যে চোখে তোমাকে দেখা
চলে গেছে সে আজ দু’মাস হয়ে গেল। আজ এর জলে চোখ ভেজাবো না।
ফিরে যাই সেই দিনগুলিতে যখন তাকে দেখেছিলাম,
তাকে চিনেছিলাম, ভালবেসেছিলাম,
সেই দিনগুলি, যা ছিল তার আর আমার একান্ত নিজের।
ছাত্রীহলের গেট দিয়ে যখন সে বেরিয়ে আসতো, পরনে সাদা শাড়ি কালো পাড়
বলতাম, তুমি এলে পাশের অন্যরা এতো ম্লান হয়ে যায় কেন?
সে বলত, এতো তোমার চোখে আমাকে দেখো তাই।
বলতাম বিধাতা বুঝি একজনকেই বানিয়েছে এই ধরাধামে
এতো সুন্দর করে?
সে বলতো এতো তোমার চোখে আমাকে দেখো
বলতাম চশমাটা খুলবে কি?
বলত কেন ?
তোমার কাজলে আঁকা চোখটা দেখবো।
এতো সুন্দর করে কাজল দিয়ে আঁকো কি ভাবে?
বলত, এতো তোমার চোখে আমাকে দেখা।
বলতাম, তোমার হাসিতে মুক্ত ঝড়ে জানো কি তা তুমি ?
বলত, তাতো জানিনা, এ ঝরা শুধু তুমিই দেখো,
এতো তোমার চোখে আমাকে দেখা।
এই নিটোল হাতে টুং টাং চুড়ির শব্দ আর কারো কানে বাজে কি?
তুমি বলতে, বাজে, তুমি শুনতে পাওনা।
তুমিতো দেখো আমার হাতটা তোমার চোখে।
যখন তুমি বেণী বেঁধে আস্তে পায়ে আসতে,
আর আমি চোখ ভরে তাকিয়ে থাকতাম,
সে দুটো বেণী আবার বাঁধবে কি?
বলত না, ওটা থাক তোমার মনের ভেতর গাঁথা, যে চোখ দিয়ে
সেদিন তুমি আমাকে দেখেছিলে।
তুমি জানো, টিপ পরলে তোমাকে কত সুন্দর দেখায়?
বলত, তাই কি? এতো তোমার চোখে আমাকে দেখা।
আচ্ছা বলো তো তোমার নাকের ফুলটা এতো জ্বলজ্বল করে কেন ?
বলত, তাতো জানিনা?
আমি বলতাম ওটা নাকফুলের বাহাদুরি নয়, সৌন্দয ঐ সুন্দর নাকটার
যেখানে ওটা শোভা পাচ্ছে।
বলতাম চলো হেঁটে আসি,
বলত, কেন?
দেখবো তোমার পায়ে চলার পথে কাঠবিড়ালিটা থমকে দাড়ায় কিনা?
বলত, কি আবোল তাবোল বকো।
বলতাম তুমি যখন রান্না করো আগুনের তাপে লাল হয়ে আসা তোমার
মুখটা কি অপূর্ব লাগে তা কি তুমি জানো?
বলত, তোমার বকবকামি রাখবে, নিচে থেকে তেলটা নিয়ে এসো।
কোন পার্টিতে যাবার আগে বলতে, দেখোতো এই শাড়িতে আমাকে মানিয়েছে কিনা?
বলতাম অপূর্ব, এ তো শাড়ির কোন কৃতিতু নয়,
কার শরীরে একে বেকে উঠেছে সেটা দেখতে হবে না?
বলত, বড় বাজে কথা বলো তুমি।
বলতাম না, এতো আমার চোখে তোমাকে দেখা।
তুমি বলতে কোন কারণে আমার কোন অঙ্গ যদি কুৎসিত হয়ে যায় তখন তুমি কি করবে?
মনে পড়ে আমি কি বলেছিলাম ?
তোমার সে খুঁত অপূর্ব রূপ নিয়ে আমার চোখে ধরা দেবে।
এতো আমার চোখে তুমি।
তুমি বলেছিলে মরণে যেন আমি তোমার চোখে আমাকে
নিয়ে মরতে পারি।