আবার হোল দেখা

 সতী কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, যাবে আর একবার ভিন দেশে। সেই যে গিয়েছিলাম ছয় বছর আগে। আর তো গেলে না।

 ও চুপ করে ছিল। তারপর ঘাড় ফিরিয়ে আমার দিকে তাকাল।

বলল, যেতে চাই আর একবার।

চোখে চোখ রেখে বলল, জানো, অনেক দ্বিধা। অনেক ভয় ভয় মন নিয়ে সেদিন তোমার সাথে গিয়েছিলাম। তার জন্য অনেক কথা শুনতে হয়েছে আমাকে। নিজে ইচ্ছে করে তোমার থেকে একটা দূরত্ব তৈরী করে নিয়েছিলাম।  তুমি বুঝতে পেরেছিলে। সরে গিয়েছিলে আমার থেকে। প্রতিদিন যেখানে কথা হতো সন্ধ্যা ছয়টার পরে, কাজ থেকে বাড়ী ফেরার পথে সেটা এসে দাঁড়ালো সপ্তাহে একদিন। আজও সেটাই বজায় রয়েছে। 

সত্যি বলতে কি আজ আর কান দেই না ও সব কেচ্ছা তে। যাব, কবে যাবে ?

বললাম, দুই মাস পরে। তৈরী থেকো।

অনেকদিনের ইচ্ছে আমার Croatia দেশ টা দেখার। সময় পেয়েছি কিন্তু সাথে কাউকে পাইনি। তাই আর যাওয়া হয়ে উঠেনি। আজ সতী রাজি হওয়াতে Gate1 Travel এর সদ্য আসা বই টা খুলে বসলাম। দেখলাম, ভালো একটা Deal আছে। Croatia, Slovenia, Serbia, Montenegro নিয়ে বারো দিনের সফর। সতী কে বলতেই সে বলল, মন্দ কি।

তাহলে প্রস্তুত হয়ে নাও, একমাস পরেই যাত্রা করবো।

বছর কেটে যায় চোখের পলকে আর এক মাস তো চোখ বুজতেই চলে এলো।

আমি এলাম কেনেডি এয়ারপোর্টে। ওর জন্য অপেক্ষা করতে করতে আধাঘণ্টা পেড়িয়ে গেলো। ফোন করলেও ফোন ধরছে না। সোজা ভয়েসমেলে চলে যায়। একটু চিন্তা হোল, তাহলে কি সে যাবে না? না, এমন সে করবে না। ভাবতে ভাবতেই ওর উজ্জ্বল হাসিতে ভরা মুখটা দেখতে পেলাম।

-কি ব্যাপার-

কথা শেষ করার আগেই বলল, আর বলো না, পাসপোর্ট টা ভুলে রেখেই তো রওয়ানা দিয়ে দিয়েছিলাম। একটু আসতেই মনে হোল পাসপোর্ট তো নিয়ে আসিনি। ওটা তো বিছানার উপর পরে আছে। ভাগ্য ভালো বেশি দুর যাইনি। যাক বাদ দাও, চলো লাইনে দাড়াই।

এতগুলো কথা সে একসাথে বলে আমার দিকে তাকাল।

বকা দেবো ভাবে ছিলাম। তা আর হলনা।
সিকিউরিটি শেষ করে আমরা এলাম এয়ার ফ্রান্সের লাউঞ্জে। বিকেল চারটায় আমাদের ফ্লাইট।

কফি আর সাথে একটা পেস্ট্রি নিয়ে এসে বসলাম জানালার পাশে। সতী নিলো চা আর একটা স্যান্ডউইচ।

ওর পড়নে ছিল কালোর উপর সাদা বর্ডার দেওয়া সালোয়ার কামিজ। খুব সুন্দর লাগছিল দেখতে।

সময় হোল গেটের কাছে যাওয়ার। এসে দাড়ালাম। ওর সীট টা জানালার পাশে। তাই দেখে বলল, এখনো মনে রেখেছ?

-ভুলতে পারলাম কই?

প্লেন ছাড়ল। প্রথম স্টপ জুরিখ।

সাত ঘণ্টা আকাশে উড়ে অবশেষে জুরিখ এয়ারপোর্টে  এসে পৌছালাম এখানকার সময় ভোর ছয়টায়। ছোট্ট এয়ারপোর্ট। বাহিরে ঝিরঝিরি বৃষ্টি হচ্ছে। দুরের পাহাড় সাদা ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন।

ছয় ঘণ্টা পরে আমাদের ফ্লাইট। যাবো Belgrade, Serbia তে।

সতী কে বললাম, ঐ যে বেঞ্চ টা খালি আছে, একটু শুয়ে চোখটা বন্ধ করবে কি?

ও বলল, না, তার চেয়ে চলো এক কাপ চা খাই কোথাও বসে।

একটা দোকানই খোলা ছিল। সেখানে চা নেই, আছে কফি।

চলবে? জিজ্ঞাসা করলাম।

-অগত্যা কি করা যাবে, বলে চেয়ারে বসে মাথাটা এলিয়ে দিলো দেয়ালে।

Serbia র রাজধানী Belgrade. এসে পৌছালাম দুপুর দুটোই। বাহিরে দাড়িয়ে ছিল Gate1এর লোক। গাড়ীতে করে নিয়ে এলো হোটেলে। নাম Moskva.

Ivona দাঁড়িয়েছিল হোটেলের লাউঞ্জে। পরিচয় হোল। বয়স তিরিশের কোঠায় মনে হোল। মুখে হাসি  লেগেই আছে। আজ থেকে শেষ দিন পর্যন্ত ও আমাদের গাইড। একে একে পরিচিত হোল সে সবার সাথে। ওর কাছে সবার রুমের চাবি। সবাইকে দিতে দিতে সে এসে দাঁড়ালো আমার আর সতীর কাছে।

তাকালও আমাদের দিকে। বলল, তোমাদের দুজনের আলাদা আলাদা রুম?

বলে সে একটু লজ্জিত হোল মনে হোল।

বললাম, হ্যা, এসেছি একসাথে, থাকি আলাদা, বলে হাসলাম।

সেও আমার সাথে হাসিতে যোগ দিলো।

সতী বলল, মনে আছে কি,  এই প্রবলেম আমাদের গতবারেও হয়েছিল।

আজ রেস্ট। আগামীকাল সকালে দেখবো শহর টাকে। বলে Ivona বিদায় নিলো।

আমার আর সতীর রুম পাশাপাশি। বললাম, রাতে তো খেতে হবে, আজ ওরা ডিনার দেবে না। তুমি একটু ঘুমিয়ে নাও। সন্ধ্যার আগেই বের হবো।

ও ওর দরজা বন্ধ করলো। আমি ঢুকলাম আমার ঘরে।

কখন যে চোখটা বন্ধ করেছি মনে নেই। দরজায় টোকার শব্দে চোখ মেলে চাইলাম। জানালার বাহিরে সূর্যের আলো টা ম্লান মনে হোল।

সতী দাড়িয়ে।

-কি বের হবে না? তুমি ঘুমিয়ে ছিলে? আহা, কেন আমি তোমাকে ঘুম থেকে উঠালাম?

-এসো, দুই মিনিট লাগবে আমার তৈরী হতে।  বলে জামা কাপড় নিয়ে বাথরুমে চলে গেলাম।

অচেনা শহরে হাটতে ভালোই লাগছিল। সন্ধ্যা হয় হয়।

সতী বলল, গতবার Langkawi তে আমাদের হোটেল ছিল সমুদ্রের  পাশে। আমরা পানির পাশ দিয়ে হেঁটেছিলাম।

সন্ধ্যায় বসে ছিলাম সমুদ্রের পাড়ে। মনে পড়ে? এবার শহরের মাঝে। চারিদিকে আলোর ঝলকানি।

-তোমার সব মনে আছে দেখছি? বলে বললাম, চলো ঐ যে একটা রেস্টুরেন্ট ওখানে খেয়ে নেই।

হোটেলে যখন ফিরে এলাম তখন রাত নয় টা। সতী ওর ঘরের চাবি বের করলো। বললাম, সকাল সাত টায় নিচে নামব নাস্তা করতে।

-ঠিক আছে। বলে সে দরজা বন্ধ করে দিলো।

সকালে আমরা সবাই কে নিয়ে Ivona বের হোল শহর টা দেখাতে। সুন্দর সকাল। তাপমাত্রা ৬৬ ডিগ্রী ফারেনহাইট। মিলিটারি মিউজিয়াম, ন্যাশনাল মিউজিয়াম, ভিক্টর মনুমেন্ট ফিরে এলাম বাসের কাছে।

যাবো জসেফ টিটোর কবর দেখতে

এই দেশের নাম ছিল যুগোস্লাভিয়া। তারই প্রেসিডেন্ট ছিল টিটো।

এখন ভেঙে হয়েছে Croatia, Montenegro, Serbia, Slovenia, Bosnia and Herzegovina, and Macedonia।

দেখা শেষে ফিরে এলাম হোটেলে।

সতী বলল, এতসব কিছুই জানতাম না।

রাতে ডিনারে পরিচয় হোল ডায়ানা আর জুলিয়ার সাথে। ওরা এসেছে মেরিল্যান্ড থেকে।

Belgrade শেষে আমাদের পরবর্তী গন্তব্যস্থান Zegrab. Croatia র রাজধানী। বাসে আমাদের সিটের সামনে বসেছিল ডায়ানা আর জুলিয়া। সব মিলিয়ে আমরা ৪২ জন। তার মধ্যে এই দুজনের সাথে আমাদের বন্ধুত্ত হোল বেশি। সতী কত কথাই না বলতে থাকলো জুলিয়ার সাথে।

শুধু কানে এলো ও বলছে, না আর কিছু নই, শুধু বন্ধু।

Belgrade থেকে Zegrab ছয় ঘণ্টার পথ। এসে পৌছালাম সন্ধ্যায়। হোটেল সেরাটনের লবিতে আমি আর সতী বসে রইলাম ডিনার শেষে। ও বসেছিল দুরে এসে বসলো কাছে, পাশে নয়। বলল, এই চলা আর কদিন পরে শেষ হয়ে যাবে। আমরা আবার যে যার মত ব্যাস্ত হয়ে পড়বো নিজেদের কে নিয়ে। তাই না?

বললাম, এটাই তো নিয়ম। তবে সেলফোন টা আছে।

ও হেসে উঠল।

Ivona বলেছে সকাল নয়টায় লবিতে থাকতে। আটটায় আমরা এলাম নাস্তা করতে। সবাই এসে গেছে। ডায়ানা ডাক দিলো, ওদের টেবিলে দুটো চেয়ার খালি আছে। হরেক রকম খাবার। ক্রুসেন্ট, টোস্ট আর ডিম সানি সাইড আপ নিয়ে এসে বসলাম। সতী নিলো অমলেট আর টোস্ট। সাথে ডেনিশ।

কথায় কথায় জুলিয়া বলল, ওর বিয়ে হয়েছিল উনিশ বছরে। সেই বিয়ে টেকেনি। তবে একটা মেয়ে হয়েছিল। সেই মেয়েকে বড় করেছে একা। এত বছর একলাই ছিল, দশ বছর আগে ডেভিডের সাথে পরিচয় হয় এক পার্টিতে। আজ ওরা সুখে আছে।

Ivona এসে সবার সাথে দেখা করে গেলো। আমরা এসে দাঁড়ালাম লবিতে। আজকের গাইড Valentina.

নিয়ে এলো Jelacic Square এ। দেখলাম Gric Tunnel, Archaeiligical Museum, Zagreb Cathedral, Museum of Broken Relationship.

গেলাম আমরা কয়জন মিলে টিটোর জন্ম ভূমি Kumrobec এ। যেখানে সে বড় হয়েছিল। দেড় ঘণ্টার পথ। চারিদিকে সবুজ পাহাড়। আঁকাবাঁকা রাস্তা। এলাম, দেখলাম। ডিনার করলাম পাহাড়ের উপর এক রেস্তোরায়।

পাহাড়ের ঢালুতে আমরা দুজন পা ছড়িয়ে বসলাম। দুরের পাহাড়ের উপরে মেঘ।

সতী বলল, আবার কবে দেখব এই সৌন্দর্য।

আল্লাহ যেন আবার আসতে দেয় তোমার সাথে। চল, সবাই চলে যাচ্ছে। বলে সে উঠল।

Zagreb থেকে Slovenia, যাবো ওর রাজধানী Ljubljana. উচ্চারণ লুবলিয়ানা। রাস্তা খালি। তিন ঘণ্টার মধ্যে পৌছে গেলাম ছোট্ট শহরে। অনেক টুরিস্টের আনাগোনা। মাথার উপর রৌদ। আমাদের আজকের গাইডের নাম সেমিনা। দেখলাম, Preseren Square, Triple Bridge, Ljubljana Castle, Dragon Bridge, Tivoli Park,

Ljubljana Cathedral, Central Market.

দেখা শেষে রওয়ানা দিলাম Bled এর পথে। ওখানে রাত কাটাবো।

রাস্তার দুপাশে ঘন সবুজ গাছ। দুরে আল্পস পাহাড় । পাহাড়ের উপর জমে আছে বরফ। ৪টায় এসে পৌঁছালাম Bled, Slovenia তে। আমাদের হোটেল টা ছোট একটা পাহাড়ের উপরে। নিচে দেখা যায় লেক। তার চারিপাশে রেস্টুরেন্ট ।সন্ধ্যা হয়ে এলো। Ivona আমাদের কে নিয়েএলো লেকের পাশের রেস্টুরেন্টে ডিনার খাওয়াতে।

দুরে পাহাড়ের চুড়ায় Bled Castle. কি অপুর্ব দৃশ্য।

সকালে গাড়ী নিয়ে এলো সেই পাহাড়ের চুড়ায়। Bled Castle দেখতে। ধীরে ধীরে পা ফেলে উঠে এলাম Castle এর চুড়ায়।  নিচে নীল পানি , দুরে পাহাড়।

সতীকে বললাম, এদিকে মুখ ফিরে দাড়াও। নিচের নীল পানির সাথে তোমার নীল সালোয়ার কামিজ এক হয়ে গেছে। এর ছবি না নিলেই নয়।

ও বলল, ফিরে যেতে মন চাইছে না।  

-তবু ফিরে যেতে হবে। জানো তো কাল যাবো Plitvice Lake দেখতে, Croatia তে।

এসো, দুই মিনিট লাগবে আমার তৈরী হতে।  বলে জামা কাপড় নিয়ে বাথরুমে চলে গেলাম।

অচেনা শহরে হাটতে ভালোই লাগছিল। সন্ধ্যা হয় হয়।

সতী বলল, গতবার Langkawi তে আমাদের হোটেল ছিল সমুদ্রের  পাশে। আমরা পানির পাশ দিয়ে হেঁটেছিলাম।

সন্ধ্যায় বসে ছিলাম সমুদ্রের পাড়ে। মনে পড়ে? এবার শহরের মাঝে। চারিদিকে আলোর ঝলকানি।

-তোমার সব মনে আছে দেখছি? বলে বললাম, চলো ঐ যে একটা রেস্টুরেন্ট ওখানে খেয়ে নেই।

হোটেলে যখন ফিরে এলাম তখন রাত নয় টা। সতী ওর ঘরের চাবি বের করলো। বললাম, সকাল সাত টায় নিচে নামব নাস্তা করতে।

-ঠিক আছে। বলে সে দরজা বন্ধ করে দিলো।

সকালে আমরা সবাই কে নিয়ে Ivona বের হোল শহর টা দেখাতে। সুন্দর সকাল। তাপমাত্রা ৬৬ ডিগ্রী ফারেনহাইট। মিলিটারি মিউজিয়াম, ন্যাশনাল মিউজিয়াম, ভিক্টর মনুমেন্ট ফিরে এলাম বাসের কাছে।

যাবো জসেফ টিটোর কবর দেখতে

এই দেশের নাম ছিল যুগোস্লাভিয়া। তারই প্রেসিডেন্ট ছিল টিটো।

এখন ভেঙে হয়েছে Croatia, Montenegro, Serbia, Slovenia, Bosnia and Herzegovina, and Macedonia।

দেখা শেষে ফিরে এলাম হোটেলে।

সতী বলল, এতসব কিছুই জানতাম না।

রাতে ডিনারে পরিচয় হোল ডায়ানা আর জুলিয়ার সাথে। ওরা এসেছে মেরিল্যান্ড থেকে।

Belgrade শেষে আমাদের পরবর্তী গন্তব্যস্থান Zegrab. Croatia র রাজধানী। বাসে আমাদের সিটের সামনে বসেছিল ডায়ানা আর জুলিয়া। সব মিলিয়ে আমরা ৪২ জন। তার মধ্যে এই দুজনের সাথে আমাদের বন্ধুত্ত হোল বেশি। সতী কত কথাই না বলতে থাকলো জুলিয়ার সাথে।

শুধু কানে এলো ও বলছে, না আর কিছু নই, শুধু বন্ধু।

Belgrade থেকে Zegrab ছয় ঘণ্টার পথ। এসে পৌছালাম সন্ধ্যায়। হোটেল সেরাটনের লবিতে আমি আর সতী বসে রইলাম ডিনার শেষে। ও বসেছিল দুরে এসে বসলো কাছে, পাশে নয়। বলল, এই চলা আর কদিন পরে শেষ হয়ে যাবে। আমরা আবার যে যার মত ব্যাস্ত হয়ে পড়বো নিজেদের কে নিয়ে। তাই না?

বললাম, এটাই তো নিয়ম। তবে সেলফোন টা আছে।

ও হেসে উঠল।

Ivona বলেছে সকাল নয়টায় লবিতে থাকতে। আটটায় আমরা এলাম নাস্তা করতে। সবাই এসে গেছে। ডায়ানা ডাক দিলো, ওদের টেবিলে দুটো চেয়ার খালি আছে। হরেক রকম খাবার। ক্রুসেন্ট, টোস্ট আর ডিম সানি সাইড আপ নিয়ে এসে বসলাম। সতী নিলো অমলেট আর টোস্ট। সাথে ডেনিশ।

কথায় কথায় জুলিয়া বলল, ওর বিয়ে হয়েছিল উনিশ বছরে। সেই বিয়ে টেকেনি। তবে একটা মেয়ে হয়েছিল। সেই মেয়েকে বড় করেছে একা। এত বছর একলাই ছিল, দশ বছর আগে ডেভিডের সাথে পরিচয় হয় এক পার্টিতে। আজ ওরা সুখে আছে।

Ivona এসে সবার সাথে দেখা করে গেলো। আমরা এসে দাঁড়ালাম লবিতে। আজকের গাইড Valentina.

নিয়ে এলো Jelacic Square এ। দেখলাম Gric Tunnel, Archaeiligical Museum, Zagreb Cathedral, Museum of Broken Relationship.

গেলাম আমরা কয়জন মিলে টিটোর জন্ম ভূমি Kumrobec এ। যেখানে সে বড় হয়েছিল। দেড় ঘণ্টার পথ। চারিদিকে সবুজ পাহাড়। আঁকাবাঁকা রাস্তা। এলাম, দেখলাম। ডিনার করলাম পাহাড়ের উপর এক রেস্তোরায়।

পাহাড়ের ঢালুতে আমরা দুজন পা ছড়িয়ে বসলাম। দুরের পাহাড়ের উপরে মেঘ।

সতী বলল, আবার কবে দেখব এই সৌন্দর্য।

আল্লাহ যেন আবার আসতে দেয় তোমার সাথে। চল, সবাই চলে যাচ্ছে। বলে সে উঠল।

Zagreb থেকে Slovenia, যাবো ওর রাজধানী Ljubljana. উচ্চারণ লুবলিয়ানা। রাস্তা খালি। তিন ঘণ্টার মধ্যে পৌছে গেলাম ছোট্ট শহরে। অনেক টুরিস্টের আনাগোনা। মাথার উপর রৌদ। আমাদের আজকের গাইডের নাম সেমিনা। দেখলাম, Preseren Square, Triple Bridge, Ljubljana Castle, Dragon Bridge, Tivoli Park,

Ljubljana Cathedral, Central Market.

দেখা শেষে রওয়ানা দিলাম Bled এর পথে। ওখানে রাত কাটাবো।

রাস্তার দুপাশে ঘন সবুজ গাছ। দুরে আল্পস পাহাড় । পাহাড়ের উপর জমে আছে বরফ। ৪টায় এসে পৌঁছালাম Bled, Slovenia তে। আমাদের হোটেল টা ছোট একটা পাহাড়ের উপরে। নিচে দেখা যায় লেক। তার চারিপাশে রেস্টুরেন্ট ।সন্ধ্যা হয়ে এলো। Ivona আমাদের কে নিয়েএলো লেকের পাশের রেস্টুরেন্টে ডিনার খাওয়াতে।

দুরে পাহাড়ের চুড়ায় Bled Castle. কি অপুর্ব দৃশ্য।

সকালে গাড়ী নিয়ে এলো সেই পাহাড়ের চুড়ায়। Bled Castle দেখতে। ধীরে ধীরে পা ফেলে উঠে এলাম Castle এর চুড়ায়।  নিচে নীল পানি , দুরে পাহাড়।

সতীকে বললাম, এদিকে মুখ ফিরে দাড়াও। নিচের নীল পানির সাথে তোমার নীল সালোয়ার কামিজ এক হয়ে গেছে। এর ছবি না নিলেই নয়।

ও বলল, ফিরে যেতে মন চাইছে না।  

-তবু ফিরে যেতে হবে। জানো তো কাল যাবো Plitvice Lake দেখতে, Croatia তে।

Slovenia কে বিদায় দিয়ে আমরা সকাল নয়টায় নাস্তা শেষে রওনা দিলাম Plitvice Lake National Park দেখতে।

 চার ঘন্টার পথ। আবহাওয়া আজ আমাদের অনুকুলে নয়। ঝিরিঝির করে বৃষ্টি পড়ছে। তাপমাত্রা ৬৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট । এতদিন ঝলমলে রৌদের মাঝে দিনগুলো কাটিয়েছি। আজ না হয় আকাশ টা গোমড়ামুখ হয়ে থাকল, তা থাক, তাতে আমরা হতাশ হয়নি। The Plitvice Lakes Croatia এর সবচেয়ে পুরানো এবং বৃহত্তম ন্যাশনাল পার্ক। অসম্ভব সুন্দর॥ ১৬ টা লেক এসে যোগ হয়েছে জলপ্রপাতের সাথে। স্বচ্ছ লেকের পানি। নিচে লাইমস্টোন। পুরো পার্ক টা ঘুরে দেখতে এক ঘন্টা লেগে গেলো।

রাতে ফিরে এলাম হোটেলে। কাল যাবো Splitএ।

সতী বলল, জানো বাসার কথা বড় মনে পড়ছে। মনে হচ্ছে অনেক অনেক দিন আমরা বাহিরে।

বললাম, আর মাত্র তিনটা দিন তারপরে তুমি দেখতে পাবে তোমার ছেলে মেয়েদের।

চার ঘন্টা লেগে গেলো Split এ আসতে।

আবহাওয়া গতকালের ঠিক বিপরীত । সুর্যের আলো আজ আর মেঘে ঢেকে নেই। তাপমাত্রা ৮৫ ডিগ্রি ফারেনহাইটের উপরে চলে গেছে।

গরমে সতীর মুখ লাল হয়ে গেছে। বললাম দাড়াও তোমার জন্য একটা ক্যাপ কিনে আনি।

ও বসে রইল বেঞ্চে। দৌড়ে যেয়ে নিয়ে এলাম।

ও বলল, তোমার এই ছোট ছোট কাজ গুলো মনে থাকবে সারা জীবন।

Split দ্বিতীয় বৃহতম শহর Croatia র। Adriatic Sea এর পাশে। Diocletian’s Palace না দেখলেই নয়। Roman Emperor Diocletian এখানে এসে তার শেষ জীবন কাটিয়ে ছিল । এই বাড়ি তে Game of Throne এর Throne Room (also where dragons are kept) shooting হয়েছিল। দেখা শেষে বসলাম ছাতার নিচে দুপুরের খাবার খেতে।

সতী অর্ডার দিলো ফিস কাটলেট, আমি নিলাম বারগার।

বাস এলো ৪:৩০ টায়। এলাম হোটেলে।

কাল ভোরে বেরিয়ে পড়বো Dubrovnik এর পথে।

Dubrovnik, Croatia এর আর একটি টুরিস্টের শহর। সকাল সকাল আমরা বেরিয়ে পড়েছিলাম । এসে পৌঁছালাম তিন ঘন্টা পর। পুরাতন শহর। চারিদিক Stone Walls . Adriatic Sea এর পাশে। পুরো টা দেখতে ঘন্টা লেগে গেলো।

Montenegro. এটাই হবে আমাদের ভ্রমনের শেষ শহর দেখা।

Ivona বলেছিল সকাল সকাল রওয়ানা দিতে হবে। যেহেতু Montenegro, EU এর ভিতরে নয় তাই বর্ডারে অনেক সময় লেগে যাবে। আমরা সবাই সকাল সাতটায় এসে দাঁড়ালাম লবিতে।

মনে পড়লো প্রথম দিনের কথা।

শুরু করেছিলাম New York থেকে শেষ হলো Montenegro র Kotor টাউনে। চারটা দেশ ঘুরে দেখলাম। এক একটা দেশের সৌন্দর্য এক এক রকম। আমি মুগ্ধ হলাম Montenegro তে এসে। ছোট্ট শহরটাকে চারিদিক দিয়ে ঘিরে রেখেছে উঁচু পাহাড় । মাঝে Bay of Kotor. নদীর মাঝে অতি ছোট একটা মানুষের তৈরি Island. কথিত আছে ঠিক ঐ জায়গায় একটা জাহাজ টুকরো হয়ে গিয়েছিল। জেলেরা ঐখানে এসে দেখতে পায় Virgin Mary র ছবি ভাসছে। ওরা ঠিক করে এখানেই তৈরি করতে হবে চার্চ ।

বছরের পর বছর ধরে জাহাজ তৈরি করে সেই গুলো কে ডুবিয়ে দিয়ে, বড় বড় পাথর ফেলে ভিত তৈরি করেছিল। সময় লেগেছিল ২০ বছরের উপর। চার্চের নাম Church of Our Lady of the Rocks . ভিতরে আছে সেই Original ছবিটা।

আধো আলো আধো ছায়া মাথায় করে এসে পৌছেছিলাম Montenegro তে। সব দেখা শেষ হতেই আকাশ ভেঙে নামল ঢল সেই সাথে ঝড়ো হাওয়া। দৌড়ে যেয়ে এক কাপ কফি নিয়ে বসলাম ছাতার নিচে। পানির ভারে ভেঙে গেলো ছাতা। সতীর লম্বা কোর্তা টা ভিজে গেলো।

দৌড়ে যেয়ে আমরা দুইজন ঠাঁই নিলাম কফি শপের ভিতরে।

সতীকে বললাম, দাড়াও ওদের কাছে দেখি কাপড়ের ন্যাপকীন আছে কিনা।

সতী বলল, কেন?

-তাহলে তোমার চুল টা মুছতে পারবে।

ও তাকিয়ে রইল আমার দিকে।

 আস্তে আস্তে বৃষ্টি থেমে এলো।  আমরা এলাম গাড়ীর কাছে।

বিদায় Montenegro. মনে থাকবে তোমার সৌন্দর্য।

রাতে এলাম ফেয়ারওয়েল ডিনার Konova Dubrava তে। Ivona  শেষদিনে ফেয়ারওয়েল স্পীচ দিতে যেয়ে গলাটা কান্নায় বুজে এলো। 

আমরা বিদায় নিলাম সবাই সবার কাছ থেকে।

জুলিয়া, ডায়ানা জড়িয়ে ধরল আমাদের কে।

বলল, কীপ ইন টাচ।

হোটেলে ফিরে এসে আমরা দুজন লবিতে বসে থাকলাম অনেক রাত পর্যন্ত।

সতী বলল, বারোটা দিন তোমার সাথে সুন্দর ভাবে কেটে গেলো। আবার কবে আসবো বলতে পারো কি?

-না, জানি না। তবে আসিব নিশ্চয় কোন না কোন দিন।

সতী হাসতে হাসতে বলল, তুমি কি তোমার রবি ঠাকুরের কবিতা বলছ।

-না, আমার নিজের। চলো, রাত হোল। কাল সকালে ফ্লাইট।

You may also like

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *