হঠাৎ করেই মনে হোল দেশে যাবো।
অফুরন্ত সময় আমার হাতে। যদিও বছর ঘুরেনি শেষ যখন দেশে গিয়েছিলাম।
ভাল লাগে যেতে।
ফোন করলাম বোন কে। ওখানেই উঠি। পৈতৃক ভীটা আজ আর নেই।
ছিল।
পাঁচ তালা দালান। আজ নেই।
কাজেই যখনই আসি, ওখানেই উঠি। প্রান ঢেলে করে সে। কোন কিছুর ত্রুটি নেই। মা যে ভাবে করতো।
সেই সাথে আছে দিলারা। ওকে ছাড়া সব অচল।
লোকে বলবে, ওত কাজের মেয়ে।
আমরা বলি ও আমাদের পরিবারের একজন।
আমি এলে প্রথমে বলবে, মামা তোমার স্যান্ডেল আর তোয়ালে নামিয়ে রেখেছি, তুমি আসবে শুনে।
আমিও ওর উপরেই নির্ভরশিল হয়ে পরি। ছোট খাটো দরকারি জিনিস ঐ করে দেয়। ডেকে বলি, দিলারা, আমার ফোনে টাকা নেই।
হাসি দিয়ে বলবে, কোন সমস্যা নেই, মামা। ঐ হাসি টা আমার মনে গেঁথে থাকে।
আমি আসবো শুনে বোন বলেছিল, তুমি যে দিন আসবে সেদিন আমরাও ব্যাংকক যাবো। মাত্র পাঁচ দিনের জন্য। তোমার অসুবিধা হবে না। দিলারা থাকবে।
মনে মনে ঠিক করলাম, আমিও না হয় বাড়িয়ে পড়ি ঐ কয়দিনের জন্য। পাশের দেশ ভারত। কলকাতায় গিয়েছি কয়েক বার তবে শান্তিনিকেতনে যাওয়া হয়নি।
যেই কথা সেই কাজ। ভাগ্নে অপু কে বললাম, কি রে যাবি?
সে এক পায়ে খাড়া। বলল, মামা, আমি সব ঠিক করছি, চলে এসো।
এখানে ছেলে, মেয়েদের বললাম। দেশে যাবো। কলকাতায় যাবো তিনদিনের জন্য। সাথে সাথে ফর্দ এসে গেলো হাতে।
দেখে মনে হোল খুব একটা কমে সারা যাবে বলে মনে হয় না।
যথারীতি দেশের উদ্দেশে রওয়ানা দিলাম। পথের ধকল শেষে এসে পড়লাম ঢাকার এয়ারপোর্টে। পাক্কা দুই ঘণ্টা লাগলো Immigration এর হাত থেকে বের হতে। দেরী আগেও হয়েছে, কিন্তু এতো দেরী কখন হয়নি।
যাহোক, পথের যানজট পেড়িয়ে যখন বাসায় এলাম রাত তখন নয়টা।
বোন বললও, খেয়ে নেও, কাল ভোরেই তো তোমার ফ্লাইট।
ভাবছিলাম শরীর টা এই ধকল সইতে পারবে কি না।
পেরেছিল।
কলকাতায় যখন এসে পড়লাম তখন সকাল ১১ টা। পার্ক ষ্ট্রীটের উপর আমাদের হোটেল। নাম The Park.
