শৈবাল আর আমি একই স্কুলে পড়তাম। ও ছিল লেখাপড়ায় তুখোড়। আমি ছিলাম ব্যাক বেঞ্চার। শুধু পড়াশুনায় নয়, খেলাধুলায়ও সে একেবারে চৌকস না হলেও মন্দ নয়। আমরা যেমন মাঠের বাহিরে দাড়িয়ে খেলা দেখতাম, ও থাকত মাঠের ভিতরে। এমন কি ১০০ মিটার স্প্রিন্টে দ্বিতীয় স্থান ওর ছিল অবধারিত। কিন্তু ঘোরাঘুরি করত সে আমাদের সাথে। আমি, মতলেব, দীলিপ আর সে। স্কুলের শেষ বর্ষের শেষ পরীক্ষাতে সে ফার্স্ট ডিভিশন সাথে চার টাতে লেটার নিয়ে চলে গেলো রাজধানীর দিকে নাম করা কলেজে ভর্তি হবে বলে।
আমার সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলো। তারপর অনেক বছর পরে হঠাৎ করে একদিন দেখা হোল কার্জন হলের চত্তরে। আমি হেটে যাচ্ছিলাম বন্ধুদের সাথে, পাশ দিয়ে এক তরুন তরুনী হেটে গেলো।
হঠাৎ শুনতে পেলাম আমার নাম ধরে কে যেন ডাকছে পিছন থেকে। ফিরে চাইলাম। ও এগিয়ে এলো সাথে তরুনীটি ও।
-চিনতে পারছিস না? বলে হাত দিয়ে মৃদু ভাবে ঠেলা দিলো।
কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর চিনতে পারলাম।
-এই শালা তুই। বলে জড়িয়ে ধরলাম। তরুনী চেয়ে রইল আমাদের দিকে।
আমার বন্ধুরা হাটতে হাটতে বেশ দুরে চলে গেছে। জানি কোথায় যেয়ে তারা বসবে।
এই মুহূর্তে শৈবালের সাথে দেখা হয়েছে সেটাই বড় হলো আমার কাছে।
-পরিচয় করিয়ে দেই, কঙ্কনা, আমার বান্ধবী। পলিটিকাল সাইন্সে প্রথম বর্ষের ছাত্রী।
কঙ্কনা ওর হাত টি এগিয়ে দিলো।
-আর তুই? জিজ্ঞাসা করলাম ওকে।
-কেমিস্ট্রি তে। বলে উৎফুল্লের সাথে বলল, চল ক্যান্টিনে যেয়ে বসি।
বললাম, অনেকদিন পর দেখা, খুবই ভালো লাগছে, তবে এই মুহূর্তে তোদের মাঝে আমি বসবো না। তোদের সময় টুকু তোদের থাক। এই চত্তরে আবার তোর সাথে আমার দেখা হবে, কারন ঐ শেষ বিল্ডিঙের উপর তালায় আমার ক্লাস।
-ও তুই বাইওকেমিস্ট্রিতে আছিস।
-হ্যাঁ, তাহলে চলি আজ। কাল বারোটা চল্লিশে ক্যান্টিনে আয় দেখা হবে। বলে আমি পিছন ফিরলাম।
দেখা হয়েছিল।
তারপর আবারও আমরা হারিয়ে গেলাম। লেখাপড়া শেষে যে যার মত ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়লাম।
হারিয়ে যাওয়া বন্ধুকে আবার যখন পেলাম, তখন নদীর জল অনেক দুরে গড়িয়ে গেছে। সেই উচ্ছল শৈবাল আর নেই। দেখা হয়েছিল বন্ধুর মেয়ের বিয়েতে। দুর থেকে আমি দেখছিলাম তাকে। দ্বিধা ছিল মনে। তবুও এগিয়ে গেলাম। ও তাকালও আমার দিকে।
কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে উঠে দাড়িয়ে জড়িয়ে ধরল।
-কতদিন এদেশে? জিজ্ঞাসা করলাম।
-১৯৭৪ থেকে।
-মাই গড, আমি এসেছি বছর দশেক হোল। তোর গিন্নি কোথায় তার সাথে মোলাকাত করে নেই।
-সে নেই।
-মানে? হতভম্বের মতো তাকালাম ওর দিকে।
-চলে গেছে উপরে, তা পাঁচ বছর হয়ে গেলো। তুই আছিস কোথায় বল, একদিন দেখা করব। অনেক কথা বলার আছে।
আমি ওকে আমার ঠিকানা আর ফোন নম্বর দিয়ে আস্তে আস্তে এলাম আমার টেবিলে।
ও এসেছিল। অনেকক্ষণ বসেছিল। বলেছিল ওদের প্রেমের কথা। আমি শুনতে শুনতে চোখ টা কতবার যে মুছে ছিলাম আজ তা মনে নেই।
আজ ওর জীবনী লিখতে যেয়ে অনেকবার আমাকে উঠে যেতে হয়েছে ঝাপসা চোখে জানালার কাছে।
কঙ্কনার সাথে শৈবালের দেখা হয়েছিল শৈবালের বোনের বাসায়। চোখে কাজল,কপালে টিপ, পরনে সাদা শাড়ী কালো পাড়, দুটো বেনি করা চুল। ছিপছিপে গড়ন।
তোমার নাম?
কঙ্কনা।
কি যেন সেদিন শৈবাল দেখেছিল কঙ্কনার মাঝে তাইতো প্রায় সে আসতো মোহাম্মদপুরে ওর বোনের বাসায়।
দুজনে বসে গল্প করতো।
গল্পে গল্পে শৈবাল জানতে পেরেছিল কঙ্কনা শৈবালের দুলাভাইয়ের খালাতো বোন। সবে ইডেন কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করে এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবে। আপাতত থাকে এখানে।
শৈবাল জিজ্ঞাসা করেছিল কঙ্কনা কে , এবার কি পড়বে ?
-ভাবছি পলিটিকাল সাইন্সে অনার্স নিয়ে পড়ব। কিন্তু এত বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে কোথায় গিয়ে কি করতে হবে কিছুই তো জানিনা। আপনি কি ব্যাস্ত, না হলে আমাকে যদি একটু সাহায্য করেন। কোন সংকোচ না করে জিজ্ঞাসা করেছিল শৈবাল কে।
-কোন সমস্যা নেই, আমি তোমাকে সাহায্য করতে পারি। বলেছিল শৈবাল।
এই পর্যন্ত বলে শৈবাল একটু থেমেছিল। আমিই জিজ্ঞাসা করলাম, কিরে থামলি কেন?
-তারপর কি জানিস, উপরওয়ালা কলকাঠি নাড়িয়ে সব ঠিক করে দিল। বোন আর মহিম ভাইকে বেশ কিছুদিনের জন্য চলে যেতে হোল মহিম ভাই এর দেশের বাড়ীতে। আর কঙ্কনার কোন থাকার জায়গা না থাকাতে তাকে
আমার বোন আমাদের বাসাতে রেখে গেলো। আর সেই সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে গণ্ডগোল হওয়াতে সব ছাত্রদের কে হল ছেড়ে দিতে হোল। আমি বাসায় এলাম।
এর পরের ঘটনা, ওরা দুজনে ঘরে বসে লুডু খেলে, হেসে গড়িয়ে পরে। পায়ে পায়ে টোকা লাগে। তাস খেলতে যেয়ে একের হাত অন্যের হাত স্পর্শ করে। তাকায় দুজনে একে অন্যের দিকে।
কবে কখন যে কঙ্কনা শৈবালকে তুমি বলতে শুরু করেছে সে নিজেও জানে না।
শৈবাল কঙ্কনার হাতটা নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে বলেছিল, ঠকবেনা তুমি কথা দিলাম।
কঙ্কনা ঠকেনি।
কঙ্কনা ভর্তি হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে। শৈবাল প্রতিদিন আসে ছাত্রী হলের গেটের কাছে। কঙ্কনা বেড়িয়ে এলে
ওরা এসে বসে দুই গাছের ছায়ায়, বসে খোলা আকাশের নিচে। সন্ধ্যা হয়ে আসে, কথা ফুরাতে চায়না।
কঙ্কনা বলে, জীবনে এই প্রথম কারোর হাতে আমি হাত রেখেছি, এই হাত রাখাই যেন আমার শেষ হাত রাখা হয়। তোমার হাতেই যেন আমি মরতে পারি।
শৈবাল চেষ্টা করছিল বিদেশে যাওয়ার। সুযোগ টা এলো নিউইয়র্কের একটা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। কিন্তু খরচের পরিমান দেখে সাহস করতে পারছিল না। কঙ্কনাই বলেছিল, যাও একটা কিছু ব্যবস্থা হবে। এই সুযোগ হয়ত আর আসবে না।
রওয়ানা দেওয়ার আগের দিন ওরা বসেছিল ইগলু ক্যাফেতে। অনেক কথার পর শৈবাল বলেছিল, একটা বছর অপেক্ষা করো সোনা, আমি এসে তোমাকে নিয়ে যাবো।
বাহিরে বৃষ্টি, কঙ্কনার চোখে জল।
নিউইয়র্কে এসে শৈবাল উঠল এক বন্ধুর বাসায়। কিছুদিন পরে বুঝতে পারলো একটা কাজ নিতে হবে। টাকা পয়সা দরকার। স্কলারশিপ পাওয়ার পর ও, লাগবে আরও টাকা, আছে দৈনন্দিন জীবনের খরচ। কাজ নিলো একটা রেস্টুরেন্টে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফেরার পরে সন্ধ্যায় যায় সেখানে। বাসায় আসতে আসতে বেজে যায় রাত বারো টা। পড়াশোনা করে সাবওয়েতে ট্রেনের কামরায় ।
সময় টা দ্রুত পেড়িয়ে গেলো। বছর ঘুরে এলো। কথা দিয়েছিল সে, এক বছর পরে সে ফিরবে। বিয়ে করবে।
শৈবাল তার এক ভাবীকে নিয়ে গিয়েছিল কেনাকাটা করতে। বিয়ের বাজার বলে কথা।
ভাবী জিজ্ঞাসা করেছিল, কি কি কিনতে হবে জানো?
-আমি কি করে জানবো, সেইজন্যই তো তোমাকে নিয়ে এলাম।
-মাপ জানো?
-কিসের মাপ? আকাশ থেকে পড়েছিল শৈবাল।
-এই যে ৩২,৩৩, বি সি। ঠিক আছে, গড়ন কি রকম।
শৈবাল একটা মেয়ে কে দেখিয়ে বলেছিল, ওর মতো তবে লম্বায় একটু শর্ট।
-ঠিক আছে। বলে ভাবী, চলে গেলো।
ফিরে এলো কিছুক্ষণ পরে। শৈবাল এবার বুঝতে পারলো ভাবী কি জানতে চাইছিল।
কেনাকাটা শেষ, নিয়েছে কসমেটিক, কিনেছে গোলাপি সুটকেস।
২৬ শে অক্টোবর বিয়ে। শৈবাল ভাবছিল কঙ্কনার কথা, ভাবছিল ভবিষৎ এর কথা।
বিয়ে শেষে দুই মাস পরে শৈবাল ফিরে এলো নিউইয়র্কে। টাকা জমাতে হবে। বাসা নিতে হবে। মাথার ভিতর শত চিন্তা। রেস্টুরেন্টের ওয়েটারের কাজটা শুরু করলো। আরও দুটো বছর লাগবে পিএইচডি টা শেষ করতে।
দেখতে দেখতে কেটে গেলো ছয় টা মাস। কঙ্কনা আসবে। বাসা পাওয়া দুরহ ব্যাপার। বিধাতা মুখ তুলে চেয়েছিল। এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু তারই বিল্ডিং এক কামরার একটা রুমের ব্যবস্থা করে দিলো।
ঘর সাজাল বিল্ডিং এর বেজমেন্টে পড়ে থাকা সোফা, খোঁজ দিয়েছিল বিল্ডিং এর সুপার, তাই দিয়ে। পাঁচশ ডলার দিয়ে কিনে আনল বেডরুম সেট, সাথে ডাইং টেবিল। রেস্টুরেন্ট থেকে নিয়ে এলো কফির খালি জার। সাজিয়ে রাখল তার ভিতরে বিভিন্ন ধরনের মসলা দিয়ে।
শৈবাল ছুটি নিয়েছিল কয়েক দিনের জন্য। যেদিন কঙ্কনা এসেছিল পরের দিনই নিয়ে গিয়েছিল সারকেললাইনে। ওর পরনে ছিল বড় বড় ছাপের শিফনের শাড়ী। চোখে গোল ফ্রেমের চশমা। অপূর্ব লাগছিল কঙ্কনা কে শৈবালের চোখে। কঙ্কনা তার শাড়ী সামলাতে সামলাতে বলেছিল, ঐ বুঝি এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিং, ঐ যে দুরে বুঝি টুইন টাওয়ার। আনন্দে উচ্ছল ওরা।
কঙ্কনা তখনো শাড়ী ছেড়ে প্যান্ট ধরেনি। দুজনে বসে থাকত রেডিও সিটি মিউজিক হলের সামনে। চোখ ভরে দেখত রকফেলার সেন্টারে স্ট্যাচু টা। কঙ্কনা শৈবালের কাঁধে মাথা রেখে বলত, এ দেখার তো শেষ নেই এখন আমি তোমাকে দেখব।
