টেবিল নাম্বার সাত। কত হাসি কান্না ভরা কাহিনীর নীরব সাক্ষী। আমারও কাহিনী লেখা হয়ে ছিল ওরই বুকে। শেষ অধ্যায় টা সে দেখে যেতে পারেনি। এসে ছিলাম দেখা করতে, তখন সে হারিয়ে গেছে।
সাত সমুদ্র তেরো নদী পেড়িয়ে এসে ঐ সাতে কেন আমি ডুবে গিয়ে ছিলাম, জানিনা। সবই ভবিতব্য।
এসে ছিলাম এক ছোট্ট দেশ থেকে। একেলা। বন্ধুরা ঠাই দিয়ে ছিল। ইংরাজি পড়তে পাড়ি, বুজতে পাড়ি, বলতে গেলে বেঁধে যায়। অনেক কষ্টে মনে মনে গ্রামার ঠিক করে যদিও বা বলি ওরা বুঝতে পারে না আমার এক্সেনট।
হোয়াট, হোয়াট করতে থাকে। এমত অবস্তায় এক বন্ধুর সাহায্যে চাকরি পেলাম এক রেস্টুরেন্টে।
নাম মাদ্রাজ উডল্যান্ড। ওয়াটারের পদ।
বন্ধু আমাকে নিয়ে এসে পরিচয় করি দিলো ম্যানেজার ভাটিয়া সাহেবের সাথে। দরদী লোক। ডাক দিল দস্তগীর কে। ওয়াটার দের সে প্রধান। সাদা কালো সার্ট প্যান্ট পরা। গলায় কালো বো টাই। গায়ে কালো জ্যাকেট। শুধু ওরই এই বেশ। কারন সে প্রধান।
ভাটিয়া সাহেব বললেন, শিখিয়ে পড়িয়ে নেও। বলে উঠে পড়লেন। আমাকে সে নিয়ে এলো হলঘরে। পরিচয় করিয়ে দিলো শঙ্কর, আর সাত্তারের সাথে। শঙ্কর সাউথ ইন্ডিয়ান, পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। এদেশে সে ওয়াটার, শুধু অপেক্ষায় আছে কবে পাশ করে এখানকার লাঈসেন্স টা নেবে। অমাইক। বন্ধুত্ত ওর সাথে খুব তাড়াতাড়ি গড়ে উঠেছিল, যেটা কোনদিন সম্ভভ হয়নি দস্তগীরের সাথে, ওর দাম্ভিকতার জন্য। সাত্তার ভাই, বয়সে আমার অনেক বড়। একি দেশের। সাহায্য করতো সব কিছুতে।
প্রথমে হাতে খড়ি হোল কি ভাবে ককটেল বানাতে হবে।
কি কি নাম। যেমন, ব্লাডি মেরী, জিন এন্ড টনিক ইত্যাদি। তারপর অর্ডারের প্লেট গুলো কি ভাবে হাতে নিয়ে আসবো। প্রথম প্রথম যে নার্ভাস হয়নি তা নয়, তবে সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে রপ্ত হয়ে এলো।
এবার আমাকে টেবিল ভাগ করে দেওয়া হোল। সাত নম্বর টেবিল টা তার ই একটা। বেশ ভালই চলছিল ,বাদ সাধলও একদিন।
ঠিক সাড়ে নয়টায় সাত নম্বর টেবিলে এসে বসলো এক শ্বেতাঙ্গিনি। এই পর্যন্ত একলা আসা কোন সাদা মহিলার অর্ডার আমি নেইনি। শঙ্কর পিঠ চাপড়িয়ে বলল, নার্ভাস কেন, ভাই? এবার তোমার পরীক্ষা।
ধীর পায়ে এগিয়ে গেলাম। আমার দিকে তাকাল সে। ঠোটের দুপাশে হাসির রেখা।
বললাম, কোন ড্রিঙ্কস খাবে কি?
বলল ব্লাডি মেরী।
আমার কি হোল জানিনা, শুধু মনে হোল এযেন কোকিলের কণ্ঠে কুহু কুহু ডাক। আমি তাকিয়ে রইলাম ওর নীল রঙের চোখের দিকে।
ও এবারও বলল, ব্লাডি মেরী।
আমি তাকালাম ওর মুখের দিকে। লালচে ভাব সেখানে। হাতটাতে সাদার চেয়ে লালের ভাব বেশি। ব্লাডি মেরী ওর জন্য পারফেক্ট। এ সবই আমার কল্পনা।
নিয়ে এলাম। ও সীপ দিলো। বলল, পারফেক্ট।
জিজ্ঞাসা করলাম, অর্ডার দেবে কি?
বলল, তুমি কি সাজেস্ট কর? এই প্রথম আমি কোন সাউথ ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্টে খেতে এসেছি।
বললাম, যদি খিদে বেশি না লেগে থাকে তবে Dosa খাও। খুব সুস্বাদু।
এটা শঙ্করের শেখানো। বলেছিল, ভায়া অন্য কিছু সাজেস্ট করবে না। তুমি ব্যাখ্যা করতে পারবে না।
খাওয়া শেষে উঠে দাঁড়াল সে। আমি এলাম। বলল, চমৎকার আইটেম। কটায় বন্ধ করো।
বললাম, সাড়ে দশটায়।
ও ঘড়ি দিকে তাকাল। ওহ, আই এম সো সরি। এগারটা বাজতে চলল।
একটু হেসে পা বাড়াল দরজার দিকে। আমি তাকিয়ে রইলাম ওর চলার দিকে।
পরদিন ঠিক একি সময়ে দরজা খুলে ভিতরে এলো সে। আমি দেখতে পাইনি। শঙ্করের কনুএর গুতা খেতেই তাকালাম। দেখলাম। সে যেয়ে বসলো সাত নম্বর টেবিলে। কি যেন খুজছে সে। আমি এগিয়ে গেলাম। আবারও সেই হাসি।
আমি ভাবছিলাম, ওর ঐ হাতটা যদি আমি ধরতে পারতাম, ওর ঐ লালচে ঠোঁটে যদি আমার ঠোটটা ছোঁয়াতে পারতাম।
হোঁচট খেতে যেয়ে সামলিয়ে নিলাম।
আজ শুধু সে অর্ডারই দিলো না, আমাকে জিজ্ঞাসা করল, আমার পরিচয়, কোথা থেকে, কতদিন, কে আমি, এই সব।
এই টেবিল টা তে আমার বেশি সময় কাটান টা দস্তগীর ভাল চোখে দেখছিল না। আমি ফিরে আসতেই বলল, তোমার অন্য টেবিলেও লোক আছে ওদের দিকেও খেয়াল দিতে হবে।
কেনও জানি প্রথম থেকেই দস্তগীরের চোখে আমি প্রিয় পাত্র নই।
আমার সাহায্যার্থে এগিয়ে এলো শঙ্কর, এলো সাত্তার ভাই।
কেয়া ইয়ার। উসকো যানে দো। উই উইল টেক কেয়ার হিজ আদার টেবিল। বলল দুজনে।
আমি অপেক্ষা করতাম কখন সাড়ে নয়টা বাজবে। সে আসবে। এ একটা রুটিনে দাড়িয়ে গেলো আমার জীবনে। দুই এক মিনিট দেরী হলেই বুকের ভিতর খচখচ করতো। এরই নাম হতো প্রেম।
অথচ আমি তার কিছুই জানিনা। সে আমার সব কিছুই জানে।
একদিন সাড়ে নয়টা থেকে দশটা বাজতে চলল। আমি উদ্গ্রীব হয়ে ঘড়ির দিকে তাকাতে থাকলাম। অন্য এক জোড়া এসে বসলো সাত নম্বর টেবিলে। আমি গম্ভীর হয়ে যেয়ে জিজ্ঞাসা করলাম কি চাই তাদের।
বলল, একটু সময় দিতে।
বললাম, সাড়ে দশটায় রেস্টুরেন্ট বন্ধ হয়ে যাবে। কথাটা আমার নিজের কানেই বিশ্রী শোনালো।
সে এলো না। শেষ কাস্টমার বিদায় দিয়ে জিন এন্ড টনিক নিয়ে বসলাম। সাত্তার ভাই চলে গেলো। শঙ্কর, আমি আর দস্তগীর। আজ আমি মাতাল হতে চাইলাম।
দস্তগীর বলল, চলো Striptease দেখে আসি। আমাদের বন্ধুর মনটা একটু খোলসা হতে পারে।
আজ আমি সব কিছু করতে রাজি। অথচ আমি নিজও জানি এ এক তরফা। শুধু শুধুই আমি নিজেকে জড়িয়ে ফেলছি এক অদৃশ্য মোহর মধ্যে।
