো।

শম্ভু হাত দিয়ে মুখ ঢেকে হাউ হাউ করে কাঁদতে থাকলো।

মিস্টার ফক্স শম্ভুর কাঁধে হাত রাখল।

শম্ভু তাকালও, মিস্টার ফক্সের পাশে শম্পা।

এই ঘটনার দশ পনেরো দিন পরে, প্রীসীলা এসেছে শম্ভুর ঘর পরিষ্কার করতে।

শম্ভু বসে বসে খেলা দেখছিল।

-মিস্টার! প্রীসীলা ডাক দিলো।

-হোয়াট? শম্ভু টিভির থেকে চোখ না সরিয়ে জিজ্ঞাসা করলো।

প্রীসীলা একটা ছোট্ট পার্স শম্ভুর হাতে দিয়ে বলল, এইটা তোমার লন্ড্রির ব্যাগের মধ্যে পেলাম। বলে সে অন্য কাজে লেগে গেলো।

শম্ভু তাকালও পার্সটার দিকে। আগে কখন দেখিনি।

জীপার টা আস্তে আস্তে খুললও।

ভিতরে  জ্বলজ্বল করছে কতোগুলো হীরার টুকরা।

Continue Reading

ভয়ার্ত চিৎকার

  শম্ভু অনেক রাতে কাজ সেরে শুতে এসেছিল। ঘড়ির কাঁটার দিকে চেয়ে দেখল, দুটো দশ।

চোখ টা কেবল লেগেছে। ধুম ধুম দরজায় কে যেন বাড়ি মারছে। লাফ দিয়ে উঠে পড়লো। কয়েক সেকেন্ড লাগলো ব্যাপার টা বুঝে উঠতে।

আবারও শব্দ।

দরজাটা খুলতেই ওকে ধাক্কা দিয়ে ঢুকে পড়ল ছেলেটা। থরথর করে কাঁপছে। বয়স সতের আঠারোর উপর হবে না।

-প্লীজ আমাকে বাচান। দরজা খুলবেন না। ওরা আমাকে পেলে মেরে ফেলবে। ভয়ে ওর মুখটা সাদা হয় গেছে।

-তা কি হয়েছে, কে তুমি? জিজ্ঞাসা করল শম্ভু।

এমন সময় আবারও দরজায় কে যেন বাড়ি মারল।

ছেলেটা দৌড়িয়ে ঢুকে গেলো শম্ভুর বেডরুমে।

কিছুক্ষণ কোন শব্দ নেই। পায়ের আওয়াজ শুনতে পেলো শম্ভু। আওয়াজ টা আস্তে আস্তে মিলিয়ে গেলো।

শম্ভুও যে ভয় পায়নি তা নয়।

এত রাতে উটকো ঝামেলা, তারপর কি না কি ব্যাপার, শম্ভু কে ভাবিয়ে তুললো।

ছেলে টা বেরিয়ে এলো ঘর থেকে। ভয়ে কাঁপছে।

-কি হয়েছে?

-ওরা আমাকে মেরে ফেলবে।

-দাড়াও, পুলিশ কে কল করি।

-না, না বলে দৌড়ে গেলো দরজার কাছে।

দরজাটা একটু ফাঁক করে দেখল।

তারপর দৌড়ে বেরিয়ে গেলো।

সবকিছু কয়েক মিনিটের মধ্যে ঘটে গেলো।

শম্ভু সমস্ত ব্যাপার টা ভাবতে চেষ্টা করল। আস্তে আস্তে দরজার কাছে এগিয়ে গেলো।

দরজাটা বন্ধ করে ফিরে এলো রান্না ঘরে। এক গ্লাস ঠাণ্ডা পানি ঢক ঢক করে খেয়ে বিছানায় এলো।

রাস্তায় হৈ হুল্লার শব্দে ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো। 

-যত সব নিকুচি করি, বলে একটা গাল দিয়ে উঠে এলো বিছানা থেকে। আজ তার বন্ধের দিন। প্রতিদিন ভোর ছয়টায় উঠতে হয়। আজ সেই তাড়া ছিলনা। কাজ না থাকলে সে সকাল দশ টার আগে উঠে না। ঘুম ভেঙ্গে গেলেও পরে থাকে বিছানায়। তারপর আস্তে আস্তে উঠে এসে কফির মেশিন টা চালু করে দেয়।

মুখ টা না ধুয়ে কফিটা নিয়ে জানালার কাছে বসে।

আজ আর তা হোলও না।

এ্যাম্বুলেন্সের শব্দ শুনতে পেলো।

দরজাটা খুলে বাহিরে এসে দাঁড়ালো।

পাশের বাড়ীর মহিলা টাও দাঁড়ানো।

-কি হয়েছে? জিজ্ঞাসা করলো শম্ভু।

-খুন হয়েছে, শুনলাম। বলল মহিলা টা

-খুন? ধপ করে উঠল বুকটা।

রাতের কাপড় পরেই এগিয়ে গেলো রাস্তার দিকে। দেখতে পেলো দুই ব্লক দুরে অনেক লোকের জটলা।

দুটো এম্বুলেন্স, আর গোটা চারেক পুলিশের গাড়ী। বেশ কিছুটা জায়গা নিয়ে হলুদ ফিতে দিয়ে ঘেরাও করা।

শম্ভু এসে দাঁড়াল। লোকটা তখনো পরে আছে রাস্তায়। দুই জন কোট পড়া লোক পরে থাকা মানুষ টার পাশে বসে কি যেন করছে।

মুখ টা দেখা যাচ্ছে না। সার্ট টা দেখতে পেলো শম্ভু। আঁতকে উঠল। সেই লাল জামা তার উপর কালো ছোপ ছোপ।

ও? একটা শব্দ বেরিয়ে এলো মুখ থেকে।

তাড়াতাড়ি বেড়িয়ে এলো ভিড় থেকে।

কপাল টা ঘামে ভিজে গেলো। বুকের ভিতর দুরদুর করছে। এতো সেই।

কোন কিছু চিন্তা করতে পারছে না শম্ভু। দ্রুত পায়ে হেটে এলো। বাথরুমে যেয়ে সাওয়ারের কল টা ছেড়ে দিলো।

সারাটা দিন অস্থির ভাবে কাঁটাল। প্রথমে ভাবল শম্পা কে কল করে সব ঘটনা টা বলবে। পরে মনস্থির করল না কাউকে জানাবে না। তবুও শম্পা কে কল করল, কিছুক্ষণ কারো সাথে বসে কথা বলা দরকার। অস্থির মন টাকে বাগে আনতে হবে।

-ব্যাস্ত?

– না। বলল শম্পা।

-তাহলে তৈরী হয়ে নাও। আধা ঘণ্টার মধ্যে আসছি। বাহিরে ডিনার করব।

শম্পা না করলো না।

সন্ধ্যা হয় হয়। গতকাল রাতে বাসার সামনে জায়গা না থাকাতে একটু দুরে পার্ক করতে হয়েছে। শম্ভু তাকালও দুই দিকে।

দেখল যেখানে লোকটা পড়েছিল সেই দিকে রাস্তা হলুদ টেপ দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছে। ক্রাইম সিন।

ভাগ্যভালো ওর গাড়ীটা উল্টো দিকে।
চলার শুরুতেই রাস্তার ওপাশ থেকে কে যেন একজন ডাক দিল।

-শুনছেন?

উত্তর দেওয়ার আগেই দৌড়ে রাস্তা পাড় হয়ে এলো। মাথায় বেজবল ক্যাপ।

রাস্তায় আর কেউ নেই।

সামনে এসে দাঁড়ালো। শম্ভুর গলা শুকিয়ে গেছে। লোকটা লম্বায় সাড়ে ছয় ফুটের কম নয়।  কনুই এর নিচ থেকে কব্জি পর্যন্ত সাপের ট্যাটু।

-লাইটার আছে? বলে পকেট থেকে সিগারেট বের করল।

– না, আমি সিগারেট খাই না। বলল শম্ভু শুকন গলায়।

-ও! বলে দৌড়ে যে ভাবে এসেছিল ঠিক সেই ভাবেই চলে গেলো।

লোকটার মুখটা শম্ভু ভালভাবে দেখতে পেলো না ক্যাপের জন্য।

গাড়ীটা পার্ক করতেই শম্পা নেমে এলো। 

-কোথায় খাবে, জিজ্ঞাসা করল শম্ভু

-এজ উজুয়াল।

আছে ওদের জানাশুনা এক রেস্তোরা। যেখানে ওরা প্রায় যায়, সবাই চেনে। পরিবেশ টা হোমলি।

-তোমার যেন কি হয়েছে মনে হচ্ছে?

-কবে থেকে আবার জ্যোতিষী হলে। মৃদু হেসে বলল শম্ভু।

-আমার কাছে লুকোতে চেওনা। আমি তোমাকে অনেকদিন থেকেই চিনি।

শম্ভুও  কেনও জানি না বলতে পারলে স্বস্তি পাচ্ছিল না।

বলল সব।

-ওকে কি কেউ দেখেছে তোমার বাসায় ঢুকতে। জিজ্ঞাসা করল শম্পা।

– তা তো জানিনা। তবে আমার দরজায় কয়েক বার কে যেনও নক করেছিল। আমি খুলি নি। ওই ছেলে টাই মানা করেছিল।

– হয়ত সবার বাসাতেই নক করেছে? আশ্বাস দিলো শম্পা।

-তাই যেন হয়।

খাওয়া শেষে বের হয়ে এলো দুজনে। শম্পাকে নামিয়ে দিলো। মনের মাঝের ভয় টা কোন ক্রমেই গেলো না। যদিও শম্পা অনেক রকম আশ্বাসের বানী শুনিয়ে ছিল।

ঝন ঝন করে ফোন টা বেজে উঠল। প্রতিদিন একি ভাবে বাজে, আজ যেন মনে হোলও অনেক জোড়ে বাজচ্ছে।

তাকালও ফোন টার দিকে । চেনা নম্বর নয়। তবুও হ্যালো বলল শম্ভু।

ওপাশ থেকে শুধু নিশ্বাসের শব্দ। কেটে দিল কলটা।

আবারও বেজে উঠল।

ভয়ে শম্ভুর হাতটা কেঁপে উঠল। গাড়ীটা লেনের বাহিরে চলে এসেছিল। জোড়ে হর্ন দিয়ে একটা গাড়ী বের হয়ে গেলো পাশ দিয়ে।

শম্ভু তাকাল রেয়ার ভিউ মিররের দিকে। মনে হোলও পিছনের গাড়ীটা ওকে ফলো করছে। শম্ভু বায়ে টার্ন নিলো। যদিও এদিকে তার বাসা নয়। পিছনের গাড়ী টাও একই দিকে টার্ন নিলো।

ফোন টা বেজে উঠল আবার। না এবার শম্পা কল করেছে।

-কোথায় তুমি।

-জানিনা, পিছনে একটা গাড়ী আমাকে ফলো করছে। 

– কি বলছ?

কথা বলতে বলতেই পিছনের গাড়ীটা পাশ কেটে সামনে এসে ব্রেক করেই এক সেকেন্ডের মধ্যে শা করে চলে গেলো।

শম্ভু আত্ম চিৎকার করে ব্রেক করল। ফোনটা ছিটকে পরে গেলো নিচে।

গাড়ীটা রাস্তার পাশে এনে রাখল শম্ভু। ফোনটা খুজে বের করলো।

টুং করে শব্দ হোলও। ম্যাসেজ এসেছে।

“যদি ভালো চাও তবেঁ মাল টা দরজার সামনে রেখে দিও। নচেৎ —-“

(চলবে)

Continue Reading