আজ কোথাও যাওয়ার ইচ্ছে নেই নন্টুর। অনেক বছর আগে হলে, দুজনে হাত ধরাধরি করে বেড়িয়ে পড়তো। কোন একটা ভাল রেস্টুরেন্টে দুটো সিট আগের থেকেই রিজার্ভ করে রাখতো। মাঝ রাতে উঠে যে কার্ড টা আগের দিন কিনে রেখেছিল সেটা বিছানার পাশের টেবিলে সুন্দর করে সাজিয়ে রাখতো। সাথে এক গোছা লাল গোলাপ।
আজ তার পরিবর্তে সে এসে বসলো সোফাতে। সামনে স্তূপ করা পুরানো চিঠি।
যে গুলো সে লিখেছিল আর প্রতি উত্তরে পেয়েছিল বিয়ের আগে।
সে গুলো পড়তে যেয়ে চশমাটা ঝাপসা হয়ে এলো নন্টুর। চিঠির মাঝে ভেসে এলো সাদাটে ফ্রেমের চশমা পড়া মুখটা। যেন সে নিজেই পড়ে পড়ে শুনাচ্ছে। বলছে, এক সাথে পড়বো ভেবেছিলাম তা আর হয়ে উঠলো না।
দেখো, দেখো কি ছেলেমানুষি কথা লিখেছি এই চিঠি টা তে। বলে যেন সে হাসছে।
চিঠির তারিখ গুলো দেখেছ?
দেখেছি। প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে লেখা।
এখনো রেখে দিয়েছ কেনও?
অন্য সবকিছু বিলিয়ে দিয়েছি। এটা আমার। এক মাত্রই আমার। তাই।
আজ এলে যে। বলে নন্টু নাক টা ঝেড়ে নিলো।
না এসে পারি। আজ যে ছাব্বিশে অক্টোবর। আমার বাবা আমাকে শপে দিয়েছিল তোমার হাতে।
বলেছিল, সুখে দুঃখে তুমি ওর পাশে থাকবে। ও আমার বড় আদরের মেয়ে। কিন্তু বাবা বেশিদিন দেখে যেতে পারলো না আমার সুখ টা।
গতকাল ঐ এ্যালবাম টা দেখছিলাম। বলল নন্টু।
কোনটা?
ছাব্বিশে অক্টোবর, উনিশ শো —– টা
চুয়াল্লিশ বছর হয়ে গেলো। কি সুন্দর করেই না তুমি রেখে দিয়েছ। কাজের ভিড়ে যখন ছিলাম তখন আর ওই গুলো দেখা হয়ে উঠেনি। শুধু তোমার সাথে ঘুরেই বেড়াতাম। আজও কি ঐখানেই আছে ঐগুলো ?
না সেখানে নেই। ছোট্ট দুটো কামরা নিয়ে আছি। একটা ঘরে রেখেছি তোমার সব ছবির এ্যালবাম গুলো।
বলে নন্টু উঠে কয়েকটা ন্যাপকীন নিয়ে এলো।
জানো মনে হয় এইতো সেদিন ছিল আমাদের একসাথের সুখের দিন গুলো।
বেশ কিছু বছর কেটে গেলো তুমি নাই, কি ভাবে বোঝাই বলও, I miss you.
মনে হয় তুমি আবার আসবে, আমরা আবার আগের মত হাসবো।
এ জনমে নয় পরের জনমে আমরা আবার একসাথে হবো।
মৃত্যু আমাদের ভালবাসা কে ছিনিয়ে নিতে পারেনি, আমরা আজ দুজনে দুই জাগায়, তবু তুমি আছো আমার মাঝে।
যে স্মৃতি আমরা দুইজনে গড়ে তুলে ছিলাম আজ আমার মনের মাঝে তা চির জাগ্রত।
তুমি স্বর্গে আছো শান্তিতে, মুক্ত বিহঙ্গের মত।
যখন আমার ডাক আসবে দেখা হবে তোমার সাথে Pearly Gate এ। হবে তো ?
হবে।
নন্টু তাকালও চারিদিকে ঝাপসা চোখে। ঘরটা অন্ধকার। আলো জ্বালানো হয়নি।
অন্ধকারে চিঠি গুলো ভাজ করল। রাখল পাশে।
দাঁড়াল যেয়ে জানালার সামনে। বাহিরে টিপটিপ করে বৃষ্টি পড়ছে।
3 Comments
Valobasha hoke chiro omolin. Mon vore thak sudhu tar sritite.valo thakben.
ছাব্বিশে অক্টোবরকে তুমি এমন ভাবে স্মরন করলে মনে হচ্ছে তোমরা দুজন আমার সামনে বসে কথা বলছো।কত স্মৃতি,কত কথা।চোখ আমার ঝাপসা হয়ে গেলো।
Kokhono Kokhono sriti dhukher abar Kokhono sukher. Mon vore thak valobasy.