সমস্যা

 

 সকাল বেলা কম্পিউটারটা খুলে বসে ব্যাংকিং এর কিছু কাজ করতে যেয়ে দেখি আমার একাউন্ট থেকে কে বা কারা টাকা সরিয়ে নিয়েছে। টাকার পরিমাণ অনেক না হলেও আমার জন্য অনেক বেশি।

আমি ছাই পোষা মানুষ। আমার একাউন্টে হাত দেওয়া কেন?
দৌড়ে গেলাম বাঙ্কে।
আমার সমস্যা শুনে ম্যানেজার মহাশয় খুব একটা বিচলিত হলেন না। হয়ত এই ধরনের পরিস্থিতি তাদের কে প্রায় পোহাতে হয়। কিন্তু আমার জন্য এটা একটা বিরাট বিষয়।
সব দেখে বলল, আমরা এর ব্যবস্থা নেবো, তবেঁ সময় সাপেক্ষ। এই মুহুর্তে এই একাউন্ট বন্ধ করে নতুন একাউন্ট খুলুন।
নতুন একাউন্ট খুলে এলাম।
এই খানেই তোঁ সমস্যার সমাধান নয়। যে যে পাওনাদাররা আমার এই একাউন্ট থেকে প্রতি মাসে টাকা উঠিয়ে নেয় তাদের কে নতুন একাউন্টের কথা জানাতে হবে। জানাতে হবে সরাসরি আমার কাজের থেকে যে টাকা জমা হয় তাদেরকে।
ভোগান্তির শেষ নেই।

এই তো সে দিন। নাটক দেখতে গিয়েছিলাম। সামনের থেকে তৃতীয় সাড়িতে বসা এক রুপসী মহিলা বার বার ঘাড় বেঁকিয়ে আমার দিকে চাইছে। দুই দুই বার চোখাচোখি হোল। মহিলা একটু হাসলেন।
কেনও? জানিনা।
অস্বস্তি লাগছিলো। চিনিনা জানি না কেন আমার দিকে তাকানো।
নাটক শেষে বাহিরে আসতেই মহিলা এসে আমার সামনে দাঁড়াল।
চিনতে পারছেন?
বললাম, না, চিনতে তোঁ পারছি না।
আমার নাম — , আমার বড় বোনের সাথে আপনার খুব ভাল সম্পর্ক ছিল। ওর নাম —-।
আমি আকাশ থেকে পড়লাম। এই নাম আমি কস্মিনকালে ও শুনিনি।
বললাম, আপনি বোধ হয় অন্য কারো সাথে আমাকে গুলিয়ে ফেলছেন।
না তা কেনও হবে? ওই যে ওই পাড়াটা। নাম হচ্ছে— ।
ওই পাড়ার কাছে দিয়েও কোনদিন গেছি বলে মনে পড়ছে না।
তাহলে কি আমি ভুল করলাম। বলে একটু সময় নিয়ে আবার বললেন, আমার বোনটা আজ থাকলে সে হয়তো বলতে পারতো।
উনি আসেনি?
না সে বেচে নেই।
অত্যন্ত দুঃখিত। তাহলে তো সমস্যার সমাধান হোল না।
না তা হোল না। তবে কথা আমরা চালিয়ে যেতে পারি এক কাপ চা খেতে খেতে।
বললাম, এক জাগায় যেতে হবে। তাড়া আছে। চলি।
কোন রকমে পালিয়ে বাচলাম।

দুইদিন আগে এক বন্ধু ফোন করে বলল, মস্কো যাবি?
একটু সময় নিলো ওর কথা টা বুঝতে।
ভোর বেলা। তখনো আমার চা র পেয়ালা শেষ হয়নি।
কি রে চুপ করে রইলি যে।
না, তোর কথা টা ঠিক বুঝতে পারলাম না।
মস্কো, মস্কো যাবি?
তোর সকাল টা কি চা দিয়ে না অন্য কোন তরল পদার্থ দিয়ে শুরু হয়েছে।
না, সত্যি বলছি, ভাল একটা ডিল আছে।
রাজি হলাম।
ছেলে কে বলতেই সে হৈ হৈ করে উঠল।
মস্কো, মাথা খারাপ। ওই খানে গেলেই তোমার পিছনে চর লেগে যাবে। আর ফিরে আসতে হবে না। অন্য কোন দেশে যাও আমার আপত্তি নাই।
চর, কেন, আমার পিছনে চর লাগবে কেন? আমি কি এখান কার কেউকেটা কিছু।
যত সব জুট ঝামেলা।
অগত্যা যাওয়া হলনা। মা মরা ছেলের কথা ভেবে ওদিকে আর পা বাড়ালাম না।

সমস্যার সীমা নেই।
এইতো গতকাল। গাড়ীটা নিয়ে বের হয়েছি। যাবো এক বন্ধুর বাসায়। থাকে তিরিশ মাইল দুরে। বাহিরে বৃষ্টি।
ইচ্ছা ছিলনা যাওয়ার। কিন্তু বন্ধু আমার নাছোড় বান্ধা। আরও কয়েক জন আসবে।
বলেছিল, প্রণতি আসবে।
প্রণতি ,ঐ নামটা আমাকে টেনে নিয়ে গেলো। এক সময় ঘনিষ্ঠ পরিচয় ছিল।

আমার দশ বছরের পুরানো গাড়ীটার সিডি কম্পারটমেন্টে রবীন্দ্র সংগীতের একটা সিডি চালিয়ে দিলাম। গানের সাথে গুনগুণ করে গাইছি।
হঠাৎ দেখি পিছনে ফ্লাশিং লাইট।
ওহ, নো। পুলিশের গাড়ী। আমাকে সাইড করতে বলছে।
অগত্যা পাশে যেয়ে দাঁড়ালাম।
বৃষ্টি মাথায় পুলিশটা এসে দাঁড়াল আমার গাড়ীর জানালার কাছে।
জানালা খুলে জিজ্ঞাসা করলাম আমি কি অন্যায় করেছি। গাড়ী যে খুব একটা জোড়ে চালিয়েছি তাও নয়।
তাহলে?
বাহিরে বৃষ্টি, অয়াইপার চলছে, কিন্তু তোমার গাড়ীর বাতি জ্বলছে না। এই তোমার অপরাধ। বলল, পুলিশটা।
মনে পড়ল আইন করেছে অয়াইপার চললে বাতি জ্বলতে হবে। আমার পুরান গাড়ীতে অটোম্যাটিক এসব হয় না।
মুখ কাঁচুমাচু করে বললাম অপরাধ হয়ে গেছে।
শুনল না। টিকিট টা ধরিয়ে দিলো।
মাটি হয়ে গেলো প্রণতির সাথে দেখার আগ্রহ। রবীন্দ্র সংগীত বন্ধ করে দিলাম।
মেজাজ খিঁচিয়ে গেলো।
মেজাজ আরও খিঁচিয়ে গেলো প্রণতি কে দেখে।
হাল্কা লিকলিকে বাহু, মোটা গ্লাসের চশমা চোখে, পড়নের শাড়ী টা যেমন তেমন করে পরা। সিঁথিতে সিঁদুর নেই।
আমার দেখা সেই প্রণতি কোথায়?
যার বুক সমুদ্রের ঢেউ এর মতো উঠা নামা করত, আজ তা নদীর মতোই শান্ত। যার চোখের দৃষ্টি অর্জুনের ছোড়া তীরের মতো তীক্ষ্ণ। বুকে এসে আঘাত হান্ত। আজ তা হারিয়ে গেছে মোটা চশমার অন্তরালে।

দুহ ছাই! বলে চৌকাঠের দিকে পা বাড়াতেই ডাক শুনলাম।
পিছন ফিরে দেখি শাহিন।
চলে যাচ্ছিস?
হাঁ।
কারন?
কোন কিছুই মনের মতো হচ্ছে না।
নদীর জল অনেক গড়িয়ে গেছে বন্ধু। এখন মনের মতো চাইলে তো মনের মতো হবে না।
হেঁয়ালি রাখ, কি বলবি, বল।
হাকিমের কথা মনে আছে?
আছে।
যোগাযোগ?
না।
সে সব সমস্যার সমাধান করতে চলেছে।
আবারও হেঁয়ালি?
পেনক্রীয়াটিক ক্যান্সার। শেষের পথে। চিকিৎসা করাবে না বলেছে।
কি বলছিস?
সে বলেছে, চিকিৎসা করিয়ে কি লাভ? একমাসের পরিবর্তে না হয় দুই মাস বাজবো। দুমাস বাচতে যেয়ে ঐ বিষাক্ত ঔষধের যে প্রতিক্রিয়া তা আমার সইবে না।
যাবি দেখতে?
শাহিনের দিকে চেয়ে নিজের সমস্যা সমস্যা বলে মনে হোল না।
বললাম,
চল।

You may also like

4 Comments

  1. প্রতি পদে পদেই সমস্যা।খুবই বাস্তব চিত্র।কিন্তু কেন জানি মনে হচ্ছে লেখার শেষটা হবে চোখের জল দিয়ে।খুব ভালো লিখেছো।

  2. সমস্যা নিয়ে লেখাটা খুব সুন্দর হয়েছে , পড়ে ভাল লাগলো

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *