ঠক ঠক ঠক শব্দ শুনে ঘুম টা ভেঙ্গে গেলো। একটু সময় নিলো ভাবতে শব্দ টা কোথা থেকে আসছে। দরজায় কে যেন টোকা দিচ্ছে। পাশের থেকে হাত ঘড়ি তে তাকিয়ে দেখি সাড়ে সাতটা বেজে গেছে। নাস্তা করতে যাওয়ার কোথা।
দরজা খুলে দেখি দোজা ভাই।
“আমরা তো তোমার জন্য চিন্তিত। কি ব্যাপার?”
“ পনের মিনিট সময় দিন, আপনারা টেবিল নিয়ে বসেন, আমি আসছি”। এই বলে বাথরুমে যেয়ে গরম পানিটা ছেড়ে দিলাম।
প্রস্তুত হয়ে আসতেই ওরা ওদের উদ্বিগ্নতার কথা জানালো।
“সত্যিই তুমি আমাদের ভাবিয়ে তুলেছিলে। সবসময় তুমি আসো প্রথমে আর আজ কিনা তুমি নেই”। বললও আন্না আপা।
ব্রেকফাস্ট শেষে আমরা এলাম লবি তে ।
আজ দেখতে যাবো Tretyakovsky State Gallery. পৃথিবীর বিখ্যাত আর্ট মিউজিয়ামের মধ্যে এটা একটা। এই মিউজিয়ামের প্রতিষ্ঠাতা Pavel Tretyakov.
আমরা সবাই এসে মিলিত হলাম হোটেলের বারান্দায়। গেলীনা এই গ্যালারীর উপর অল্প বিস্তর বক্তব্য রাখল। ওর বক্তব্যে জানতে পারলাম, এই গ্যালারীতে আছে কম পক্ষে এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার পেইন্টিং, দশতম চেঞ্চুরী থেকে আরম্ভ করে উনিশতম সেঞ্চুরি পর্যন্ত আঁকা এই পেইন্টিং গুলো। বিখ্যাত আর্টিস্টরা হচ্ছে, Brullov, Kiprensky, Karavak, Fedotov, Repin আরও অনেকে।
বাস আমাদের নামিয়ে দিলো বেশ দুরে। খুব সুন্দর আবহাওয়া। হাটতে হাটতে আমরা এসে পৌছালাম Tretyakovsky State Galleryর কাছে।
মারিয়া আজও আছে আমাদের সাথে। হাতের লাঠিটা উঁচু করে ধরে বলল, আমাদের ট্যুর আরম্ভ হবে দ্বিতীয় তালা থেকে।
সেখানে আছে ১৮ তম সেঞ্চুরিতে আঁকা ছবি গুলো।
একের পর এক ছবি গুলো দেখা শেষ করে যখন বাহিরে এলাম তখন মুষল ধারে বৃষ্টি। এসে ছিলাম রোদ মাথায় করে এখন ভিজতে ভিজতে যেতে হবে বাসের কাছে।
অঝোরে ঝরছে। আমি খুরশেদ ভাই, ভাবী আর জীবু। অন্যান্যরা বৃষ্টি মাথায় বেড়িয়ে গেছে । ভাবীর ঠাণ্ডা লেগেছে, কাজেই বৃষ্টি মাথায় বের হওয়া যাবেনা। অগত্যা খুরশেদ ভাই গেলো ছাতার খোজে।
ঠিক যখন উনি ছাতা কিনে ফিরে এলো তখনি বাসের ড্রাইভার ছাতা নিয়ে হাজির।
যেয়ে শুনলাম ওরা আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে।
লাঞ্চের সময়। এটা আমাদের তালিকার মধ্যে। নির্ধারিত সময়ে পৌছাতে হবে। একটু দেরী হয়ে গেলো বৃষ্টির জন্য। তাতে খুব একটা কিছু এলো গেলো না।
ওরা অপেক্ষা করছিল। পুরো রেস্টুরেন্টে শুধু আমাদের দল।
যেখানেই যাচ্ছি আমরা ছয়জন এক সাথে বসি। এবার আমাদের সাথে যোগ দিল অন্য একটা কাপল। থাকে লসএঞ্জেলীস আর হংকং মিলিয়ে। প্রাথমিক আবাস ছিল হংকং। পরে লসএঞ্জেলীসে এসেছিল চাকরি নিয়ে। দুজনেই রিটায়ার।
আমাদের জন্য Sea Foodর ব্যবস্থা। খাবার মন্দ নয়। ভ্রমনে বেড়িয়ে থাকা খাওয়া নিয়ে মাথা ঘামালে চলে না।
খওয়া শেষ।
এবার আমাদের গন্তব্য স্থান মস্কোর পাতাল রেলপথ। প্রথমে ভেবেছেলাম পাতাল রেলপথ, এমন কি আর হবে। অনেক দেশের পাতাল রেলপথ দেখেছি। শেষ দেখেছিলাম চায়নাতে। মুগ্ধ হয়েছিলাম। আরও বেশি মুগ্ধ হওয়া যে বাকি ছিল তা জানা ছিল না।
অনেক জাগায় ভ্রমন করেছি, দেখেছি অনেক পাতাল রেলপথ। কিন্তু এতো অভিভূত হয়নি কখন।
স্টালিনের vision ছিল, মস্কোর মেট্রো কে “People Palaces” করবে, সেই চিন্তা করে ১৯৩৫ শোনে মাত্র ১৩ টা স্টেশন দিয়ে তৈরী হয় এই মেট্রো। আজ ১৮০ টা স্টেশন। আরও হচ্ছে। প্রতিদিন কমপক্ষে নয় মিলিয়ন যাত্রী যাতায়েত করে।
প্রত্যেকটা স্টেশন Unique ভাবে ডিজাইন করা। রাশান ইতিহাসের সাথে জড়িত।
মারবেল দিয়ে তৈরী, স্যান্ডেলিয়ার ঝুলছে। বিভিন্ন জায়গায় Mosaic arts, এক কথায় অপূর্ব।
Mayakovskaya Station যুদ্ধের সময় বম্ব সেলটার হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছিল। শুধু তাই নয়, হাসপাতাল এবং Supreme Command Headquarter ছিল।
Komsomolskay staion দেখলে মনে হবে এটা স্টেশন নয়, এ যেন গ্র্যান্ড বলরুম।
এই ভাবে তৈরী বিভিন্ন স্টেশন গুলো।
3 Comments
গত লেখাতে বলেছি এখনও বলছি ছবি দিয়ে বর্ননা দেওয়াতে প্রতিটা বিষয় আমাদের সম্মুখে দৃশ্যমান।আমি তো পাতালরেলের ছবি দেখে অভিভূত।আসলেই অপূর্ব।খুব ভালো লাগছে তোমার এই ভ্রমন কাহিনী।
Valo lagse. Sobigulo khub sundor.
Wow!Excellent pictures of Patal Rail. I am impressed.