শফিক কেক টা এনে রাখল টেবিলের উপর। সুন্দর করে লেখা কেকের উপর ——।
রাত বারোটার পরে কাটবে।
ঘরটা অন্ধকার করে দিল শফিক। ছোট্ট একটা মোমবাতি জ্বালিয়ে রাখল।
কনা চোখ ধাঁধাঁ নো আলো পছন্দ করে না।
অন্ধকার ঘরে বসে শফিক কনার গায়ের গন্ধটা অনুভব করতে চাইল। ঐ গন্ধে মাদকতা ছিল। বলেছিল কনা কে।
-পারফিউম টার নাম কি? আলতো করে কনার থুতনিতে হাত রেখে জিজ্ঞাসা করেছিল শফিক ।
– পারফিউম তো আমি ব্যাবহার করি না কখনো।
-তাহলে এই গন্ধ কিসের?
-আমি কি করে বলব বলও। বলে মিটমিট করে হেসেছিল কনা।
শফিক চোখটা বন্ধ করলো। অনেক পুরানো স্মৃতি মনে এলো।
সাদা শাড়ী, কালো পাড়ে ওকে মানায়। বলেছিল শফিক।
তখনো ওরা আংটি বদল করে নি।
আংটি বদলের দিন ওকে যে কি সুন্দরই না লাগছিল, সেইক্ষণে বলতে পারেনি।
দুপাশে মেয়েদের দল। আর কনা বসে আছে মাথা নিচু করে।
আচ্ছা, শফিকের মনে হোলও, আজকাল তো বর কনে আর ওভাবে মাথা নিচু করে বসে থাকে না।
সময় পালটিয়ে গেছে।
কত কত বছর চলে গেছে পিছনে।
ও এলো, জীবনটা পূর্ণতায় ভরে গেলো।
দৈনন্দিন জীবনে কত না ঠোকাঠুকি লাগে। ভাংচুর হয়।
তাতো হলনা।
প্রতিটা দিনকে কিভাবে আনন্দময় করে তুলতে হয় তা জানা ছিল কনার।
নতুন দিনকে নতুন করে সাঁজা তো সে।
শফিকের মনে হোল ওকে নিয়ে ছাইভস্ম কিছু লিখেছিল সে।
এক রাতে রান্না ঘর ঘুচিয়ে যখন এলো, ওকে জড়িয়ে ধরে শফিক বলেছিল,
-তোমাকে একটা লেখা পড়ে শুনাবো।
-কার লেখা?
-আমার।
-তোমার? বিয়ের আগে প্রেমপত্র লেখার পর আর কিছু লিখেছ বলে তো আমার মনে পড়ে না।
– লিখেছি তোমার রান্না করার সময় তোমার মুখটা দেখে।
-বাহ, আমাকে ছাড়, তা না হলে পড়ে শুনাবে কি ভাবে?
-তবে শোন। বলও হাসবে না?
-না, হাসবো না। কথা দিলাম।
“ছাত্রীহলের গেট দিয়ে যখন সে বেরিয়ে আসতো,
পরনে সাদা শাড়ি কালো পাড়
বলতাম, তুমি এলে পাশের অন্যরা এতো ম্লান হয়ে যায় কেন?
সে বলত, এতো তোমার চোখে আমাকে দেখো তাই।
বলতাম, বিধাতা বুঝি একজনকেই বানিয়েছে এই ধরাধামে
এতো সুন্দর করে?
সে বলতো এতো তোমার চোখে আমাকে দেখো
বলতাম চশমাটা খুলবে কি?
বলত কেন ?
তোমার কাজলে আঁকা চোখটা দেখবো।
এতো সুন্দর করে কাজল দিয়ে আঁকো কি ভাবে?
বলত, এতো তোমার চোখে আমাকে দেখা।
বলতাম, তোমার হাসিতে মুক্ত ঝড়ে জানো কি তা তুমি ?
বলত, তাতো জানিনা, এ ঝরা শুধু তুমিই দেখো,
এতো তোমার চোখে আমাকে দেখা।
এই নিটোল হাতে টুং টাং চুড়ির শব্দ আর কারো কানে বাজে কি?
তুমি বলতে, বাজে, তুমি শুনতে পাওনা।
তুমিতো দেখো আমার হাতটা তোমার চোখে।
যখন তুমি বেণী বেঁধে আস্তে পায়ে আসতে,
আর আমি চোখ ভরে তাকিয়ে থাকতাম,
সে দুটো বেণী আবার বাঁধবে কি?
বলত না, ওটা থাক তোমার মনের ভেতর গাঁথা,
যে চোখ দিয়ে সেদিন তুমি আমাকে দেখেছিলে।
তুমি জানো, টিপ পরলে তোমাকে কত সুন্দর দেখায়?
বলত, তাই কি? এতো তোমার চোখে আমাকে দেখা।
আচ্ছা বলো তো তোমার নাকফুলটা এতো জ্বলজ্বল করে কেন ?
বলত, তাতো জানিনা?
আমি বলতাম ওটা নাকফুলের বাহাদুরি নয়, সৌন্দয ঐ সুন্দর নাকটার
যেখানে ওটা শোভা পাচ্ছে।
বলতাম চলো হেঁটে আসি,
বলত, কেন?
দেখবো তোমার পায়ে চলার পথে কাঠবিড়ালিটা থমকে দাড়ায় কিনা?
বলত, কি আবোল তাবোল বকো।
বলতাম তুমি যখন রান্না করো আগুনের তাপে লাল হয়ে আসা তোমার
মুখটা কি অপূর্ব লাগে তা কি তুমি জানো?”
এই পর্যন্ত লিখেছি। বলেছিল শফিক ।
-বাহ, অপূর্ব। শেষে এই কথা টি যোগ কর,
তোমার হাতেই যেনও শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করতে পারি।
ঢং করে বড় ঘড়িটাতে শব্দ হোলও।
রাত বারটা।
শফিক চোখ মেলে চাইল।
মোমবাতিটা পুড়ে পুড়ে শেষের পথে।
সে এসে দাঁড়াল কেক টার কাছে।
আজ ছাব্বিশে অক্টোবর।
পঁয়তাল্লিশ বছর আগে এই দিনে ওরা আংটি বদল করেছিল।
ঝাপসা চোখে শফিক তাকাল চারিধারে।
মোমবাতি নিভে গেলো, রইল শুধু অন্ধকার।
–
1 Comment
ভালোবাসার এতো সুন্দর প্রকাশ!!!❤️
চোখ ঝাপসা হয়ে এসেছে।