স্বর্গ

কেমন আছো? ডাক শুনে চোখ তুলে চাইল অনির্বাণ। বিশ্বাস হচ্ছেনা। চোখ দুটো কচলিয়ে আবারো চাইল। এই বয়সে চোখে ছানি পড়ার কথা নয়।

অঞ্জনা তুমি?

হা আমি। কি করছো একলা বসে।

কিছু নয় । কফি টা শেষ করে উঠবো ভাবছিলাম। তুমি যখন এলে তাহলে আরও একটু বসব। তুমিও বসো। সেই যে চলে গেলে বাই বলে, পেছনে আর তাকাওনি। আমারও বলার কিছু ছিলনা।

হা আমাকে বাধ্য হয়েই যেতে হয়েছিল। আমার করনীয় কিছু ছিলনা।

নতুন জায়গা কেমন লাগছে ?

যার হাত ধরে চলে গিয়েছিলাম, বলতে পার যে আমাকে হাত ধরে নিয়ে গিয়েছিল, তার খোজ আমি আর পরে পাইনি। পরিচয় হয়েছিল অন্যদের সাথে। তারা তাদের মত, নিজেদের নিয়ে বাস্ত। আমি আমার মতই আছি। ঘুরি ফিরি। হই হট্টগোল নাই। ফিরে যে আসবো তোমার কাছে তারও উপায় নেই। তোমাকে যে বলবো এসো আমার এখানে তা বলতে মনে দ্বিধা লাগে। অন্য পথে পা দেওনি দেখছি? এখনো একলাই রয়ে গেলে।

ঠিক ধরেছ ? লোকে কানা ঘুসা করে। কান দেইনে। তোমার উপর রাগ দুঃখ কোনটাই নেই। পারিপার্শ্বিক অবস্থা তোমাকে বাধ্য করেছিল। সেই কথা ভেবেই কাটিয়ে দিচ্ছি দিনগুলি।

সারাদিন কি করো?

কাজ শেষে বাসায় এসে চাল টা চাপিয়ে দেই। তুমি চলে যাবার পরে উনন আর আমার জলেনী। কিনে আনা অথবা অনন্যের দেওয়া খাবার গরম করে গলাধী করন করি।

এই ডিপার্টমেন্ট তো তোমার আয়েত্তে কোন সময় ছিলনা।

কি করবো বলো ? বাধ্য হয়ে অল্প কিছু করতে হয় বেচে থাকার জন্য।

ছুটির দিন গুলি কি ভাবে কাটে?

দূরে ধুধু মাঠে একলা বসে থাকি। বাঁশি বাজাতে জানলে ভালো হতো। জনও শূন্য মাঠে বাঁশির সুর বিরহের বেদনা এনে দেয়। বল তোমার কেমন লাগছে নতুন জাগা। বললে তো যার সাথে হাত ধরে গেলে সে এখন তোমার সাথে নেই।

না নাই। তাকেও বাধ্য হোয়েও অনন্যদের কাছে যেতে হয়। ওই যে বললাম একা একাই কাটাই। জাগা টা সুন্দর । বলেতে পারো মনমুগ্ধ কর। যেনো হাতে আকা ছবি । ফলের   গাছের অভাব নেই। নদী বইছে নিচে। ওখানকার যারা বাসিন্দা তাঁরা সবাই যে যার মত বাস্ত। বন্ধুত্ব করার কোন উপায় আছে বলে মনে হয়না । আমি যে শহরে থাকি সেটা বিশাল। ওখান কার আইন কানুন এমন ভাবে তোইরি, যে তোমাকে কিছু করতে হবেনা। তুমি শুধু থাকবে ধ্যানএ মগ্ন। হত্যা রাহাজানি বলে কিছু নাই।

তা জাগা টা কোথায় বলবে কি? তা হলে আমিও না হয় তল্পী তল্পা ঘুছিয়ে বেড়িয়ে পড়তাম।

না তোমার এখনো সময় হয়নি । বুঝেছি তোমার দিন আগের মত আর কাটছে না । আমি যে তোমার কাছে আবার আসবো তারও কোন উপায় নেই। আজ অনেক দিন পরে এই শহরে এসে ছিলাম, তোমাকেই খুঁজছিলাম , পেয়েও গেলাম। তাও আবার একেলা।

ভালো করেছ। অনেক দিন পরে তোমাকে দেখে ভালোই লাগছে।

মনে আছে আমরা কাঞ্চন জঙ্ঘা দেখতে গিয়েছিলাম। ভোরের সূর্যের রশ্মি এসে পরেছিল পাহাড়ের চুড়ায়। অপূর্ব আলোর খেলা। তুমি আমার কোলে মাথা রেখে বলেছিলে , কি বলতে দেবেনা ?

না , পিছনে আমি ফিরে যেতে চাইনা । তুমি ও না । তাতে করে আরও দুর্বল হয়ে পড়বে মনের দিক থেকে । তোমাকে সামনে চলতে হবে। সেই যে গুন গুন করে গাইতে “ নদীর নাম সই আঞ্জনা” এখনো গাওকি?

গাই মাঝে মাঝে। জানো কাল তোমার দুটো ছবি অনেক বড়ো করে বাধিয়ে রেখেছি আমাদের শোবার ঘরে, যাবে দেখতে ?

না থাক , যে বাসা তুমি ছেড়ে গিয়েছিলে নাই বা গেলে সেখানে । কতক্ষন থাকবে?

বেশিক্ষণ নয়। ফিরে যেতে হবে । তোমার সাথে আবার কবে দেখা হবে জানিনা । ভালো থেকো।

এক্সকীউস মি বলে একজন অনির্বাণ কে সম্বোধন করলো

অনির্বাণ তাকাল লোকটার দিকে.

এই খালি চেয়ারটা নিতে পারি?

You may also like

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *