ঢক ঢক করে পানি খেলো প্রিয়া। গলাটা শুকিয়ে যাচ্ছে। কি একটা দুঃস্বপ্ন ওর ঘুম টা ভেঙে দিলো। মনে করার চেস্টা করল পুরো স্বপ্ন টা। না, শুধু মনে পড়লো কে যেন ওর গলাটা টিপে ধরেছিল। পাশে তাকিয়ে দেখল তন্নয় বেঘোরে ঘুমাচ্ছে।
প্রিয়ার রাগ হোল। মনে হোল এক ধাক্কা দিয়ে ওকে উঠিয়ে দেয়।
মাঝে মাঝে এমন হয় প্রিয়ার। ও যখন ঘুমাতে পারেনা তখন কাউকে ঘুমাতে দেখলে ওর রাগ হয়। এটা এক রকম হিংসেমি কিনা ও বলতে পারেনা।
প্রিয়া বিছানা ছেড়ে উঠে এলো বসার ঘরে। পিছনের বাড়ীর লনের আলোটার কিছু আলোক রশ্মি এসে পড়েছে ওর ঘরে। ও এসে দাঁড়ালো জানালার কাছে। জানালা দিয়ে সামনের রাস্তা টা দেখা যাচ্ছে। টিউবের আলো পড়েছে কালো পীচ ঢালা রাস্তাটার উপর। ঝলমল করছে। মাঝে মাঝে সাদা দাগ। এমন ভাবে কোনদিন সে দেখেনি রাস্তা টাকে। মনে হোল এ রাস্তাটা তার চেনা নয়। অথচ প্রতিদিন সকালে সে হাটে এই রাস্তা দিয়ে। দেখা হয় পরিচিত লোকজনের সাথে।
হাই, হ্যালো বলে।
প্রায় পাঁচ বছর হোল বিয়ে হয়েছে প্রিয়ার। তারও আগে তিন বছর ও আর তন্নয় এক সাথে ঘুরে বেড়িয়েছে। পাঁচটা বছরে ওর কোলে কেউ এলো না। ডাক্তার দেখিয়েছে। কোন ফল হয়নি।
মাঝে মাঝে মন খারাপ হয়। তন্নয় তাকে উৎফুল্ল করার চেষ্টা করে।
অনেকে বলে, মানত করে এসো ঐ দরগায়, সুতো বেঁধে এসো।
ঐ সবে বিশ্বাস নেই ওদের দুজনের।
বিছানায় আর ফিরে গেলো না প্রিয়া। সামনে পড়ে থাকা অর্ধেক পড়া বইটা হাতে তুলে নিলো।
সকালে তন্নয় অফিসে গেলে প্রিয়া তার জিমের সুট টা পড়ে হাটতে বেড়িয়ে যায়। আজও তার ব্যতিক্রম হয়নি। পথে দেখা তন্নী আর সুভ্রার সাথে। বন্ধু বলা যায়না। হাটার সাথী।
আজও হাটতে হাটতে আর মেয়েলি গল্প করতে করতে চলার পথে ফোনটা বেজে উঠল।
তন্নয়ের ফোন।
অফিসে যেতে না যেতেই কেনও ফোন করল, ভেবে মনের মধ্যে দুশ্চিন্তা নাড়া দিয়ে উঠল।
-হ্যালো। কি ব্যাপার, সব ঠিক তো?
-হ্যাঁ, শোন এবার ঈদের ছুটিতে আমরা রাঙামাটিতে বেড়াতে যাবো। সাগরের কথা মনে আছে? ও কল করেছিল। আসতে বলল। কি বলও?
-উত্তরটা কি এখনি দিতে হবে, নাকি তুমি বাসায় এলে দিলে হবে না? বলে হাসল প্রিয়া । ও চেনে তন্নয় কে। কোন কিছুতেই ওর তর সয় না।
-ঠিক আছে, বলে ফোন টা রেখে দিল তন্নয়।
অনেকদিন বাহিরে যাওয়া হয়নি। প্রিয়াও চাচ্ছিল কোন একদিকে গেলে মন্দ হতো না। কাজেই মনে মনে একটা ছক কেটে নিলো তন্নয় এলে কি বলবে। সাগর তার পরিচিত। বিশেষ করে তার বৌ পান্না ছিল অনেক কাছের। থাকতো ওরা তাদের বাসার থেকে খুব একটা দুরে নয়। তারপর সাগর যখন চাকরি নিয়ে রাঙামাটি চলে গেলো তখন আস্তে আস্তে দূরত্বটাও বেড়ে গেলো।
অনেকদিন ওদের সাথে যোগাযোগ নেই প্রিয়ার। চোখের আড়াল হলে মনের আড়াল তো হবেই। সেই সাথে ব্যাস্ততা।
গুনগুণ করে একটা গানের কলি আওড়াতে আওড়াতে বাসার গেটে এসে দাঁড়ালো প্রিয়া।
তাকালও বামে। অনামিকা তার তিন বছরের মেয়ে টার সাথে খেলছে বাসার সামনের লনে।
অনামিকা তাকালও।
-হাটতে বের হয়েছিলে বুঝি? বলে মেয়ে সুপর্ণাকে কোলে নিয়ে এসে দাড়াল গেটের কাছে।
প্রিয়া হাত বাড়াতেই সুপর্ণা চলে এলো ওর কোলে।
এই বাড়ীতেই প্রিয়ার যাওয়া আসা বেশি। প্রিয়ার মত অনামিকাও বাসাতে থাকে মেয়ের পিছনেই সারাটা দিন কেটে যায়।
-কোন কাজ আছে? অনামিকা জিজ্ঞাসা করতেই প্রিয়া বলল, না আমার আর কাজ কোথায় বলে সুপর্ণার গালে চুম দিয়ে চেপে ধরলও ওকে।
-তাহলে এসো, চা খাই আর গল্প করি।
প্রিয়ার বাসায় ঢোকা হোল না। সুপর্ণা কে ওর মা নিতে চাইল, ও গেলো না। প্রিয়ার গলাটা জড়িয়ে ধরে মাথাটা নামিয়ে দিল ওর কাঁধে।
-দেখলে কেমন বেইমান মেয়ে টা। বলে হাসতে হাসতে অনামিকা গেটটা খুলে দিলো।
অনামিকার স্বামী মহীউদ্দিন, ইউনিভার্সিটির ইংলিশের প্রফেসর। দিল দরিয়া মানুষ। সব সময় মুখে হাসি লেগেই আছে।
ছুটির দিনে কোন প্রোগ্রাম না থাকলে অনামিকাদের বাসাতেই আড্ডা বসে। আরও দুই তিনটা বন্ধু তাদের বৌ দের নিয়ে এসে যোগ দায়। তাস খেলা চলে। বৌ রা হাতে হাতে কয়েকটা ডিশ তৈরী করে ফেলে। কোন কোন দিন আড্ডা দিতে দিতে মাঝ রাত হয়ে যায়।
-এবার ঈদের প্রোগ্রাম ঠিক করেছ? চা র পানিটা বসাতে বসাতে জিজ্ঞাসা করলো অনামিকা।
-তন্নয়ের এক বন্ধু থাকে রাঙামাটিতে। যেতে বলছে। ওখানে যেতে পারি।
-আমারও রাঙামাটিতে যাওয়া হয়নি। বলে অনামিকা ফ্রীজ খুলে মিষ্টির পাত্র টা এনে রাখল টেবিলে। তারপর প্রিয়ার কোলে বসে থাকা সুপর্ণা কে বলল, এসো, তোমার দুধ খাওয়ার সময় হয়েছে বলে হাত পাতলো।
সুপর্ণা মুখ টা ফিরিয়া নিলো।
-আমাকে দাও ভাবী, আমি খাইয়ে দেই। বলে আবারও চুমো দিলো ওর গালে। তোমরাও চলো না আমাদের সাথে। খুব মজা হবে।
-দেখি তোমার ভাই কে বলে।
কয়েক ঘণ্টা কাটিয়ে প্রিয়া এলো তার বাসায়।
ওর মনে হোল ওর সারা শরীরে সুপর্ণার শরীরের মিষ্টি ঘন্ধ। ছোট্ট ছোট্ট আঙ্গুল গুলো ওর মুখে চোখ ছুঁয়ে যাচ্ছে। ওকি কোন দিন মাতৃত্বের স্বাদ পাবে না? ওর কোল জুড়ে কি কেউ আসবে না।
একটা দীর্ঘও নিশ্বাস বেড়িয়ে এলো। সব কিছু থেকেও যেন অনেক কিছু নেই তার।
চেয়ার টা টেনে এনে বসল। মনে পড়লো অনেকদিন আগে অনামিকা বলেছিল, ভাবী কিছু মনে করো না, একটা কথা বলি।
-বলও।
– আমি বলি কি একটা বাচ্চা এডোপট করো। আমার কথায় কিছু মনে করোনা, তবে চিন্তা করতে দোষ কি?