সেদিন অনেক রাতে ফিরলাম। রুমমেট রা জেগে। এতো রাত কোনদিন হয়নি। ওরা উদগ্রীব। মুখে আমার মদের গন্ধ। পা টলকাচছে। জসীম উঠে এলো। কোন কিছু জিজ্ঞাসা না করে আমাকে বিছানায় শুইয়ে দিল। তারপরের ঘটনা আমার মনে নেই। পরদিন অসহ্য মাথা ব্যাথা নিয়ে ঘুম ভাঙ্গল। আয়নায় দেখলাম আমার চেহারা টা। চোখ জবাফুলের মত লাল। দুটো টাইলিনল মুখে পুড়ে দিলাম।
ওর নিটোল হাতদুটো আমার চোখের সামনে ভাসতে থাকলো। আমি কল্পনায় ওর বুকের মাঝে মুখ গুজে দিলাম। ওর পারফিউমের গন্ধ আমার বিভিন্ন অংগে ভিন্ন রকমের সাড়া জাগাল। সবই আমার জাগ্রত মনের উদ্ভট চিন্তা। তবুও মনে হোল আজ সে সামনে থাকলে আমি আমার ভারজেনিটি হারাতাম।
কফির পানিটা বসিয়ে দিলাম।
আজ আমার ছুটির দিন। সময় কাটানো আমার পক্ষে দুরহ। মন টানছে মাদ্রাজ উডল্যান্ড এর দিকে। টাগ অফ ওয়ার চলছে। যাবো কি যাবনা। জিত হোল “যাবোর”।
আমি এলাম রাত নয় টায়। শঙ্কর, দস্তগীর অবাক হয়ে তাকাল।
শঙ্করের ভাগে আজ সাত নম্বর টেবিল। আমি বসে রইলাম বারে। সিগারেট টা ধরাতে যেয়েও ধরালাম না। সাড়ে নয়টা বাজতে কিছু সময় বাকি। দুরুদুরু করছে আমার বুক। আমি বার বার তাকাচ্ছি দরজার দিকে। দরজা খুললও। ঠিক সাড়ে নয়টা। সে নয়, অন্য এক কাপল। শঙ্কর এগিয়ে যেয়ে বসতে বলল দশ নম্বর টেবিলে। ওরা হাত দিয়ে দেখালও সাত নম্বর টেবিল টা। শঙ্কর তাকালও আমার দিকে। আমি হাত দিয়ে চোখ ডাকলাম।
সাত্তার ভাই আমার নাম ধরে ডাকতেই চোখের উপর থেকে হাত সরিয়ে নিলাম।
লাল Skirt এর উপর কালো ব্লাউজ। চুলটা টেনে পিছনে বাঁধা। দস্তগীর হ্যালো বলতেই, কি যেন বলল সে। দস্তগীর হাত তুলে বার দেখালও। আমার সাথে চোখে চোখ হতেই হেসে এগিয়ে এলো।
আজ কাজ নেই বুঝি? জিজ্ঞাসা করলো সে। হেসে বলল, আজ তোমাকে অন্য রকম লাগছে।
বললাম, হলুদ জ্যাকেট টা নাই তো, তাই?
বলল, আজ আর বসবো না, তোমারও তো কাজ নেই, চলো তোমাকে এক জাগায় নিয়ে যাবো।
বলে ওর চোখের দৃষ্টিটা রাখল আমার চোখের উপর। আমি দেখলাম ওর নাকের কাছে ঘামের রেখা। মনে হোল হাত দিয়ে মুছিয়ে দেই। ওর লাল রঙের লিপস্টিক আঁকা ঠোট থেকে রঙ টা এনে লেপ্টীয়ে দেই ওর সাদা কপাল টিতে।
কি যাবে?
আমি আমার স্বপ্ন ভেঙ্গে বললাম, চলো।
বেড়িয়ে আসতে যেয়ে পিছনে তাকালাম, শঙ্কর চোখ টিপে, আঙ্গুলে বিভিন্ন ইংগিত করে বোঝাতে চাইল, এনজয় দা নাইট।
পাশে পাশে হাটতে যেয়ে পায়ে পায়ে যে আমার বারি লাগেনি তা নয়। সে আমার হাতটা একবার ধরেই ছেড়ে দিলো। আমরা বা দিকে মোড় নিলাম। দুই কদম এগোতেই ডানদিকে বিশাল দশ তালা বিল্ডিং। সামনে এসে দাড়াতেই বলল, এই বিল্ডিং এ আমি থাকি। পাঁচ তালায়। তোমাকে আমার এপার্টমেন্ট টা দেখাবো। আপত্তি নেই তো।
আপত্তি? এই তো আমি চেয়েছিলাম। দুজনে একেলা। ও উজাড় করে দেবে ওর সব কিছু। আমি নিংড়ে নিংড়ে তা উপভোগ করব।
জিজ্ঞাসা করলাম একলা থাকো কি?
