এক অসমাপ্ত গল্প (১৭ পর্ব)

                                                   এক অসমাপ্ত গল্প (১৭ পর্ব)

    “কোথায় যাবো শুনবে? মালয়েশিয়া”। সানন্দা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইল। বিশ্বাস হচ্ছেনা।

  “ আকরাম আর আমি এক সাথে লেখা পড়া করতাম।  থাকে কুয়ালা লামপুর। ডাক্তার, কাজ করে এক নাম করা হাসপাতালে। ওর ঐখানে উঠবো। তোমাকে সারপ্রাইজ দেবো বলে কিছু বলিনি”। বলল আনন্দ।

টিকিট কেটেছ? প্রশ্ন সানন্দার

সব ঠিক। দুদিন পরে রওনা দেবো। সব কিছু গুছিয়ে নিও।

গোছান শেষ। এবার যাত্রা কুয়ালা লামপুর এর পথে। সানন্দা বসে ছিল জানালার পাশে। ওটা ওর প্রিয় জায়গা। বলল,” কোনদিন ভাবিনি এই দেশটা দেখতে পাবো”।

“তোমার ভাষায় উপরওয়ালার ইচ্ছা। তা না হলে কি দেখতে পেতে?”

সারে তিন ঘণ্টা পরে উড়োজাহাজ এসে পৌছাল কুয়ালা লামপুর এর ইনটারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে। কাস্টমস ক্লীয়ারেন্স এর লাইনে দাড়িয়ে দেখতে পেলো আকরামকে। ওর পাস থাকাতে চলে এসেছিলো একেবারে কাছে।

বেরিয়ে এসে পরিচয় করিয়ে দিলো সানন্দার সাথে।

“তুই শেষ পর্যন্ত এলি তাহলে। কতদিন পরে দেখা”।বলল আকরাম।

গাড়ী চলছে। অপূর্ব দৃশ্য চোখকে আকর্ষণ করে। আকরামের বাসা  হাসপাতালের  কম্পাউনডে। আসতে আসতে দুপুর পেড়িয়ে গেলো।

সুন্দর ছিমছাম বাসা। বড় বড় ঘর। সানন্দা এসেই আকরামের বৌ দীপার সাথে গল্প জুরে দিলো। মনেহোল অনেক দিনের চেনা। এ গুনটা সানন্দার সব সময়। যে পাত্রে রাখো সেই আকার ধারন করে।

আনন্দের সাথে দীপার এই প্রথম দেখা। দীপা এগিয়ে এসে আনন্দকে বলল,” আনন্দ দা তোমার কথা খুব যে একটা শুনেছি তা নয়। তবে দেখে মনে হচ্ছে, কোথায় যেন দেখেছি তোমাকে”।

“ একথা কস্মীন কালেও তোমার স্বামীকে বলবে না। তা হলে —“। কথা শেষ হওয়ার আগেই আকরাম হাসতে হাসতে বলল, “ তোর ইয়ার্কি ঠাট্টা রাখবি? খেতে বস”।

খাওয়া শেষে আনন্দ সোফাতে হেলান দিলো। সানন্দা গেলো তার রুমে।

   বিকেলে আনন্দ সানন্দাকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ল। আনন্দ আসার আগে পড়াশুনা করে এসেছে এই জাগার উপর। কি কি দেখবে, কি কি কিনবে।  আনন্দ সনন্দাকে বলল, “ আজতো সময় হাতে বেশি নেই চলো দেখে আসি বড় মল টা ”।

“ তুমি যেখানে নেবে সেখানেই আমি যাবো আনন্দ দা”

“ তোমরা কিন্তু বাহিরে খেয়ে এসোনা”। বলল দীপা ভাবী।

  আনন্দ সানন্দা এলো বুকীত বীনটাং ডিসট্রিক্টএ। নামকরা বড় বড় শপিং মল। হাটার পথে বিরাট ফোয়ারা। পাশে সান বাধানো।

“এ যেন আমাদের ওখানকার টাইম স্কয়ার। তাই না?” বলল সানন্দা।

“ হা, বসবে ওই সান বাধানো জাগায়?” বলল আনন্দ।

  “ না চলো, ওই মলটার মধ্যে।“

  সুন্দর একটা পার্লের নেকলেস পছন্দ হোল সানন্দার।

“ পছন্দ হয়?”

“কার জন্য”। জিজ্ঞাসা করল আনন্দ

“ আমার বড় মেয়ে অঞ্জলীর জন্য।“

“ খুব সুন্দর, নিয়ে নাও” বলল আনন্দ।

  কিনে নিয়ে ওরা বেরিয়ে এলো। বাহিরে ঝিরঝিরে বাতাস। শানবাঁধানো চত্বরে এসে বসলো। আনন্দ দুটো আইস ক্রীম কন নিয়ে এলো।

 খাওয়া শেষে উঠে পড়ল দুজন।

বাসায় এসে যখন পৌছাল তখন রাত ৯ টা। আকরাম দীপা বসে টিভি দেখছিল।

“ কোন পর্যন্ত গিয়েছিলে?” জিজ্ঞাসা করল দীপা

বীনটাং ডিসট্রিক্টএ।

“ তোমাদের বড় শপিং মল দেখা হয়ে গেলো। চলো খেতে বসি।“

খেতে খেতে কথা হোল, দীপা আকরাম এক সাথে পড়া কালীন পরিচয়। সেই সুবাদে বিয়ে। তাও অনেক বছর হয়ে গেলো। বাসা খালি। কাল আমরা বের হব পেট্রোনাস টাওয়ার দেখতে, বলল আকরাম।

 সকাল সকাল  বেরিয়ে পরেছিল ওরা। সাথে পানির বোতল, চিপস নিয়ে নিলো দীপা। সানন্দা সাদা কালো কামীজের সাথে ম্যাচ করে প্যান্ট পরে নিলো। চোখে প্রাদা সান গ্লাস।

পেট্রোনাস টাওয়ার, পৃথিবীর সব চেয়ে টলেসস্ট বিল্ডিং। আনন্দ সানন্দাকে বলল,” জানো এই টাওয়ারে Mission Impossible মুভির শুটিং হয়েছিল”। অবজারভেসন টাওয়ার থেকে দেখেছিল কুয়ালা লামপুর শহর। সব কিছু দেখা শেষে আনন্দ সানন্দাকে জিজ্ঞাসা করল কেমন লাগছে।

অপূর্ব। অতুলনীয়।

 নিউইয়র্ক থেকে একটা ফোন এলো। তারপরই সানন্দা বলল তার শরীরটা ভাল লাগছে না।

” আমাদের তাড়াতাড়ি নিউইয়র্কে ফিরে যেতে হবে আনন্দ দা। তোমার কোন অসুবিধা হবে না তো।“

কি যে বোলো।

পরের দিনই রওয়ানা দিয়ে আনন্দ সানন্দা ফিরে এলো ঝুম্পার বাসায়। আনন্দ সানন্দাকে জিজ্ঞাসা করেছিল “কি হয়েছে”।

সানন্দা উত্তর দেয়নি। শুধু বলেছিল,” দোয়া করো ওখানে যেয়ে যেন সব কিছু ভালো দেখতে পাই”।

আনন্দ দুদিনের মধ্যে ঠিক করে ফেলল সব কিছু। যাওয়ার আগে আমেনা ভাবী কে বলে গেলো ভিসার বাপারে। দিয়ে গেলো সব কাগজ পত্র।

এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়ে আনন্দ দেখল অঞ্জলী দাড়িয়ে। সানন্দা কে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকল। গাড়ীতে করে এলো  হাসপাতালে।  আনন্দ কিছুই বুঝতে পারলনা। জিজ্ঞাসা করতে মন চাইছে কিন্তু পারছেনা।  অবশেষে না জিজ্ঞাসা করে পারলনা।

“ বলোতো, কি হয়েছে?”

 অঞ্জলী বলল,” খালুর হার্ট অ্যাটাক হয়েছে”।

আনন্দ বাচ্চু কে চেনে। ওই বাসাতেই সানন্দা আনন্দকে প্রথম দেখে ছিল।

 ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের সামনে সবায় দাঁড়ান। সানন্দা এসে ওর বোনকে জড়িয়ে ধরল। দুজনে কাঁদল অনেকক্ষণ। আনন্দ এসে বাহিরে দাঁড়াল।

জমের সাথে যুদ্ধ করে হার মানতে হোল বাচ্চু কে। চলে যেতে হোল এই পৃথিবী থেকে।  আনন্দ সানন্দার পাশে এসে দাড়িয়েছিল এই দুঃসময়ে। যতটুকু করার সে করেছিল।

দিন শেষে মাস এলো। আস্তে আস্তে সানন্দা দুঃখের ভার কাটিয়ে উঠল।

আনন্দ একদিন বলল, “ সানন্দা এবার তোমার বিশ্রাম নেবার সময়। অনেক করেছ সবার জন্য”।

সানন্দা  তাকাল আনন্দের দিকে।

ক্রমশঃ

***** আগামী পর্ব হবে এক অসমাপ্ত গল্পের শেষ পর্ব ****

 

You may also like

6 Comments

  1. ভালো লাগলো গল্পটা।সেই সাথে মালোয়েশীয়ার বর্ননা।আনন্দ সানন্দার বন্ধুত্ব অটুক হোক।সানন্দা কি পারবে আনন্দের কথায় বিশ্রাম নিতে?সে কি বুঝবে আনন্দকে?

  2. উহু জমলোনা।এতদিনযা লিখেছো তার ধারে কাছে গেলোনা।দুঃখ পেলাম হতাশও হলাম।খুবতাড়াহুড়ো করেছো।তোমার মতো একজন কুশলী লেখকের কাছে এটা আশা করিনি।সানন্দার পাশে আনন্দ দাড়িয়েছে কিনতু কষট বেশী সানন্দার বোনের।এটা তুমি আবার লিখো।কি ভাবে লিখবে জানিনা।নইলে শেষ টুকু সুন্দর হবেনা।শেষটুকু এমন করো যাতে সবার মনেদাগ কাটে।সমালোচনা করার জন্য দুঃখিত।

  3. আনন্দ বাবু আপনার লেখা এক অসমাপ্ত গল্পের পর্ব গুলো অনেক ভাল হয়েছে, দোয়া করি আপনার শেষ পরবো সবার মনে দাগ কাটে , আগামীতে আরো ভাল ভাল কাহিনি লেখেন

  4. Dulavai l think Jharna apa is right. You finished this story so quick. lekhai moteo mon nai. maybe you get tiered.

  5. Asha korsi shesh parbo sabar mon chuye jabe Pathok chay Ananda ar Sananda jeno ake oporer kas teke dure sore na jay.We will be wait for next part.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *