আজ থেকে ছয়মাস আগের এক সকাল।
সেই সকালে ঘুমের আমাজ টা তখনো কাটেনি। আড়ামোড়া করে সেল ফোনটা পাশে টেনে নিলাম। ঘড়িতে ছিল সকাল নয়টা।
উঠার তাড়া নাই। সকালে খিদে লাগেনা। কফির আমেজটার জন্য উঠতে হয়। রাতে শুতে শুতে অনেক দেরী হয়ে গিয়েছিল। রফিক ভাবীকে নিয়ে এসেছিল আমার সাথে দেখা করতে। থাকে ক্যানাডায়। এসেছে বোনের বাসায় বেড়াতে। ওর সাথে আড্ডা দিতে দিতে তাকিয়ে দেখি ঘড়ির কাঁটা দুটোতে।
ভাবীর ডাকে টনক নড়েছিল। অনেক দিন পরে দেখা। বন্ধুত্ত আজকের নয়। কলেজ জীবনের।
অতীত ঘাটতে কারই না ভাললাগে। যদি সেই অতীত হয় উজ্জ্বল আকাশের মত সচ্ছল, নিলে ভরা। সেই অতীতের দিনগুলো নিয়ে আমরা খেলা করছিলাম।
না এবার উঠতে হবে, Keurig টা অন করে হাতমুখ ধুয়ে এলাম। কফির ঘ্রান পাচ্ছি। কফির মাগটা নিয়ে এসে বসলাম বাহিরে ছোট্ট বেলকনি তে। আকাশ কালো মেঘে ঢাকা। তখনো কফির পেয়ালায় চুমুক দেইনি।
ফোন টা বেজে উঠল।
ইসাক ভাই।
অত্যন্ত আপনার জন। অমাইক। কথা বলে আনন্দ আছে।
অনেক আগে একবার কথায় কথায় বলেছিলাম, আপনারা যদি কোন সময় বাহিরে ভ্রমনে যান আমাকে আপনাদের দলের সাথে যোগ করেন। অবশ্য আপনাদের যদি আপত্তি না থাকে।
“ রাশিয়ায় যাবে?”
উনার প্রশ্নে প্রথমে ঠিক বুঝে উঠতে পারলাম না।
“ কি ব্যাপার উত্তর দিচ্ছ না যে?”
বললাম, ঠিক বুঝতে পারছি না।
না বোঝার তোঁ কোন কারন নাই। আমরা কয়েক বন্ধু মিলে রাশিয়ায় যাবো। ভাল ডিল পেয়েছি। তুমি বলেছিলে তোমাকে সঙ্গে নিতে তাই তোমাকে জানাচ্ছি। আর শোন জীবু যাবে কিনা জিজ্ঞাসা করো ওকে।
না না আমি আছি আপনাদের সাথে। তবে ওর কথা তো বলতে পারবনা। সে তো Edmontonএ।
জিজ্ঞাসা করে দেখো। হাতে তিন দিন সময় আছে। এর মধ্যে কিছু টাকা অগ্রীম দিয়ে ডিল টাকে বুক করতে হবে।
-আমাকে আধা ঘণ্টা সময় দেন। আমি সব কিছু ঠিক করে আপনাকে জানাচ্ছি।
এই বলে ফোনটা রেখে দিলাম।
জীবু কে পাওয়া সহজ নয়। এঁকে তো ক্যানাডায়, তারপর অধিকাংশ সময় সে ফোনের কাছে থাকে না।
এক দুই তিন। ফোন বাজছে। ভয়েস মেলে চলে গেলো।
বললাম, এই মুহূর্তে আমাকে কল করো। জরুরী দরকার আছে। দুই তিন বার পাইচারি করে, ভাবলাম, টেক্সট পাঠালে মন্দ কি?
পাঠালাম। গেলনা। মাঝ পথে আটকিয়ে গেলো।
মনে হোল আজকের এই সকাল আমার অনুকুলে নয়।
ঠিক সেই সময় ফোন টা বেজে উঠল, জীবুর ফোন।
কি ব্যাপার? এই সাত সকালে। সবকিছু ঠিক আছে ঐখানে?
তা আছে। রাশিয়ায় যাবে?
কি বললেন?
ঠিক আমারি মতো। প্রথমে একটু ভড়কিয়ে যাওয়া।
রাশিয়া, রাশিয়া তে যাবে। ইসাক ভাই আর অনন্যাও সবাই মিলে ছয় ফ্যামিলি যাচ্ছে। ইসাক ভাই তোমার কথাও বলল।
আমি রাজি আছে, আমাকে কি কি করতে হবে।
তোমাকে কিছুই করতে হবে না এই মুহূর্তে। আমিই সব ব্যবস্থা করব।
ঘড়িতে দেখলাম আধা ঘণ্টা পাড় হয়নি।
ইসাক ভাইকে কল করে জানিয়ে দিলাম আমরা আপনাদের সঙ্গে আছি।
রাশিয়া! মস্কো! সেন্ট পিটারসবারগ।
স্বপ্নেরও অতীত ছিল কোনদিন যাবো সেইখানে।
মস্কো, কসমোপলিটান ক্যাপিটাল। ঐতিহাসিক Kremlin, a complex that’s home to the president and tsarist treasures in the Armoury. Outside its walls is Red Square, Russia’s symbolic center. Lenin’s Mausoleum. আহা, স্বপ্ন দেখছি নাতো?
মস্কো থেকে সেন্ট পিটারসবারগ। হাই স্পীড ট্রেনে যাবো। কি মজাই না হবে। সবাই মিলে হৈ হৈ করতে করতে যাওয়া যাবে। সবাই চেনা। যদিও অনন্যারা আমার বড় ভাই। কিন্তু একটা বয়সে এসে সবাই বন্ধু হয়ে যায়।
যাওয়ার দিন অনেক দেরী।
১৩ই সেপ্টেম্বর রওয়ানা হবো।
ট্রাভেল এজেন্ট, তানিয়া, ইমেইল করে জানিয়ে দিলো, সবার পাসপোর্ট নাম্বার, জন্ম তারিখ, আর পাসপোর্টের মেয়াদ কতদিন আছে। তাকে জানাতে।
অন্তত পক্ষে ছয় মাসের মেয়াদ থাকতে হবে।
জীবু কে কল করে বললাম, তোমার পাসপোর্ট টার ছবি উঠিয়ে আমাকে টেক্সট কর।
যথারীতি টেক্সট এসে গেলো। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে যেয়ে পাসপোর্টের মেয়াদের অঙ্কটা বসাতে যেয়ে দেখলাম ওটার মেয়াদ ছয় মাস নেই।
আবারও কল করতে হোল।
কি ব্যাপার?
ব্যাপার গুরুতর, তোমার এই পাসপোর্ট দিয়ে যাওয়া চলবে না। ওটার মেয়াদ ফুরিয়ে যাবে আমাদের যেতে যেতে।
তাহলে, তাহলে আমার যাওয়া হবেনা?
হবে, এখনো সময় আছে। এই ক্ষণে নতুন পাসপোর্টের জন্য অ্যাপ্লাই কর। আর আমি এই পাসপোর্টের সমস্ত তথ্য দিয়ে তানিয়াকে পাঠিয়ে দিচ্ছি। বলে ফোন টা রাখলাম।
যথারীতি পাঠিয়ে দিলাম ওর তথ্য।
পরদিন তানিয়া জানালো, জীবুর টা হবে না। নতুন পাসপোর্ট এলে তাকে জানাতে।
তিন সপ্তাহর মাঝে এসে গেলো জীবুর নতুন পাসপোর্ট।
দিন যায় ক্ষণ যায়। আস্তে আস্তে যেন ভুলেই যেতে বসেছি আমরা যাবো রাশিয়া তে। মাঝে অনেক ওলট পালট হয়ে গেলো।
এক অনেক কাছের বন্ধুর ধরা পড়লো এক মর্মান্তিক অসুখ। বিছানায় শয্যাগত।
মনটা বিষিয়ে গেলো।
একদিন তানিয়ার ইমেইল পেলাম। বাদবাকি টাকা দেওয়ার তাগীদা। নিদৃষ্ট সময়ে।
টাকা পাঠিয়ে দেওয়ার কিছুদিন পরে ইসাক ভাই কে কল করতেই উনি বললেন, আমাদের কয়েক জনের বোধ হয় যাওয়া হবে না।
আমি আকাশ থেকে পড়লাম। কি বলছেন? আপনি আছেন বলেই না আমার যাওয়া।
কি বলব, আমরা ভাবি এক আর উপরে যিনি বসে আছেন তিনি ভাবেন আরেক।
আমাদের এক বন্ধু খুবই অসুস্থ। ওকে রেখে আমরা যাবনা। তোমরা ঘুরে এসো। আবার কোনদিন যদি একসাথে যাওয়ার সুযোগ আসে, যাবো বৈকি। বলে থামলেন। গলার স্বরে বিষণ্ণতা।
আমি চুপ করে শুনলাম। শুধু ভাবলাম, আমরা কত নীরুপায়। কোন কিছুরই কোন গ্যারান্টি নাই।
বারো জন যাবো। সেই খানে ছয় জনে এসে দাঁড়ালাম।
আজ সেই ১৩ই সেপ্টেম্বর।
আমাদের যাত্রার দিন। সুটকেস টা বন্ধ করে দিয়েছি। ছেলে, মেয়ে বোনরা কল করে শুধু একি কথা, ঔষধ গুলো সাথে নিতে ভুলনা। পাসপোর্ট টা সাবধানে রেখো। ওখানে পৌছিয়ে ফেস টাইম করবে।
বলি, একাতো যাচ্ছি না, আরও কয়জন তো সাথে আছে।
ওদের দুশ্চিন্তা, আমার জীবন থেকে অনেক গুলো বছর তো পেড়িয়ে গেছে। এখন তো নড়বড়ে শেকড়ের উপর দাঁড়ান। তাই ওরা দুশ্চিন্তা গ্রস্থ।
সময় এলো।
ইসাক ভাই পৌছে দেবে এয়ারপোর্টে।
বিধির কি খেলা। যে আমাকে নিতে চেয়েছিল তার সাথে, আজ সে শুধু পৌছে দেবে এয়ারপোর্টে।
ভ্রমন কাহিনীর শুরুটা ভালো লাগলো।তুমি সবসময় ভ্রমনের খুঁটিনাটি বিষয়গুলোও এত সুন্দর করে বর্ননা কর মনে হয় নিজের চোখেই সবকিছু দেখছি।এবারও আমি তোমার চোখ দিয়ে রাশিয়াকে দেখবো।
2 Comments
ভ্রমন কাহিনীর শুরুটা ভালো লাগলো।তুমি সবসময় ভ্রমনের খুঁটিনাটি বিষয়গুলোও এত সুন্দর করে বর্ননা কর মনে হয় নিজের চোখেই সবকিছু দেখছি।এবারও আমি তোমার চোখ দিয়ে রাশিয়াকে দেখবো।
Opekhay thaklam tomar lekhay Russia k dekhbo bole