না, তবে এই মুহূর্তে সে নেই।
“তবে এই মুহূর্তে নেই” কথাটা ঝঙ্কার দিয়ে উঠলো আমার হৃদয়ে। কল্পনার তুলি দিয়ে যে চিত্র আমি এঁকেছিলাম মনে হোল তা মুহূর্তে ভেঙ্গে চৌচির হয়ে গেলো। তবুও আমি এর শেষ দেখতে চাইলাম।
উপরে উঠে এলাম। দুই বেডরুমের এপার্টমেন্ট। সাদা সোফার পরা লাল ডেকোরেটড বালিশ পাতা। কর্নারে ফুল গাছের মধ্যে নীল এলো। ড্রয়াইং রুমের জানালার পাশে একটা ছোট টেবিল। তার উপরে দুটো ছবি। একটু দুর থেকে ঝাপসা লাগল।
বলল, তুমি বসো, আমি আসছি। বলে সে ভিতরে চলে গেলো।
আমি উঠে ফটো গুলোর সামনে এসে দাঁড়ালাম। বাচ্চা কোলে ছবি।
ওটা আমারই বাচ্চা, পাঁচ বছর বয়স।
ও যে কখন এসে পিছনে দাড়িয়েছে জানতে পারিনি।
এসো, তোমাকে সব বলছি। এই জন্যই তোমাকে আজ এখানে নিয়ে এসেছি। তোমার চোখের ভাষা আমি বুঝতে পেরেছিলাম, তাই তোমাকে সব কিছু জানানো আমার কর্তব্য।
আমি জুলিয়েটের দিকে তাকালাম। আমি যে আনন্দের স্রোতে আজ হারিয়ে যাবো ভেবেছিলাম, কোথায় যেন তার প্রতিবন্ধকতা আমি দেখতে পেলাম। জুলিয়েট কে মনে হোল সে অন্য কেউ।
বসো।
আমি বসলাম ওর সামনে। আমাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সে দেখতে লাগল। তারপর বলল, তোমার ইনোসেন্ট ফেস টাই আমাকে আকর্ষণ করেছিল। বলতে বাধা নেই, তোমাকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন আমি দেখছি,পরক্ষনে আমার অতীত আমাকে বাধা দিয়েছে।
এ হতে পারেনা। তোমার জীবন টাকে নস্ট করার অধিকার আমার নেই। তোমার হাসি তোমার উচ্ছলতা আমাকে প্রতিদিন টেনে এনেছে ঐ মাদ্রাজ উডল্যান্ডে, ঐ সাত নম্বর টেবিলটা তে ।
শোন আমার অতীত।
রজারসের সাথে দুবছর লীভ টুগেদার করার পর একদিন জানলাম আমি প্রেগন্যান্ট। রজারস বলেছিল যে আসছে তাকে পৃথিবীতে না আসতে দেওয়াই ভাল। আমি রাজি হয়নি। সেই থেকে তার সাথে আমার মনমালিন্য। একদিন এই বিষয় নিয়ে কথা কাটাকাটি হওয়াতে সে তল্পিতল্পা নিয়ে চলে গেলে। সেই শেষ আমি তাকে দেখেছিলাম।
মা বাবার কাছে থেকে বাচ্চা মানুষ করতে থাকলাম।
জসের বয়স যখন দুই কেন যেন মনে হোল স্বাভাবিক ছেলেদের মতো সে নয়।
কারোর সাথে খেলতে পারে না, মিশতে চায় না। কথা বলতে গেলে উচ্চারণ ঠিক হয়না। চোখে চোখ রেখে কথা বলে না। সে যে কি চায় বলতে না পেরে ছবি দেখিয়ে দেয়।
মা আমাকে একদিন ডেকে বলল, জুলিয়েট, আমার মনে হয় Josh has Autism symptoms.
আমি মানতে চাইনি। বলেছি, ছোট কালে সব বাচ্চাই এই রকম থাকে। মা অনেক করে বলল, ডাক্তারের কাছে নিয়ে পরীক্ষা করিয়ে আনতে।
অবশেষে গেলাম। ওদের কথাই সত্যি। Josh has Autism symptoms. খুব সহজ নয় এই বাচ্চা মানুষ করা। তবু আমি চেষ্টা করে যাচ্ছি। বাস্তব বড় কঠিন পার্থ। বড় কঠিন।
এই বলে উঠে যেয়ে দুই গ্লাস হুইস্কি নিয়ে এলো। এগিয়ে দিয়ে বলল, খাও খারাপ লাগবে না। তারপর চেয়ার টা এগিয়ে এনে আমার হাতের উপর হাত রেখে বলল, আমার এই জীবনের মধ্যে তোমাকে জড়াতে চাইনা। তোমাকে আমারও ভাল লেগেছিল। আজিই তার সমাপ্তি হউক। এই বলে সে উঠে দাঁড়াল।
আমি দাড়াতেই সে আলতো করে আমার ঠোঁটে চুমো দিয়ে বলল, ভাল থেকো, পেছনের দিকে তাকিও না।
তারপর?
তারপর শমিত দা, সে এক গল্প, তুমি লিখতে পারবে এই নিয়ে।
বলও।
আমি কিভাবে সেদিন বাসায় ফিরে এসেছিলাম বলতে পারবো না। মাদ্রাজ উডল্যান্ডএ আর ফিরে যাইনি। ওর কথাই আমি রেখে ছিলাম পিছনে আর ফিরে চাইনি। দেশ থেকে যে ডিগ্রী নিয়ে এসেছিলাম এখানে সেই ডিগ্রী নেওয়ার চেষ্টা করতে থাকলাম।
কোনদিন একবার কল ও করনি তাকে?
না। এইভাবে বছর চারেক পেড়িয়ে গেলো। আমি এক হাসপাতালে কাজ করি। আমার মনের সেই ক্ষত মিশে যেতে যেও মিশল না। একদিন ক্যাফেটেরিয়া কয়েক জন মিলে আড্ডা দিচ্ছি। একটু দূরে এক ভদ্রমহিলা তার চার বছরের বাচ্চা কে খাওয়ানোর চেষ্টা করছে, আর সে চিৎকার করে সব কিছু ছুড়ে ফেলে দিচ্ছে। ভদ্রমহিলা অপ্রস্তুত এবং লজ্জিত ভাবে চারিদিকে তাকাচ্ছে। আমি ছেলেটার দিকে তাকালাম। Autistic Child
ওর বাবা এসে কোলে তুলে নিলো। ও ওর বাবার গালে চড় ছাপ্পড় মারছে আর বাবা ওকে জড়িয়ে ধরে দুই গালে চুমো দিচ্ছে।
মনে পড়ল জুলিয়েটের কথা। মনে পড়ল যশের কথা। আমার পুরানো ক্ষতে নুতন করে বেদনা অনুভব করলাম।
বন্ধুদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম।
তখন সূর্য ডুবু ডুব। জুলিয়েট দের দশ তালা বিল্ডিং এর মাথায় সূর্যের শেষ আভা এসে পড়েছে। আমি তাকালাম চুড়ার দিকে। দরজা খুলে ভিতরে এলাম। এলিভেটর টা আসতে অনেক দেরী করছে মনে হোল। প্রতিটি মুহূর্ত মনে হচ্ছে এক যুগ। অবশেষে পাঁচ তালায় এসে দাঁড়ালাম। দরজায় টোকা দিলাম।
মনের ভিতর আমার ঝড় বইছে। দরজা খুলে গেলো।
জুলিয়েট।
সেই লালচে আভা গাল আরও লালচে মনে হোল। ও আমার দিকে তাকালও তার কাজলে আঁকা চোখ তুলে।
শুধু বলল, আমি জানতাম তুমি আসবে।
তারপর?
তারপর, বলে, পার্থ তার ওয়ালেট থেকে একটা ফটো বের করে দিল।
ওরা তিন জন। বিয়ের সাজে জুলিয়েট, পার্থর ঠোট তার ঠোঁটে আর যশ জড়িয়ে ধরে আছে পার্থকে ।
4 Comments
Happy ending. Valo legeche.
Starting and ending both are nice. Valo legese
অপূর্ব!!ভাবছিলাম গল্পের পরিনতি কি হবে?আর দশটা মানুষের মত পার্থর প্রথম প্রেমের পরিনতিও কি বিয়োগান্তক হবে?কিন্তু তুমি তোমার লেখনী শক্তি দিয়ে অপূর্ব ভাবে শেষ করেছো গল্পটা।
গল্পের পরিনতিতে একটা আকস্মিকতা আছে। যা গল্পটাকে আরো সুন্দর করেছে।খুব ভালো লাগলো