-কি ব্যাপার মুড টা ভালো নেই মনে হচ্ছে?
-না নেই। বড় ঝঞ্ঝাট।
-কি হোলও?
-কি হয়নি বলও। করোনাভাইরাস বাসায় বন্দী করে রেখেছে, সেই সাথে দেখা দিয়েছে মাজায়, হিপে ব্যাথা।
-ডাক্তার দেখিয়েছ?
-দেখিয়েছি, কাজ হয়নি। যাক ভালই হয়েছে। তুমি এসেছ, চারিপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছ, মন্দ কি?
-এইদিন টাতে না এসে পারিনা। তোমাকে একলা, একলা বলব না, তোমার ছেলে মেয়েদের কাছে রেখে গিয়েছিলাম। ওরা তো তোমাকে ভালোই যত্ন নিচ্ছে।
-তা নিচ্ছে। তোমার হাতে গড়া, বৃথা যেতে পারে না।
-চুলে অনেকদিন ছাঁট পড়েনি মনে হচ্ছে?
-না, পড়েনি, নাপিতের দোকান বন্ধ। এখন বাসায় এঁকে অন্যের টা করে দিচ্ছে।
– তোমার তো সে সুযোগও নেই।
–না নেই, তাতে যে কোন অসুবিধা হচ্ছে তাও নয়। তবে তোমার হাতের ছোঁয়া পাচ্ছিনা বলে মনটা খারাপ হচ্ছে। থাকলে এপাশে দুই আনা ওইপাশে চার আনা করে একটা ছাঁট দিতে। হিপ্পি হিপ্পি ভাব টা দুর হতো।
-পাঁচটা বছর। মনে হয় এই তো সেদিন তোমাকে পাঁচ পদে খাইয়েছি।
-থাক সে কথা। চোখে আর জল নাই বা আনালে। তবে জানো, কি ভেবে ভালো লাগে?
-কি?
-তুমি আছো সেইখানে যেখানে বইছে নদী পায়ের নিচে, ঝিরঝিরে বাতাস, নাই ক্রন্দন, নাই মহামারি। নাই করোনাভাইরাস।
-বুঝলে কি ভাবে আমি সেখানে আছি?
-তুমিই যদি ওখানে না যাবে তবে যাবে কে? তাহলে তো আমি বলব, সবই মিছে।
সত্যি কথা বলতে কি তোমাকে প্রতিদিনই স্মরণ করি, স্মরণ করা খুবই সহজ, সহজ নয় তোমাকে হারানোর ব্যাথা।
-বাহ, তুমি তো সাহিত্যিক হয়ে গেছো দেখছি।
-সময় মনটাকে সহিয়ে দেয়, কিন্তু খত টা কি সারে?
-কি বলব বলও। চল্লিশ টা বছর তো খুবই কম সময়, এতটা কম সময় তোমার সাথে কাটাব তা তো ভাবিনি কখন। আমার তো মন ভরল না।
-মন কি আমার ও ভরেছে। ভরেনি। গোঁজামিল দিয়ে জীবন টাকে চালিয়ে নেবার চেষ্টা করছি।
-মনে রেখো আমি আছি সব সময় তোমার পাশে, তোমার কাছে। ভেঙ্গে পড়োনা। আছে তোমার দুই কৃতি সন্তান, আছে টুকটুকে নাতি, ওদের মাঝে পাবে তুমি আমাকে। বিদায়—-।
“ অমন আড়াল দিয়ে লুকিয়ে গেলে
চলবে না।
এবার হৃদয়-মাঝে লুকিয়ে বোসো, কেউ
জানবে না, কেউ বলবে না”
–
–
–
1 Comment
লেখাটা পড়ে বুকের মাঝে কান্না গুমরে উঠলো।