ট্যাক্সি নামিয়ে দিলো হোটেল।
কাউন্টারে এসে নাম বলতেই এক সুন্দরী রিশিপসনিস্ট কাগজ পত্র গুলো সামনে এনে দিলো।
সই করতে যেয়ে চশমাটা খুজে পেলাম না। মনে পড়লো ওটা ট্যাক্সির সিটের পাশে রেখেছিলাম। ওখানেই রয়ে গেছে।
ওটা ছাড়া চলা মুশকিল। কি করি। অগত্যা সানগ্লাস টা দিয়ে কাজ চালাতে হবে।
অপু দেখে বলল, বাহ, তুমি তো Celebrity হয়ে গিয়েছো।
কি আর করা, আসতে না আসতেই ঝঞ্ঝাট।
যেহেতু সকাল সকাল পৌছে গেছি তাই ভাবলাম পুরো দিনটাই তো আমাদের হাতে। কাজে লাগাতে হবে।
অপুকে বললাম, চল আজকে কেনা কাঁটা গুলো সেরে ফেলি। আবার সময় নাও পেতে পারি। পার্ক ষ্ট্রীটের উপরেই দোকান।
কেনা কাটাতে আমি নিতান্তই আনাড়ি। দামদর করা আমার হয়ে উঠে না।
ওখান থেকে বলে দিয়েছিল নিউ মার্কেট থেকে কিনতে। আগে যখন এসেছিলাম সাথে দামদর করার লোক ছিল।
আজ নেই।
কাজেই ঐ ঝঞ্ঝাট আমার পোষাবে না ভেবে ঢুকে পড়লাম পার্ক স্ট্রীটের এক দোকানে।
যা চাইছি তার ফিরিস্তি শুনে ভদ্রলোক বললেন, এখানে Sabyasachi নয়, তবুও Sabyasachi র মত যা চাইছেন তা মিলবে না। তবে ভদ্রলোক অন্য এক দোকানের নাম দিয়ে দিলেন।
দুরে নয়। এক ব্লক হাটতেই দেখা গেলো দোকান টা।
ফোন থেকে ছবি গুলো ( মেয়ে আর বৌমা ছবি দিয়ে দিয়েছিল) দেখাতেই, সেলস ম্যান বলল, আছে, এই দিকে আসেন।
ঠাণ্ডা খাবেন না গরম ।
মনে মনে ঠিক করেছি, আর যাই হোক ঠকবো না। কারন, আসার আগে আমার এক নিকট জন, যার কিনা শাড়ী কাপড়ের দামের উপর অঘাত জ্ঞান, রিসার্চ করে বলেছিল, মামা, তোমাকে যা দাম বলছি তার উপরে যাবে না।
আমি যাই নি।
ওরা অনেক আদর আপ্যায়ন করেছিল আমাদের কে। ভুলবার নয়।
পর দিন ভোরে যাবো শান্তিনিকেতনে। জাহাঙ্গীর ভাই ঠিক করে রেখেছিল এক ট্যাক্সি কে ঢাকা থেকে। ড্রাইভারের নাম, সাহাবুদ্দীন। ফোন করে জেনে নিলাম কখন আসবে।
বলল, সকাল আটটার মধ্যে বের হয়ে যেতে হবে। সাড়ে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টার পথ।
অনেক দিনের শখ, আজ তা পুরন হতে চলেছে।
রাতে ঘুম এলো না। তাতে কিছু যায় এসে না। না ঘুম আমার নিত্ত দিনের সাথী।
ঠিক আটটায় সাহাবুদ্দীন এসে হাজির। বয়স পঁচিশ থেকে তিরিশের উপর হবে না। প্রথম দেখায় ওকে পছন্দ হয়ে গেলো আমার। হাসি খুশি মানুষ আমার সব সময় প্রিয়।
আমাদের কোন কিছু ভাবতে হবে না বলে, সে গাড়ী ছেড়ে দিলো। শহর থেকে বের হতে দেরী হয়ে গেলো। পুরন শহরের গলি পথ থেকে বের হওয়া চাট্টি খানি কথা নয়।
অবশেষে এসে পড়লাম দিল্লি এক্সপ্রেস ওয়ে তে। গাড়ীর স্পীড একটু উপরের দিকে মনে হোল। চারিদিকে বাস আর বড় বড় ট্রাকের সারি।
সাহাবুদ্দীন কে একটু আস্তে চালাতে বলে বাহিরের দৃশ্য দেখায় মগ্ন হলাম। বর্ধমান পেড়িয়ে অবশেষে শান্তিনিকেতনে এসে যখন এসে পৌছালাম তখন ঘড়ির কাঁটা দুটো ছুঁই ছুঁই।
শান্ত, ছায়া ঘেরা পরিবেশ। হাঁটি হাঁটি করে চত্বরে এলাম। লাল সুরকীর পথের দুদিকে গাছের সারি। পথ ধরে এগুতেই কানে এলো রবীন্দ্র সঙ্গীত ভেসে আসছে একটা বাসা থেকে।
আসলে ওখানে চলছে সঙ্গীত চর্চা। একটু এগোতেই দেখলাম বিড়লালয় ছাত্রী নিবাস। মৃণালিনী ছাত্রী নিবাস।
এমন শান্ত পরিবেশ দেখিনি অনেক দিন।
গাইড না থাকাতে কোণটা কি তার বিশ্লেষণ পেলাম না। তবে হা সেই স্বাদ মিটাল এক তিন চাকার স্কুটার ড্রাইভার। ভিতরে তাদের প্রবেশ নিষেধ। বাহির দিয়ে ঘুরিয়ে দেখাল, কোন গাছের নিচে বসে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কবিতা লিখতেন।
দেখাল ছাতিমতলা।
দেখা শেষ। বিকেল গড়িয়ে গেছে। এবার ফেরার পালা।
শান্ত স্নিগ্ধ পরিবেশ থেকে এসে পড়লাম হট্টগোল রাস্তায়।
সাহাবুদ্দীন বলল, মাঝ পথে কিছু খেয়ে নেবো।
ঠিক আছে। বলে গাড়ীতে এসে চোখটা বুঝলাম।
কোলকাতা শেষে ঢাকায় ফিরে এলাম।
এবারে ঢাকায় একটা অভিজ্ঞতার কথা না বললেই নয়।
আমি আর অনীকা চলেছি রিক্সায়। রাস্তায় জামে দাড়িয়ে। হঠাৎ এক মহিলা। সুন্দর করে সাঁজা। বলল, কেমন আছো?
আমি ভড়কে যেয়ে ওর দিকে তাকিয়ে মনে হোল ও দেখতে আমার ভাগ্নির মতো। অনেক দিন ওকে দেখিনি।
তুই এখানে? বলতে যেয়ে অনীকার কনুএর গুতা খেয়ে ওর দিকে তাকাতেই ও বলল, মামা পঞ্চাশ টা টাকা দিয়ে দেও।
কিছু বলতে যাওয়ার আগে আবারও কনুএর গুতা খেলাম।
অগত্যা টাকা দিতে না দিতেই রিক্সা চলতে আরম্ভ করল।
আমারও চোখের সামনে পর্দাটা সরে গেলো। মনে পড়ল ছোট বেলায় যখন ওদের কে দেখেছি, দেখেছি অন্য ভাবে।
Transgender.
অনীকা বলল, আজ ওদের কে দেখে কেউ নাক ছিটকায় না। সিটি দেয় না।
ওরা এখন বিভিন্ন জাগায় চাকরিও করে।
শুনে ভাল লাগল। ওকে বললাম, আমাদের মানসিকতা অনেক পালটিয়ে গেছে। আমরা কিছুটা উদার হতে শিখেছি।
এর পরেও ওদের সাথে আমার কয়েক জাগায় দেখা হয়েছে। তবেঁ প্রথম বারের দেখার স্মৃতি ভুলিনি আজও।
কোথা দিয়ে সময় গুলো কেটে গেলো জানতে পারলাম না।
এবার সুটকেস গুছানোর পালা।
দিলারা হাসি মুখে এসে বলল, মামা, তোমার প্যান্ট গুলো ভাজ করে তোমার ঘরে রেখে এসেছি।
স্যান্ডেল আর তোয়ালে টা আমি উঠিয়ে রেখেছি। আগামী বছর এলে নামিয়ে দেব।
আগামী বছর।
আসব বৈকি?
9 Comments
বাহ্!সুন্দর লিখেছো!!ছোট্টর মধ্যে খুব গুছিয়ে লেখা।
খুব ভালো , অভিজ্ঞতার সুন্দর বর্ণনা।
খুব ভালো লাগ। দিলারাতো আনন্দেে লাফালাফি করছে।সব কিছুযদিঠিক থাকে তাহলে আবার দেখা হবে।অপেক্ষায় থাকবো।
খুবভাললাগ। দিলারাতো লাফালাফি কর। সব ঠিক থাকলে আবার দেখা হবে।অপেক্ষায় থাকবো।
Valo laglo. Mone holo amio silam okhane.
Apurbo
Valo description.
Khub valo laglo.
Pranbonto ekti lekha.