My name is Khan মুভি টা দেখে বেড়িয়ে আসতেই দেখে হোল অনেক দিনের পরিচিত এক ভাবীর সাথে। “ কেমন আছেন” জিজ্ঞাসা করল ভাবী। “ ভালো, আপনি?” কুশল সংবাদ আদান প্রদানের পরে বললও “ পরিচয় করিয়ে দেই, আমার বোন।” পরিচয় হোল। উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ, মুখে কসমেটিকের ব্যবহার খুব একটা নয়, মাথায় আলতো করে ঘোমটা টানা। বয়স বোঝা মুশকিল। একটু হেসে চোখ টা সরিয়ে নিলো। হয়তো অপরিচিত লোকের সাথে কথা বলতে অভ্যস্ত নয়। সেটাই স্বাভাবিক। ভাবীর সাথে কথা শেষে বিদায় নিয়ে চলে এলাম।
বেশ কিছুদিন কেটে গেছে। ছোট্ট একটা জিনিষ কিনতে মলে গিয়ে ছিলাম, পেলাম না। তাই উদ্দেশ্যহীন ভাবে হাঁটতে হাঁটতে চোখে পড়ল এক পরিচিত মুখ। হাতে ভিক্টোরিয়া সিক্রেটের শপিং ব্যাগ। সামনা সামনি হতেই বললাম “ চিনতে পারছেন”? তাকালো, এবার আর চোখ নামিয়ে নিলো না। “ হা পারছি, অনেক দিন পর দেখা, তাই না?”
শপিং শেষ না শুরু ?
মাঝা মাঝি। আপনার?
যেটা কিনতে এসে ছিলাম, পেলাম না। তাড়া আছে কি?
না ততটা নয়
কোথাও বসে এক কাপ কফি খেতে বললে আপত্তি করবেন কি?
না বলা টা আমার মজ্জা গত, তবে আজ আর না বলব না। কোথায় বসবেন?
ওই তো ওখানে, Food court এ।
দুকাপ কফি নিয়ে বসলাম মুখোমুখি। আজ লজ্জার আভা দেখলাম না। সাবালীল ভঙ্গি।
জিজ্ঞাসা করলো,” কি করা হয়?” ফ্রি লেন্স রাইটার। যখন যা মনে আসে অথবা চতুর্দিকে যা দেখি তা নিয়ে লেখি। কেউ যদি ছাপায় ভালো, নতুবা নিজের মধ্যে রাখী। “ বোনের সাথে পরিচয় হোল কি ভাবে?। আপনার দুলাভাই কে চিনতাম আগে থেকে। কোন এক অনুষ্ঠানে দেখা হয়েছিল , সেই সুবাদেই পরিচয়। “ কেউ আছে কি? “বলতে পারেন আছে। এক ছেলে, একমেয়ে। তারা তাদের নিজেদের সংসার নিয়ে বাস্ত। আমি আমাকে নিয়ে”।” বুঝলাম। আমিও আপনার মত।”
তাই কি?
জানি না। আপনার জীবনের বিশ্লেষণ আমার জীবনের বিশ্লেষণের সাথে নাও মিলতে পারে। আপনি দেখছেন হারানোর বেদনাটা এক ভাবে, আমি দেখছি অন্য ভাবে। প্রশ্ন হয়তো এক। কেনো হোল?
এই কেনো খুঁজতে যেয়ে আমিও দিশাহারা। তা কি করে হোল? প্রশ্ন তার।
সে অনেক কথা। আপনি বলুন আপনার কথা দেখি কোঁথাও মিল আছে কিনা
বলল, আঠারো বছর বয়সে বিয়ে হয়েছিল আমার। সাত বোন দুই ভায়ের মধ্যে আমি ত্রিতিয়। বাবা সরকারী চাকরী করতেন। বদলীর চাকরী। বিভিণ্ণ সময়ে বিভিন্ন জাগায় থেকেছি। সব বোনের মধ্যে আমিই ছিলাম স্বল্পভাষী। অনেকে জানতোই না আমি বলে কেউ আছে এই বাসাতে।
একদিন বাবা এসে মা কে বলল তার এক বন্ধুর ছেলে এসেছে আমেরিকা থেকে। বাসাতে নিয়ে আসতে চায়। মা রাজী। তাদের মনে কি ছিল জানিনা। আমরা বোনেরা ভীষণ খুশী। গল্প শোনা যাবে আমেরিকার। এলো সে। সব বোনরা মিলে ঘিরে বসলাম। খুব একটা অপ্রস্তুত হোল বলে মনে হোল না। পাতাল রেলের কথা, বড় বড় বাড়ী এই সব বলতে বলতে এক গেলাস পানি চাইল। বুঝলাম নার্ভাস হচ্ছে। এত গুলো মেয়ের সামনে কথা বলা চাট্টি খানি কথা নয়।
চলে গেল সে। আমরাও আমাদের কাজে বাস্ত হয়ে পড়লাম। হঠাৎ মা একদিন আমাকে ডেকে পাঠাল। বলল,” বাহিরে খুব একটা যাওয়া আসা করোনা।” বুঝলাম না কেন। বললাম” হঠাৎ কি হোল? বলল।” তোমার বাবার বন্ধুর ছেলে প্রস্তাব পাঠিয়েছে তোমার জন্য।”। আকাশ থেকে পড়লাম। “ কি বলছ?” আমার আগে আরো দুবোন রয়েছে। “ কিন্তু তোমাকেই তার পছন্দ।”। বিদেশে যাওয়ের সখ আমার চিরওদিনই ছিল। তাই বলে এই ভাবে?
তাড়াতাড়ি সব ব্যবস্তা করতে হবে, কারণ সে ফিরে যাবে আমেরিকাতে। কোথা দিয়ে কি হয়ে গেল বুঝার আগেই শুধু এটুকু জানলাম আমার আমিত্ব শেষ। আমি এখন অন্যের স্ত্রী।
এলাম এদেশে। স্বামী আমার দেবতুল্য। কোনদিন কুটো টা ছিঁড়তে দেয়নি। হয়তো বয়স আমার কম ছিল বলে। কিছুদিন পর ওরই এক বন্ধুর সাথে বিয়ে হয়ে আমার বড় বোন (আপনার ভাবী) এলো এদেশে।
আমার স্বামী অনেক পাশ দিয়ে পরে এক ফার্মাসীউটিকাল ইন্ডাস্ট্রি তে ভালো পজিশনে চাকরী পেলো। সংসারের সচ্ছলতার সাথে সাথে কোল জুড়ে এলো এক মেয়ে। ওর বাবার অনেক আদরের। তিন বছরের ব্যবধানে আরও একটা ফুটফুটে মেয়ে এলো আমাদের সংসারে। হই হুল্লো করে দিন গুলো আমার ভালোই কাটছিল, যদি না সে এসে একদিন বলত তার বুকের কাছে একটা চাঁপা
ব্যথা। দুলাভাই কে ফোন করলাম, বলল, এখনি নিয়ে যা হাসপাতালে। দুটো Artary ব্লক। স্টেনট লাগিয়ে দিলো। মনের মধ্যে অজানা একটা ভয়। কখন কি হয় কে জানে। এভাবে চলে গেল অনেক বছর। বড় মেয়ে তখন কলেজের ত্রীতীয় বর্ষের ছাত্রী।
এক রাতে ওর বুকে প্রচণ্ড ব্যথা, তাড়াতাড়ি এম্বুলেন্স ডাকলাম। হাসপাতাল পর্যন্ত পোঁছাতে পারেনি, তার আগেই সব শেষ হয়ে গেল। আমার জীবনের বড় খুঁটিটা বন্যার জলে ভেসে গেল। “
এই বলে সে থামল, আমি মন্ত্র মুগ্ধের মত ওর জীবন কাহিনী শুনছিলাম। থেমে যেতেই বললাম– তারপর।
তারপর , দুলাভাই আর বোন বুকে টেনে নিলো আমাদের তিনজন কে। আমাদের বাসাটা ভাড়া দিয়ে দিলাম। জমাট বাধা কান্না আমার বুকে। মাঝে মাঝে আড়ালে যেয়ে কেঁদে বুক ভাসাতাম। যাকে কোন দিন কুটো টা ছিঁড়তে দেইনি তার কাঁধে সব দায়িত্ব দিয়ে সে চলে গেল। আমি চোখের জল মুছে মন কে শক্ত করার চেষ্টা করলাম।
বিধাতার কাছে প্রার্থনা করলাম শক্তি দিতে।
আজ তিন বছর হয়ে গেল, মেয়ে দুটো কে সমাজের মাঝে মাথা উঁচু করে দাড় করাতে পেরেছি। নিজের বাসাতে ফিরে এসেছি। বড় মেয়ে তার বর খুঁজে পেয়েছে আমাদের জানাশোনার মধ্যে। আমি ছোট্ট একটা কাজ নিয়ে সময় কাটাচ্ছি। কত টুকু করতে পেরেছি তার হিসেব নিকেশ আজ আর করিনা।
বললাম আপনার পারিপারশীকতা আপনাকে সাহায্য করেছে। যে দাগ আপনার মনে গাথা তা মুছে যাবার নয়। তার একবার ছিঁড়ে গেলে তা জোড়া লাগে না, লাগলেও একটা দাগ থেকে যায়। এইটাই নিয়ম। তবুও বলব আপনি মনের দিক থেকে অনেক শক্ত।এ ব্যথা তো চলে যাবার নয়। তবু বলি, কাঁদেন, কাঁদলে হয়তো বুকটা একটু হাল্কা হবে। কিছু একটা কে আঁকড়িয়ে ধরে বাঁচার চেষ্টা তো সবাই করে। আপনি হয়ত তা খুঁজে পেয়েছেন।
হয়তো তাই! মনকে বুজ দেই, যার ধন সে নিয়েছে আমার করার কিছুই নেই। এই সান্ত্বনা নেয়েই আমি বেচে আছি।
বললাম, সুন্দর একটা সময় কাটালাম আপনার সাথে, এই রইল আমার ফোন নাম্বার, প্রয়োজন বোধে কল দিয়েন।