১৮ ই মার্চ ২০১৭
গত মঙ্গলবার ঘূর্ণিঝড় স্টেলা ছড়িয়ে দেয়ে গেছে বরফের স্তূপ। মনে হচ্ছে ছোট ছোট সাদা বরফের পাহাড় চারিদিকে ছড়ান। আমি দেখছিলাম আমার জানালা দিয়ে। শান্ত আর বউমা আসবে লাঞ্চ করতে আমার সাথে। মেয়ে কে কল করেছিলাম সেও এসে যোগদান করবে কি না। বলল, না, ও আর রেজ যাবে বন্ধুদের সাথে। ফোনটা রেখে কফির কাপ টা হাতে নিতেই আবারও বেজে উঠল ওটা।
নাম্বার টা দেখে মনে হোল দেশ থেকে কেউ কল করেছে।
শমিত?
হাঁ
চিনতে পাড়ছ কি?
গলার স্বরে চিনতে পারার কথা নয়।
বললাম, না চিনতে পারছিনা। আপনি কে বলছেন?
কি আপনি আপনি করছ। তোমাকে তো আমি তুমি বলে বলছি।
গলক ধাঁধায় না রেখে যদি নাম টা বলেন।
আবারও সেই,বলেন, আমি ইয়াসমিন।
ইয়াসমিন? মনে করার চেষ্টা করলাম।
ইয়াসমিন, মনে পড়ছে? বলল অপর প্রান্ত থেকে। আরও বলল, আমি আগামী বুধবার আসবো নিউইয়র্কে। অনেক দিন পর তোমার সাথে দেখা হবে, কি যে আনন্দ লাগছে।
মনে পড়ছে নাম টা তবে আমার আনন্দ লাগছে না। লাগছে না তার কারন হোল,
ফিরে গেলাম অনেক পিছনে। প্রতাপ আর আমি একি পাড়ার ছেলে। একি সাথে পড়ি। বন্ধুত্ব আমাদের অনেক দিনের। স্কুল শেষে আমি ভর্তি হলাম ঢাকা কলেজে, ও গেলো নটরডেমে। মাঝে মাঝে প্রতাপ আসতো আমার হোস্টেলে। একদিন দুপুরে এসে হাজির। আমি দিবা নিদ্রা নেওয়ার চেস্টা করছিলাম। হোল না। বলল,” চল, কাপড় পরে নে, এক জাগায় যাবো”।
কোথায়?
গেলেই দেখতে পারবি।
বেড়িয়ে এলাম রাস্তায়। হাটতে হাটতে নিউ মার্কেট পাড় হতেই আবারও জিজ্ঞাসা করলাম, “ কোথায় যাচ্ছিস”?
“ ইডেন কলেজের হস্টেলে”।
ইডেন কলেজের হোস্টেলে? সেখানে কি”? অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম।
সেই একি কথা, গেলেই দেখতে পারবি।
হোস্টেলের কাছে এসে দাড়াতেই একটা মেয়ে এগিয়ে এলো প্রতাপের দিকে। দুজনের মুখেই হাসি। বুঝে নিতে আমার বেশি বেগ পেতে হলনা। প্রতাপই আলাপ করিয়ে দিলো।
আমার বন্ধু শমিত, আর এ হচ্ছে, ইয়াসমিন।
সাদা,হলুদ, শালওয়ার কামিজের সাথে লাল ওড়না। মোটা বলব না, আবার চিকন ও নয়, দুয়ের মাঝা মাঝি। গায়ের রঙ শ্যামলা। হাসল সে। সাদা দাঁত গুলো সমান্তরাল ভাবে বসানো নয়। এতো আমার চোখে দেখা।
তিন জন হাটতে থাকলাম। ওরা দুজন কাছাকাছি, আমি পাশে একটু দূরে। ইচ্ছে করেই। ওদের মিটিমিটি হেসে কথা বলার মাঝে আমার কোন বক্তব্য রাখতে চাইনা।
এসে বসলাম নিউ মার্কেটের ভিতরে এক আইস ক্রীমের দোকানে। আমি স্বল্পভাষী নই। কিন্তু আজ কেন জানি কথা বলার আগ্রহ হারিয়ে ফেললাম। লক্ষ্য করলাম ইয়াসমিন মাঝে মাঝেই তাকাচ্ছে আমার দিকে, হেসে চোখ সরিয়ে নিচ্ছে। উত্তরে আমিও হেসে তার জবাব দিচ্ছি।
ঘণ্টা খানেক পরে বেড়িয়ে এলাম। ইয়াসমিন চলে গেলো। যাওয়ার আগে তাকাল আমার দিকে। চোখে চোখ রেখে হাসল আবার।
তারপর অনেক দিন কেটে গেছে। প্রতাপের সাথেও দেখা হয়নি বেশ কিছুদিন হোল। পরীক্ষা সামনে। এক বিকেলে নিউ মার্কেটের গেটের কাছে দাড়িয়ে কয়েকজন বন্ধু মিলে আড্ডা দিচ্ছি।
হঠাৎ ই নাম ধরে ডাক শুনে ফিরে তাকালাম।
ইয়াসমিন।
এগিয়ে এলো।
জিজ্ঞাসা করল,”কেমন আছো? অনেক বার তোমার কথা মনে হয়েছে। তোমার হোস্টেলে একবার যাবো ভেবেছিলাম। পরে তা আর হয়ে উঠেনি”।
আমি সে কথার কোন উত্তর না দিয়ে বললাম,” কেনা কাঁটা করতে এসেছ বুঝি”?
হাঁ
বন্ধুরা একটু পাশে যেয়ে দাড়িয়ে আছে।
ইয়াসমিন আরও একটু কাছে এসে বলল,” তুমি কি ব্যস্ত”?
কেন বলত?
আমার সাথে একটু জিকাতলায় যাবে মামার বাসায়। একা যেতে চাইছি না, তাড়াতাড়ি চলে আসব।
সেদিন না করতে চাইলেও না করতে পারলাম না। না করলেই ভালো হতো।
বললাম, চলো।
রিক্সায় উঠে বসলাম। এতো কাছে কোন মেয়ের পাশে আমি বসিনি আগে। ওর কাধের সাথে আমার কাধ, ওর কনুই এঁর সাথে আমার কনুই গসা লাগছে। ওর ওড়না বাতাসে উড়ে আমার মুখে ঝাপটা মারলও। ও আরও সরে এলো আমার দিকে। ওর গায়ের উত্তাপ আমি পাচ্ছি। ওর নিশ্বাসের উষ্ণতা আমার গালে এসে আঘাত হানছে। ওর ভরাট বুকের উঠানামা আমি দেখতে পাচ্ছি।
ও পাশে হাত দিয়ে রিক্সার হুড টা উঠিয়ে দিলো। ডান হাতটা উঠিয়ে আমার ঘাড়ের পিছনে নিয়ে এলো। রিক্সার ঝাকুনেতে আমার কনুই বার বার ছুয়ে যাচ্ছে ওর শরীরের বিভিন্ন নরম অংশ। ওর কোন ভাবান্তর নাই। আরও চেপে এলো আমার দিকে।
সত্যি বলতে কি আমি তো ঋষি,মহর্ষি নই। রক্ত মাংসে গড়া মানুষ। হরমোনের স্রোত আমার শরীরেও বইছে। তার প্রতিক্রিয়া আমি বুঝতে পারছি আমার অঙ্গ প্রত্যঙ্গে।
রিক্সা এসে থামল বাড়ীর সামনে। প্যান্টের ভিতরে গোজা জামাটা উপরে উঠিয়ে দিলাম।
নেমে এলাম দুজনে। দরজা টোকা দিতেই খুলে দাঁড়াল কাজের মেয়েটা। ও দুটো টাকা দিয়ে দোকান থেকে কি যেন আনতে বলল। আমি বাহিরে দাড়িয়ে।
ইয়াসমিন আমার দিকে তাকিয়ে বলল, “ভিতরে এসো”।
ভিতরে এলাম, দেখলাম বাসায় কেও নেই। ও তাকাল আমার দিকে। আমি দেখতে পেলাম ওর কামার্ত দুই চোখ। ওড়না টা সোফার উপরে পড়ে আছে। কামিজের দুটা বোতাম খোলা।
সেদিন আমার বিবেক আমাকে বাঁধা দিয়ে ছিল। প্রতাপের কথা মনে পরে ছিল।
আমি ঘৃনার সঙ্গে ওর প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলাম। আমি দৌড়ে বাহিরে এসে রিক্সাওয়ালা কে বললাম, একটু জোরে চলো, তাড়া আছে।
সেই শেষ দেখা ।
না শেষ নয়, আরও একবার দেখা হয়েছিল, কার্জন হলের চত্বরে অনেক দিন পরে।
হাঁটছি কঙ্কনা আর আমি। ডাক শুনে ফিরে তাকালাম।
ইয়াসমিন।
কাছে এসে হাত চেপে ধরল।
“ অনেক কাল পরে দেখা। কেমন আছো?”
কিছু বলার আগেই বলল,”পরিচয় করিয়ে দিলে নাতো”?
পরিচয় শেষে একটা কাগজে ঠিকানা লিখে বলল, এই রইল, এসো একদিন।
দেখলাম ওর বাম হাতের অনামিকায় জ্বলজ্বল করছে হীরের আংটি।
কঙ্কনা দুই পা এগিয়ে যেয়ে পিছন ফিরে তাকালও।
আমি দৌড়ে এলাম ওর কাছে।
সে চিরকুট টা হাতে নিলো, কুচিকুচি করে ছিরে হাওয়ায় উড়িয়ে দিলো,তারপর হাস্যজ্জল নয়নে তাকালও আমার দিকে।
কি ব্যাপার চুপ করে রইলে যে?
ও, হা, আমি তো কাল একমাসের জন্য ফ্রান্সে যাচ্ছি। তা না হলে—-, মিছে কথা বলতে যেয়ে গলাটা একটু কেপে ছিল।
সে বলল, আমি সানফ্রানসিসকো তে মেয়ের কাছে যাচ্ছি। তিন ঘণ্টার জন্য Lay over ছিল JFK Airportএ। ভেবে ছিলাম দেখা হবে।
জানিনা সে আমার অভিপ্রায় বুঝতে পেরে ছিল কি না। কথা শেষ হোল।
ফোন টা রেখে আমি তাকিয়ে রইলাম জানালা দিয়ে সাদা বরফের উপর পড়া ঝলমলে রৌদের দিকে।
5 Comments
লেখাটা কি এখানেই শেষ?খুব ভাল হয়েছে।
Valo legese.
সুন্দর গল্প ভাল লাগলো
খুবই ভালো লাগলো এবং লেখার ষ্টাইলটাও খুব সুন্দর।লেখাটা পড়ে মনে হচ্ছে এরপর আরো কিছু আছে এখানেই শেষ নয়।
Shesh hoye hoilona shesh.Valo legese.