কেন জানি ঐ কথা গুলো আজ খুব মনে পড়ছে প্রিয়ার।
সব ঠিকঠাক। অনামিকারাও যাবে ওদের সাথে। তন্নয় সাগরকে জানিয়েছিল, ওরা আসছে তবে আরও লোক আছে। সাগর আর পান্না দুজনেই খুশি। অনেকদিন পরে দেখা হবে। নতুন করে ঝালিয়ে নেওয়া যাবে পুরনো হারানো দিন গুলো।
ঈদের আগের দিন ওরা এসে পৌছালো বিকেলে রাঙামাটিতে।
সাগর-পান্নাদের বাসাটা রাস্তা থেকে একটু উচুতে। দোতালা। সামনে ফুলের বাগান।
দরজা খুলেই পান্না জড়িয়ে ধরলও প্রিয়া কে। কতকাল পরে দেখা তোমার সাথে। আরও কিছু বলতে যাচ্ছিলো। সাগরই বলে উঠলো, ওদেরকে আগে ঘরে ঢুকতে দাও।
তন্নয় পরিচয় করিয়ে দিলো মহীউদ্দীন আর অনামিকার সাথে। পান্নার ছেলে সুপর্ণার বয়সী। তাকিয়ে ছিল সুপর্ণার দিকে। ছোটরা ছোটদের কথা বুঝতে পারে। ওরা জানে ওদের ভাষা। অনামিকা নামিয়ে দিলো সুপর্ণা কে। ওরা দুটো কুটিকুটি পা ফেলে চারিদিকে ঘুরতে থাকলো।
সাগর ওর কাজের থেকে একটা মাইক্রোবাস জোগাড় করেছে। ঈদের পরের দিন ওরা বেড়িয়ে পড়লো সাজেক ভ্যালি, কাপ্তাই লেক দেখতে। সাথে রান্না করে নিয়েছিল হরেক রকমের খাবার। পথে থেমে ছিল একটা সুন্দর লেকের পাশে। ওখানেই চাদর পেতে সবাই বসলো লাঞ্চ খেতে।
কথা বলতে বলতে সাগর বলল, কাল বাসায় আমার এক বন্ধু কে বলেছি ডিনার করতে। আমরা এক ডিপার্টমেন্টে কাজ করি। নাম অচীন্ত। আমাদের থেকে কয়েক বছরের ছোট। বিয়ে করেছে এক সাঁওতালি মেয়েকে। প্রেম করে। নিজেদের দুটো ছেলে মেয়ে আর আছে চার মাসের একটা মেয়ে। বলে থামতেই, প্রিয়া বলল, সাগর ভাই আপনি কিন্তু বলেছেন, নিজেদের দুটো ছেলে মেয়ে, তার মানে চার মাসের মেয়ে টা ওদের নয়।
-ঠিক বলেছ। ওটা ওদের নয়, ওর বাসায় কাজ করতো তার মেয়ে। ঘটনা টা খুলেই বলি, মেয়েটা প্রেগনেন্ট হওয়ার পাঁচ মাস পরে হঠাৎ একদিন গাড়ী এক্সিডেন্টে ওর স্বামী মারা যায়। অচীন্তের বৌ ওকে ওদের বাসাতেই রেখে দেয়। কিন্তু অদৃষ্টের কি পরিহাস, বাচ্চা হতে যেয়ে মা মারা যায়।
সেই থেকে বাচ্চা টা ওদের কাছেই আছে।
প্রিয়া চোখের জল ঠেকাতে না পেরে তাকালও পাশের দিকে। সাগরের চোখ এড়ায়নি।
-তুমি কাঁদছ? সাগর জানতে চাইলো।
-ধরে রাখতে পারলাম কই, সাগরদা।
সন্ধ্যায় এক থালা চাঁদ উঠল আকাশে। তারই নরম আলোটা ছড়িয়ে পড়ল বাড়ীটার সামনের লনে। ওরা চেয়ার নিয়ে এসে বসলো সাদা টেবিলের চারিপাশে। পান্না এক সময় গান করতো। সবার অনুরধে, “ কী পাই নি তারি হিসাব মিলাতে মন মোর নহে রাজি—– “ গান টা ধরল সে।
প্রিয়া চোখ বন্ধ করে শুনছিল গানটা। তার মনে সেই না পাওয়ার এক আকাঙ্খা তীব্র থেকে তীব্রতর হোল।
রাত গভীর হোল। সবাই একে একে উঠলো। শুধু বসে রইল প্রিয়া। তন্নয় কে বসতে বলল।
আসে পাশে কেউ নেই। শুধু ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক। মাঝে মাঝে রাত জাগা পাখি গাছের ডাল ঝাঁকিয়ে উড়ে যাচ্ছে।
তন্নয় এসে বসল প্রিয়ার পাশে।
-কিছু বলবে।
-আচ্ছা, ওই পাঁচ মাসের বাচ্চা টাকে আমরা এডোপট করতে পারিনা? ওদের তো আরও দুটো বাচ্চা আছে। বলতে বলতে কান্না ভরা কণ্ঠে তন্নয়ের কাঁধে মাথাটা নামিয়ে দিলো।
সাঁজ সাঁজ রব। মহিলারা ব্যাস্ত রান্না ঘরে। মনে হচ্ছে বিরাট পার্টি। অথচ সবে গুনে আঁট জন। ছেলেরা বসেছে তাস খেলতে।
তন্নয় উচ্চস্বরে জিজ্ঞাসা করলো, তোমাদের মেনুতে আজ কী কী আছে? যে রকম আঁটসাঁট বেঁধে নেমেছ তোমরা।
-টিপ্পনী কাটছ? তাহলে মাছের ভর্তা তুমি পাবেনা। হাসতে হাসতে প্রিয়া এসে তন্নয়ের গালে একটা টোকা দিয়ে গেলো।
অতিথি এসে পৌছাল ঠিক সাতটায়। অচীন্ত, তার বৌ, দুটো বাচ্চা আর স্ট্রলারে শুয়ে আছে ছোট্ট মেয়েটা। অচীন্তের বৌ এর গায়ের রং একটু কালোর দিকে। সুন্দর করে পড়া কালো পাড়ের শাড়ী। প্রসাধন রুচি সম্মত। কেবল মাত্র চেহারা ছাড়া কেউ বলবে না সে সাঁওতালি।
প্রিয়া স্ট্রলারের কাছে এসে শুয়ে থাকা পুতুলটার গালটা টিপে দিলো। তন্নয়ের চোখ এড়ায়নি।
দুজনে চোখাচোখি হোল।
মুরগীর রোস্ট, বীফ ভুনা, ভাজা চিংড়ি মাছ, পোলাও সাথে সাদা ভাত। ভর্তা আর শুটকি দিয়ে খাওয়ার জন্য। অচীন্তের বৌ ঠোটের কোণে হাসি দিয়ে বলল, ভাবী, এত সব করলেন কখন।
কথায় আঞ্চলিক টান আছে। ওর চোখ দুটোর দিকে তাকিয়েছিল প্রিয়া। কেমন যেন মায়াময় চাহনী।
খাওয়া শেষে আড্ডা, অচীন্তরা যখন চলে গেলো তখন ঘড়ির কাঁটা বারোটা ছুঁই ছুঁই। সবাই মিলে টেবিলটা পরিষ্কার করে এসে বসলো বারান্দায়। আকাশে নক্ষত্রের সারি।
মহীউদ্দীন বলল, বারান্দার আলো টা নিভিয়ে দেই। উপভোগ করি চাঁদের আলো। রোম্যান্টিক পরিবেশ টা।
বাহ, কবিতা লেখার অভ্যাস আছে নাকি? পান্না চেয়ারটা টেনে বসতে বসতে বলল।
তন্নয় সামনে রাখা কোকের বোতলটা থেকে এক ছিপ গলায় ঢেলে দিয়ে বলল, তোমাদের কাছে একটা কথা বলতে চাই। শুনতে চাই তোমাদের অভিমত।
সবাই একটু নড়ে চড়ে বসল।
অনামিকা গায়ের ওড়নাটা ঠিক করতে করতে বলল, খুব সিরিয়াস কথা মনে হচ্ছে।
-হ্যাঁ, তাই। বলে তন্নয় তাকালও প্রিয়ার দিকে।
-তাড়াতাড়ি বলে ফেলো, দোস্ত। সাগরের তড় সইছে না।
কাশি দিয়ে গলা টা পরিষ্কার করে তন্নয় বলল, তোমরা সবাই জানো, অনেক চেষ্টা করেছি আমরা, কিন্তু এলো নাতো আমাদের মাঝে আর একজন। তাই ঐ ছোট্ট তুলতুলে টাকে এডোপট করতে চাই। যদি অচীন্ত আর ওর বৌ রাজি থাকে।
কথা টা এক নিশ্বাসে বলে তন্নয় তাকালও সবার দিকে।
উৎফুল্ল হয়ে পান্না বলল, এতো বিরাট খুশীর খবর। তবে—
-জানি ওরা হয়তো রাজি হবেনা। প্রিয়ার গলার স্বরে কান্নার আভাস।
সাগর বলল, কালই আমি খোঁজ নেবো।
পরের দিন ওরা সবাই মিলে গিয়েছিল অচীন্তের বাসায়। কথাটা সাগরই পেড়েছিল। অচীন্ত শুনে বলেছিল, বলে দেখেন আমার বৌ কে। এই পাঁচটা মাস বুকে চেপে ধরে রেখেছে। রাত জেগে ওকে দুধ খাইয়েছে। অসুখ হলে অস্থির হয়ে উঠেছে। মানুষ করছে নিজের ছেলে মেয়েদের মত করে। কেউ বুঝতে পারবে না যে ও আমাদের মেয়ে না।
অনামিকা বলল আপনি রাজি তো?
ওকে দুঃখ দিয়ে আমি কিছু করতে পারবো না। বলে তাকালও প্রিয়ার দিকে।
অচীন্তের বৌ নাস্তা নিয়ে এলো। প্রিয়াই ওকে ডেকে বসাল নিজের পাশে।
কী ভাবে কথাটা বলবে সেটা সে চিন্তা করল। তারপর কোন ভূমিকা না করেই বলল, ভাবী তোমার ঐ পুতুল মেয়ে টাকে আমি কী আমার মেয়ে করতে পারি?
অচীন্তের বৌ কথা টা ঠিক বুঝতে পারলো না। অচীন্তই বুঝিয়ে দিলো। প্রিয়া আর তন্নয় ওকে এডোপট করতে চায়। তোমার অনুমতি থাকলে।
অচীন্তের বৌ কোন কথা না বলে সামনে পড়ে থাকা খালি প্লেট টা নিয়ে রান্না ঘরের দিকে চলে গেলো।
নীস্তবততা ঘিরে রইল টেবিল জুড়ে। কারোর মুখে কোন কথা নাই তন্নয় তাকালও অচীন্তের দিকে।
-অত্যন্ত দুঃখিত তোমার বৌ কে কষ্ট দেওয়ার জন্য। জানতাম, এ হবার নয়। ক্ষমা কর। তন্নয় কাঁপা কাঁপা গলায় বলল।
প্রিয়া আর পান্না এলো রান্না ঘরে। শুনতে পেলো অচীন্তের বৌ এর কান্না।
প্রিয়া ওর কাঁধে হাত রাখল।
-মাফ করে দিও ভাই। তোমাকে দুঃখ আমি দিতে চাই নি। কেনও জানি মাতৃত্বের স্বাদ জেগে উঠেছিল ঐ পুতুল টাকে দেখে । নিজেকে বেঁধে রাখতে পারিনি। প্রিয়ার গলা পর্যন্ত কান্না।
অচীন্তের বৌ ফিরে তাকালও প্রিয়ার দিকে। কাঁদতে কাঁদতে বলল, ও আমার চোখের মনি। ওর মা আমাকে একদিন বলেছিল, আপা আমার যদি কিছু হয় , নতুন যে আসবে তুমি তাকে দেখো। ওকি জানতে পেরেছিল যে ও চলে যাবে?
প্রিয়া কান্না চেপে রেখে বলল, চল, আমাদের সাথে বসে গল্প করবে।
এবার ফেরার পালা। তন্নয় আর মহীউদ্দীন সুটকেস গুলো এনে বাহিরে রাখল। প্রিয়া, অনামিকা, পান্না এসে দাঁড়ালো বারান্দায়। আকাশে মেঘের আনাগোনা। মাঝে মাঝে কালো মেঘের ফাঁক দিয়ে সূর্যের আলো এসে পড়ছে বারান্দায়।
সাগর গাড়ী স্টার্ট দিয়ে নেমে এলো।
-চলো সবাই। বৃষ্টি আসতে পারে। গাড়ীতে বসে গল্প শেষ করো। বলে সাগর শেষ সুটকেস টা টেনে নিয়ে এলো।
ওরা বারন্দা থেকে দেখতে পেলো একটা কালো টয়োটা এসে দাঁড়ালো মাইক্রোবাস টার পাশে। নেমে এলো অচীন্ত আর তার বৌ। কোলে সেই তুলতুলে পুতুলটা।
এসে দাঁড়ালো ওদের সামনে। অচীন্তের বৌ এসে প্রিয়ার হাত টা ধরে বলল, চলে যাচ্ছ, কিন্তু আবার তো আসতে হবে তোমাকে ভাই, তোমার এই মেয়েকে নিয়ে যেতে। ওর নামের শেষে তোমাদের নাম বসিয়ে।
এই বলে পুতুল টাকে প্রিয়ার কোলে তুলে দিলো।
প্রিয়া ওকে বুকে চেপে ধরল। দুই ফোঁটা জল গাল বেয়ে এসে পড়লো পুতুলের কপালে।