শৈবাল ওর ঠোঁট দিয়ে চেপে ধরত কঙ্কনার লালচে রং এর ভিজে ঠোঁট। হারিয়ে যেতো দুজন ভালোবাসার গভীর বন্ধনে।
কয়েক মাস পার হয়ে গেলে কঙ্কনা কাজ নিয়েছিল এক কলমের কারখানায়। ভোর সাতটায় বেড়িয়ে যায়। আসে বিকেল পাঁচটায়। শৈবাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ শেষে যায় তার দ্বিতীয় কাজে, রেস্টুরেন্টে। ফিরতে ফিরতে বাজে রাত একটা। কঙ্কনা তখন ঘুমিয়ে। তাই ওদের দেখা হতো মাঝ পথে এক ষ্টেশনে। কিছুক্ষণ সময় কাটাত দুজনে। তারপর কঙ্কনা চলে যেতো বাসার দিকে, আর শৈবাল চলে যেতো তার দ্বিতীয় কাজে। কোন অভিযোগ ছিলনা কঙ্কনার। কোনদিন ওর মুখে হাসি ছাড়া কিছু দেখেনি শৈবাল।
সময় বয়ে গেলো। শৈবাল তার পিএইচডি শেষ করার পরে কাজ পেলো এক বড় কোম্পানিতে। সছলতা এলো জীবনে। কোল জুড়ে এলো এক ফুটফুটে ছেলে। আরও আট বছর পরে এলো এক মেয়ে।
তারপর জীবনের অনেক টা পথ পেড়িয়েছে ওরা চারজন মিলে। দেখেছে পৃথিবীর বিভিন্ন শহর। একে একে ছেলে মেয়ে বড় হোল। নাম করা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে বের হোল দুজনে।
ওরা নিজেরা নিজের মত করে বেছে নিলো ওদের প্রিয়জন কে। ওরা সংসার পাতলো ওদের মত করে।
মানুষের জীবনে এর চেয়ে বড় পাওয়া আর কি হয়। ছেলে মেয়েরা মানুষের মত মানুষ হয়েছে। ঘরে এসেছে বৌমা, এসেছে জামাই। এবার ওদের ছুটি। ওরা শুধু আনন্দ ফুর্তি করে ঘুরে বেড়াবে সারা পৃথিবী।
এত সুখ এত আনন্দ ওদের ভাগ্যে সইল না।
কঙ্কনা একদিন বলল, আমার মাজায় ভীষণ ব্যাথা। আমি আর পারছি না।
শৈবাল নিয়ে এলো কঙ্কনা কে হাসপাতালে। বিভিন্ন টেস্ট, সিটি স্ক্যান, এমআরআই করা হোল।
তখন সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে। ছেলেমেয়েরা মায়ের পাশে। শৈবাল হলঘরে অস্থির হয়ে পায়চারি করছে। কাঁধে হাতের পরশে শৈবাল ফিরে তাকাল। পালমোনোলজিস্ট। ফিরে তাকাতেই বলল, একটা কথা বলব, আপনার স্ত্রীর ফুসফুসে একটা স্পট দেখা যাচ্ছে, মনে হয় ক্যান্সারাস। অবশ্য বায়োপসি করার পরে বলতে পারবো।
শৈবালের মনে হোল, চারিদিক অন্ধকার হয়ে আসছে, চিৎকার করে বলতে ইচ্ছা করলো, এ সত্যি নয়।
বায়োপসি রেজাল্ট ভালো এলো না। ফুসফুসে ক্যান্সার। ধরা পড়েছে অনেক পরে।
শৈবাল কঙ্কনার বিছানার পাশে এসে বসলো, চুমো দিয়ে বলল, ভয় করোনা সোনা। এখন অনেক নতুন নতুন ওষুধ বেড়িয়েছে। তুমি ভালো হয়ে যাবে।
কঙ্কনা কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, তোমাকে নিয়ে বেহেশত আমি এই পৃথিবীতেই বানিয়ে ছিলাম, আমার কোন আফসোস নেই। আর কি জানো, আল্লাহ যখন আমাকে এত সুখ দিয়েছিল তখন তো আমি বলিনি কেনও দিলে, আজ যখন সে আমাকে নিতে চলেছে তখন কেনও বলব হোয়াই মি?
কেমথেরাপি দেওয়া শুরু হোল। আস্তে আস্তে ভালো হতে থাকলো। কিন্তু বেশি দিনের জন্য নয়। মাত্র আড়াইটা বছর। কেমথেরাপি আর কাজ করলো না। শৈবাল ছুটে গেলো আরও বড় হাসপাতালে। যেখানে ওরা এই বিষয়ে রিসার্চ করে। ক্লিনিকাল ট্রয়াল অনেক ঔষধ আছে। সে সব ঔষধের পরীক্ষা নিরীক্ষা তখনো শেষ হয়নি। ডাক্তার বলল, ঐ ঔষধ দিয়ে দেখা যেতে পারে। কাজ হলেও হতে পারে।
দেওয়া হোল, কাজ হোল না। কঙ্কনা তখন কষ্টের শেষ সীমানায় পৌছে গেছে। শৈবাল উদ্ভ্রান্তের মত দৌড়ে গেলো অঙ্কলজীস্টের কাছে। জিজ্ঞাসা করল, মিরাকেল কি ঘটেনা? হয়ত আবার সে আস্তে আস্তে ভালো হয়ে যেতে পারে?
অঙ্কলজীস্ট কিছুক্ষণ ওর দিকে তাকিয়ে থেকে বলেছিল, আমার ত্রিশ বছরের অভিজ্ঞতা তে আজ পর্যন্ত কোন মিরাকেল ঘটেনি। তুমি মন শক্ত করো। ওকে যেতে দাও।
শৈবাল দুই হাতে মুখ ডেকে কাঁদতে কাঁদতে ফিরে এসেছিলো।
ততক্ষনে নার্স কঙ্কনার শরীরে লাগানো যন্ত্রপাতি গুলো খুলেতে শুরু করেছে।
সব শেষ, আস্তে আস্তে কঙ্কনার সারা শরীর ঠাণ্ডা হয়ে এলো। ও চলে গেলো সেই না ফেরার দেশে।
কান্নার রোল উঠলো ক্যান্সার সেন্টারের ২২২ নম্বর কক্ষে। কাঁদছে ছেলে সুশান্ত, কাঁদছে মেয়ে সুস্মিতা। কাঁদছে শৈবাল।
দীর্ঘ চল্লিশটা বছর হাতে হাত ধরে যার সাথে পথ চলেছিল, সব বাঁধা বিপত্তি পাড় করেছিল, সে আজ তাকে একলা রেখে চলে গেলো।
যাওয়ার আগে একদিন কঙ্কনা বলেছিল, তোমাকে একলা রেখে আমি চলে যেয়েও শান্তি পাবনা। তুমি তো রান্না করতে জাননা। খাবে কোথায়, থাকবে কি ভাবে?
হায়রে, চলে যাওয়ার আগেও তার চিন্তা শুধু শৈবাল কে নিয়ে।
ছেলে মেয়েরা যার যার বাসায় ফিরে গেছে।
শৈবাল আজ একলা। চল্লিশ টা বছরের বিবাহিত জীবনের একটা দিনও খুজে পেলো না যেখানে ভালোবাসা ছাড়া আর কিছু ছিল।
বিশাল বাড়ীটায় আজ নেই কোন কোলাহল, নেই কোন টুংটাং শব্দ। আছে শুধু তার হাতের ছোঁয়া।
নিস্তব্ধ শূন্য বাড়ীতে সে আজ একা।
স্মৃতির ভাড়ে আজ সে ক্লান্ত। জানে না এর শেষ কোথায়।