সন্ধ্যা তাঁরা

দাদু, দাদু ওঠো, তুমি না খেলনা কিনতে নিয়ে যাবে বলেছিলে?  ওঠো।

কেন? গতকালই না কিনে দিলাম সাইকেল টা?

না, আমি বারবী চাই। বারবী কিনে এনে তুমি আমাকে গল্প বলবে। সেই রাক্ষস খোক্কসের গল্প।

জানো দাদু, বাবা বলে আমি নাকি রাজকন্যার মতো দেখতে। আর মা শুধু বলে, দুধ খাও, দুধ খাও।

আচ্ছা দাদু, আমার মা তোমার কি হয়।

বৌমা।

কি—ব,ব,ব, ম,ম,– ধ্যাত।

তোমার মা কোথায় দাদু।

চলে গেছে।

দাদির মতো চলে গেছে ?

হাঁ।

দাদি দেখতে রাজকন্যার মতো ছিল?

ঐ দেখো ছবিটা ঠিক তোমার মতো, তাই তোঁ ভাবছি তোমাকে বিয়ে করব।

ধ্যাত, তুমি দেখতে মোটেই সুন্দর না। তুমি বলেছিলে বিয়ে করতে রাজপুত্র আসে ঘোড়ায় চড়ে।

হাঁ, আমি আসবো সাদা গাড়ীতে চড়ে, লাল টুকটুকে রাজকন্যাকে নিতে।

ধ্যাত, তুমি দেখেতে পচা। কখন যাবে দোকানে?

এই তোঁ যাবো, দুধ টা খেয়ে নাও।

না, আমি চকলেট দুধ চাই।

মা চকলেট দুধ দিতে বারণ করেছে। চকলেট দুধ খেলে তোমাকে অনেক বার বাথরুমে যেতে হবে।

জানো দাদু আমি এখন পটিতে বসতে পারি। আমি অনেক বড় হয়ে গেছি তাই না, দাদু।

হাঁ, অনেক বড় হয়েছ, এবার ঢকঢক করে দুধ টা খেয়ে নাও তোঁ দাদুমনি।

তুমি ও মার মতো দুধ খাও দুধ খাও বলও।

এই তোঁ লক্ষ্মীটি, সব দুধ শেষ, চলো আবার আমরা দোকানে যাবো।

উঠে Car Seat টা তে বসো।

না, আমি সামনে বসবো।

সামনে বসলে পুলিশে ধরে নিয়ে যাবে।

না, আমি বলব আমি বড় হয়েছি, পটিতে বসতে পারি।

Car Seat এ না বসলে আমি যেতে পারবো না, যেতে না পারলে বারবী কেনা হবে না।

জানো দাদু, বাবা বলেছে তোমাকে বিরক্ত না করতে। আমি কি তোমাকে বিরক্ত করি?

না, না আমি তোমার বাবা কে বলে দেবো, দাদুমনি আমাকে একটুও বিরক্ত করে না।

নামো, আসে গেছি।

ঐ দেখো দাদু, ট্রেন। আমি ট্রেনে চড়বো।

“ এরা কেন যে এইসব ট্রেন/ফ্রেম মলের মধ্যে নিয়ে আসে”।

দাদু দেখো ঐ ছেলেটার হাতে, আইসক্রিম। আমি আইসক্রিম খাবো।

আগে বারবী ,তারপর ট্রেন, তারপরই না আইসক্রিম খাবে।

না, আমি আগে আইসক্রিম খাবো।

ঠিক আছে, চলো লাইনে দাড়াও।

কেন? ঐ মেয়ে টা কে যেয়ে বলও।

দেখছ না, সবাই লাইনে দাড়িয়ে?

ধ্যাত।

এই ধ্যাত কথাটা কোথা থেকে শিখেছ?

মা বলে ধ্যাত—।

হু।

চলো ওই সোফাতে বসে আইসক্রিম টা শেষ করবে।

দাদু তুমি একটু খাবে?

দাও।

না না অতো বড় হা করে না। এই ভাবে চেটে চেটে খাবে। তুমি কিচ্ছু জানো না।

দাদু, দাদু দেখো, আইসক্রিমটা জামায় পড়ে গেছে। কি হবে ? মা তো বকবে।

কাদে না। বাসায় যেয়ে ধুয়ে ঠিক করে দেবো, মা জানতেই পারবে না।

তুমি সত্যি বলছ?

হাঁ।

আমার ঘুম পাচ্ছে।

চলো, সব কেনা কাঁটা শেষ। আইসক্রিম খেয়েছ, বারবী কিনেছ, ট্রেনে চড়েছ।

এসে গেছি।

দাদুমনি, দাদুমনি, ঘুমিয়ে পড়েছ?

একটু ওঠো, এবার এসো আমার কোলে, মাথাটা রাখো আমার কাঁধে।

এবার বিছানায় শুয়ে থাকো, আমি তোমার জুতো টা খুলে দেই।

গল্প বলো দাদু।

গল্প শুনবে, রাক্ষস খোক্কসের গল্প।

হ্যাঁ

তবে শোন,

সাতসমুদ্র তেরো নদীর পাড়ে————————

ঠক ঠক ঠক, চোখ মেলে চাইলাম। পাশে তাকালাম। বিছানা খালি।

উঠে দরজা খুলতেই দেখি শান্ত আর বউমা।

হঠাৎ? কি মনে করে?

তোমাকে সারপ্রাইজ দিতে এসেছি। বলল বউমা।

শান্ত একটা সাদাকালো ফটো এগিয়ে দিল। “দেখোতো কিছু বুঝতে পারো কি না”?

দেখলাম, ছোট্ট একটা হাত, শুধু আঙ্গুল গুলো দেখা যাচ্ছে। যেন বলছে, “ কি দাদু চিনতে পারছ”?

 

You may also like

5 Comments

  1. অল্প পরিসরে তোমার অভিব্যক্তির প্রকাশ অপূর্ব!!!আমরাও অপেক্ষা করে থাকবো দাদুমনির প্রতিক্ষায়।যে তোমাকে সবকিছু ভুলিয়ে দেবে।

  2. I don’t know its a girl or boy. I wish it will be girl then lcan call her Apa. My sweet apa. We are waiting!

  3. খুব সুন্দর গল্প আল্লাহ যেন স্বপ্ন সন্ধা তারার মত সুন্দর করেন

  4. জানিনা তুমি আগে লিখেছ নাকি শান্তনু তার সুখবর টা আগে দিয়েছে। আমি অনেকদিন তোমার লেখা পড়তে পারিনি।যাই হোক,তোমার স্বপ্নেনের সংগে বাস্তব মিলে গেছে। তোমার ইমোশনটা এতো সুন্দর করে প্রকাশ করেছ মনেই হয়নি পুরো ঘটনাটা স্বপ্নের মাঝে ছিলো।খুব সুন্দর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *