রাশিয়ার পথে ৩

কেন জানি ইদানিং দুরে এলে একটু ভয় ভীতি মনের মধ্যে থেকে যায়। যদি কিছু হয়। শারীরিক ভাবে । এটা আবার আমাকে মানসিক ভাবে ভাবিয়ে তোলে। মনের মাঝে ঐ ভাবনা টাকে দূর করার চেষ্টা করে শুয়ে পড়লাম।
ক্লান্ত। এতটা পথ পাড়িয়ে এসেছি।
নাহ, প্রথম প্রহরে ঘুম এলো না। যখন সে এলো, তখনি অ্যালার্ম টা বেজে উঠলো। অগত্যা আড়া মোড়া করে উঠে পড়লাম।
তৈরী হয়ে বাহিরে আসে দেখলাম কেউ আসেনি। আমি একটু আগেই আসে পড়েছি। সুন্দর ঝকঝকে আলো। মাথার উপরের কাচ দিয়ে এসে পড়েছে বিশাল বারান্দাতে। কাউন্টারে দুজন সুন্দরী মহিলা। ব্যাস্ত।
আমাদের গ্রুপের একজন, সাথে অর্ধাঙ্গিনী অথবা বান্ধবী ব্রেকফাস্ট রুমের দিকে এগিয়ে যাওয়ার আগে জিজ্ঞাসা করল আমাকে, যাবে?
না, অপেক্ষা করছি আমার সাথের অন্যদের জন্য। ধন্যবাদ।
ওরা চলে গেলো।
জীবু, আন্না আপা, দোজা ভাই এলো।
জানালার কাছের টেবিল টা বেছে নিলাম। বাহিরে ঝলমলে আকাশ। খুরশেদ ভাই, ভাবী এসে যোগ দিলো।
থরে থরে সাজানো খাবার। কোন টা থুয়ে কোন টা নেবো।
গেলীনা বলেছে ঠিক নয়টায় চত্বরে থাকতে। সাড়ে নয়টায় বাস ছেড়ে যাবে।
নাস্তা শেষ করে বাহিরে আসতেই দেখলাম প্রায় সবাই এসে গেছে।

মস্কোতে এসেছি অপেরা দেখবো না, তাতো হতে পাড়ে না। বুঝি আর না বুঝি। কথাটা পারতেই সবাই রাজি।
কাউন্টারে আসতেই অল্প বয়স্ক মেয়েটা এগিয়ে এলো। নাম ক্রিস্টিনা। কথার ফাকে ফাকে তার হাসি দোজা ভাই লক্ষ করেছিল। পরে বলেছিল, ও সুন্দরী তবে দাতের বাধন ভাল নয়।
হাজার হলেও উনি দাঁত বিষয়ে বিশেষজ্ঞ।

Bolshoi Theatre এ আমরা টিকেট পেলাম না। শুনেছি এই বিখ্যাত theatre এর নাম। এর বিবরণ আসবে পরে। টিকেট পেলাম তারই পাশে নতুন গড়ে উঠা আর একটি থিয়েটার। চলছে ওথেলো। আগামীকাল সন্ধ্যার টিকিট পাওয়া গেলো।
গেলীনা ডাক দিলো সবাইকে। আমরা ওকে ঘিরে দাঁড়ালাম।

প্রথম দিনের তালিকায় আছে The Kremlin, Armory Museum, Arbat Center. বাস এসে দাড়িয়ে আছে গেটের সামনে। একে একে আমরা সবাই উঠে বসলাম। গেলীনা পরিচয় করিয়ে দিল মারিয়ার সাথে। আজকের গাইড সে।
গেলীনার পরিচয় না দিলেই নয়। গাইডই তার এক মাত্র পেশা নয়। মস্কো Universityর ইতিহাসের প্রফেসর সে । University বন্ধ কালীন সে এই কাজ টা করে। অনেক দিন ধরে আছে Gate1 ট্রাভেলের সাথে। অবাক হলাম।

ছোট পথ ধরে বাসটা এসে পড়ল বড় রাস্তায়। দুই পাশে বিশাল অট্টালিকার সারি। একটু এগিয়ে যেতেই ডান দিকে কার্ল মার্ক্সের বিরাট মূর্তি।এখন আর কার্ল মার্ক্স নিয়ে কেউ আলোচনা করে না।
সকালে রাস্তায় ভিড়। আধা ঘণ্টার মাঝে আমরা এসে পৌছালাম।
The Kremlin.
The symbolic heart and soul of Russia. চারিদিকে বিশাল লাল দেওয়াল। Czars এর বাসস্থান ছিল। এখন রাশান প্রেসিডেন্টের অফিসিয়াল রেসিড্যান্স এখানে । অনেক অনেক লোকের আগমন। কোথাও কোন পুলিশের আনাগোনা নেই। মারিয়াকে অনুসরণ করে Kutafy Tower দিয়ে আমরা এসে পৌছালাম Kremlin এর পশ্চিম দালানের দিকে। র‍্যাম্প এর শেষ মাথায় Alexander Garden.
অপূর্ব। দোজা ভাই ছবির পর ছবি তুলে চলেছে। আমিও কখনো সেলফী কখন অন্যকে দিয়ে সবাই মিলে ছবি উঠাচ্ছী। স্মৃতির মাঝে ধরে রাখা।
Kremlin wall কে পাশে রেখে একটু এগিয়ে গেলে Trinity Tower. লাল দালান। এর নাম হয়েছিল the Trinity Monastery of St.Sergius থেকে। এই Tower দিয়ে Tsar এর স্ত্রী এবং ছেলে মেয়েরা আসা যাওয়া করতো।

Trinity Tower

ছবি তোলাতে ব্যস্থ থাকায় মারিয়ার উচু লাঠিতে বাঁধা গেট ১ আমি দেখতে পেলাম না। ওদেরকে হারালে আমার সর্বনাশ। গলা শুকিয়ে এলো।
দুর থেকে জীবুর ডাক শুনলাম, ও ডাকছে। ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ল।
একটু সামনে এগিয়ে গেলে Annunciation Cathedral. চোখ জুড়ানো Artistic View, ভিতরের ডিজাইন না দেখলে বিশ্বাস করা যায়না। কথিত আছে এটা পেইন্ট করেছিল মঙ্ক Feodosius. ১৪ সেঞ্চুরি তে এটাই ছিল সব চেয়ে মস্কোর Important Church.

Annunciation Cathedral

Annunciation Cathedral কে পিছনে ফেলে আমরা এগিয়ে এসে দাঁড়ালাম Ivan the Great Bell Tower, ডিজাইন করেছিল Marco Bon Friazin. অনেক পুরান ইতিহাস জড়িত এই Kremlin এ। বিস্ময়। দেখার শেষ নেই।

সামনে বিরাট Great Kremlin Palace. সাদা হলুদ রঙ। Tsar Nicholas 1 এর সময় রয়েল ফ্যামিলি St.Petersburg থেকে মস্কো আসলে এখানে থাকতো। সেই সময় রাশিয়া র রাজধানী ছিল St.Petersburg।
আগের থেকেই আমাদের টিকিট কাঁটা ছিল। মারিয়া আর গেলীনা কে অনুসরন করে আমরা ঢুকলাম প্রথম তালায়। ফটো উঠানো নিষেধ নয় তবে ফ্ল্যাশ জ্বলতে পারবে না। প্রথম তালা রয়েল ফ্যামিলির luxurious private room.
উপর তালায় সেরীমনিয়াল হল। প্রায় আধা ঘণ্টা লেগে গেলো বাহিরে আসতে।

এর পর যাবো State Armoury দেখতে। মারিয়া State Armouryএর উপর একটা ছোট খাটো লেকচার দিল। এই State Armoury তে দেখতে পাবে Russian Prince এবং tsar এর বিশাল পরিমাণ ধন সম্পদ।

ভিতরে এসে দেখতে পেলাম হরেক রকমের জুয়েলারি, বিভিন্ন ধরেনের অস্ত্র, রয়েল ক্রাউন্স, আর গাউন। আরও দেখলাম বিখ্যাত Jeweled Faberge Eggs. অতুলনীয়।
চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না।

অপূর্ব Alexander Garden এর ভিতর দিয়ে হাটতে হাটতে মনে হোল একটু ক্লান্ত। কিন্তু না এখনও তোঁ দেখার বাকি রেড স্কয়ার। ছবিতেই দেখেছি আজ দেখবো নিজের চোখে।
রেড স্কয়ার। বিশাল চত্বর।

Red Square

St.Basil Cathedral

পশ্চিম দিকে St.Basil Cathedral. আগে এই রেড স্কয়ারে প্রত্যেক বছর মে ডে তে প্যারেড হতো। এখন এখানে কালচারাল প্রোগ্রাম হয়।
এই স্কয়ারে লেনিনের কবর। ভিতরে যাওয়া হলনা। বিরাট লাইন। অগত্যা মারিয়া বলল, চলো কিছু খাবে।
তোমাদের কে নিয়ে যাব রাশিয়ার সব চেয়ে বড় মল। নাম GUM.

Gum Department Store

এবার আমাদের মত আমরা। গেলীনার সাথে মিলবো এক ঘণ্টা পরে। সবাই ক্ষুধার্ত। Food Court এ এসে বসলাম। আন্না আপা, জীবু মিলে বিভিন্ন ধরনের খাবার নিয়ে এলো। আমি দেখছিলাম মলে লোকের আনাগোনা। আমেরিকান মলের সাথে পার্থক্য architecturaly. দামের তুলনায় আমরা এখনো সর্ব নিম্নে।

খাওয়া শেষে জীবু আন্না আপা কিছু কিনবে বলে স্টোর গুলো ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলো।

প্রায় এক হাজারের উপর দোকান। ফার থেকে আরম্ভ করে সিল্ক সব পাওয়া যায়।

আছে Benetton, Estee Lauder, Christian Dior আরও অন্যান্য Western Firm.

আছে Western style এ ক্যাফে, রেস্টুরেন্ট।

ঘণ্টা কেটে গেলো। ফিরে এলাম গেলীনা, মারিয়ার কাছে।  ফিরে যাবো হোটেলে।

সন্ধ্যার পরে আসবো রাতের রেড স্কয়ার দেখতে।

You may also like

3 Comments

  1. ছবি দিয়ে বর্ননা দেওয়াই মনে হচ্ছিলো চোখের সামনেই সবকিছু দেখতে পাচ্ছি কোন জায়গাটা কেমন।খুবই ভালো হয়েছে এই ভাবে দেওয়াতে।সামনে আরো অনেক কিছু দেখার অপেক্ষায় থাকলাম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *