ভয়ার্ত চিৎকার

  শম্ভু অনেক রাতে কাজ সেরে শুতে এসেছিল। ঘড়ির কাঁটার দিকে চেয়ে দেখল, দুটো দশ।

চোখ টা কেবল লেগেছে। ধুম ধুম দরজায় কে যেন বাড়ি মারছে। লাফ দিয়ে উঠে পড়লো। কয়েক সেকেন্ড লাগলো ব্যাপার টা বুঝে উঠতে।

আবারও শব্দ।

দরজাটা খুলতেই ওকে ধাক্কা দিয়ে ঢুকে পড়ল ছেলেটা। থরথর করে কাঁপছে। বয়স সতের আঠারোর উপর হবে না।

-প্লীজ আমাকে বাচান। দরজা খুলবেন না। ওরা আমাকে পেলে মেরে ফেলবে। ভয়ে ওর মুখটা সাদা হয় গেছে।

-তা কি হয়েছে, কে তুমি? জিজ্ঞাসা করল শম্ভু।

এমন সময় আবারও দরজায় কে যেন বাড়ি মারল।

ছেলেটা দৌড়িয়ে ঢুকে গেলো শম্ভুর বেডরুমে।

কিছুক্ষণ কোন শব্দ নেই। পায়ের আওয়াজ শুনতে পেলো শম্ভু। আওয়াজ টা আস্তে আস্তে মিলিয়ে গেলো।

শম্ভুও যে ভয় পায়নি তা নয়।

এত রাতে উটকো ঝামেলা, তারপর কি না কি ব্যাপার, শম্ভু কে ভাবিয়ে তুললো।

ছেলে টা বেরিয়ে এলো ঘর থেকে। ভয়ে কাঁপছে।

-কি হয়েছে?

-ওরা আমাকে মেরে ফেলবে।

-দাড়াও, পুলিশ কে কল করি।

-না, না বলে দৌড়ে গেলো দরজার কাছে।

দরজাটা একটু ফাঁক করে দেখল।

তারপর দৌড়ে বেরিয়ে গেলো।

সবকিছু কয়েক মিনিটের মধ্যে ঘটে গেলো।

শম্ভু সমস্ত ব্যাপার টা ভাবতে চেষ্টা করল। আস্তে আস্তে দরজার কাছে এগিয়ে গেলো।

দরজাটা বন্ধ করে ফিরে এলো রান্না ঘরে। এক গ্লাস ঠাণ্ডা পানি ঢক ঢক করে খেয়ে বিছানায় এলো।

রাস্তায় হৈ হুল্লার শব্দে ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো। 

-যত সব নিকুচি করি, বলে একটা গাল দিয়ে উঠে এলো বিছানা থেকে। আজ তার বন্ধের দিন। প্রতিদিন ভোর ছয়টায় উঠতে হয়। আজ সেই তাড়া ছিলনা। কাজ না থাকলে সে সকাল দশ টার আগে উঠে না। ঘুম ভেঙ্গে গেলেও পরে থাকে বিছানায়। তারপর আস্তে আস্তে উঠে এসে কফির মেশিন টা চালু করে দেয়।

মুখ টা না ধুয়ে কফিটা নিয়ে জানালার কাছে বসে।

আজ আর তা হোলও না।

এ্যাম্বুলেন্সের শব্দ শুনতে পেলো।

দরজাটা খুলে বাহিরে এসে দাঁড়ালো।

পাশের বাড়ীর মহিলা টাও দাঁড়ানো।

-কি হয়েছে? জিজ্ঞাসা করলো শম্ভু।

-খুন হয়েছে, শুনলাম। বলল মহিলা টা

-খুন? ধপ করে উঠল বুকটা।

রাতের কাপড় পরেই এগিয়ে গেলো রাস্তার দিকে। দেখতে পেলো দুই ব্লক দুরে অনেক লোকের জটলা।

দুটো এম্বুলেন্স, আর গোটা চারেক পুলিশের গাড়ী। বেশ কিছুটা জায়গা নিয়ে হলুদ ফিতে দিয়ে ঘেরাও করা।

শম্ভু এসে দাঁড়াল। লোকটা তখনো পরে আছে রাস্তায়। দুই জন কোট পড়া লোক পরে থাকা মানুষ টার পাশে বসে কি যেন করছে।

মুখ টা দেখা যাচ্ছে না। সার্ট টা দেখতে পেলো শম্ভু। আঁতকে উঠল। সেই লাল জামা তার উপর কালো ছোপ ছোপ।

ও? একটা শব্দ বেরিয়ে এলো মুখ থেকে।

তাড়াতাড়ি বেড়িয়ে এলো ভিড় থেকে।

কপাল টা ঘামে ভিজে গেলো। বুকের ভিতর দুরদুর করছে। এতো সেই।

কোন কিছু চিন্তা করতে পারছে না শম্ভু। দ্রুত পায়ে হেটে এলো। বাথরুমে যেয়ে সাওয়ারের কল টা ছেড়ে দিলো।

সারাটা দিন অস্থির ভাবে কাঁটাল। প্রথমে ভাবল শম্পা কে কল করে সব ঘটনা টা বলবে। পরে মনস্থির করল না কাউকে জানাবে না। তবুও শম্পা কে কল করল, কিছুক্ষণ কারো সাথে বসে কথা বলা দরকার। অস্থির মন টাকে বাগে আনতে হবে।

-ব্যাস্ত?

– না। বলল শম্পা।

-তাহলে তৈরী হয়ে নাও। আধা ঘণ্টার মধ্যে আসছি। বাহিরে ডিনার করব।

শম্পা না করলো না।

সন্ধ্যা হয় হয়। গতকাল রাতে বাসার সামনে জায়গা না থাকাতে একটু দুরে পার্ক করতে হয়েছে। শম্ভু তাকালও দুই দিকে।

দেখল যেখানে লোকটা পড়েছিল সেই দিকে রাস্তা হলুদ টেপ দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছে। ক্রাইম সিন।

ভাগ্যভালো ওর গাড়ীটা উল্টো দিকে।
চলার শুরুতেই রাস্তার ওপাশ থেকে কে যেন একজন ডাক দিল।

-শুনছেন?

উত্তর দেওয়ার আগেই দৌড়ে রাস্তা পাড় হয়ে এলো। মাথায় বেজবল ক্যাপ।

রাস্তায় আর কেউ নেই।

সামনে এসে দাঁড়ালো। শম্ভুর গলা শুকিয়ে গেছে। লোকটা লম্বায় সাড়ে ছয় ফুটের কম নয়।  কনুই এর নিচ থেকে কব্জি পর্যন্ত সাপের ট্যাটু।

-লাইটার আছে? বলে পকেট থেকে সিগারেট বের করল।

– না, আমি সিগারেট খাই না। বলল শম্ভু শুকন গলায়।

-ও! বলে দৌড়ে যে ভাবে এসেছিল ঠিক সেই ভাবেই চলে গেলো।

লোকটার মুখটা শম্ভু ভালভাবে দেখতে পেলো না ক্যাপের জন্য।

গাড়ীটা পার্ক করতেই শম্পা নেমে এলো। 

-কোথায় খাবে, জিজ্ঞাসা করল শম্ভু

-এজ উজুয়াল।

আছে ওদের জানাশুনা এক রেস্তোরা। যেখানে ওরা প্রায় যায়, সবাই চেনে। পরিবেশ টা হোমলি।

-তোমার যেন কি হয়েছে মনে হচ্ছে?

-কবে থেকে আবার জ্যোতিষী হলে। মৃদু হেসে বলল শম্ভু।

-আমার কাছে লুকোতে চেওনা। আমি তোমাকে অনেকদিন থেকেই চিনি।

শম্ভুও  কেনও জানি না বলতে পারলে স্বস্তি পাচ্ছিল না।

বলল সব।

-ওকে কি কেউ দেখেছে তোমার বাসায় ঢুকতে। জিজ্ঞাসা করল শম্পা।

– তা তো জানিনা। তবে আমার দরজায় কয়েক বার কে যেনও নক করেছিল। আমি খুলি নি। ওই ছেলে টাই মানা করেছিল।

– হয়ত সবার বাসাতেই নক করেছে? আশ্বাস দিলো শম্পা।

-তাই যেন হয়।

খাওয়া শেষে বের হয়ে এলো দুজনে। শম্পাকে নামিয়ে দিলো। মনের মাঝের ভয় টা কোন ক্রমেই গেলো না। যদিও শম্পা অনেক রকম আশ্বাসের বানী শুনিয়ে ছিল।

ঝন ঝন করে ফোন টা বেজে উঠল। প্রতিদিন একি ভাবে বাজে, আজ যেন মনে হোলও অনেক জোড়ে বাজচ্ছে।

তাকালও ফোন টার দিকে । চেনা নম্বর নয়। তবুও হ্যালো বলল শম্ভু।

ওপাশ থেকে শুধু নিশ্বাসের শব্দ। কেটে দিল কলটা।

আবারও বেজে উঠল।

ভয়ে শম্ভুর হাতটা কেঁপে উঠল। গাড়ীটা লেনের বাহিরে চলে এসেছিল। জোড়ে হর্ন দিয়ে একটা গাড়ী বের হয়ে গেলো পাশ দিয়ে।

শম্ভু তাকাল রেয়ার ভিউ মিররের দিকে। মনে হোলও পিছনের গাড়ীটা ওকে ফলো করছে। শম্ভু বায়ে টার্ন নিলো। যদিও এদিকে তার বাসা নয়। পিছনের গাড়ী টাও একই দিকে টার্ন নিলো।

ফোন টা বেজে উঠল আবার। না এবার শম্পা কল করেছে।

-কোথায় তুমি।

-জানিনা, পিছনে একটা গাড়ী আমাকে ফলো করছে। 

– কি বলছ?

কথা বলতে বলতেই পিছনের গাড়ীটা পাশ কেটে সামনে এসে ব্রেক করেই এক সেকেন্ডের মধ্যে শা করে চলে গেলো।

শম্ভু আত্ম চিৎকার করে ব্রেক করল। ফোনটা ছিটকে পরে গেলো নিচে।

গাড়ীটা রাস্তার পাশে এনে রাখল শম্ভু। ফোনটা খুজে বের করলো।

টুং করে শব্দ হোলও। ম্যাসেজ এসেছে।

“যদি ভালো চাও তবেঁ মাল টা দরজার সামনে রেখে দিও। নচেৎ —-“

(চলবে)

You may also like

3 Comments

  1. বাহ্ ! দারুন!!! একটা রহস্যের গন্ধ পাচ্ছি।পরবর্তী পর্বটা পড়ার জন্য উৎসুক হয়ে আছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *