আমি নাট্যদলে ঢুকেছি। কি রকম অদ্ভুত শোনাচ্ছে না কথাটা। আমার নিজের কাছেও তাই মনে হয়েছিল। আমি ঢুকতে চাইনি। জোড় করেই আমার নামটা লিখিয়ে দিয়েছিল ওদের নাট্যদলে।
ওর নাম নবীন। মাঝে মাঝে দেখেছি ওকে এখানে ওখানে। পরিচয় টা এমন জায়গায় হোল যেখানে সবার চোখে জল। আমার চোখ টা তাড়াতাড়ি ভেজেনা। অনেকে মনে করে আমি নিষ্ঠুর। এই পরিবেশে কারোর চোখে জল আসবেনা তাই কী হয়? আমি চেস্টা করি কিন্তু আসেনা।
তাই দুরে দাড়িয়ে ছিলাম। বুকটার মধ্যে ব্যাথা করছিল। একটা অস্থিরতা আমাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছিল। ওখান থেকেই তাকিয়েছিলাম কাঠের তৈরী বাক্সটার দিকে। ওখানে শুয়ে আছে আমার বন্ধু।
ওকে ঘিরে আছে আমার অন্যান্য বন্ধুরা। আছে আত্মীয় স্বজন। ওরা কাঁদছে।
আমার বন্ধুর ছিল অনেক বন্ধু। ও সবার সাথে মিশে যেতে পারতো। ছেলে বলো মেয়ে বলো প্রথম পরিচয়ে ও অনর্গল কথা বলে যেতে পারতো। মনে হতো ওরা ওর অনেক দিনের পরিচিত। আমি ওর পাশে থাকলে অবাক হয়ে তাকিয়ে তাকিয়ে ওর কথা শুনতাম। ওদের মধ্যে কেউ যদি আমার সাথে কথা বলতে চাইত তবে আমি দুই কথার পড়ে আর কথা খুজে পেতান না।
সেই পরিবেশে কখন যে নবীন এসে আমার পাশে দাড়িয়েছে আমি জানিনা।
-উনি আপনার কেউ হন। প্রশ্নটা ও করেছিল আমাকে।
-আমার বন্ধু, খুব কাছের। বলে আবারও তাকিয়ে রইলাম ঐ ভিড়ের দিকে।
বলেছি আমি কথার পিঠে কথা বলতে পারিনা। তাই আমি চুপ করে রইলাম।
-উনি আমার চাচার বন্ধু। আমাদের এক নাট্যদল আছে ওখানে উনি আসতেন। সেই সুবাদে আমার সাথে পরিচয় হয়েছিল। অমায়িক ছিলেন। চাচার বন্ধু অথচ আমি উনাকে ভাই বলে ডাকতাম। বন্ধুসুলভ কথা বার্তা বলতেন। আমাকে স্নেহ করতেন। এই বলে ও থামল।
আমি কোন উত্তর দিচ্ছি না বলে আবার ও বলল, কাছে ধারে থাকেন বুঝি।
বললাম, হ্যাঁ, দশ মিনিটের পথ।
-আপনি শম্পাকে চেনেন?
এবার আমি ওর মুখের দিকে তাকালাম। যেহেতু শম্পা নামটার সাথে আমি পরিচিত।
-হ্যাঁ, কেনও বলুন তো?
-আমি আপনাকে দেখেছি ওর সাথে কথা বলতে। ও আমাদের নাট্যদলের সহকর্মী। আসুন না সামনের রবিবারে আমার বাসায়। নাটকের মহড়া আছে। শম্পাও আসবে। ওকে বলব আপনাকে নিয়ে আসতে। এই দেখুন, আপনার নামটাই জানা হলনা।
নাম আদান প্রদান করলাম। আমি যে একটু বিরক্ত হয়নি তা নয়। এই পরিবেশে ও আমাকে নাটকের কথা বলছে। তবে ভালো লাগলো এই ভেবে ও আমার সামনে আহা উহা করেনি। বরং পরিবেশ টাকে হাল্কা করার চেষ্টা করছে।
বললাম শম্পাকে আমি চিনি, পরিচয় আছে এইটুকু।
-ওতেই হবে।
কাঠের বাক্সটা ফিউনারালের গাড়ীতে উঠিয়ে দিলো সবাই মিলে। যাত্রা হবে সেইখানে যেখানে খোঁড়া আছে ছয় ফুটের একটা গর্ত।
বললাম, এবার আমি যাবো। ওদের সাথে যেতে হবে।
-আপনার সাথে দেখা হবে আগামী রবিবার। বলল সে।
আমি কোন উত্তর দিলাম না। আস্তে আস্তে গাড়ীর কাছে এলাম।
ঘুম টা ভাঙ্গল টেলিফোনের শব্দে। আমার ঘুম আসে শেষ রাতে। বন্ধুরা বলে আমি নাকি নিশাচর। রাতের ঘুমটা তাই পুষিয়ে নিতে চাই সকালের ঘুমে। বিরক্ত হলাম। নাম্বার টা পরিচিত মনে হোল না। তাও কেন জানি ঘুমের ঘোরে হ্যালো বলে ফেললাম।
-তুমি ঘুমাচ্ছ? সরি। শম্পা বলছি।
মনে পড়লো সেইদিনের কথা। কথা গুলোকে আমি গুরুত্ব দেই নি সেদিন। কিন্তু ও যে সত্যি শম্পা কে বলবে তা কস্মিনকালেও মনে হয়নি।
-শোন তোমাকে ঠিক বারটায় আমি পিক করব। ঠিকানা টা বলও।
চোখ কচলাতে কচলাতে বললাম, ও আমার পোষাবে না। নবীন কে বলও আমি দুঃখিত।
-ও শোনবে না। ও তোমার মধ্যে কী পেয়েছে আমি জানি না। আমি ঠিক বারটায় আসবো। রেডি হয়ে থেকো। বলে লাইনটা কেটে দিলো।
বিরক্তের শেষ নেই। ঐ ছেলেটার উপর ভীষণ রাগ হোল। আমি আবার এই রাগ গুলো সচরাচর মুখের উপর বলে দিতে পারিনা। এটাও আমার একটা দুর্বল দিক। তবে মনে হোল, যাই না, দেখি ওরা কী করে। রবিবার টা ঘরে বসে না কাটিয়ে ওখানে না হয় কিছুক্ষণ সময় কাটালাম।
শম্পা এলো ঠিক ঘড়ির কাঁটা ধরে। এই প্রথম আমি ওর সাথে এক গাড়ীতে উঠলাম। ওর সাথে আমার পরিচয় অনেকদিনের। তবে সেই বন্ধু বন্ধু বলতে যা বোঝায় তা নয়। ওই যে আগেই বলেছি, আমি স্বল্পভাষী। তাই সবার সাথে বন্ধুত্ত করা আমার হয়ে উঠেনা।
গাড়ীর দরজা খুলে ঢুকতেই খুব মিষ্টি একটা গন্ধ নাকে এলো। পারফিউমের গন্ধ।
বলতে ইচ্ছে হোল, খুব সুন্দর গন্ধ তোমার এই পারফিউমের। নাম টা কী বলো তো। না, বলা হোল না। উচ্ছ্বসিত হয়ে কিছু বলতে আমি পারিনি কখন।
-কী করো সারাদিন? জিজ্ঞাসা করল শম্পা।
-বই পড়ি, টিভি দেখি। বললাম।
-কিছু চিন্তা করেছ? এই ভাবে বাকি জীবন টা কাটাবে?
-মন্দ কী?
আমরা এসে গেলাম নবীনের বাসার সামনে। বড় বাসা। সামনে সুন্দর করে ছাঁটা লন। চারিদিকে বিভিন্ন রং এর ফুল ফুটে আছে। হৈ চৈ শুনতে পেলাম বাসার ভিতর। ঢুকতেই নবীন এগিয়ে এলো।
-আমি যে কী খুশি হয়েছি কী বলব। আসুন। বলে পরিচয় করিয়ে দিলো ওদের নাট্যগোষ্ঠীর কর্মীদের সাথে।
আসমা, সায়মা, মীতুল, চন্দন, করিম,রোকন।
একটু দুরে বসেছিলেন, বয়স্ক এক ভদ্রলোক। গুরু গম্ভীর। নবীন আমাকে নিয়ে এলো উনার সামনে।
-আমাদের নাটকের পরিচালক, জব্বার ভাই।
বুঝলাম এখানে সবাই ভাই আর ভাবী। অথবা নাম ধরে ডাকা। বয়স এখানে উহ্য।
-অভিনয় করেছেন কখন? জব্বার ভাই জিজ্ঞাসা করলেন আমাকে।
-না, ওটা আমার সাধ্যের বাহিরে। নবীন জোড় করল, তাই আসা।
-কার কোনটা সাধ্যের বাহিরে তা কি সে জানে? আপনার মধ্যে যে প্রতিভা বিরাজ করছে তা হয়ত আপনি জানেন না।
শুনতে বেশ ভালোই লাগছিলো আমার ভিতরের প্রতিভার কথা শুনে। কে না চায় নিজের গুনের কথা অন্যের মুখে শুনতে।
ওদের নাটকের মহড়া আরম্ভ হোল।
আমি টেবিল থেকে সমুচা আর কফি নিয়ে ঘরের কোণে একটা চেয়ার টেনে বসলাম।
শেক্সপীয়ারের ওথেলো নাটক।
শুরুতেই দেখা গেলো Brabantio র ভূমিকায় যে অভিনয় করবে সে তখনো পৌঁছায়নি। পরিচালক গজগজ করতে লাগলেন।
-কতদিন বলেছি সময় মতো না আসতে পাড়লে ছেড়ে দাও।
তারপর উনি আমার দিকে তাকালেন।
-আপনি কি Brabantio র ভূমিকা টার প্রক্সি দিতে পারবেন?
-আমি?
অবাক বিশ্বয়ে তাকালাম উনার দিকে।
বলে কি? বাংলা নয়, ইংলিশ। তারপর শেক্সপীয়ারের লেখা। পাগল হোল নাকি ভদ্রলোক।
-হ্যাঁ, আপনি।
-ও আমার দাড়া হবেনা।
-কেন? ইংলিশ বলতে, পড়তে পারেন না? বেশ কটমট করে আমার দিকে চেয়ে উনি বললেন।
প্রথম দেখা আর চেনাতে এইভাবে কেউ বলতে পারে আমি ভাবিনি। তবে আমি মনে মনে ভাবলাম পরিচালক হতে হলে এমনি হওয়া উচিৎ।
আমাকে পড়তে হয়েছিল সেদিন। অভিনয় করে নয়।
মহড়া শেষে নবীন আমাকে নিয়ে এলো সবার মাঝে। বলল, উনি আজ থেকে আমাদের নাট্যগোষ্ঠীর একজন।
বেশ কিছু সময় পাড় হয়ে গেছে। আমি ভুলতে বসেছিলাম, নবীন, জব্বার ওদের নাম গুলো। এমনি এক সময়ে নবীনের ফোন এলো।
-অনেকদিন পরে, তাই না শমিত ভাই।
-হ্যাঁ, তা কি মনে করে। আমি জানতে চাইলাম।
-নতুন নাটক নামাবো সামনের নাট্যমেলায়। আপনার একটা রোল আছে সেখানে। আমি জানি আপনি না, না করবেন কিন্তু আমি শুনতে রাজি নই।
-না, লোক হাসাতে পারবো না। আর সেই সাথে তোমাদের নাটকটার ভরাডুবি করতে চাই না।
ও শুনল না। আমাকে যেতে হোল মহড়ার দিন। সেই পরিচালক। জব্বার ভাই।
নাটকের নাম সকাল সন্ধ্যা। প্রেমের কাহিনী। তবে মাঝ পথে শোকাবহ ঘটনা আছে। নায়িকার ভাই মারা যাবে ক্যান্সারে।
আর ঐ ভাইয়ের অভিনয়টা করতে হবে আমাকে।
বললাম, ঐ স্টেজে উঠা আর গলায় ফাঁস দেওয়া আমার কাছে সমান। কাজেই ও হবে না।
নবীন কে বললাম। ও শুনল না। না শুনল পরিচালক জব্বার ভাই।
আমি মুখস্ত করলাম। কিন্তু মহড়ার দিন সব তালগোল পাকিয়ে যেতো। আগের সংলাপ পিছে, পিছের সংলাপ আগে চলে আসতো।
একদিন জব্বার ভাই আর ধৈর্য রাখতে পারলেন না। আমার সংলাপ শেষ হওয়ার আগেই আমাকে থামিয়ে দিলেন।
দাঁত কিড়মিড় করে বললেন, ইমোশান আনুন। আপনি মৃত্যুপথযাত্রী। আপনার অভিনয় দেখে মনে হচ্ছে আপনি ফুটবল খেলা দেখতে যাচ্ছেন।
-আমি তো বলেছিলাম, আমার দাড়া হবে না। বেশ তেজেই বললাম।
-আলবৎ হবে। আমি আপনাকে দিয়েই এই রোল করাবো।
পরিচালক ঐ দিনের মত মহড়া বন্ধ করে দিলো। আমি আমার জ্যাকেট টা নিয়ে বেড়িয়ে এলাম। মেজাজ তিরিক্ষি। হনহন করে গাড়ীর কাছে আসার আগেই পিছনে আমার নাম ধরে কে যেন ডাক দিলো।
মনীষা। এই গোষ্ঠীর সাথে অনেকদিন ধরে আছে।
-রাগ করে চলে যাচ্ছেন? জব্বার ভাই ঐ রকমই। কত বকা আমি যে খেয়েছি তার কাছে।
-তাই বলে—–
কথা শেষ না হতেই মনীষা বলল, আপনি কোনদিকে যাবেন।
বললাম আমার ঠিকানা।
-আমার বাসাও ঐদিকে, গাড়ী আনতে পারিনি আজ, নামিয়ে দিতে পারবেন? অবশ্য—
-উঠুন।
চলার পথে কথা হচ্ছিল, খুবই সাধারন, মামুলি কথা। তবুও মনে হোল ওর হৃদয়ে কাঁটা দাগ আছে।
দীর্ঘ নিশ্বাস। মাঝে মাঝে আনমনা হয়ে যাওয়া।
বাসার সামনে গাড়ীটা দাড় করালাম। ছোট্ট কেপ হউজ। আমি নেমে দরজাটা খুলে দেওয়ার আগেই মনীষা নিজেই নেমে পড়লো।
-ভিতরে আসুন, বিকেলের চা টা না হয় এক সাথে বসে খাবো।
বলার ভিতর একটা আন্তরিকটা ছিল, যেটাকে উপেক্ষা করা গেলো না।
ছিমছাম করে সাজানো বৈঠকখানা। দুটো সোফা। পাশে একটা চেয়ার। সামনে টিভি।
-চা, না কফি?
-কফি। বলে পাশে রাখা সমরেশ মজুমদারের সাতকাহন বই টা হাতে নিলাম।
মনীষা ভিতরে চলে গেলো। আমি বইয়ের পাতা উল্টাতে উল্টাতে ঘরের চারিদিক টা দেখছিলাম।
মনীষা কফি নিয়ে এলো। সাথে ভাজা পোড়া।
গল্প করতে করতে বিকেল টা পেড়িয়ে গেলো। মনীষাই কথা বলল বেশি, আমি শ্রোতা। ভুলে গিয়েছিলাম দুপুরের ঘটনা টা।
-এবার উঠি। বলে আমি উঠে দাঁড়ালাম।
-আবার কবে আসবেন? না, মানে কথা বলার একটা লোক পেলাম, তাই বলছি। আমরা কি ফোন নাম্বার আদান প্রদান করতে পারি? বলে সে আমার দিকে তাকাল।
-অবশ্যই, বলে আমি আমার ফোন নাম্বার টা দিলাম। সেও দিলো তারটা।
মনীষা গাড়ী পর্যন্ত এলো আমার সাথে।
এরপর অনেক বার মনীষার সাথে হেঁটেছি। বসেছি নদীর পাড়ে। লোকে কানাঘুষা করেছে। কান দেইনি। বলেছে সে তার জীবন কাহিনী।
প্রেমের বিয়ে। টেকেনি।
বাচ্চা না হওয়াতে শুধু খোটা দিতো মোহিত। খুত ধরত সব কিছুতে। তাই একদিন ইতি টেনে চলে গেলো ছোট্ট একটা এপার্টমেন্ট ভাড়া করে। সেখানে ছিল কয়েক বছর। তারপর এই বাসা।
আমরা দুজন আটকিয়ে গেলাম বন্ধুত্তের বন্ধনে।
মহড়া চলছিল। আমার অভিনয়ের উন্নতি হয়নি। তবু জব্বার ভাই হাল ছাড়েনি। হঠাৎ ই একদিন মহড়াতে বাঁধা পড়ল। নায়িকার কবিড ধরা পড়েছে। আপাতত মহড়া চোদ্দ দিনের জন্য বন্ধ।
বাসাতে বসা। মাঝে মধ্যে মনীষার সাথে কথা হয়।
কদিন ধরে শরীরটা দুর্বল লাগছিল। ঘুসঘুসে জ্বর। পাত্তা দেইনি।
মনীষাকে বলেছিলাম। সে বলল, ডাক্তার দেখালে ভালো হতো না?
অনিচ্ছা সত্বেওগেলাম ডাক্তারের কাছে। ডাক্তার রক্ত পরীক্ষা করতে দিলো।
দুদিন পরে ডাক্তারের অফিস থেকে কল এলো।
ভূমিকা না করে বলল, মিস্টার শমিত আপনাকে একটা অনকোলজিস্টের কাছে যাওয়া দরকার। আমি রেফার করছি। ব্লাড রিপোর্ট খুব একটা ভালো আসেনি।
ধক করে উঠল বুকটা। সেই রাজরোগ। তিলে তিলে শেষ করে জীবন টাকে।
দেখালাম।
বলল, ব্লাড ক্যান্সার।
জিজ্ঞাসা করেছিলাম, কতদিন হাতে সময় আছে।
-দুই থেকে চার বছর। নির্লিপ্ত ভাবে বলল ডাক্তার।
ডাক্তার কে বলেছিলাম, কিমও এখন দিতে পারবো না। কটা দিন সময় দিতে হবে। নাটক আছে আমার।
-ডাক্তার অবাক হয়ে তাকিয়েছিল আমার দিকে।
নাটক মঞ্চস্থ হতে চলেছে।
আজ সেই দিন। অডিটোরিয়ামে তিল ধরেনের জায়গা নেই।
আস্তে আস্তে পর্দা উঠল।
প্রথম পর্ব, দ্বিতীয় পর্ব শেষ হোল। লোকের করতালি আমি শুনতে পাচ্ছি।
তৃতীয় পর্ব।
আমি বিছানায় শুয়ে। মৃত্যুপথযাত্রী। পাশে বসে আছে আমার মেয়ে কণিকা। বলছে, তুমি আমাদেরকে ছেড়ে যাবেনা বাবা।
একি লীলাখেলা। আমি সত্যিই তো ওই পথেরই যাত্রী। কে জানতো আমাকেই এই চরিত্রটা করতে হবে। অদৃষ্টের কি পরিহাস।
কি সংলাপ আমি বললাম আমি জানিনা। মনে হতে থাকলো আমার হাতে বেশি সময় নেই। আমাকে যেতে হবে।
কান্নায় ভেঙে পড়লাম। দর্শক ভাবল আমি দারুন অভিনয় করছি।
শুধু কানে এলো করতালি।
আমি চিৎকার করে বলতে চাইলাম, এ অভিনয় নয়। আমি অভিনয় জানিনা। আমি অভিনেতা নই।
আমি অভিনেতা নই।
আস্তে আস্তে পর্দা টা নেমে এলো।
–
–